somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেকুব রাজ্যের ডিজিটালিজম

০৪ ঠা আগস্ট, ২০০৯ রাত ৯:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বেকুব রাজ্যের রাজা আজ বিশেষ সভা ডেকেছেন। সভায় রাজ দরবারের সদস্য, রাজ্যের জ্ঞানী-গুণী ব্যাক্তিরা ও প্রজাদের মনোনীত প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছে রাজা কি বলেন শোনার আশায়। রাজা সব সময়ের মতই গম্ভীর চিত্তে প্রবেশ করলেন দরবারে। রাজা দরবারে প্রবেশ করতেই উজির মশাই উঠে দাঁড়ালেন ঘোষনা পাঠ করার জন্যে-

"সবার অবগতির জন্য জানানো যাইতেছে যে, রাজা হুজুর আজকে এই সভার আয়োজন করেছেন এক জরুরী ঘোষনা দেবার জন্যে। আপনারা মনযোগ সহকারে হুজুরের কথাগুলো শুনবেন"।

উজিরের কথা শেষ হতেই সভায় উপস্থিত সকলের দৃষ্টি রাজার দিকে নিবদ্ধ হল। রাজা সবার দিকে কতৃত্ব সুলভ দৃষ্টিতে তাকিয়ে শুরু করলেন।
"আজ আমি এই সভার আয়োজন করেছি এক বৈপ্লবিক ঘোষনা দেবার জন্যে। আমি ঠিক করেছি আমার রাজ্যকে আধুনিক রাজ্যে পরিণত করব। রাজ্যের সব কিছুই আধুনিক হবে। রাজ্যের একটা সুন্দর নামও দিয়েছি 'ডিজিটাল রাজ্য'। আমার রাজ্যের সবকিছুই হবে ডিজিটাল। ধাণ, পাট, গম, পানি এমনকি বাতাস ও ডিজিটাল হবে"। বলেই রাজা সবার দিকে বুদ্ধিদীপ্ত দৃষ্টিতে তাকালেন।

প্রজাদের একজন প্রতিনিধি উঠে দাঁড়িয়ে বলল, "গোস্তাকী মাফ করবেন হুজুর। আপনার কথা আমি ঠিক বুঝতে পারিনি। ডিজিটাল মানে কি?"।
রাজা ভ্রু-জোড়া কুঁচকে বললেন "ডিজিটাল মানে বোঝা তোমাদের কম্ম নয় হে! এর অর্থ বুঝতে হলে আমার মত হতে হবে তোমাদেরকে। এবার আমার কথা মনযোগ দিয়ে শোন তোমরা। এই রাজ্যের একমাত্র অধিপতি হিসেবে আমি যা বলি তাই হবে। আমি বলেছি ডিজিটাল রাজ্য গড়ে তুলব তার মানে গড়ে তুলবই। এই কথার নড়চড় হবে না"।

একজন রাজ দরবারের সদস্য দাঁড়িয়ে বললেন, "হুজুর ডিজিটাল রাজ্য গড়তে হলে কি করতে হবে?"

"ভাল প্রশ্ন করেছো" বললেন রাজা "তোমাদেরকে কিছুই করতে হবে না। যা করার আমি করব। তোমরা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখবে। ডিজিটাল রাজ্যে যেহেতু সবকিছু ডিজিটাল হবে সেহেতু, রাজ্যে প্রকৃতিক কিছুই থাকতে পারবে না। ইদানিং শুনছি রাজ্যের প্রজারা গাছ লাগাও পরিবেশ বাঁচাও বলে চিৎকার চেঁচামেচী করছে। তাই আমি ঠিক করেছি রাজ্যের সর্বশেষ প্রান্তে গাছেদের আবাসভূমি গড়ে তুলব। সেখানে যত খুশি গাছ লাগানো যাবে। কিন্তু আমার ডিজিটাল রাজ্যের প্রাণ কেন্দ্রে কোন গাছ-পালা থাকতে পারবে না। তবে সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্যে কৃত্রিম গাছ লাগানো হবে। একটি গাছের চারা লাগালে সেই চারা বড় করতে অনেক শ্রম দিতে হয়। পানি ঢালতে হয়, সার দিতে হয় আরো কত কি! এমনিতে রাজ্যে পানির অভাব তার উপার এসব উটকো ঝামেলা করার কোন মানে হয় না। কৃত্রিম গাছ লাগানো তাই সব দিক দিয়ে শ্রেয়তর মনে হয়েছে আমার"।

