somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঢাকা TO চট্টগ্রাম TO ঢাকা…Journey by BIKE( মোটরসাইকেল) এবং কিছু ভালোবাসা…

৩১ শে জুলাই, ২০০৯ রাত ১১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক দিন ধরেই ইচ্ছে করছিল বাইক এ করে লং ড্রাইভ এ যাওয়ার। কিন্তু হচ্ছিল না। আমার বাগদত্তা থাকে চট্টগ্রামে। ও কে সারপ্রাইজ দেওয়ার অনেক শখ ছিল। কিন্তু মোবাইল এর বদৌলতে সে আমার প্রতিমূহুরতের খবর ই জানত।
তার জন্মদিন এ একটা সারপ্রাইজ দেওয়ার খুব ইচ্ছে হলো। ভাবতে থাকলাম কিভাবে তাকে সারপ্রাইজ দেয়া যায়।অন্য কোন উপায় না পেয়ে তার জন্ম দিনের আগের দিন তার সাথে ঝগড়া আরম্ভ করে দিলাম। পাঠক আপনি হইত ভাবছেন যে কেন ঝগড়া করলাম তাই না? কারন তার সাথে একটু পর পর ই মোবাইল এ কথা হতো। যার ফলে আমি কখন কোথায় যাই সে সব ই জানত।আর আমার একটা সখের বাইক আছে। কিন্তু ওটা ছিল ওর শত্রু। কারন ও সব সময় আমাকে নিয়ে ভয়ে থাকত এবং থাকে। আমাকে বাইক নিয়ে বের হতে না করত।
যাই হোক, আমি ঝগড়া করে কথা বন্ধ করলাম। পরের দিন খুব ভোরে আমি আমার কিউট বাইক নিয়ে বের হলাম চট্টগ্রাম এর উদ্দেশ্যে… তখন ছিল শীতের দিন।খুব করে জেকেট পরে মাথায় মাফ্লার পেচিয়ে হেলমেট পরে আল্লাহ-র নাম দিয়ে রওনা দিলাম।
এক টানে আমি চট্টগ্রাম গিয়েছিলাম। কত সময় এ জানেন? যেখানে গাড়ি তে যেতে লাগে সাড়ে পাচ ঘন্টা আমি গিয়েছিলাম চার ঘন্টা পনের মিনিট এ। খুব্বি ভালো লাগছিল লং রোড এ বাইক চালাতে। যদিও বেশ থান্ডা লাগছিল।
আমি জানতাম ও কখন বাসা থেকে বের হয় ভারসিটি যাওয়ার জন্য। আমি ওর বাসার পাশে গিয়ে অপেক্ষা করছিলাম। দেখলাম ও বাসা থেকে বের হল, সিএনজি তে উঠল। আমি বাইক নিয়ে ওর পিছু নিলাম। ও একতুকুও বুঝতে পারে নাই।বুঝতে পারলে যে কি হতো আল্লাহ-ই জানে।
ও ভারসিটি থেকে ক্লাশ করে বের হবার আগে আমি ওকে কল দিলাম। ওকে বললাম যে ওকে খুব মিস করসি। আগের দিন গুলর কথা মনে পরে যাচ্ছে। যদিও ও খুব রাগ করছিল যে ওর সাথে কেন এতক্ষন কথা বলি নাই।ও কে আগের দিন গুলর কথা মনে করিয়ে দেয়াতে ওর অ খুব খারাপ লাগছিল। আমরা একটা মিনি চাইনিজ রেস্টুরেন্ট এ প্রায় ই যেতাম। ও ভারসিটি থেকে ওই রেস্টুরেন্ট এ সামনে রিক্সা নিয়ে আসত। ওর অভ্যেস হচ্ছে রিকশা থেকে লাফ দিয়ে নামা। আমার খুব ভালো লাগতো এটা দেখে। আমি ওকে ফোন এ বললাম ওই রেস্টুরেন্ট এর সামনে যেতে ওই ভাবে লাফ দিয়ে নামতে। ও বলল গিয়ে কি লাভ আমি ত দেখতে পারব না। আমি বললাম তুমি যাও আমি ঠিক ই মন দিয়ে দেখতে পারব। ও তখন রিকশায় উঠল। আমি আগেই ওর জন্য অনেক গিফট এবং অনেক ফুল কিনে নিয়ে ওই রেস্টুরেন্ট এ উঠার সিড়িতে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ও এসে নামল সেই একি ভাবে লাফ দিয়ে। রিকশায় সারাটা পথ ফোন এ আমার সাথে কথা বলতে বলতে আসছে।

