somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারীর জন্য কর্মক্ষেত্র -একটি Universal প্রশ্ন

২৩ শে জুলাই, ২০০৯ সকাল ৮:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সম্প্রতি জার্মানীর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষনার রিপোর্টে লেখা হয়, ছাত্রীদের তিন চতুর্থাংশই তাদের পড়ালেখা শেষে বাচ্চা নিতে চায়। ৭০ ভাগই পরবর্তী সময়ে তাদের সন্তান বা পার্টনারকে সময় ও ভালবাসা দিতে এবং দেখাশোনা করতে ইচ্ছুক। গবেষনার শেষে বলা হচ্ছে, কিন্তু জীবনের বাস্তবতা অন্যরকম। বাস্তবে দেখা যায়, অধিকাংশ একাডেমিশিয়ান কেই সন্তানহীন জীবন যাপন করতে হয়। পশ্চিমা দেশ গুলোতে বড় ছোট সকল প্রতিষ্ঠানগুলো লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে পুরুষদের নারীর চেয়ে প্রাধান্য দিয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে নারীর যোগ্যতা বেশী হলেও। কারনটা হচ্ছে, নারীদের সন্তান ধারনের প্রয়োজনে যে কোন সময়েই কাজ ছেড়ে দেওয়া বা ছুটি নেবার সম্ভবনা থাকে। তাছাড়া এসব দেশে বাচ্চাকে বেবি সিটার অথবা কিন্ডার ক্রিপে রাখাও অনেক ব্যয়বহুল, যা তাদের জন্য একটি বড় সমস্যা। (আর তাদের সিঙ্গেল মা হবার সমস্যা তো রয়েছেই।) কিন্তু ইসলাম ও পারিবারিক বন্ধনের সংস্কৃতিতে রেড়ে ওঠা নারীদের জন্য সমস্যা শুধু এসবই নয়। সন্তানের অধিকার, মাতৃত্বের কর্তব্য, সর্বোপরী মাতৃ হৃদয়ের অপত্য স্নেহ নারীর ক্যারিয়ার গঠন কে থামিয়ে দিচ্ছে মাঝপথে।

নারীর বিভিন্ন অবস্থা:

১. যে নারী ছাত্রজীবনে উজ্জ্বল প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছে, পরবর্তীতে নিজের যোগ্যতার সবটুকু কে জীবন থেকে মুছে ফেলে পালন করতে হচ্ছে শুধুই গৃহিনীর কাজ়ে
২. ক্যারিয়ারের প্রয়োজনে বিয়ের অনেক দিন পরও সন্তান গ্রহনের পরিকল্পনা নিতে অসমর্থ
৩. পিতা মাতা বা কাজের লোকদের উপরে সন্তানের দায়ভার ছেড়ে ক্যারিয়ার গঠনে মনোযোগী
৪. উন্নত বিশ্বে প্রতিটি মাকে ন্যূনতম ৪-৫ বছর একজন সন্তান লালনের প্রয়োজনে ঘরে থাকতে হচ্ছে। একারনে সৃষ্টি হচ্ছে সন্তান গ্রহনে চরম অনিহা
৫. যারা শুধুই গৃহিনী- তাদের মধ্যে হতাশা ভর করছে। আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী না হতে পেরে আত্মসম্মানে আঘাত হানছে
৬. ক্যারিয়ার ধরে রাখছে যারা, তাদের সন্তান গ্রহনে বিলম্ব হছে। ক্যারিয়ারকে মোটামুটি গুছিয়ে নিয়ে সন্তান গ্রহন করার উদ্যোগ নিতে ন্যূনতম ৩০ বছর বয়স এসে যায়। medical science যে বয়সটাকে ঝুকিপূর্ন মাতৃত্ব বা ( high risk mother) হবার উল্লেখযোগ্য কারন বলে গন্য করছে
৭. প্রথম বাচ্চাটি ৩০ এ নেওয়া সম্ভব হলেও পরবর্তীতে পূনরায় ক্যারিয়ার ধরে রাখা এবং প্রথম বাচ্চার শারীরিক সুস্থ্যতা ও দেখাশোনার কথা ভেবে দ্বিতীয় বাচ্চা নেওয়া আর হয়ে ওঠেনা অনেকক্ষেত্রেই। বেশী বয়সের কারনে ও working mother হবার কারনে দ্বিতীয় বেবিটি নেওয়া মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুকিপূর্ন। আর তা না নেওয়াটা শিশুর মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এক, পিতা মাতার কম সাহচর্য, দ্বিতীয়ত ভাই বোন তথা খেলার সাথীর অভাব শিশুর স্বাভাবিক মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত করে। শিশুর মধ্যে একগুয়েমী, জেদ,প্রচন্ড রাগ, খাদ্য গ্রহনে অনিহা ইত্যাদি নানা উপসর্গ যা একসময় নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।
৮. সন্তান পালনে নিম্ন শ্রেনীর (কাজের মেয়ে/ছেলে) লোকদের শরনাপন্ন হওয়া, যা সন্তানের যথোপযুক্ত শিক্ষা ও আচরন তৈরীর প্রতিবন্ধক। তাছাড়া মাতা পিতার সাথে কম ভাব আদান প্রদানের ফলে সন্তানের সাথে মানসিক দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে, এমনকি পরিনতিতে নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাওয়া ও বখাটেপনারও জম্ন দিচ্ছে।

