somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাজি অফিসে চলো

০৫ ই আগস্ট, ২০০৯ বিকাল ৪:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কাজি অফিসে চলো
এজি মাহমুদ


এক.
গাড়িতে উঠেই টের পেলাম কিছু ঘটতে চলেছে। গাড়িতে আমরা সব মিলিয়ে মানুষ আছি পাঁচজন। এর মাঝে আমার ঠিক বাম পাশে বসে থাকা মানুষটি ছাড়া আর কাউকেই ভালোভাবে চিনি না। ঘন্টা খানেক হয়েছে পরিচয় হয়েছে বাকি সবার সাথে। আমার পাশে বসে থাকা মানুষটি আমার এক কাজিন। আর বাকি সবাই কাজিনের পরিচিত বন্ধু আর এলাকার ছোট ভাই।

গাড়ি ড্রাইভ করছে রনি। পাশেই সিটে বসে আছে মঈন। আর পেছনের সিটে তনিম, আমার কাজিন আর আমি।

আমাকে কেউ কিছুই বলেনি। তাদের কথা শুনে মনে হলো-রনি, মঈন আর তনিম তিনজন মিলে এক মেয়ের সাথে ফোনে কথা বলতো। আজ তারা সেই মেয়েটির সাথে দেখা করতে যাচ্ছে।

গাড়ি ছুটে চলছে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া মোড়ের দিকে। সেখানে জিয়া হলের সামনে মেয়েটার আসার কথা।

রনি-মঈন আর তনিম যেতে যেতে ঠিক করে ফেললো মেয়েটার সাথে প্রথমেই তারা দেখা করবে না। তারা আশেপাশে থাকবে আর দেখা করতে যেতে হবে আমাকে। তাদের এই প্রস্তাবে আমি খুব একটা সাড়া দিতে পারছিলাম না। এমনিতেই নারায়াণগঞ্জ শহরে আমি এক আগন্তুক। অচেনা পরিবেশ অজানা মানুষ।

চাষাঢ়া পৌছে গাড়ি রাখা হলো জিয়া হল থেকে খানিকটা সামনে। মেয়েটা তখনো আসেনি। খেয়াল করলাম, মেয়েটার ব্যাপারে মঈনের আগ্রহ একটু বেশি বেশি। বোঝা গেল মেয়েটার সাথে ভালোলাগা বা ভালোবাসার যা কিছু তা মঈনের সাথেই। রনি আর তনিম এখানে সাপোর্ট হিসাবে কাজ করেছে। কিন্তু তিনজনই মেয়েটার সাথে ছদ্মনামে কথা বলেছে।

মেয়েটার কাছে মঈনের নাম মুহিন। আর এই মুহিন চরিত্রে অভিনয় করার জন্যই আমাকে বার বার বলা হচ্ছিল। আমার ক্যারেক্টারটাকে আরো জোড়ালো করার জন্য আমাকে সেলফোনে মেয়েটার ছবি দেখনো হল এবং নানান বিষয়ে ব্রিফ করা শুরু হয়ে গেল।

চাষাঢ়া মোড়ে দেখলাম বৃমেলা চলছে। এই বৃমেলার গেটের কাছাকাছি কোথাও মেয়েটার আসার কথা। আমরা গাড়ি থেকে নেমে অপো করছি। একটু পর মঈনের ফোন বেজে উঠলো। মঈন ফোনটা বের করেই আমাকে সামনের এগিয়ে যেতে ইঙ্গিত করলো। রনি চট করে আমার হাতে দুটো সেলফোন ধরিয়ে দিল।

আমি হাটতে হাটতে বৃমেলার গেটের সামনে আসতেই দেখি আমি একা হয়ে গেছি। আশেপাশে তাকিয়ে তনিম-রনি আমার কাজিন কাউকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মঈনতো পুরোপুরি উধাও। গেটের কাছাকাছি আসতেই দেখি ছবির সেই মেয়েটা এক স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এখন আমি যাবো কি, যাবো না
টেনশনে পরে গেলাম।

