'মানি' অর্থাৎ 'টাকা'র নাম শুনলেই কেমন যেন বাহাদুরী, আধিপত্য ইত্যাদির ডংকা কর্ণপাত হয়। আমরা অনেকেই 'একটি পয়সার আত্মকাহিনী' নামক রচনা পড়েছি। কিন্তু একটি টাকার আত্মকাহিনীতো কেউ হয়তো পড়া বা শোনার ইচ্ছা করিনি। আজকাল এক টাকার 'কয়েন'ও বেরিয়েছে। তবে কি ক্রমাগত বাংলাদেশে কোন না কোনোদিন 'টাকা' নামটি উঠে যাবে? যদিও ভাবি টাকা উঠে যাচ্ছে, তবুও বহির্বিশ্বে কিন্তু এ 'মানি বা টাকা উঠে যাবার কোন সম্ভাবনা ভাবতে পারি না। কেননা, এই টাকা সুদূর ৮১২ সালে জগতের সবচেয়ে বেশি মানুষের দেশ চীনে আত্মপ্রকাশ করে পাকাপোক্তভাবে আসন পেতেছে।
তবে তার ব্যাপক প্রচলনও শুরু হয় ৯৭০ সালে। ইউরোপে নোটের প্রচলন হয় ১৬৬১ সালে সুইডেনের স্টকহোমে। স্টকহোম জাদুঘরের প্রথম নোটটি ছাপা হয়েছিলো ১৬৬২ সালের ৬ই ডিসেম্বর। ইংল্যান্ডের সবচেয়ে পুরনো নোটটির জন্ম ১৬৯৯ সালে ১৯ ডিসেম্বর। স্বর্ণখচিত সবচেয়ে বড় আকারের ব্যাংক নোট বের করেছিল জাপান। 'টেনসিয়ো ওবান' নামের এই নোটের জন্ম প্রায় চারশত বছর আগে। আকার ছিল ১৭ : ১০ সেন্টিমিটার। সবচেয়ে ক্ষদ্রাকৃতির নোট বের করার কৃতিত্ব রুমানিয়ার। দশ এককের এই নোটটির আকার ছিল ২.৭৫ : ৩.৮ সেন্টিমিটার।
জন্ম নিয়েই থেমে নেই, সে এবার জনপ্রিয়তাকে সস্বল করে দেখাতে লাগল তার আধিপত্য। ১৮০৪ সালে প্রবর্তিত এক সেট মুদ্রার বর্তমান মূল্য এক মিলিয়ন ডলার। আমেরিকার এই মুদ্রাগুলো বর্তমান অতি দূর্লভ। রৌপ্য খচিত এই মুদ্রার সেটটি ১৯৭৯ সালে লেন্সটর মার্কিং নামে জনৈক ব্যবসায়ী স্পেনের রাজাকে উপহার দিয়েছিলেন। ১৮০৪ সালের রুপার একটি ডলার নয় লাখ নব্বই হাজার ডলারে বিক্রি হয়েছে শিকাগোর এক নিলামে।
সম্রাট নেপোলিয়ন নোটকে জনপ্রিয় করার জন্য পাঁচ ফ্রি মূল্যের এক মুদ্রায় অতি সূক্ষ্ম কাগজের একটি চেক ছেপে বাজারে ছেড়েছেন। যে এই চেক দেখাতে সমর্থ হবে সে এক মিলিয়ন ফ্রি পাবে। কিন্তু অদ্যাবধি কেহ দেখাতে পারেনি। যদি কোন ভাগ্যবান এখনও সেই ক্ষুদ্র চেকটি দেখাতে পারেন তবে সেই অর্থ তাকে দেওয়া হবে। ১৯৫৮ সালের ১৩ জুন লন্ডনের একটি নিলামে রাজা তৃতীয় হেনরীর সময়কার কুড়ি পেন্সের একটি মুদ্রার ডাক উঠেছিল একাত্তর হাজার পাঁচশত পাউন্ড। পৃথিবীতে এ জাতীয় মুদ্রা মাত্র ছয়টি।
হয়তো কোন কালে আমাদের বর্তমান এক টাকার নোটের নিলাম উঠবে একলাখ টাকা। এর জন্য চলনু আমরা বেশি করে এক টাকার নোট জমিয়ে সেই দিনের জন্য অপেক্ষা করি।