somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিস্ রাহ্ নুমা নূর অরণী

০২ রা আগস্ট, ২০০৯ রাত ১১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পর্ব- ১

জীবনের ঘোর তমসায়, তাকে নয় তোমাকে . . .

চারুকলা ইনস্টিটিউট নারায়ণগঞ্জ। পেইন্টিংস ক্লাশ রুমের ব্যালকনি। কলেজে তোমার পদধূলি দে’য়ার প্রথম দিক। খুব সম্ভবত: দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় দিন। তারিখটা খেয়াল নেই। প্রয়োজনও মনে করিনি। বেশ ক’টা নতুন মুখের ভীড়। চকিত আমার চোখ দু’টো থমকে গেল এক জোড়া মায়াবী চোখের উপর। মনটাকে শীতল করার মত সময় অবধী ও’চোখ দুটো দেখা। পরক্ষণেই তৃষ্ণার্ত হৃদয়ের অণির্বাণ জ্বালা। চোখ জুড়ায়- মন ভরেনা। আশেপাশের সতর্ক চোখের ভীড় ঠেলে- কিছু-কিছু চতুর দৃষ্টি এড়িয়ে ও’চোখ দু’টো বারবার দেখার সে-কি (!) প্রাণান্তকর চেষ্টা ! লিখে বোঝানো যাবেনা। ব্যথাতুর হৃদয়ের একমাত্র আশ্রয় মানুষের সংশ্রব। এ আমার অনুভব। আর এ অব্যক্ত বেদনা নিয়ে অবশেষে . . .

ক’মাস পর। ততোদিনে নাম-ঠিকানা কিছুই জানা হয়নি। ও’চোখ দুটোও আর মনে পড়ছেনা। যতদূর মনে পড়ছে - তা কেবল আপন ভূবনেই গড়া যায়Ñভাঙ্গা যায়। বাস্তবে পাবার নয়।

পেশাগত কাজের ফাঁকে নারায়ণগঞ্জ আসা। ১১/১২ ঘন্টার ভ্রমণ। নারায়ণগঞ্জ আসলে প্রায়ই থাকা হয় সেন্টু-মিলনদের রুমে। আজও তার ব্যতিক্রম হবেনা। রুমে আসলাম। হায়! এ-কি ! চাবি তো নেই ! রুমের সামনে সিগারেট ফুঁকছি। অগত্যা কি আর করা ? ১-২ পুরো আড়াই ঘন্টা। অপেক্ষার প্রহর কতটা ভয়ঙ্কর তা সবারই জানা। হঠাৎই হাসির রোল পড়ে গেল- মিলন এসেছে। ৬ তলায়। ওর কাছেও চাবি নেই। আবারও অপেক্ষা. . .। তবে এবার চিরাচরিত হাসা-হাসির আড্ডা। মিলন ত্রিবেদী’র হাসাহাসি।

+ জানিস ত্রিবেদী, আজ কলেজের একটা একটা মেয়ে আমাকে চোখ মেরেছে।
# এই সারছে ! ডায়নার কপাল বুঝি ভাঙলো। ওকে তো বলতেই হয়, তা মেয়েটি কে, হে ?
+ অরণী।
# অরণী আবার কে ? আবার নতুন প্রেম শুরু ?
+ না-আ, ওই যে......(বর্ণনা)....মেয়েটা, আমিতো প্রথমে দেখিইনি। মামুন আমাকে.......।
# ও’গুলো ও’জাতীয় মেয়েদের অভ্যাস। তাছাড়া কি দেখতে কি দেখেছেন ! চোখে কিছু পড়েছিলো হয়তো !
+ আরে না-আ..... আমিও একখান মেরে দিলাম তাকে- হা-হা-হা . . .
# যাক ভালোই করেছেন।

আজ-ই প্রথম “অরণী” নামটা শুনলাম। চমৎকার নাম ! অ-র-ণী, অ-র-ণী, -অর্থ খোঁজা শুরু করলাম। পা-থ-র, পাথর ঘষলে - পাথর ঘষা হ্যাঁ-পাথরের ফুলকি উঁ-হু, কাঠে ঘষা আগুনের ফুলকি। ধ্যাত হোকগে যা ইচ্ছে তা।

