somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনাহুত--প্রথম পর্ব

০৭ ই আগস্ট, ২০০৯ রাত ১০:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কেন্দ্রীয় প্রশাসন কর্তৃক প্রণীত জাতীয় সংবিধানের ২১৭০ শতাব্দীর- ৯৩ তম সংস্করণ হতে উদ্ধৃত:
(১) যেহেতু, মানবশিশুর গর্ভকালিন বিবর্তন গর্ভধারিণীর মানসিক ও শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভরশীল, এবং
(২)যেহেতু দীর্ঘ গর্ভকালীন সময়, রাষ্ট্রযন্ত্রের পক্ষে গর্ভধারিণীর শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি ও স্থিতির নিশ্চয়তা দেয়া সম্ভবপর নয়, এবং
(৩)যেহেতু শিশুর নকশাকৃত বিকাশ অনুযায়ী গর্ভধারিণীকে পরিচালনা করা, সংবিধানের ৩৬৭ ধারার ৩৪ অনুচ্ছেদের ২৩ নং প্যারা অনুযায়ী- ব্যক্তির মৌলিক অধিকার পরিপন্থি;
অতএব, সংবিধানের ২৭ ধারার, ৮ উপধারার, ২ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই মর্মে প্রজ্ঞাপন জারী করা যাচ্ছে যে-
অদ্য ২১৭০ ইংরেজী সন হতে, নারী ও পুরুষদের সবধরণের গর্ভধারণের উপর নিযেধাজ্ঞা প্রয়োগ করা হলো। অদ্য হতে কেবলমাত্র জেনেটিক ইনজিনিয়ারিং এর মাধ্যমে, কৃত্রিম গর্ভের সহায়তায় প্রজন্ম বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো। এ ব্যাপারে সকল নাগরিকের সব ধরণের সহযোগিতা কামনা করা যাচ্ছে।
এই মর্মে আরো নির্দেশ জারী করা হচ্ছে যে এই নিয়মের ব্যত্যয়কে সংবিধানের ৬৭৫ ধারার, ১ উপধারার, ১ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী "যে কোন শারীরিক অবস্থা থাকুক না কেন; বিনা আপিলে মৃত্যুদন্ডযোগ্য" শাস্তি হিসাবে গণ্য করা হবে।


সময়কালঃ ২১৬৬ ইংরেজী সন।
টিশকু'টা অনেক প্রশ্ন করে!
সেগুলোকে সরল করলে, অনেকটা এরকম দাড়ায়-
"আচ্ছা, আলো কি?"
"এটার কি স্বাদ আছে? ধরা যায়?"
তার জানতে চাওয়ার কোন শেষ নেই। রাত নেই, দিন নেই; সময়ে অসময়ে ট্র্র্যাকিং মড্যিউলে নক্‌ করতেই থাকে। ভাগ্যিস ইদওয়ান ডিভাইসটা মোবাইলএর সাথে ইনবিল্ট করে দিয়েছে। তা না হলে উমনা কে হোস্টেলের
সবার নানা সন্দেহ আর প্রশ্নের মুখমুখি হতে হতোই। যদিও উমনা অবশ্য টিশকুকে বলেছিলো, যতটা পারে ট্র্র্যাকিং মড্যিউল ব্যবহার না করতে। কিন্তু তাকে বোঝাতেই পারলোনা ব্যাপারটা। অবশ্য সে নিজে তলপেটে হাত দিয়েই বেশ বুঝতে পারে টিশকু কিছু বলছে কিনা।
কে জানে, এটা হয়তো মায়ের নিজস্ব্য ইনস্টিংক্ট। হয়তো সব মেয়েরাই তাদের সন্তানের ভাষা বুঝতে পারে; কোন মড্যিউলের সাহায্য ছাড়াই।
ইদওয়ান প্রথম যখন জানতে পেরেছিলো উমনার গর্ভ ধারণের কথা; তখনও তারা ভাবেনি এই সন্তানকে পৃথিবীর আলোতে আনবে।
প্রথমত, তাদের বিয়ে হয়নি, শীঘ্রই হবার সম্ভাবনাও নেই।
দ্বিতীয়ত, ইদওয়ানের রিসার্চের একটা পজিটিভ ফলাফল বছরখানেকের ভেতরই পাবার কথা; এই মুহুর্তে অন্য কিছু তার মাথাতেই নেই।
কিন্তু তার বলার কারণেই, উমনা এ্যাবরশন করালো না।
"ওকে বেড়ে উঠতে দাও উমু; আমাদের ভালোবাসার প্রথম চিহ্নকে হারাতে চাই না"।
উমনা ভাবলো, যা থাকে কপালে।
এমনিতে, হোস্টেলে থাকে বলে, কাউকে জবাবদিহি করার কিছু নেই। সঙ্গীরাও সবাই ইদওয়ানকে চিনে; তাই বিব্রত হবার ব্যাপার নেই। ভিন্ন শহরে, নিজের পরিবারের কাছে সচরাচর তার যাওয়াই হয়না। সেটা আরো বছরখানেক পেছালে কোন ক্ষতি নেই।