এসব কারনে একজন ক্যারিয়ার সম্পন্ন মা আর্থিক ভাবে পরনির্ভরশীলতার গ্লানি থেকে মুক্তি এবং নিজ যোগ্যতা বিকাশের পরিতৃপ্তি পেলেও হৃদয়ে থেকে যাচ্ছে এক প্রচন্ড হাহাকার। অপরদিকে যারা সম্পূর্ন ভাবে ক্যারিয়ার বিসর্জন দিচ্ছে তাদের কিছু না করতে পারার হতাশা তো রয়েছেই।

সমাধান কোন পথে?

পৃথীবিকে এগিয়ে নিতে নারীর অর্থনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক অংশগ্রহন যেমন অস্বীকার করা যায় না, তেমনি সমস্ত বিশ্ব আজ সুখী সমৃদ্ধ বিশ্ব-গঠনের জন্য মাতৃত্বের ভূমিকাকে অনুধাবন করতে শুরু করেছে চরম ভাবে। পশ্চিমা দেশগুলোর বেশীর ভাগই
এখন কর্মজীবি মায়েদের পূর্ন বেতন সহ পুরো এক বছরের মাতৃকালীন ছুটি নির্দিষ্ট করেছে। এটাকে আরো বাড়ানোর জন্য পরিকল্পনা চলছে । মায়েদের সন্তান গ্রহনকে খুব বেশি সম্মানের চোখে দেখা হচ্ছে। সন্তান গ্রহনের পর parents money, child money নামে বিভিন্ন ভাতা দিয়ে উতসাহিত করা হচ্ছে মায়েদের।এমনকি স্বাভাবিক অবস্থায় আয়ের একটা বিরাট অংশ ট্যাক্স পরিশোধে দিতে হলে ও যারা অধিক সন্তান নিচ্ছে তাদের জন্য ট্যাক্স ফ্রি করে দেওয়া হচ্ছে। জার্মানীতে ৫ টি বাচ্চার পিতা মাতা কে কোন ট্যাক্স তো দিতে হয় না, উপরুন্ত kinder geld( child money ) তো পাচ্ছেনই। কারন বিশ্বের চিন্তাশীল মস্তিস্ক গুলো আজ বুঝেছে বংশ রক্ষা এবং মাতৃত্বের দ্বায়িত্ব পালন ব্যতিরেকে শুধুমাত্র নারীর অর্থনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক অংশগ্রহন একটি সুন্দর আগামী উপহার দিতে পারে না। যার চরম মূল্য ইতিমধ্যে দিতে হচ্ছে পশিমা দেশ গুলোকে। বয়স্ক লোকদের হার বেড়ে গেছে, শিশু কিশোরদের হার কমে গিয়েছে আশঙ্কাজনক ভাবে। এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই কর্মক্ষম মানুষের হার নেমে আসবে জিরোর কোঠায়। এর মধ্যেই বৃদ্ধ আর অক্ষম ভাতা দিতে গিয়ে হিমিশিম খাচ্ছে সরকার গুলো।

