somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ফকির ইলিয়াস
আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ভুলের কর্তৃত্ব, শুদ্ধতার অতন্দ্র মনীষা

০১ লা আগস্ট, ২০০৯ রাত ৩:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভুলের কর্তৃত্ব, শুদ্ধতার অতন্দ্র মনীষা
ফকির ইলিয়াস
------------------------------------------------------------------
রাষ্ট্র পরিচালনায় ভুলের কর্তৃত্ব সবসময়ই গণমানুষের জন্য অশান্তি বয়ে আনে। আর তা যদি হয় ভোগবাদীদের দ্বারা তৈরি, তবে তো কথাই নেই। একটি রাষ্ট্রে, স্বার্থপর ভোগবাদীদের সম্মিলিত একটি চক্র সব সময়ই তৎপর থাকে। তারা মানুষের স্বার্থ শুধু হরণই করে না, উচ্চ পর্যায়ে নিজেদের একটি সিঁড়িও তৈরি করে রাখে। সেই সিঁড়ি ব্যবহার করে তারা শাসকদের কারো কারো আনুকূল্য পায়। ফলে দুর্নীতি চরম আকার ধারণ করে এবং তা একটি রাষ্ট্রকে ক্রমশ দেউলিয়া করে তোলে।
বাংলাদেশে এনজিওগুলো কী করছে, তা আমরা সবাই কমবেশি জানি। অনেকেই মনে করেন এনজিও মানেই ত্রাণকর্তা কিংবা ত্রাতা। কিন্তু এই এনজিওর আড়ালে বাংলাদেশে একটি অশুভ শক্তিও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে গেলো জামাত-বিএনপি জোট সরকারের সময়ে। এনজিওর নামে দেশে জঙ্গিবাদী চক্রকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হয়েছে- তা পত্রপত্রিকায় আমরা পড়েছি। দাদন ব্যবসায়ী বলে পরিচিত এনজিওগুলো তাদের ঋণ ব্যবস্থা দুদিনের মধ্যেই মানুষের হাতে পৌঁছে দিতে পারলেও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো তা ছমাসেও পারে না। কেন পারে না? এই না পারার প্রধান কারণটি হচ্ছে দীর্ঘসূত্রতা। ব্যাংকের ঘাটে ঘাটে ঘুষ পাওয়ার হিড়িক। সর্বোপরি ঋণগ্রহীতা দরিদ্র কৃষককে বিভিন্নভাবে নাজেহাল করার অপচেষ্টা।
দেখা যায়, যারা কোটিপতি, যারা কোটি কোটি ঋণ নিয়ে নিজেকে ‘ঋণখেলাপি’ ঘোষণা করে তারা ঋণ পেয়ে যায় সহজেই। ঋণ নেয় বিভিন্ন নামে। যতো সমস্যা সবই দরিদ্র কৃষকের জন্য। কোমরে দড়ি দিয়ে বেঁধে নেয়া হয় সেই দরিদ্র কৃষককেই। অথবা ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহনন করতে হয় সেই কৃষককেই। ঋণখেলাপি ধনিক শ্রেণী আত্মহত্যা করে না। বরং ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা মেরে দিয়ে আনন্দে উল্লাস নৃত্য করে। রাষ্ট্রের রাজনীতিকরাও তাদেরকে মদদ দেন।
এই ব্যবস্থাটি দেশের সর্বক্ষেত্রে প্রতিফলিত হলে, সেখানে আর ন্যায়বিচার চাওয়া-পাওয়ার কোনো সাহস থাকে না। ভুলের কর্তৃত্ব এভাবেই ক্রমশ গ্রাস করে রাষ্ট্রের কাঠামো-অবকাঠামো।
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি খবর আমাকে চমকে দিয়েছে। দেশে নাকি ‘বিকল্প ধারার এমবিবিএস ডাক্তার’ নামে একদল চিকিৎসকের খোঁজ পাওয়া গেছে। এদের সংখ্যা ১২ হাজারের মতো। এরা নাকি এই ডিগ্রি নিয়েছেন ‘প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি’ থেকে। যে বিশ্ববিদ্যালয়টির অনুমোদন সরকার দেয়নি। এসব ডাক্তাররা নিজেদেরকে ‘অলটারনেটিভ সিস্টেম’ (এএস) এবং ‘অলটারনেটিভ মেডিসিন’ (এএম) ডিগ্রিধারী বলে দাবি করছেন।
বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এদেরকে কালো তালিকাভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। তারা বাংলাদেশে একটি বিকল্প সংগঠনও তৈরি করেছে ‘বিএমএ-এর আদলে। যার নাম ‘বাংলাদেশ কম্বাইন্ড মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল’। প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদ থেকে জানা যাচ্ছে, এরা তাদের অর্থ আয়ের কেন্দ্র হিসেবে গ্রাম আর টার্গেট হিসেবে গ্রামের সহজ সরল প্রাণ মানুষকেই বেছে নিচ্ছে। মোট কথা গ্রামীণ জনপদের মানুষই যে এখনো শোষক-প্রতারকচক্রের টার্গেট তা আবারো প্রমাণিত হচ্ছে এই ঘটনাবলীর মাধ্যমে। তথাকথিত শিক্ষিত শ্রেণী যদি এভাবেই গ্রামের মানুষকে ঠকাতেই থাকে- তা হলে এসব মানুষের সত্যিকার মুক্তির উপায়টি কি?