সন্ধ্যে সাতটা প্রায়।
# আরে নাহ্। চলেন তালা ভেঙ্গে ফেলি।
+ ক্যামনে ?
# সে আমি বুঝবো। হ্যাক-স্য’ দিয়ে কেটে ফেলব।
+ এত দামি তালা-টা--। ভা-ঙ-।
খ্যাঁচ-খ্যাঁচ খ্যাঁচ-খ্যাঁচ...........।

আবারও একবার হাসির বন্যা। এবার দম ফাঁটানো হাসি। তিন জনের মিলিত হাসি। সে আর থামেনা। যা- ভাবা তা-ই। তালাও ভাঙ্গা শেষ - চাবি নিয়ে মনিরও হাজির। শুরু হলো গল্প। এবার শোন - বলো। দু’জনেই শুনবে আমার গল্প - সিলেটের গল্প সাখাওয়াতদের বাড়ীর গল্প। এক সময় প্রসঙ্গ আবারও অরণী’র দখলে। এবার বক্তা মনির। মনে-মনে কিছুটা আগ্রহও জন্মালো। যতটুকু না জানলে নয়। মনিরের কাছেই প্রথম অরণী বিষয়ে ধারনা পেলাম। সংগে সেলিম, সেন্টু......। কাল কলেজে দেখিয়ে দিও তো মনির।

বেশ ক’দিন পর। সকাল বেলা। পেইন্টিংস ক্লাশ রুমে বসে আছি। সংগে ২/৩ জন। হঠাৎ-
# এই ছেলে..... এই ছেলে.....।
+ জ্বি- .......দাদা......
# অরণী কে ? ওকে চেন ? ও কি তোমাদের ব্যাচে ? একটু পাঠিয়ে দিয়ো তো।
+ না .......দাদা, উনি আমাদের সিনিয়র।
কয়েক মিনিট পর-
+ আমাকে ডেকেছেন ত্রিবেদী দা’ ?
# তুমি শিউলী না ? অনেক দিন পর দেখা হলো - কেমন আছ ? সেই যে......তাই না? আচ্ছা তোমাদের মধ্যে অরণী কে ? ভাইয়া তুমি একটু ওকে নিয়ে আসবে।
+ ভালো আছি। আমি আগে দেখি ও আছে কি-না। আপনি এতদিন কোথায় ছিলেন?

তৃষ্ণার্ত বুকে পানি চেয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি-থুক্কু অরণীকে ডাকতে পাঠিয়ে কখন যে চলে এসেছি আজও জানিনা।

সারাদিন ব্যস্ত সময় কাটে। কলেজে বসেই সিলেটের কাজ সারতে হয়। ঢাকায় দৌঁড়া-দৌঁড়ি। ভীষণ ব্যস্ত। টুকটাক কলেজে আসি। থাকি ১ঘন্টা-২ঘন্টা। সবার সংগে স্বাভাবিক। তবে দেখা-সাক্ষাত খুব কম। এর মধ্যেও একটা মুখ কেমন যেন একটু আলাদা-আলাদা লাগে। বারবার সে মুখ আমারই সামনে। নিজেকে একটু আড়ালে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করি। হোস্টেলে-ক্লাশে সে মুখ জ্বল-জ্বল করে। ভুলতে পারিনা। কেন পারি না ? কে এই মুখ? এই কি তবে সেই দু’টি ভূবন ভুলানো চোখ ? কাউকে বলতে পারিনা। বলিনা। বলাও যাবেনা।
ভুলতে আমাকে হবেই ! অগত্যা সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা . . .

দিনকয়েক পর। ফাইনাল পরীক্ষা দিতে নারায়ণগঞ্জ আসছি। ফতুল্লা স্টেশন। রুবেল। আমার এক বন্ধু। অক্সফোর্ড ইংলিশ স্কুলের প্রিন্সিপাল। অনেকদিন পর দেখা হতেই বরাবরের ন্যায় টিপ্পনী আজও-

+ তোরা তো আর্টিস্ট, তোদের এই একটা স্বভাব- হাতে পেন্সিল থাকেই-জায়গা পেলেই দিবি দুই খোঁচা
# আমি আর্টিস্ট তোকে কে বলল ? জীবিকার তাকিদে . . .। তাছাড়া কাকে আবার খোঁচা দিলামরে?