ও রিকশা থেকে নেমে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিল… আমি ফোন এ বললাম মাথা নিচু করে আছো কেন? ও বলল ” তুমি জানলে কি করে?”
আমি বললাম আমি তো জানি তুমি একা দাড়িয়ে থাকলে মাথা নিচু করে থাকো।
ও এক পায়ের হাঠু ভেঙ্গে দাড়িয়ে ছিল। আমি বললাম এভাবে হাঠু ভেঙ্গে দাড়াবে না। সোজা হয়ে দাঁড়াও। ও তখনো বুজতে পারল না। আমি ও কে বললাম তুমি যেভাবে আস্তে আস্তে হেটে রেস্টুরেন্ট এর কাছে যেতে সেভাবে হেটে রেস্টুরেন্ট এর কাছে যাও। ও যেতে চাচ্ছিল না কিন্তু আমি অনুরোধ করাতে গেল।
যখন ও সিড়িতে আমাকে দেখল তখন ও যেন আকাশ থেকে পড়ল। ও এতটাই অবাক হয়েছিল যে ওর হাত থেকে মোবাইল পড়ে গিয়েছিল। আমি সেই মূহুরতের কথা কখনই ভুলতে পারব না এবং ও নিজেও ভুলতে পারবে না।
তারপর দুই জন এ খুব ই ভালো সময় কাটালাম বিকাল পর্যন্ত। বিকেলে বিদায় নেয়ার সময় ও খুবি কান্না করছিল। আমার ও কান্না পাচ্ছিল।ও আমাকে বলেছিল আমি যেন বাইক নিয়ে ঢাকা না আসি, ট্রেন এ যেন বাইক তুলে দেই।আর আমি যেন গাড়ি তে ঢাকা আসি। কিন্তু আমি ওর সেই কথা রাখতে পারি নাই। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে যে মজা পেয়েছিলাম, তার লোভ টা ছারতে পারি নাই।
আমি মাঝ রাস্তায় থাকতে যখন জানতে পারল যে আমি বাইক নিয়ে ঢাকা ফিরছি সেই যে সে নামায এ বসেছিল , আমি ঢাকা না আসা পর্যন্ত জায়নামায থেকে উঠে নাই। যদিও এর জন্য আমি তার কাছে মাফ চেয়েছি পরে। এখন আমরা অনেক সুখে আছি। দুজন ই দুজন কে অনেক বেশি ভালবাসি এবং ভালবেসেই দুই জন এ বিয়ে করে ভালো আছি। আপনারা আমাদের জন্য দোয়া করবেন।

পাঠক আমি জানি আমার এই লেখাটা হইত আপনাদের ভালো লাগবেনা। কিন্তু আজ অনেক দিন পরে সেই সময় তার কথা মনে হওয়াতে আমি এখানে আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। এই ব্লগ এ এটাই আমার প্রথম লেখা।

আমি আপনাদের মুল্যবান সময় নস্ট করার জন্য ক্ষমা চাচ্ছি। আর একটাই অনুরোধ করব আপনারা আপনাদের প্রিয় মানুষ টিকে অনেক বেশি ভালোবাসুন। যে যতো দুরেই থাকুন না কেন ভালোবাসতে দুরত্ত কোন ব্যাপার না।

ভালো থাকুন, ভালোবাসুন ।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×