দুই.
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেই সাক্ষাৎকারে তিনি রাষ্ট্র বিষয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথাবার্তা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ঋণখেলাপি তৈরি হয়েছে দুর্নীতি ও ভ্রান্তনীতির কারণে। তিনি সেই সাক্ষাৎকারে রূপালী ব্যাংকটিকে প্রবাসীদের কাছে বিক্রির সুপারিশও করেছেন। তিনি বলেছেন, এই ব্যাংকটিকে ‘রূপালী প্রবাসী ব্যাংক’ এ পরিণত করা যেতে পারে।
বর্তমান সরকার কল্যাণমুখী নানা পরিকল্পনার কথা বলছেন। কিন্তু এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের যে শক্তি এবং সাহসের দরকার তা সরকারের আছে কি? রাষ্ট্রে প্রশাসনিক জটিলতাকে তীব্র আকারে রেখে কোনো প্রকার অগ্রসরমানতাই সম্ভব নয়। আমরা সাম্প্রতিককালেও দেখেছি সচিবালয়ে কর্মচারীরা জোর গলায় মিছিল করছেন। ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘জেলা প্রশাসক সম্মেলনে’ বিভিন্ন জেলার ডিসিরা তাদের সমস্যাবলীর কথা তুলে ধরেছেন। প্রধানমন্ত্রী তা সমাধানের আশ্বাসও দিয়েছেন। এসব বিষয়গুলোর সমন্বয় সাধন করা দরকার।
এই লেখাটি যখন লিখছি তখনই টিভি সংবাদে দেখলাম, বর্তমান সরকার পার্বত্য শান্তিচুক্তির বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সে অঞ্চল থেকে বড় সংখ্যক সেনা প্রত্যাহারের প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন। গত টার্মে আওয়ামী লীগের ক্ষমতাসীন সময়েই ‘পার্বত্য শান্তিচুক্তি’ হয়েছিল। জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর তা তামাদি হয়ে যায়। বর্তমান মহাজোট সরকার তাদের নির্বাচনী এজেন্ডায় এই চুক্তিটি পূর্ণ বাস্তবায়নের ওয়াদা করে। সেই লক্ষ্যেই সেনা প্রত্যাহার পর্ব শুরু হয়েছে। উদ্যোগটি অত্যন্তই ভালো। কারণ পার্বত্য অঞ্চলে যে অমানবিক তৎপরতা হয়েছে তা কোনোভাবেই মানা যায় না। পার্বত্য অঞ্চলের মানুষেরা নিজস্ব কৃষ্টি, সভ্যতা নিয়েই তাদের প্রজন্মকে গড়ে তুলবে সেটাই প্রত্যাশিত। সেখানে দখলের নামে যে ভুল কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা দীর্ঘদিন ধরে করা হয়েছে তা পেশিতন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়।
তিন যুগেরও বেশি বয়সী বাংলাদেশ এখনো দাঁড়িয়ে আছে গুচ্ছ গুচ্ছ ভুল কর্তৃত্বের হাতে। এসব কর্তারা সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকভাবে বিভিন্ন অশুভ শক্তির প্রতিভূ। এদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে এই প্রজন্মকে। শুদ্ধতার অতন্দ্র মনীষা প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে গ্রামীণ জনপদের মানুষকে সতর্ক, সাহসী করে গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে আটষট্টি হাজার গ্রামই বাংলাদেশের মূল শক্তিবিন্দু। সেই কৃষক মজুর সমাজই শ্রেষ্ঠ শক্তি যারা এ দেশের ধান, পাঠ, সবজি, ফলমূলসহ সকল আহার্যের জোগানদার। সেই গ্রাম থেকে উঠে আসা মানুষেরাই শক্তি যারা রিকশার প্যাডেল চাপে কিংবা গার্মেন্টসের চরকা ঘুরায়। গণমানুষের সঙ্গে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক প্রচারণা বন্ধ হলেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে অনেক ধাপ। আর এজন্য এই প্রজন্মকেই নিতে হবে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা।
৩০ জুলাই, ২০০৯
-------------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ। ঢাকা। ১ আগস্ট ২০০৯ শনিবার প্রকাশিত

ছবি- গ্রেগলি কাকসো
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০০৯ রাত ৩:৪৫
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×