+ ওইযে দেখছিস না দরজাতে বড় বড় করে কে যেন তার মোবাইল নাম্বার লিখে রেখেছে।
# এতে আর্টিস্টদের কৃতিত্ব কোথায় ? তাদের কি দোষ?
+ না-আ। আর্টিস্ট ছাড়া অন্য কেউ পেন্সিল খুব কম ব্যবহার করে কী-না.....।

ব্যপারটা আমার জন্য ভাবনার খোরাক হয়ে রইলো। আরোও বিস্মিত হলাম নাম্বারটা যখন লিখতে গেলাম। ORNI ০১৭০ ০০০ ০০০ Call Me.

সন্ধ্যা ৬টা - রাত ১০টা। যতটুকু দরকার তারচে’ একটু বেশীই জানলাম। জানালাম না কাউকে কিছুই। কী যেন কী একটা ভেবে মনের অজান্তেই একটা এস, এম , এস পাঠালাম -who R u ? R. U. ORONEE? If U . . . এ পর্যন্তই। পরীক্ষা নাকের ডগায়। ২/১ এর মধ্যেই চট্টগ্রাম যেতে হবে। বড় অঙ্কের একটা ধান্দাও হাতে। ৭/৫ ভেবে সঙ্গে নিলাম সেন্টু-সাকু বিপ্লবদা কে। সঙ্গত কারনে আমাকেও মজা করতে হয় সেন্টুর সঙ্গে- ‘‘আমারে সই ছুঁইয়োনা ছুঁইয়োনা . . . কোন ধান্দাতে যেমনটা বিনোদন দরকার আর-কী ? সাকুর সুবাদে- সেন্টু প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে ! . . . কে সেই ভাগ্যবতী? বিপ্লবদার চাপাচাপিতে সাকুর উত্তর- অরণী ! আবার ও সেই অরণী ! হায়রে অরণী-রে ! এমন একটা মেয়ে, একই সংগে এত ছোট্ট একটা জায়গায় আছি। যার কথা এত শুনি- আজ প্রায় ৬ মাস। অথচ আজ অবধী তাকে চিনতেই পারলাম না- দেখতে পারলাম না।

# সেন্টু, কাল তো আমাদের ফেয়ারওয়েল। তোমার ‘‘ও’’ আসলে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিও তো।
+ দাদা কী যে বলেননা। আপনিও আমার সঙ্গে . . .।
# না না, সত্যিই আমি চিনিনা। আমি কি গায়ে পড়ে কোন মেয়ের সংগে কথা কথা বলতে যাব ?
+ ঠিকা’ছে . . . আপনি কাল একটু সকালে কলেজে আসবেন।
# (হাসতে হাসতে) তা ক’টায়?
+ এই ধরেন যে সকাল সাড়ে আটটা / ন’টার মধ্যে।

অরণী, আজ তোমার জন্মদিন (পরে জেনেছি)। তোমার কোন জন্মদিনে শুভ কামনা জানানোর ধৃষ্টতা আমার নাই। অরণী, তোমার সংগে কথা বলতে প্রায়ই মাঝে মধ্যে একটা শব্দ বেশী ব্যবহার করতাম। যে কারণে তোমার কথিত এক বন্ধু প্রায়ই আমাকে শ্রদ্ধা ভরে শাষন করতো। আজ থেকেই সেই ‘‘কাকতালীয়’’ ব্যপারটির প্রথম প্রতিফলন। বেলা ১১/২৩ মি:। কলেজে আসার কোন ইচ্ছেই নাই। বিদায়-টিদায় ওসব আমার মনে কোন ক্রিয়া-প্রতক্রিয়া করছেনা। তা ছাড়া হাতে বেশ ক’টা ধান্দাও। তবুও আসতে হলো। তরুণ আসবে এক/দেড় ঘন্টার জন্য। ওকে সময় দে’য়া হয়েছে। কলেজে ঢুকতেই সেন্টু ডাকদিলো। হোস্টেলে গেলাম।