জ্ঞানী-গুণীদের মধ্য হতে একজন উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, "হুজুর এতে করে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে"।

রাজা জ্ঞানী ব্যাক্তিটির উপর রেগে গিয়ে বললেন, "তুমিতো বিশাল গাধা হে! আমিতো বলেছি রাজ্যের এক কোণায় গাছেদের আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হবে"।

প্রজাদের এক প্রতিনিধি বলল "হুজুর আপনার রাজ্যের অনেক প্রজা না খেয়ে থাকে। ক্ষুধার জ্বালায় অনেকেই মারা যায়। ডিজিটাল রাজ্য গড়ে তুললে কি ক্ষুধার জ্বালা মিটবে?"।

রাজা উদাস হয়ে বললেন, "সব হল কপাল বুঝলে? যাদের রিযিকে খাবার নেই তাদের খাদ্যের নিশ্চয়তা আমি কি করে দেই বল?"
রাজ দরবারের একজন সদস্য উঠে দাঁড়ালেন, "হুজুর পাশে রাজ্যে যে উন্নত গণনা যন্ত্র ব্যবহার করে তা কি আপনার ডিজিটাল রাজ্যেও থাকবে? এ ব্যাপারে হুজুর আপনি যদি একটু নজর দেন তবে এই রাজ্যের উন্নতি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না"।

রাজা বললেন, "উন্নত গণনা যন্ত্র ডিজিটাল রাজ্যে থাকবে তবে এর জন্য উচ্চহারে খাজনা দিতে হবে"।

অন্যএক সদস্য বলল, "হুজুর খাজনা বাড়ালে সাধারণ প্রজারা এই যন্ত্র কিনে ব্যবহার করতে পারবেনা। রাজ্যেরতো এতে কোন উন্নতি হবে না। আর যেখানে প্রজারা দু'বেলা দু'মুঠো খেতে পায় না সেখানে উচ্চহারে খাজনা দেবে কি করে?"

রাজা রেগে গিয়ে বললেন, "দেখো হে! কে খেয়ে বাঁচলো আর কে না খেয়ে মরলো এটাতো আমার দেখার বিষয় নয়। আমি যা বলব তাই হবে"।
প্রজাদের একজন প্রতিনিধি বলল, "হুজুর রাজ্যের অধিকাংশ লোকই চাষা, খেটে খাওয়া মজুর ওদের কি কোন উন্নতি হবে?"

রাজা বললেন, "দেখ এসব চাষা-ভুষাদের উন্নতি করে কি হবে? আমার ডিজিটাল রাজ্যে শুধু ডিজিটাল মানুষের উন্নতি হবে। চাষ-বাসের মত ফালতু কাজে সময় নষ্ট করার কোন মানে হয় না। তাছাড়া আমিতো মাঝে মাঝে ওদের বিনামূল্যে সার বিতরণ করি। এর চেয়ে বেশী কিছু করার কি দরকার?"

উজির বললেন, "হুজুর আমার একটা প্রশ্ন ছিল। দিনে দিনে জিনিস পত্রের দাম বাড়ছে শুধু। আপনার ডিজিটাল রাজ্যে কি জিনিস পত্রের দাম কমবে?"

