somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মনের মানুষ: অবশেষে অরিন্দম কহিলা বিষাদে

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথমত,
এই মনের মানুষ চলচ্চিত্রে লালন সাঁইজিকে যেভাবে চিত্রায়িত করার চেষ্টা হয়েছে তা সুনীল বাবুর পুরনো স্বভাব। স্ক্রিপ্টরাইটার থেকেই শুরু করি। তিনি খুব আগ্রহী প্রতিজন সেলিব্রেটি, বিশেষ করে যারা প্রায় মহামানব হিসাবে বাংলায় থেকে গেছেন তাদের ব্যক্তিগত চরিত্র নিয়ে মাটিতে নামিয়ে আনার চেষ্টায়।

হয়ত তিনি একধরনের অবচেতন ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্সে ভুগতেন 'মহামানব' দের সাথে তুলনার সময়। আমরা দেখতে পাই, রবীন্দ্র থেকে শুরু করে মধুসূদন বা সোহরাওয়ার্দী হয়ে শেরেবাংলা পর্যন্ত সবার ব্যক্তিগত চরিত্র নিয়ে তিনি উৎসাহে কমতি দেখাননি এবং সবকিছুতেই সেখানে উঠে এসেছে নেতিবাচকতা।

দ্বিতীয়ত,
তাঁর মানসিকতার প্যাটার্ন দেথতে পাই ধর্মের ক্ষেত্রেও। ধর্মহীনতা তাঁর ব্যক্তিগত বৃত্ত হলেও যথাসম্ভব যে কাউকে সে বৃত্তে টেনে আনার মুন্সিয়ানা সাহিত্যকর্মে দেখিয়েছেন যেটা গর্হিত। তেমনি ধর্মশ্লেষ ব্যক্তিগত হলেও তাতে তাঁর যেন সামগ্রিকতা আনতেই হবে।

লালন চরিত্রে যে কালি তিনি লেপেছেন এবং গৌতম ঘোষ সেটাকে দুই বাংলার সবগুলো মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন নিছক বাণিজ্যিক বিনোদনকে সঙ্গী করে, সেটা অনেক বড় বিষয়।

তৃতীয়ত,
লালন মনের মানুষ বলতে আত্মা বুঝিয়েছেন একটায় একশো ভাগ সহমত। তবে, মনের মানুষ বলতে আত্মাই বোঝানো হলেও আবার সেই আত্মা পরিচিতি পায় তাঁদের কাছে 'সাঁই' রূপে, অথচ সাঁই যে গুরু, ব্যক্তি তিনি রয়েই গেছেন। এই নিজস্ব আত্মা, সাঁই গুরুর অবস্থিতি ও ঈশ্বর- এই ত্রিবিধের একত্রিকরণ আমরা পাই লালনের শুরুতে। লালনের গুরুলতিকায় দেখি, সাবের বা সাবরে পাক ফরিদ বা দাতা গঞ্জেবখশে ফানা। ফরিদ আবার কোথায়? 'আয়িনায়ে ফারিদ মে শাকলে নিযাম হ্যায়'। আর নিযামের অবস্থিতিও একই কথা বয়ান করে, আমি আমার আত্মা বই কিছু নই। আর আমার আত্মা আমার শাইখ বা সাঁই বই কিছু নয় আর আমার সাঁই বা শাইখ আল্লাহ বই কিছু নয়। যে কথাটা নিযামউদ্দিন আউলিয়ার উর্দ্ধতন রাংরেজ বলে গেছেন, 'ইয়া হাসান মুঈনুদ্দীন, ই'য়া কা না'বুদু ওয়া ই'য়া কা নাস্তাঈন।' হে হাসান, মুঈনুদ্দীন, আমি শুধু তোমারই ইবাদাত করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য প্রার্থণা করি। আবার এই সমস্ত কথার প্রতিফলন সেই লালন সুরেই, যিনি আল্লাহ তিনিই রাসূল দ. মুর্শিদও সে হয়, এ কথা কয় না লালন, কোরানেতে কয়। এ কারণেই এই সেই মনের মানুষ বলে ধারণা করি। আত্মার অবিচ্ছিন্নতাকে তাঁরা কোন একটা ধারণার অধিভূক্ত করে নিয়েছিলেন। আর অমাবস্যা পূর্ণিমার মহাযোগ নিছক শারীরিক ও রিপ্রোডাক্টিভ বিষয় নয়। এ নিয়ে কিছুটা চেষ্টা করেছিলাম এই লিঙ্কে, Click This Link

লালন সাঁইজির মতবাদের উত্থান বিষয়ে শুরু করার ইচ্ছা ছিল এই পোস্ট দিয়ে, http://www.amarblog.com/Qadri/posts/146200

চতুর্থত,
সাধনার কাল্টগুলোর সাথে পরিচিতি থাকায়, “আপন ভজন-কথা না কহিবে যথা-তথা, আপনাতে আপনি হইবে সাবধান।” এই কথার অর্থ এভাবে করি না যে, সাধকদের আচরণ ভয়ানক, সুতরাং তা গুপ্ত রাখো। বরং এভাবে করি, অবচেতন মনে প্রভাব পড়ে, আমিত্ব চলে আসে ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন পড়ে নিজের সাধনপদ্ধতি জনে জনে বলে বেড়ালে। তাই তা আড়ালে রাখো। যেন সাধনচিন্তার সাথে ও সাধনকর্মের সাখে ওইসব বাহ্যিকতার স্পর্শ আসে না।

পঞ্চমত,
ব্যক্তি শ্রীকৃষ্ণের আকুতির সাথে তাঁর আকুতির অমিল না থাকাও স্বাভাবিক। তিনি নিছক হিন্দু ধর্মের জন্য কিছু, মুসলিম ধর্মের জন্য কিছু এবং সাধকদের জন্য কিছু লিখে কিছুটা মানুষের বিনোদনের জন্য আর বাকিটা মানবতার জন্য লিখেছিলেন- বিষয়টা এমন নয় তাতো আমরা সবাই জানি। একজন বাউল যখন টোটালিটারিয়ান ভিউ পরিগ্রহণ করেন, তখন তাঁর উপলব্ধি ও আমাদের উপলব্ধির অণ্বয় হয়ে পড়ে শুধুই অসম্ভব নয়, বরং সাংঘর্ষিক।

সবশেষে,
বিশেষ করে, লালনের শেষ জীবনের যে একেবারে ব্যর্থতার হাহাকার তিনি দেখান, তা ফিনিশিং হিসাবে তাঁরই নিজস্ব শূণ্যতার মতবাদ ছাড়া আর কিছুকেই প্রতিষ্ঠিত করে না।

অথচ বিষয়টা এতো সরল নয়। পূর্ণ ও পরিণত লালনের আর যাই থাক, শূণ্যতা ছিল না কোনদিনও।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৫৫
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×