বাংলাদেশ তথা উন্নয়নশীল দেশে নারী যুগ যুগ ধরে শোষিত ও অবহেলিত। পুরুষশাসিত সমাজ ব্যবস্থায় ধর্মীয় গোঁড়ামি, সামাজিক কুসংস্কার, নিপীড়ন ও বৈষম্যের বেড়াজালে নারীকে রাখা হয়েছে অবদমিত। তার মেধা ও শ্রমশক্তিকে সমাজ ও দেশ গঠনে সমম্পৃক্ত করা হয়নি। উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, সেখানে নারী পুরুষ দেশের উন্নয়নে এগিয়ে এসেছে সমানভাবে। আমাদের দেশে নারী পুরুষের আনুপাতিক হার ১০০:১০৫। নারীকে চার দেওয়ালের মাঝে বন্দি না করে দেশের উন্নয়ন কাজে অংশগ্রহণ দেশ তথা জাতীর কল্যাণ বয়ে আনবে। আমরা যদি নারী ক্ষমতায়নের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই, বর্তমানে বাংলাদেশে মন্ত্রীসভায় প্রধানমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন নারীরা। প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে নারী অংশগ্রহণের হারও কম নয়।
বর্তমানে ২৯টি ক্যাডারে নারী কর্মকর্তার সংখ্যা ৪,২৬৭ জন। রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন কমিটিতে নারীর অংশগ্রহণ আশাব্যঞ্জক।
উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ দেশের বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে নারী পুরুষের হয়রানির শিকার। উন্নয়নে অংশগ্রহণকারী একজন নারীই নয়, যেকোন নারী পথ চলার সময় অশ্লীল কথাবার্তা, গায়ে গায়ে ধাক্কা, অশ্লীল ইশারা, কুপ্রস্তাব, বিভিন্ন সময় অনেক বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হতে হয় নারীকে। অফিস আদালতে সহকর্মীদের ক্ষুধার্থ চোখ খোঁজে নারী শরীরের অলিগলি। অফিসের বড় কর্মকর্তারা নানা অজুহাতে তাদের ঘরে ডেকে অনেক কথা বলে যান কোন কথা না বলে। সব পুরুষ কর্তৃক যে নারী হয়রানির শিকার হয় তা কিন্তু নয়। পুরুষের ছোবলে যেমন বিষ আছে। তেমনি আছে ভালবাসার পরশ।
আমাদের অধিকাংশ পরিবারই শিক্ষর আলো থেকে বঞ্চিত। ধর্মীয় অপব্যাখ্যা আর কুসংস্কারের ফলে নারী সমাজ অন্ধকারে থেকে যাচ্ছে। আমাদের সরকার শিক্ষার ক্ষেত্রে অনেক সুযোগ সুবিধা দেয়া সত্ত্বেও নানাবিধ কারণে আমরা সেই মূল্যবান শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পুরুষের হয়রানির শিকার হওয়া এটা একটা বড় কারণ।
পাথর বিছানো পথ অতিক্রম করা মোটেই সহজ নয়। কর্মক্ষেত্রে নারী : পুরুষের হয়রানি অতীতে ছিল, বর্তমানেও আছে। তবে পুরুষের হয়রানিটা বেশি পরিলক্ষিত হয় পোশাক শিল্পে। তাদের প্রতিবাদের ভাষা নেই, ফলে তারা নির্যাতিত হয় আরও বেশি।
একদিন না একদিন আমাদের মানসিকতার আলকাতরা রঙ অন্ধকার দূর হয়ে আসবে স্নিগ্ধ ভোর, সেই প্রত্যায় আজকের এই লেখা।