somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একুশ ও আমাদের চেতনা

৩১ শে জুলাই, ২০০৯ রাত ৮:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্যার ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ নিয়ে একটি প্রবন্ধ রচনা করতে দিয়েছেন। নোট বই নিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। এদিকে আবার কারেন্ট নেই। মোমবাতির টিমটিমে আলোয় কাজ চালাচ্ছি। হঠাত্‌ বাজখাঁই গলার কার যেন কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম, “ওটা কি লিখছ?” অতি সাধারণ প্রশ্ন। তাছাড়া আমি বেআইনী কিছু করছিলাম না। কিন্তু বাড়িতে কেউ ছিল না - মা বাবা বাইরে দাওয়াত খেতে গিয়েছিলেন। অন্ধকার আর আলো-ছায়ার প্রভাব আর সেসাথে নিস্তব্ধতা আমাকে এমন আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল যে ঘটনার আকস্মিকতায় চমকে ওঠায় হাতের ধাক্কা লেগে মোমবাতিটাও নিভে গেল।



“ওটা কি লিখছিলে?” - কণ্ঠস্বর আবার শোনা গেল।



“ভা-ভা-ভাষা আন্দোলন” (ভয়ে আমার জিহ্বা আড়ষ্ঠ হয়ে গিয়েছিল)। “কিন্তু আপনি কে?”



“আমি?” হাসির শব্দ শোনা গেল। “ভাষা শহীদদের প্রতিনিধিত্বকারী কণ্ঠস্বর বলতে পার। নাম বললে হয়তো চিনতে পারতে, কিন্তু ওটা থাক।”



“আপনি হাসছেন কেন?” সভয়ে প্রশ্ন করলাম।



“বা:! হাসব না? হাসির কাজ করলে হাসব না? ”



“ভাষা আন্দোলনের রচনা লেখাটা কি হাসির কাজ?”



কণ্ঠস্বর প্রশ্নের জবাব না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করলেন, “তোমার বই এর তাকের উপর কি বলতে পারো?”



আলো না থাকলেও উত্তরটা আমার জানা ছিল। ওখানে আমার বহুমূল্যবান হিন্দি ও ইংরেজি গানের ক্যাসেটের কালেকশন। প্রশ্নকর্তা জবাবের অপেক্ষা না করেই বললেন, “তোমার প্রিয় গান, সিনেমা সবই হিন্দি ও ইংরেজি তাই না? যে দেশী ভাষা, সংস্কৃতিকে ভালবাসে না, সে একুশের রচনা লিখবে ব্যাপারটা হাস্যকর বৈকি।”



এবার বক্তব্যের শ্লেষটা ধরতে পারলাম। প্রতিবাদে বললাম, “সব সময় যে হিন্দি-ইংরেজি নিয়ে পড়ে থাকি তা তো নয়? তাছাড়া সামনে একুশে ফেব্রুয়ারি আসছে, খালি পায়ে শহীদ মিনারে গিয়ে আমরা আপনাদের শ্রদ্ধা নিবেদনে ফুল দেব . . .।”



আমার বক্তব্য শেষ হতে না হতেই শুনতে পেলাম, “সে তো খুব ভালো কথা, ফুল দেবে। কিন্তু সে বছরের একদিন। বছরের অন্যদিন গুলোতে সেই খালি পায়ের শোক ঢাকতে হিন্দি-ইংরেজির বুট পড়ে লাথি মারবে। তোমরা বছরের একদিন বাঙ্গালী থাক, অবশিষ্ঠ দিন গুলোতে বাঙ্গালীও থাক না, ইংরেজও থাক না। শহীদ মিনারের ফুল যদি শ্রদ্ধা ভক্তির নিদর্শন হয় তবে Full Volume এ ছাড়া ইংরেজি-হিন্দি গান গুলো কিসের নিদর্শন?”



“তোমরা একুশের চেতনায় ঋদ্ধ হতে পার নি। একুশ একটা বিরাট ব্যাপার‌। বাঙ্গালি, বাংলাদেশীর রক্তের দামে কেনা এক গৌরবের অলঙ্কার এই একুশ, যা আমাদের মাতৃভাষায় কখা বলার সুযোগ দিয়েছে। পরাধীন যে দেশে শোষকের বিরুদ্ধে এইভাষার দাবীকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে আমরা বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়েছিলাম, আজ স্বাধীন দেশে তোমরা সে অধিকারকে সুলভে পেয়েও তার সদ্ব্যাবহার করছ না। লজ্জার কথা। একুশের চেতনাকে বুকে ধারণ করতে পার না বলেই তোমার এই একুশ নিয়ে লিখতে নোটবই ঘাটতে হয়। তোমার আদর্শ ঘাটতি তুমি নোট বই দিয়ে ঘোচাতে চাও, তাই না? তুমি যদি একুশের চেতনা বুঝতে, তবে বুঝতে পারতে আমাদের আপন ভাষা মাতৃভাষা বাংলাও এক রত্নভাণ্ডার। আমি ভিনজাতীয় ভাষাকে বর্জন করতে বলছি না, কিন্তু মাতৃভাষা ফেলে যো তাদের একেবারে পূজো করতে হবে এটাও তো ঠিক না। ধিক্ তোমাদের! (এক্ষেত্রে গলা আদ্র হয়ে আসে) যারা বাংলাকে ফেলে ভিনদেশীয় গানের তালে উণ্মত্ত হয়, ধিক্ তাদের! যাদের হৃদয়কে মাতৃভাষার আর্তি এতটুকুও ভেজাতে পারে না, ধিক্ ধিক্ ধিক্…!!”



হঠাত্ প্রচণ্ড শব্দে কলিংবেল বাজাতে চমকে উঠলাম। অন্ধকারে রচনা লিখতে লিখতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, কখন কারেন্ট এসেছে, টেরও পাইনি। মা-বাবা এসে পড়েছে। রাতে ঘুমাতে যাবার সময় স্বপ্নটার কথা আরেকবার মনে পড়ল। এই ধিক্কার, এই লজ্জা কার? এ লজ্জা আমার, এ লজ্জা আমাদের।



(এই ঘটনাটি সম্পূর্ণ কাল্পণিক এবং এর সাথে আমার কোন ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার সম্পর্ক নেই। তবে গল্পটিতে ইংরেজি-হিন্দির চাপে বাংলা ভাষার বর্তমান দুর্দশার চিত্র ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। গল্পটি নটরডেম কলেজের প্রকাশনা ঢাকঢোল / Chit Chat এর জানুয়ারী/ফেব্রুয়ারি ২০০০

(ওয়েবে: Click This Link)

১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×