"অবশ্যই কমবে। ওইসব চাষা-ভূষাদের উৎপাদিত চালের দাম অবশ্যই কমবে। ওদের কাছ থেকে এত দিয়ে চাল কেনার কি দরকার? আর ডিজিটাল রাজ্য যেহেতু অন্যান্য জিনিসের দাম কিছুটাতো বাড়বেই। ডিজিটাল বলে কথা!"।

একজন প্রজাদের প্রতিনিধি বলল, "হুজুর আমরা এ ডিজিটাল রাজ্য চাই না যেখানে গরীব প্রজাদের কোন উন্নতি হবে না"।

রাজা বললেন, "তোমরা কি চাওনা প্রতিটি প্রজার কাছে দূরালাপনী যন্ত্র থাকুক? অত্যাধুনিক গণনা যন্ত্র থাকুক? অন্য রাজ্যের প্রজাদের তোমরা বড়াই করে বলতে পারবে। পেট পুরে খেতে পারলে কি সেই বড়াই করতে পারবে? পেট পুরে খাবার চেয়ে কি ডিজিটাল রাজ্যের ডিজিটাল সুবিধা ভোগ করা ভাল নয়? আর আমি এত কথা শুনতে চাই না। আমার আদেশের উপরে কেউ কোন কথা বলতে পারবে না। আজকের সভার এখানেই সমাপ্তি"।

একজন জ্ঞানী ব্যাক্তি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, "হায়রে! বেকুব রাজ্যের ডিজিটালিজম! পড়নে নাই তেনা, মিঠাই দিয়ে ভাত খানা"।
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্যতার কলঙ্ক ইজরাইল

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৮

ইহুদিদের প্রধান ধর্মগ্রন্থের নাম তোরাহ। এটি ৫ টি পুস্তকের সমন্বয়ে গঠিত। ইহুদি এবং সকল একেশ্বরবাদীরা বিশ্বাস করে তোরাহ হচ্ছে প্রফেট Moses ( মুসা নবী ) এর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক থেকে ভালোবাসার পথে: আমার এবং মীমের গল্প

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ৩০ শে মে, ২০২৪ রাত ২:৩৭

## প্রথম অধ্যায়: অনলাইন থেকে অফলাইনে

ফেসবুকের পাতায় একটি সাধারণ দিন। আমি তখন নিউইয়র্কের ব্যস্ত শহরে বসে থাকি, চারপাশে মানুষের কোলাহল আর কাজের চাপ। হঠাৎ করেই ফেসবুকে একটি পোস্টে কমেন্ট করতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে প্রায় প্রত্যেকেই স্ব স্ব স্হান থেকে সমস্যার সৃষ্টি করেন।

লিখেছেন সোনাগাজী, ৩০ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮



শেখ সাহেব পশ্চিম পাকিস্তান থেকে এসে ৩য় দিন ( ১/১২/১৯৭২) দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদটা তাজউদ্দিন সাহেব থেকে নিয়ে নিয়েছিলেন; ৯ মাস জেলের পর, উনার দরকার ছিলো কিছুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্যারিয়ার কথন: ফ্রিল্যান্সিং, আউটসোর্সিং এবং সর্তকতা।

লিখেছেন জাদিদ, ৩০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৪

গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং, পেশা হিসাবে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সম্মানজনক সামাজিক স্বীকৃতি পাওয়ায় অনেকেই এই পেশায় যুক্ত হয়ে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। এছাড়া বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে একজন মানুষকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ মনটা কেমন যেন অনেক কিছু চিন্তা করছে।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ৩০ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



সকালের মৃদু আলোয় মোড়ানো একটি মনোরম দৃশ্য ধরা পড়েছে এই ছবিতে। এটি একটি খোলা জায়গা, যেখানে সবুজের সমারোহ এবং প্রকৃতির ছোঁয়া স্পষ্ট। ছবির বাম দিকে গাছের সারি এবং ডান... ...বাকিটুকু পড়ুন

×