+ এত দেরিতে আসলেন যে?
# কাজটা তো শেষ হয়নি। আরও ক’দিন লাগবে তা-ই।
+ আচ্ছা আপনি কি কাউকে কোন মেসেজ- টেসেজ দিয়েছেন?
# মেসেজ, মে-সে-জ . . . নাতো ! তবে প্রায়ই দে’য়া হয়। কাকে ? নাম্বারটা বলো তো।
+ কোন মেয়েকে . . .
# তাতো প্রায়ই দে’য়া হয়। দু’একটা অপশন বলো তো ? তাতে কী বলেছি ? খারাপ কিছু ?
+ না- না।
+ অরণী আমাকে ডেকে নিয়ে বললো . . .
# ও...... সেই কথা। এটা তাহলে অরণীই। সে-ই অরণী। তার মানে তোমার অরণী ! আমিতো অসংযত কিছূ বলিনি ওকে। শধু জানতে চেয়েছি . . .। ওকে বলো, মেসেজটা আমিই পাঠিয়েছি। প্রয়োজনে আমার সাথে কথা বলতে বলো। বলবে, তুমি তো আমার ডার্লিং তোমার সংগে আমার এক সিনিয়র ভাই প্রেম করতে চায়......। (সেন্টুর সঙ্গে যতটা ফান করা যায় )
+ এ্যঁহ্, আপনার সংগে ‘‘ও’’ প্রেম করতে ধুতুরা ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যান . . .।

আজও দেখা হলোনা, কথা হলো না- চিনলাম না। তরুণ ও আমি চলে আসতে উদ্ব্যত। মাইক্রোফোনে ঘোষনা- অনুষ্ঠান শুরু হতে যাচ্ছে। কী যেন কী মনে করে সামনে গিয়ে বসলাম। অনুষ্ঠান শুরু হলো একটা ঘোরের মধ্যে পড়ে গেলাম। কিছুটা আবেগ তাড়িত। এক্ষুনি ফুল দিয়ে বিদায় জানানো হবে- অভিনন্দিত করা হবে। সবার সংগে আমাকেও। ছাত্র/ছাত্রীদের মধ্যে সর্ব প্রথম আমার দিকে আসছে একটি মেয়ে। অচেনা। তবে ভারী চেনা চেনা। মনে হয় হাজার বছর ধরে চিনি। খেয়াল করলাম একটু অপ্রস্তুত অবস্থায় আমার দিকে রজনী গন্ধার ডাঁটা গুলো বাড়িয়ে ধরলে, আধ বসা আধ দাঁড়ানো অবস্থায় ডাঁটাগুলো ধরতেই আমার সলজ্জ আবেগাপু­ত কন্ঠে কেবলমাত্র ধন্যবাদ শব্দটুকুই অস্ফুট স্বরে বেরিয়ে এলো। বসেই নির্লিপ্ত। পাশে বিপ্লব দা’কে-

# মেয়েটি কে দাদা?
+ (মুচ্কী হেসে) এটাই অরণী ! সেন্টুর অরণী !

অ-র-ণী ?!?!?! কতক্ষন যে ঘোরের মধ্যে থেকেছি আজও বলা সম্বব না। পায়ের নিচে মাটি নেই। পেছনে চেয়ার আছে কি-না, জানিনা। দুই কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে। বার বার দেখতে ইচ্ছে করছে। পেছন ফিরে তাকাতে পারছিনা। অনুষ্ঠান শেষ হলো। হার্টবিট বাড়তে শরু করলো। সামনে বোর্ড রাখা। অটোগ্রাফ দিতে পারছিনা। হাত কাঁপছে। শরীর কাঁপছে। পা কাঁপছে। সারা পৃথিবী কাঁপছে।

অরণী, তোমাকে নিয়ে এ আমার অব্যক্ত বেদনার ক’টা ছত্র। এরপর থেকে যখন শধুই ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকতাম তোমার দিকে। কখনোও জানতে পেরেছ আমার ভেতরটাকে ? জানিনা। এ-ও জানা নেই এত দূরে থেকেও কী করে কাউকে এতটা ভালোবাসা সম্ভব। তা-ও আবার যে কী-না আমাকে একটুও ফিল করেনা, কেবল মাত্র নিক্ষেপ করে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ঘৃনাটুকুই। যাকে একটু দেখতে আমার সব প্রতিরোধ ভেঙ্গে যায়। কখনো খেয়াল করেছ থিউরী পরীক্ষার দিকে ?

