somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্যালেন্টাইনে সুইট সিক্সটিন ইয়ার্সের গল্প!

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

: হ্যালো আসসালামু আলাইকুম
: অনিক তু্মি কালকে থেকে টিউশনি করতে পারবা?
ফোনে হাবিব ভাইয়ের আচমকা এমন প্রশ্ন শুনে কিছুটা অবাকই হলাম, কিছুটা সময় নিয়ে বললাম ভাইয়া আমিতো আগে কখনো টিউশনি করিনি।
-আরেহ মিয়া ভয় পাও নাকি? তুমি কালকে থেকে আমার কাজিনকে পড়াবা... ক্লাস টেনের স্টুডেন্ট।
আমি চাচির নাম্বার আর ওদের বাসার অ্যাড্রেস মেসেজ করে দিচ্ছি। কাল সন্ধায় যাবা কিন্তু...চাচিকে বলে রেখেছি,আমার কাল কিছু জরুরী কাজ পড়ে আছে নাহয় আমিই তোমাকে নিয়ে যেতাম, বললেন হাবিব ভাই। ইনবক্সে দেখলাম বাসাটা খুলশি...
হাবিব ভাই হলেন এমন এক মানুষ যার কথা আমি কখনোই ফেলতে পারিনা আর আমার বাসা যেহেতু খুলশির খুব কাছেই নাসিরাবাদে,সুতরাং জীবনের প্রথম টিউশনিটা করবো বলেই ডিসিশন নিলাম।

পরদিন সন্ধ্যায় ঠিকানা ধরে হাজির হলাম স্টুডেন্টের বাসায়। ভেতরে ঢ়ুকতেই অবাক হলাম...ছিমছাম গোছানো বাসা, বেশ বড়লোকির ছোঁয়া আছে এখানে। দরজাটা যে খুললো সে আমার ছাত্র বা ছাত্রীর ছোট ভাই... ছাত্র বা ছাত্রী এজন্য বলছি কারন আমি তখনও জানিনা আমি যাকে পড়াবো সে ছেলে না মেয়ে, কোন স্কুলে পড়ে ইত্যাদি ইত্যাদি। এবার পরিচয় পর্ব...... কথায় কথায় আন্টি(আমার স্টুডেন্টের মা) জানতে পারলেন আমার বাড়ি ফেনী। ব্যাস শুরু হল আমার নাড়ি-নক্ষত্রের খবর নেয়া আর সবশেষে আবিষ্কার করলাম আন্টি আমার মামির আপন চাচাতো বোন।
স্টুডেন্টকে দেখে আরেকদফা অবাক হলাম...নাম রিয়ানা! নামের চেয়েও তার চেহারাটা সুন্দর দেখালো। সে যতটা না সুন্দরী সম্ভবতঃ তার চেয়েও বেশি দুষ্টু প্রকৃতির...ওর চেহারার দিকে তাকালেই মনে হবে সারাক্ষন দুষ্টুমির নানা ফন্দি তার মাথায় ঘুরে...সেদিন আর তেমন কিছুই পড়ালাম নাহ। বাসায় ফেরার পথে খেয়াল করলাম নিজের মধ্যে কেমন যেন প্রফুল্লতা! আন্টি আমার মোটামুটি কাছের আত্মীয় সেজন্য নাকি সুন্দরী স্টুডেন্ট পড়াবো তার জন্য আমি আজ এত খুশি ঠিক বুঝলাম নাহ...

ইদানীং রিয়ানার দুষ্টুমিটা বেড়েছে খুব.....প্রত্যেকদিন উনার একটা না একটা আবদার থাকবেই। আজকের ঘটনাটা অবশ্য অন্যরকম! নিজের কচি হাতদুটো মুঠি করে ধরে আছে আমার সামনে,চোখে মুখে দুষ্টুমি আর ঠোঁটে রহস্যের হাসি। আমাকে বলতে হবে তার হাতের মুঠোয় কি?!
টিউশনিটা জুটিয়েছি এই মাস তিনেক হল মাত্র...সারাদিন ক্লাস শেষে ক্যাম্পাস থেকে এসে ছেলে পড়ানো সুখের নয়। তবুও পড়াচ্ছি কারন সময়তো কেটে যাচ্ছে,তার উপর দু'পাইচ ইনকাম হলে ক্ষতি কি! রিয়ানার গাল ফোলানো,চোখ নাচানো,টিউটরকে ধমক মারা মোটামুটি কোনোটাই খারাপ লাগছিল না। কষ্টের মধ্যে শুধু একটাই-সকাল বিকাল শাটলের ঝাঁকুনিটা। অবশ্য তাও এখন সহ্য হয়ে গেছে...

