somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহাজোট সরকারের মন্ত্রীসভায় ছাত্র ইউনিয়নের হাতে গড়া কর্মীদের নিরংকুশ প্রাধান্য

০২ রা আগস্ট, ২০০৯ দুপুর ১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মহাজোট সরকারের মন্ত্রীসভায় ছাত্র ইউনিয়নের হাতে গড়া কর্মীদের নিরংকুশ প্রাধান্যঃ
মহাজোট সরকারের মন্ত্রিসভায় অর্ধেকেরও বেশি মন্ত্রী অতীতে কখনোই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন না। বেশীর ভাগই সরাসরি বাম রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। কেউবা ছাত্রজীবনে বাংলাদেশে প্রগতিশীল আন্দোলনের পুরোধা কমিউনিষ্ট পার্টি-ওয়ার্কার্স পার্টির ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন (অবিভক্ত / মেনন গ্রুপ / মতিয়া গ্রুপ) করতেন। চাকরিজীবী থেকে রাজনীতিবিদ হয়েই মন্ত্রিপরিষদের সদস্য হয়েছেন এমন সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। অতীতে ছাত্রলীগ করেছেন কিংবা আওয়ামী লীগের পোড় খাওয়া নেতা এমন ব্যক্তিত্বদের এবারের মন্ত্রিসভায় স্থান খুবই সামান্য। তবে পারিবারিক ঐতিহ্যের কারণে রাজনীতিতে এসে মন্ত্রী হওয়া লোকের সংখ্যাও বেশ।
বর্তমান সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এক সময় জাতীয় পার্টি করতেন। এরশাদ সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন। ছাত্র জীবনে ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। অতীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে তার সংশ্রব ছিল না। নবম সংসদ নির্বাচনে অন্যতম প্রভাবকের ভূমিকা ছিল তার। সেই পথ ধরেই তিনি নীতিনির্ধারণী ব্যক্তিত্বে পরিণত হন।
কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী ছাত্রজীবনে ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। ছাত্র ইউনিয়নের মতিয়া গ্রুপের নেত্রী ছিলেন ষাটের দশকের তুখোড় এই নেত্রী। ছিলেন ডাকসুর জিএস। পরে ন্যাপে (মোজাফফর) যোগ দেন। এরও পরে তিনি যোগ দেন আওয়ামী লীগে।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ আওয়ামী লীগের কোনো পর্যায়ের নেতা ছিলেন না। সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী সমিতিতে আওয়ামী লীগের প্যানেলে নির্বাচিত হয়ে রাতারাতি আলোচনায় আসেন। জরুরি অবস্থার সময় শেখ হাসিনার পক্ষে আইনি লড়াই করেন। আইনি লড়াইয়ে অংশ নিয়ে সংসদ নির্বাচন না করলেও আইন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হয়েছেন টেকেনোক্র্যাট কোটায়। ছাত্রজীবনে ছাত্র ইউনিয়ন করতেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অবঃ) এ কে খন্দকার এক সময় জাতীয় পার্টি করতেন। তিনি এরশাদ সরকারেরও পরিকল্পনামন্ত্রী ছিলেন। তার বড় পরিচয় তিনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার এবং উপ-অধিনায়ক ছিলেন। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন না। তার পরিবার মুসলিম লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত। ফরিদপুরের সবাই তাদের মুসলিম লীগের লোক বলেই জানতেন। এখন তার বড় পরিচয় তিনি প্রধানমন্ত্রীর বেয়াই।
সরকারের তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ এক সময় সরকারি চাকরি করতেন। আইসিডিডিআরবি?র পরিচালক (জনসংযোগ) ছিলেন। আওয়ামী লীগের নিষ্ঠাবান সমর্থক হলেও সাংবাদিক হিসেবে তার পরিচিতি আছে। একসময় ছাত্র ইউনিয়ন নেতা ছিলেন। খাদ্যমন্ত্রী ড? মো?আব্দুর রাজ্জাক ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ করতেন। তিনি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক। ১৯৬৬-১৯৭০ সাল পর্যন্ত কমিউনিস্ট পার্টির ছাত্র সংগঠন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ছিলেন। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী জি এম কাদের জাতীয় পার্টির নেতা। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) লেখাপড়ার সময় তিনি ছাত্র ইউনিয়ন করতেন । মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির এমপি হিসেবে মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন। তিনি সাবেক সেনানায়ক থেকে রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ছোট ভাই। বাণিজ্যমন্ত্রী লে. কর্নেল (অবঃ) ফারুক খান সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। ৯১ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। গোপালগঞ্জে তার পরিবারের সদস্যরা মুসলিম লীগ করতেন। সাবেক এই সেনাকর্মকর্তা মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানে ছিলেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে তার অতীতে সংশ্রব ছিল না।
যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন এক সময় সরকারি চাকরি করতেন। চাকরি ছাড়ার পর তিনি ব্যবসায় মনোনিবেশ করেন। পরে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। একজন শিল্পপতি হিসেবে তার খ্যাতি রয়েছে। ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর তিনিও প্রদীপের আলোয় আসেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক পেশায় একজন চিকিৎসক। তিনি আওয়ামী লীগের অংগ সংগঠন স্বাধীনতা চিকিতসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি ছিলেন। এর আগে ছাত্র জীবনে ছাত্র ইউনিয়ন করতেন।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ছাত্রজীবনে ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি ছিলেন। ১৯৯১ সালে সিপিবি?র সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। মুলত সিপিবি ভেঙে যাওয়ার মুহূর্তে এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের কিছু দিন পর তিনি বামপন্থা ছেড়ে দেন। ১৯৯৪ সালে তিনি আওয়ামীলীগে যোগ দেন।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অবঃ) এ বি এম তাজুল ইসলাম সামরিক বাহিনীতে চাকরি করতেন। জিয়া হত্যাকাণ্ডের পর তার চাকরি চলে যায়। পরে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। বিজ্ঞান ও তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান কোনো দিন ছাত্রলীগের রাজনীতি করেননি। বুয়েটে লেখাপড়ার সময় ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। বিশিষ্ট সাহিত্যিক শওকত ওসমানের ছেলে তিনি। অবশ্য পরে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন।
শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান খুলনার শ্রমিক নেত্রী ছিলেন। বাম রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন । গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান ছাত্রজীবনে ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। পরে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোঃ মোতাহার হোসেন সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। তিনি সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ছিলেন। চাকরি জীবন শেষে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন ছাত্রজীবনে ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। পরে যোগ দেন আওয়ামী লীগে। ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে মন্ত্রী হন।
এ ছাড়া পারিবারিক ঐতিহ্য রক্ষা করে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যারা যুক্ত হয়ে মন্ত্রী হয়েছেন তারা হলেন? এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ। আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম হচ্ছেন সাবেক রাষ্টপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের পুত্র, ডা. দীপু মনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা (চাদপুর) মরহুম আব্দুল ওয়াদুদের কন্যা এবং তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিনের পুত্র।
সুত্রঃ আমাদের সময়, ১২ জানুয়ারী ২০০৯, নয়া দিগন্ত, ২৭ এপ্রিল ২০০৯

৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×