দুমাসের মাথায় ইদওয়ানই প্রথম ট্র্যাকিং মড্যিউলের কথাটা মাথায় ঢুকায়। এটা জানার আগ পর্যন্ত উমনার ধারণা ছিলনা ইদওয়ানের রিসার্চটা আসলে কি ধরণের। সে কাজ করছিলো 'ম্যাচিউর ক্লোন সেল' এর হাইপার রেসপন্সের উপর। অনেক দিন ধরেই বিজ্ঞানীরা দেখে আসছে, ক্লোন করা মানবরা অনেক দ্রুত বেড়ে উঠতে পারে; অনেক দ্রুত সবকিছু শিখে নিতে পারে। এর পেছনের কারণটা খুঁজতে গিয়ে দেখা গেলো কিছু সুনির্দিস্ট নিউরণের কারণেই এই ঘটনা ঘটছে। ইদওয়ানের রিসার্চটা ছিল এই কোষগুলিকে আলাদা করে চিন্হিত করা।
রিসার্চের শেষ পর্যায়ে এসে আরেকটা ব্যাপার আবিষ্কার করে খুব উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল। সে দেখলো, জরায়ুতে বেড়ে উঠা শিশুরাও নিউরণের এই কোষগুলি ধারণ করে শুরু থেকেই। বেশ খাটাখাটনির পর সে ট্র্যাকিং
মড্যিউলটা আবিষ্কার করে ফেলেছে, যেটা দিয়ে সেই কোষগুলিতে উদ্দীপনা বা প্রনোদনা সৃষ্টি করে পূর্বপুরুষের রিফ্লেক্সগুলি দ্রুত তৈরী করা যায়।
উমনা তো আর এতোসব জটিল বিষয় বুঝেনা। ইদওয়ান তাকে বোঝালো, সহজভাবে বলতে গেলে; তারা চাইলে তাদের অনাগত সন্তানের সাথে এখনই স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে পারবে, এই ট্র্যাকিং মড্যিউল দিয়ে।
সে অবশ্য একটা ব্যাপার চেপে গেছে।
এই পুরো প্রক্রিয়াটা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রশাসনিক ক্ষমতা মানুষদের হাত থেকে হস্তান্তরিত হয়ে সেন্ট্রাল মেকানিজম সিস্টেমে যাবার পর থেকেই, মানুষ নিয়ে যাবতীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা খুব কড়াভাবে নিয়ন্ত্রণ
করা হচ্ছে। ইদওয়ান তার ক্লোনের বিষয় ছাড়া কোনভাবেই এই ধরণের যন্ত্র তৈরী বা তৈরীর চেষ্টা করতেইপারেনা।
উমনা বিষয়টা নিয়ে খুব উত্তেজিত হয়ে ছিলো বেশ কদিন। এমনটা যে না, শুরুতে তার মাথায় সুক্ষ্ণ একটা সন্দেহ ঘোরাফেরা করেনি-
"ইদওয়ান কি এই কারণেই এ্যাবরশন করতে মানা করেছিলো?"
কিন্তু সন্দেহটা ভালোলাগা আর ভালোবাসার বিশ্বাসের তোড়ে উবে যেতে সময় লাগেনি। ( যা হয় সচরাচর!)
প্রথম শব্দগুলির কথা তার এখনো কানে বাজে!
"মা, মা,মা।"
বাক্যহারা উমনার দুচোখ বেয়ে বরষার মতো জলের ধারা বয়ে গেছিলো সেই মুহুর্তে।
বেশ কিছুক্ষণ সে কোন কথাই বলতে পারেনি।
ইদওয়ান তার গবেষণার সুত্র ধরে ভ্রুণের সাথে একটা বোঝাপড়ার পরিবেশ তৈরী করায় ব্যস্ত ছিলো। কিন্তু পরবর্তী চব্বিশটা ঘন্টা টিশকু খালি একটা শব্দই বার বার বলে গেছে।
"মা"।
অনেকদিন পর সেদিন নিজের হারিয়ে যাওয়া মা কে মনে পড়ছিলো উমনার।
'সেও কি এভাবেই আকুল হয়ে তার মা কে ডাকতো?'
পরবর্তী দুটি মাস গেলো স্বপ্নের ঘোরে।
অনেক কিছু জেনে গেলো বাচ্চাটা। প্রশ্নবানে অস্থির করে তুলে সে মা কে।
প্রথম যেদিন কিক্‌ করা শিখলো; সারাটা দিন সে হাসলো। কিক্‌ করতে গিয়ে নাকি তার পায়ে খুব সুরসুরি লাগে!
বোঝো ব্যাপারটা!
তবে বাচ্চাটার একটা ব্যাপার টার খুব ভালো লাগে। যেদিন রাতে ইদওয়ান তার হোস্টেলে থেকে যায়। সেদিন সে মোটেই বিরক্ত করেনা মাকে। একদম লম্বা ঘুম দেয়; কিম্বা চুপ থাকে!
'কে জানে?!'
ভাবতেই আরক্ত হয়ে উঠে উমনার মুখ।
আজকাল তার সিংহ ভাগ সময়ই কাটে টিশকুর ভাবনায়, স্পর্শে, স্বপ্নে।
টিশকুর ভ্রুণের বয়স যখন একুশ সপ্তাহ, উমনার দুঃস্বপ্নের প্রহরের সূচনা হলো ঠিক সেদিন থেকে।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০০৯ রাত ১০:১৭
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×