কি উত্তর দেয়া যায় রিয়ানাকে? বরাবরই এমন করে সে। বড় ন্যাকা মেয়ে...সেবার ভার্সিটির এক মেয়েফ্রেন্ডও এমন পরিস্থিতিতে ফেলেছিল আমাকে। বলেছিল "আচ্ছা তুই কি এমন একটা শব্দ বলতে পারিস যেটা শুনলে মেয়েরা রাগ করে,আবার উল্টিয়ে বললে ছেলেরা রাগ করে কিন্তু উল্টো শব্দসহ দুটিকে একত্রে বললে সবাই খুশি হয়?" উত্তরটা জানা ছিল না...অবশ্য পরে আরেক ফ্রেন্ডের সহায়তায় পার পেয়েছিলাম। কিন্তু রিয়ানা বড়ই নাছোড় বান্দা,তাকে বলতেই হবে হাতের মুঠোর রহস্য নাহয় সে অংক কষবে না,শর্ত জুড়ে দিল। কদিন পরেই তার পরীক্ষা,এসময় তার এমন সব ন্যাকামি কি করে সহ্য করি? সবে পাটিগনিতটা শেষ হয়েছে। কিন্তু জ্যামিতিটা কিছুতেই মেয়েটার মাথায় ঢোকে নাহ। রিয়ানার মতে জ্যামিতি জিনিসটা একদম ফালতু! কি সব স্থূল,সূক্ষ্ম, রম্বস-নাম শুনলেই হাসি পায়। তার বান্ধবি ট্রিনা তো পাশের ফ্ল্যাটের এক ছেলেকে নাম দিয়েছে রম্বসবাবু। দেখা হলেই হাই রম্বস আর মাঝে মাঝে 'র' এর বিন্দুটা বাদ দিয়ে হাই বম্বস বলে চিৎকার দেয়। এসব গল্প রিয়ানার কাছেই শোনা...

যাইহোক,রিয়ানা এক পর্যায়ে শাসিয়েই বলল,বলুন না স্যার হাতের মুঠোয় কি?
আমার পক্ষে বলা সম্ভব না...বলার কি ই বা আছে? হয়তঃ লজেঞ্চ বা তার বান্ধবীর কোনও চিরকুট? যা দুষ্টু মেয়ে, হয়ত দেখা যাবে ফাঁকা হাত এমনিতেই মুঠো করে রেখেছে। কদিন আগেও একবার মেয়েটা এমন করেছিল আমার সাথে। তার বায়না ছিল অংক করবে না সে। হয়ত ছুটি দিতে হবে নয় তার হাতের মুঠি খুলতে হবে তবে অবশ্যই তা ত্রিশ সেকেন্ডের ভেতর। সে একই কাহিনী! হাত মুঠি করে আমার নাকের ডগায় ধরা। কি হাসির কাণ্ড! রিয়ানা বাচ্চা খুকির মত...বোঝানো সোজানোর ধার ধারেনা মেয়েটা। কদিন পরেই ষোলতে পরবে সে। চুইংগাম বা চকোলেটের লোভ তো আর দেখানো যায় না তাকে। আমার হাল ছাড়ার অবস্থা। এমন মেয়েও হয়? ৪৫০০টাকার টিউশনি! ছাত্রীর রেজাল্টের সাথে পুরোপুরি জড়িয়ে আছে টিউটরের মানসম্মান।

রিয়ানা হাত বাকা করে রিষ্টওয়াচের দিকে তাকালো। ছয়টা উনিশ মিনিট চুয়ান্ন সেকেন্ড। একটু পরেই বিশমিনিট,তারপর একুশ। ছাত্রী শিক্ষকের চাতুরিপনা দেখে আমার নিজেরই হাসি পেলো খুব। কি করা যায় ওকে? ঘাড়ের চুলগুলোতে সামান্য সুড়সুড়ি দিলেই চলে। কিন্তু সেটা কি ঠিক হবে??
রিয়ানা বলল,আপনি রেডি স্যার? স্যারের চোখ তার ছাত্রীর দিকে...কিশোরীর চপল-চঞ্চল চোখ। মুচকি হেসে বললাম,কি লাভ হয়েছে বল তো রিয়া? সাপের বাচ্ছাটা কে এতক্ষন হাতের মুঠির ভেতর কষ্ট দিয়ে?
কাজ হয়েছে বেশ। কিন্তু মেয়েটা যে আউ আউ করে চিৎকার দিয়ে আমার গায়েই পড়বে বুঝতে পারিনি। যেন সত্যিই একটা কালো কেউটের বাচ্ছা এতক্ষন ওর হাতের মুঠোয় ছিল। ভীত সন্ত্রস্ত রিয়ানার চোখ মুখ। গালের দুদিকটা রুজ পাউডারের মত লাল হয়ে উঠলো। রিয়ানা বেশ লজ্জা পেয়েছিলো সেদিন...আমি নিজেও বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছিলাম।