প্রতিদিনই আমি পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকতাম ১৫/২০ মিনিট পরে। অনেকের ভীড়ে তা হয়তো তোমার চোখেই পড়েনি। দেখেছ কি কখনোও পরীক্ষার পর কিংবা আগে কেউ তোমার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতো। বুঝেছ কি কখনোও পরীক্ষা বাদ দিয়ে মাঝে মাঝে কেন বাইরে আসতাম ? কখনো বাইরে এসে তোমাকে দেখতে না পেলে কী করে যে সময়টা কাটতো, তা এখন তোমাকে বুঝাবো কী করে। প্রিন্সিপাল স্যার, সাহাবুদ্দিন স্যার ঠিকই বুঝতো- জানতো। এ নিয়ে সবার সামনে কত কথা, কত লাঞ্ছনা যে সইতে হতো ! সে তুমি বুঝতে পারতেনা- বুঝতে চাইতে না। তাহলে তখনই বুঝতে পারতাম আমাকে তোমার এতটাই অপছন্দ। তখনোও হয়তো একটা সুযোগ ছিলো নিজের সঙ্গে তোমাকে না জড়ানোর। কিন্তু তুমি তা বুঝালে এতটাই পরে যে, তখন কীকরে যে নিজেকে ফেরাব জানা নেই। আমি না হয় জানাইনি, তুমিতো আমাকে তোমার কথা বোঝাতে পারতে। তা-না করে শুধু এড়িয়েই চলেছ। কখনোও কোন কথাও বলোনি বলতে চাওনি। তাই অপেক্ষায় থেকেছি, যদি কখনো ভুল করে জানতে চাও আমাকে। কতভাবে যে তোমাকে বুঝাতে চেয়েছি ! আমার অজান্তেও কেউ কেউ বোঝাতে চেয়েছ্ েযে সম্মন্ধে আমি কিছুই জানতামনা। জেনেছি অনেক পরে (তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ)। তার পরও তুমি বোঝনি। হয়তো বুঝেছ কিংবা না বোঝার অভিনয় করেছ। মনে পড়ে তোমাকে ফোন করার দিন গুলির কথা ? আমার হয়ে তোমাকে যারা ফোন করতো তাদের ফোনবিলসহ সমস্ত কার্ড আমাকেই দিতে হতো। তোমাকে ফোন করার কল্যাণে অনেকেই তাদের ফোন ব্যবসা চাঙ্গা করতে পেরেছে। তুমি কি আজও জানতে পারনি আমার প্রদর্শনীর প্রস্তুতি কতদূর ছিলো ? কী জন্য তার কী হলো ? আমি এখনোও আশায় আশায় আহত, তুমি কোন একদিন আসবে আমার শিল্প কর্মের ভাঙ্গা টুকরো গুলি দেখতে। যেগুলো অনেক অনেক দিন পরও তোমার মতই আমার হৃদয়ের সর্বোচ্চ স্থানকে অলংকৃত করে রাখবে। আর আমি ? হ্যাঁ, এই আমি শুধু হা- করে তাকিয়ে থাকতাম তোমার দিকে। তুমি মুখ ফিরিয়ে নিতে। তুমি কি কখনোও উপলব্ধি করেছ, তখন আমার ভেতরটায় কী ঘটতো? পারনি জানি। কখনো ভুল করে, ইচ্ছার বিরুদ্ধে ফোন ধরলে সে দিনটা কীযে আনন্দে কেটেছে তা-ও বোঝনি। বুঝেছে তোমার কথিত বন্ধুরা। আর সে সুযোগটা ওরা যথার্থই কাজে লাগিয়েছে।