উন্নত দেশগুলো কি ভাবে নারীর কর্তব্য ও যোগ্যতার এই দ্বিমূখী ভুমিকাকে কাজে লাগানো সম্ভন তার জন্য খুজে চলেছে সমাধানের পথ। তারা ও ভাবছেন নারীদের জন্য সহজ কর্মক্ষেত্রের কথা,
A lack of adaptable care of children and not family-friendly working hours are the reason for women in the administrative district to choose long family phases...

পুরুষের সাথে নারীর কর্মকে সমান তুলাদন্ডে বিবেচনা না করে, বরং নারীদের পৃথক, সহজসাধ্য, এবং কম সময় ব্যাপী কর্মক্ষেত্রের আজ বড় প্রয়োজন। যেখানে নারীর এই অংশগ্রহনকে দেখা হবে সম্মানের চোখে। নারী পাবে তার অর্থনৈতিক অধিকার, যোগ্যতা বিকাশের সুযোগ। সমাজ একই সঙ্গে পাবে তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক অংশগ্রহন এবং সুন্দর আগামী গঠনের একমাত্র হাতিয়ার মায়ের ভুমিকা।

(সংকলিত)
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মাটির কাছে যেতেই..

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

মাটির কাছে
যেতেই..


ছবি কৃতজ্ঞতাঃ https://pixabay.com/

ঠিক যেন
খা খা রোদ্দুর চারদিকে
চৈত্রের দাবদাহ দাবানলে
জ্বলে জ্বলে অঙ্গার ছাই ভস্ম
গোটা প্রান্তর
বন্ধ স্তব্ধ
পাখিদের আনাগোনাও

স্বপ্নবোনা মন আজ
উদাস মরুভূমি
মরা নদীর মত
স্রোতহীন নিস্তেজ-
আজ আর স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাকা ভাংতি করার মেশিন দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:১০

চলুন আজকে একটা সমস্যার কথা বলি৷ একটা সময় মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা ছিল৷ চাইলেই টাকা ভাংতি পাওয়া যেতো৷ এখন কেউ টাকা ভাংতি দিতে চায়না৷ কারো হাতে অনেক খুচরা টাকা দেখছেন৷ তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেলা ব‌য়ে যায়

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩০


সূর্যটা বল‌ছে সকাল
অথছ আমার সন্ধ্যা
টের পেলামনা ক‌বে কখন
ফু‌টে‌ছে রজনীগন্ধ্যা।

বাতা‌সে ক‌বে মি‌লি‌য়ে গে‌ছে
গোলাপ গোলাপ গন্ধ
ছু‌টে‌ছি কেবল ছু‌টে‌ছি কোথায়?
পথ হা‌রি‌য়ে অন্ধ।

সূর্যটা কাল উঠ‌বে আবার
আবা‌রো হ‌বে সকাল
পাকা চু‌ল ধবল সকলি
দেখ‌ছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পর্ণআসক্ত সেকুলার ঢাবি অধ্যাপকের কি আর হিজাব পছন্দ হবে!

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৩ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:২৭



ইন্দোনেশিয়ায় জাকার্তায় অনুষ্ঠিত একটা প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশি নারীদের একটা রোবোটিক্স টিম। এই খবর শেয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা। সেখানে কমেন্ট করে বসেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:১৪


কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়
আমার বাবা-কাকারা সর্বমোট সাত ভাই, আর ফুফু দুইজন। সবমিলিয়ে নয়জন। একজন নাকি জন্মের পর মারা গিয়েছেন। এ কথা বলাই বাহুল্য যে, আমার পিতামহ কামেল লোক ছিলেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×