কিন্তু আজকের ব্যাপারটা ভিন্ন। আমাকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে ঢিল ছুড়তে হবে হাতের মুঠোয় কি? এক ঘন্টার টিউশন আওয়ার দেড় ঘন্টায় দাঁড়ালো। রিয়ানা তবুও তার সিদ্ধান্তে অটল।
বললাম তোমার এই ফাজলামোর ওষুধ কি জানো? পেটাতে হবে,গায়ে জ্বর ওঠা পেটানো। তারপর অংক কষবে তুমি,বুঝলে??
রিয়া ঠোঁট ফোলাল,মুঠিটা তখনও শক্ত করে ধরে আছে। বললাম গত পরীক্ষায় গনিতে যে দু'টো ঘোড়ার ডিম পেয়েছ সেগুলোর একটি তোমার মুঠোয়। হয়েছে এবার?

কাচভাঙ্গা শব্দে হেঁসে উঠলো সে।
-ঘোড়ার ডিম তো আমি নাড়তেও পারবো না স্যার। মুঠোয় নিবো কি করে?
হাসি পেলো আমার,বললাম তবে আর কি! তিন লেজওয়ালা টিকটিকি নিশ্চয়ই?
কাজ হলনা তবুও। সাপের ভয় পেয়ে অনেক আগেই নার্ভ শক্ত করে ফেলেছে মেয়েটা। তিন লেজওয়ালা কাল্পনিক টিকটিকিতে ভয় পাবে কোন যুক্তিতে? মুঠিটা আরও শক্ত করে ধরল সে। আর এদিকে নাজুক অবস্থা টিউটরের। মনে হল যেন টিউশনিটা ছেড়ে দিলেই বাঁচি। বললাম,আমি তাহলে উঠি";
-কোথায় স্যার?
-কেন,তোমার আম্মুকে ডেকে নিয়ে আসি।

ভয়ে চেয়ার থেকে নড়ে উঠলো রিয়ানা। মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেলো মুহূর্তে। চোখের তারাটা স্থির থাকলো। হাত তখনও মুঠো অবস্থায়...আমি আবার চেয়ারে বসলাম। রিয়া ভয়ে ভয়ে বাম হাত দিয়ে কলম ধরল। খাতা খুলে বিজগনিত বইটা টেনে নিল। একটু আগের চঞ্চলতা মোটেও নেই তার ভেতর। সুবোধ একটা মেয়ে। যন্ত্রের মত আদেশ দিলাম...ডান হাত তোল।
রিয়ানার দৃষ্টি কাতর। মুঠি করা ডান হাত টা এখনও টেবিলের নিচে।
-তোলো বলছি।
ভয়ে ভয়ে হাতটা তুলল সে। মুঠিবদ্ধ হাত...তারপর আরও একটা ধমক খেয়ে মুঠি খুলল রিয়ানা। মুহূর্তেই চমকে উঠলাম আমি।
হাতের তালুতে মোটা অক্ষরে লিখা। "I LOVE YOU ";

এই ঘটনাটা গতবছর ঠিক ১৪ফেব্রুয়ারির দিনের ঘটনা। রিয়ানা বেঁছে বেঁছে এই দিনটাকেই কেন ঠিক করলো সেটা দেরিতে হলেও এখন বুঝতে পারছি। চাইলে ওর সাথে তখনই ভালোবাসার ভেলায় ভেসে যেতে পারতাম। কিন্তু সেটা আমি পারিনি...হয়ত সমাজের ভয়ে। অথবা রিয়ানার আম্মু আমার দূরসম্পর্কের আত্মীয় হন বলে...হয়ত বা আমি কাপুরুষ ছিলাম বলে। এরপর টিউশনিটা স্থায়ী ছিল ১৩-১৪দিন পর্যন্ত। স্বার্থপর ফেরারি আসামীর মত পালিয়ে বেঁচেছি ফেব্রুয়ারির সম্মানী না নিয়েই। তারপর কেটে গেছে অনেকটা দিন,ওই একটাই ছিল আমার জীবনের প্রথম এবং শেষ টিউশনি। গত নভেম্বরে ফেসবুকে একটা রিকোয়েস্ট পেলাম। মাঝে মাঝেই চ্যাট হতো নতুন বন্ধুর সাথে......পহেলা জানুয়ারি আমার জন্মদিনে জানতে পারি নতুন বন্ধুটি আমার সেই দুষ্টু ছাত্রী রিয়ানা!!!!
৮টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×