আমি জানিনা এসব পাগলামোর কী মানে হয়। কতবার যে বুঝিয়েছি নিজেকে ! আমার “আমি”টা তো বুঝেইনি, বরং উল্টো আমাকে ধিক্কার দিয়েছে- কাপুরুষ, অমানুষ আর ব্যক্তিত্বহীন বলে। কিন্তু আমিতো জানি, তুমি ফোন না ধরলে আমার কী ঘটতে পারতো। তারচে’ বরং তোমার মুখে একজন- ব্যক্তিত্বহীন, রাস্তার ছেলে, অমানুষ . . . শোনার কষ্টটাই অনেক ভালো ছিলো।

আহ্ অরণী- আর পারছিনে, বুকের সেই ব্যথাটি আবার বাড়ছে . . .। আচ্ছা, কখনোও কি জানতে পেরেছ আমাদের যে কোন একটা ফোন কলের “শান-এ-নজুল” ? অবশ্য না জানার কোন হেতুই নেই। কারন, বরাবরই তো মিথ্যের বেসাতি করে গেলে ! মনে পড়ে তুমি আমাকে History Channel দেখতে বললে . . . তোমার বন্ধুরা তখন কে কোথায় ছিলো . . . ? তুমি কি জানতে, তোমার বন্ধুদেরকে কোন Message পাঠালে তার জবাবটা কে Send করে দিতো ? Same to U- 25 December, As U’r Wish- 26 December, God Invented Us . . . -15 December, Friendship Consist In Forgetting . . . -13 November. . . ইত্যাদি . . .। তা- তো তোমার জানার কথা নয়। কেন জানবে দুরন্ত পাগলামোর সেই দিন গুলোতে আমরা কে কোথায় ছিলাম ? অবাক হবার বিষয় নয়। হ্যাঁ, আমরা একই লেপের নিচে ঘুমাতাম। আর . . .।

কখনোও কি তুমি শুনতে পেয়েছ, তোমাকে নিয়ে কত বিশ্রী কথার ঝড় বইতো তোমার কথিত বন্ধুদের মুখে ? কতটা নিচু, কতটা বাজে, অসভ্য মন্তব্য তৈরী হতো তোমাকে ঘিরে ? তোমার প্রাণাধিক প্রিয় সকল বন্ধুদেরকে ধন্যবাদ- অজস্র ধন্যবাদ, যারা তোমার সম্পর্কে অশ্লীল কথাগুলি আমাকে শুনিয়ে আমার মঙ্গল কামনা করেছে- তোমার থেকে (পথের কাঁটা) আমাকে দূরে সরিয়েছে। এখনোও তোমাকে যতটা ভালোলাগে ঠিক ততটাই অসহ্য লাগে তোমার সম্পর্কে তাদের মুখে যখন কোন বাজে কথা শুনি।

তোমার সবটাই আমার ভালোলাগে। ভালোবাসি এখনো, তা থাকবেও যতদিন আমি থাকবো। তারপরও তোমাকে ভুলে থাকতে চাই। বাস্তবতাকে গ্রহণ করে আমি অনেক দূর যেতে চাই। কিন্তু কী করবো, পারিনা যে ! খুব কষ্ট হয়। আমি যে তোমাকে নিয়ে আমার আবেগ গুলোও প্রকাশ জানিনা- জানিনা নিয়ন্ত্রন করতেও। শুধু পাগলের মত কাঁদতেই জানি এটুকু লিখতে কতবার যে খসড়া পাতাটা ভিজে গেল ! সময়ের অভাবে লেখাটাও ছোট করতে পারিনি। তবে কিছুটা হালকা লাগছে, অসম্পূর্ণ, এলোমেলো ক’টা কথা তোমাকে বলতে পেরে। আচ্ছা, তুমি এ লেখার পূরোটা পড়েছ তো ? তোমার বন্ধুদেরকে দেখাবে তো ? আমাকে চিনবে তো ?
ত্রিবেদী

(আগের লেখা)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৫:১০
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার মায়ের চৌহদ্দি

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১২ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫



আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×