আবার একবার চারপাশে তাকালাম, যদি কাউকে দেখা যায়। শুনেছি ডুবন্ত মানুষের কাছে নাকি খড়কুটোও ভাসতে দেখা যায় কিন্তু আমি একটা ঘাসও খুঁজে পেলাম না।

এগিয়ে গেলাম মেয়েটার দিকে। মেয়েটা এতণ অন্যদিকে তাকিয়ে ছিল। আমাকে এগুতে দেখে ফিরে তাকালো।

আমি তার সামনে দাঁিড়য়ে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কি পাপিয়া? ঠিক তখনই আমি কিভাবে যেন আমার ক্যারেক্টারের নাম ভুলে গেলাম। ভাগ্যিস যে মেয়েটার নাম ভুলে যাইনি।

কিন্তু এখন মেয়েটা যদি আমার নাম জিজ্ঞাস করে তাহলে কি বলবো-মারাতœক এক ঝামেলায় পরে গেলাম।

মেয়েটা কেমন একটু অন্যমনষ্ক ভঙ্গিতে বললো, ‘হ্যাঁ তুমি মুহিন?’

আমি যেন আমার অর্ধেক আমাকে হারিয়ে ফেলেছিলাম। নামটা শুনে খানিকটা কনফিডেন্স ফিরে পেলাম।

আমি হেসে বললাম, ‘কেমন আছেন?’

পাপিয়া বললো, ‘ভালো। কিন্তু তোমার ভয়েস এরকম কেন?’

‘কি রকম? বিড়ালের মতো মিঁয়াও নাকি ইঁদুরের মতো কিচকিচ?’

‘তোমার ভয়েসতো ফোনে আরেক রকম লাগতো।’

‘ফোনে কথা ভেসে আসে সেই নেটওয়ার্কিং টাওয়ার আর ফোনের স্পিকারের মধ্য দিয়ে। আর এখন তুমি শুনতে পাচ্ছো লাইভ। ডিফরেন্টতো লাগতেই পারে।’

‘না, না তারপরেও তোমার কথা অন্যরকম।’

আমি মুখটা কালো করে বললাম, ‘না আসলে বুঝতে পারছি আমাকে তোমার ভালো লাগছে না। এরকম হয়, ফোনে হয়তো কথা বলে ভালো লাগে কিন্তু সরাসরি দেখা হলে সেই মানুষটিকে আর ভালো লাগে না।’

পাপিয়া স্থির দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘আমি কি তোমাকে সে কথা বলেছি?’

‘সেটাই হয়তো বলেছো কিন্তু একটু অন্যভাবে।’

‘আমার যে তোমাকে ভালো লাগে সেটা কিভাবে আমি তোমাকে বোঝাবো। আচ্ছা তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে?’

মনে মনে ভাবি, সর্বনাশ! বলে কি এই মেয়ে!

আমি তার দিকে বললাম, ‘তোমার কি মনে হয়?’

মেয়েটা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘এখন বিয়ে করতে পারবে?’

আমি ভাবলাম, ‘এখন যদি বলি পারবো তাহলে নিশ্চয়ই এখনি সে আমাকে বিয়ে করার জন্য বলবে না। হয়তো মনে মনে খানিকটা স্বস্তি পাবে। তাই খুব কনফিডেন্টলি বলে দিলাম, পারবো।’

বলার পর আমার কথার ভঙ্গি শুনে আমি নিজেই চমকে গেলাম। এমনভাবে কথাটা বলেছি যেন বিয়ে করাটা ওয়ান-টু’র ব্যাপার।

মেয়েটা সাথে সাথে আমার হাত জড়িয়ে ধরে বললো, ‘চলো কাজি অফিসে। আমি তোমাকে বিয়ে করবো।’



