somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কল্পনার জন্য

০১ লা আগস্ট, ২০০৯ সকাল ৭:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করা হয় ১৯৯৬ সালে। অপহরণের খবর প্রথম জানতে পাই পত্রিকা মারফত। ১৯৯৬ এর জুনের ১২ তারিখ, তখন গভীর রাত। নিজ বাড়ি থেকে এ সংগ্রামী নেত্রীকে তুলে নিয়ে যায় সাদা পোশাকধারী কিছু লোক। পরিবারের সদস্যদের চোখের সামনে। তারপর ১৩বছর পেরিয়ে গেলেও কল্পনাকে পায়নি তার পরিবার, সহযোদ্ধারা কিংবা আমরা। আমাদের দুর্ভাগ্য আকালের দিনে একজন সংগটককে হারিয়েছি আমরা। আমাদের লজ্জা- নিজেদের অপরাধ লুকাতে, দায়িত্ব এড়াতে নারীদের সায়েস্তা করতে তার বিরুদ্ধে কেচ্ছা রটানোকেই পদ্ধতি হিসেবে বেছে নিই। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সেনা কর্তৃপক্ষ তাই যেমন দায়িত্ব নেইনি এই অপহরণের তেমনই নানা রূপকথার গল্প শুনিয়েছে কল্পনাকে নিয়ে।

কল্পনা অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ালো, অধিকার আদায়ে সরব হয়ে উঠলো, অন্যদের সক্রিয় করে তুলতে চাইলো। সেনা অফিসারের সাথে অধিকার আদায়ের সংগ্রামের পথে তর্ক বাধলো। সায়েস্তা করার লক্ষে তাকে বাড়ি তেকে অপহরণ করা হলো। তারপর কি হলো? তারপর আমাদের জানা নেই। শুধু দেখছি একটার পর একটা বছর পেরিয়ে গেলেও কল্পনা আমাদের মাঝে ফিরে আসছে না। আর দেখছি রাষ্ট্র তার নাগরিকদের অধিকারের প্রশ্নে কখনো কখনো কি নির্বিকার থাকতে পারে!

অপহরণের প্রত্যক্ষদর্শী কল্পনার ভাই দাবি করেন, কল্পনাকে সেনা সদস্যরা তুলে নিয়ে গেছে। কিন্তু তার এই বক্তব্যকে নিছক বক্তব্য াকারেও গ্রহণ করা হয়নি, উড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বরং অপহরণের একমাসের বেশি সময় পর ২৪ জুলাই ১৯৯৬ সেনা কর্তৃপক্ষ এ অপহরণ সম্পর্কে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি হাজির করে। সেখানে বলা হয়, 'স্তানীয় সূত্রমতে, কল্পনা চাকমার বাড়ি গিয়ে তার নিত্যব্যবহার্য কোনকিছুই পাওয়া যায়নি। কাজেই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে তিনি অপহরণ হয়েছেন নাকি স্বেচ্ছায় আত্মগোপন করে শান্তিবাহিনীর অপপ্রয়াসকে সমর্থন দিচ্ছেন? (সূত্র: কল্পনা চাকমার ডায়েরি, হিল উইমেন্স ফেডারেশন কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত, ২০০১; পৃ-১৩)। প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা ছিলো, অপহরণের আগে কল্পনা আন্তর্জাতিক ধরিত্রী সম্মেলনে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলো সেহেতু নিশ্চয় তার আন্তর্জাতিক পাসপোর্ট ছিলো। অতএব তিনি বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন। যাতে পাবর্ত ইসু্যকে আন্তর্জাতিক ফোরামে নতুন করে উপস্থাপন করা যায়।

এসব খোঁড়া যুক্তির বিপরীতে কথা বলার জন্য যথেস্ট সময় আমরা পার করে এসেছি। কল্পনা ফিরে এলো না কেনো? নাকি এখনো সে ‍'শান্তিবাহিনীকে সহায়তা করার জন্য আত্মগোপন করে আছে?' একজন বিপ্লবী রণকৌশল হিসেবে স্বেচ্ছায় এমন কৌশল কেউ কোথাও নিয়েছে কি? যে কিনা পার্বত্য প্রসঙ্গকে আন্তর্জাতিক প্রিসরে তোলার জন্য অপহরণের নাটক সাজাতে পারে সে কি গত ১৩বছরে পরিবার ও সহযোদ্ধাদের কাছে ফিরে আসার জন্য অন্য আরেকটি নাটক সাজাতে পারতো না? যারা অপহরণকে নাটক হিসেবে চিহ্নিত করে প্রেসবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে এর উত্তরও তারাই ভালো দিতে পারবে।

কি অন্যায় করেছিলো কর্পনা চাকমা। তার অন্যায় সে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর একজন নারী হয়ে বিপ্লবের স্বপ্ন দেখতে এবং দেখাতে চেয়েছে। একজন সংগঠক হয়ে উঠেছিলো সে, এটা অন্যায়। অন্যায়-অনাচার-নিপীড়ন প্রশ্নে নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে তর্কে নামার দুঃসাহস করেছিলো সে, এটা অন্যায়। অতএব তাকে সড়িয়ে দিলে কয়েকটা কাজ একসাথে সম্পাদিত হয়। নারীকর্মীদের মনোবল ভেঙে দেয়া যাবে, অধিকারের লড়াইয়ের সকল কর্মীর ওপর একধরনের চাপ সৃষ্টি করা যাবে, কেউ আর মুখ খোলার সাহস না করে সেটা নিশ্চিতও করা যাবে। কল্পনা কোন সন্ত্রাসী ছিলেন না বলেই তার হদিস পাওয়া যায়নি। কল্পনা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর একজন নারী বলেই এতোরড় ঘটনা চাপা পড়ে যায়, সংখ্যাগরিষ্ঠরা সহজে কেউ আওয়াজ তোলে না। তদন্ত কমিটি হয় কিন্তু রিপোর্ট পেশ হয়না। ১৩বছর পেরিয়ে এখনো আমরা চাই তদন্ত হোক এবং প্রতিবেদন জনসম্মুখে হাজির করা হোক। সংখ্যাগরিষ্ঠের দলের একজন হিসেবে আমাদেরই এই দায় বহন করে নিয়ে যেতে হবে, সেটা খুব সহজ হবে না, এটা নিশ্চিত করে বলতে পারি।
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×