দুই.
নায়ারণগঞ্জ শহরে আমি খুব বেশি যাইনি। সব মিলিয়ে চার-পাঁচবার হবে। খুব স্বাভাবিকভাবেই তেমন কিছু চিনি না। মেয়েটা যখন আমার হাত ধরে বললো, ‘কাজি অফিসে চলো’। তখন আমি পরে গেলাম বিশাল ঝামেলায়। এখন না পারি হাত ছাড়িয়ে নিতে না পারি বলতে আমি আসলে মুহিন নই। আশেপাশে আরেকবার তাকালাম। কিন্তু কে কোথায়! এত মানুষের ভিড়ে তাদের কাউকেই দেখতে পাচ্ছি না। যেন অজানা-অচেনা কোন এক শহরে এক রাজকন্যাকে পথ হারিয়েছি। এখন যদি রাজকন্যাকে একথা বলি আমি তোমার রাজপুত্র নই, ভিখারিপুত্র। তাহলে ভেবে বসতে পারে বিয়ের কথা শুনে ভয় পেয়ে পালাতে চাচ্ছি।

রাজককন্যাতো আমাকে রাজপুত্র ভেবে এক বুক আশা নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তার দিকে তাকিয়ে হাসলাম। নার্ভাস টাইপ হাসি। সাথে সাথে রাজকন্যা আমার হাত আরোও শক্ত করে ধরে বসলো। আমি বললাম, চলো যাই। রাজকন্যা পাপিয়া বললো, কোথায়?

‘কেন কাজি অফিস!’

মনে তো হচ্ছে ভয় পেয়েছো।’

‘আরে নাহ! বিয়ে করে আজকেই তোমাকে বাসায় নিয়ে যাবো।’

রাজকন্যা আমার হাত ধরে রাখলো। আমি রাজকন্যাকে নিয়ে সামনে এগুতে লাগলাম। এ সময় হঠাৎ করে দেখি রনি আমাকে পাশ কাটিয়ে হেটে চলে যচ্ছে। আমি যেন মহাসমুদ্রে ভাসতে ভাসতে আমার খড়কুটো পেয়ে গেলাম। আমি রনির হাত টেনে ধরে বললাম, ‘আরে রনি বন্ধু, কই যাও?’

রনি আমাকে দেখে অবাক হবার ভঙ্গি করে বললো, ‘আরে দোস্ত তুমি এখানে। আমি তো একটা আমগাছ কিনতে আসছি।’

‘আমি একটা চোখ বন্ধ করে বললাম, দোস্ত মিষ্টি দেইখা কিনিস।’

রনি তখন তার অবাক হবার মাত্রাটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো, ‘আরে দোস্ত, তোর সাথে এইটা কে?’

‘আরে বুঝস না, এইটা আবার জিজ্ঞাস করতে হয় নাকি?’

‘ও তাইলে এই অবস্থা! আগে কস নাই তো। তা তোরা কই যাইতাছোস?’

‘এইতো দোস্ত, কাজি অফিসের দিকে।’

‘ক্যান বিয়ে-শাদির ব্যাপার নাকি?’

‘হুম। ভাবি পেতে চাইলে চল কাজি অফিসে।’

দোস্ত আমার মিষ্টি আমগাছের কি হবে?’

‘আরে ব্যাটা আমগাছতো আর পালিয়ে যাচ্ছে না। সাী লাগবে। আশেপাশে পরিচিত কেউ থাকলে নিয়ে চল।’

রনি ফোন বের করে বললো, ‘এই ব্যাপার! আগে বলবি না। দরকার পরলে মিষ্টি আমগাছও সাী দেবে।’

এরপর রনি ফোন দিয়ে কাকে কি বললো। আস্তে আস্তে দেখি রাজপুত্র মঈন, মন্ত্রীপুত্র তনিম আর উজিরপুত্র আমার কাজিন চলে এলো। আমি রাজকন্যা পাপিয়ার পাশ থেকে সরে এসে মঈনকে সেখানে আসতে ইশারা করলাম।

মঈন পাশে যেতেই মেয়েটা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো। আমি মৃদু হেসে বললাম, ‘রাজকন্যা এই তোমার রাজপুত্র।’

১৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×