somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রথম আলোর হাস্যকর পাগলামো

২২ শে জুলাই, ২০০৯ রাত ৮:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম আলোর হাস্যকর পাগলামো মানুষদের নানাভাবে হাসাচ্ছে। কেউ হাসছে পাগলামো দেখে, কেউ পাগলামো করে।

যারা পাগলামো দেখে হাসছে, তারা হাসছে, কারণ ভেতর থেকে তারা জানে যারা শপথ করছে, কাগজে এইসব শপথ লেখার সময় সাংবাদিকের হাত কৃপা করে যদি ক্যমেরাটায় ফ্লাশের শব্দ করে, তাহলে জীবন সার্থক হয় তাদের অনেকেরই। তারা এটুকুই চায়। নিজের ছবি দেখতে, পত্রিকায়, অনেকেই আসছে শপথ করতে – যদি ভাগ্য সোনামুখ দেখায়!

যারা পাগলামো করে হাসছে, তারা হাসছে, কারণ তারা ভেতরে যাবার আগেই বাইরে থেকেই জানে, তাদের এই শপথ কেবল ভনিতা, হালের প্রগতিমূলক পাগলামোর নতুন এক ফ্যাশন শোতে যোগ্যতাহীন হয়েও অংশগ্রহণ করার চেয়ে বেশি কিছু নয়। তারা পাগলামো দেখতে এসেছে, খুব একচোট হেসেছে, এবং পাগলামোতে তালে তাল মিলিয়ে আংশগ্রহণ করেছে, তারপর বিষম কয়েক চোট হেসেছে। আর বাকি কিছু জীবন সার্থক করতে আসা সার্থক জীবেরা পত্রিকায় ছাপা হওয়া নিজেদের ছবি পৃথিবীময় প্রদর্শনী করে বেড়াচ্ছে। নাতি-পুতিকেও এই ছবি একদিন দেখিয়ে এরা বলবে – দেখেছো, পত্রিকায় আমার ছবি ছাপা হয়েছিলো একবার!

আমি প্রথম আলো বাদে অন্য কোনো পত্রিকা পড়ি না। আমাদের বাড়িতেও প্রথম আলো বাদে অন্য কোন পত্রিকা রাখা হয়না। এককালে ইত্তেফাক রাখা হত, এখন ইত্তেফাকের সস্তা নিউজপ্রিন্টের যুগ শেষ করে আমরা প্রথম আলোর যুগে পা রেখেছি।

একুশে টিভি দেশে একটি বিপ্লব করে ফেলেছিলো। সব চ্যানেল আজও একুশের নকল করে।

প্রথম আলোও দেশে একটি বিপ্লব করে ফেলেছিলো। সব পত্রিকা এখন প্রথ আলোর নকল করে।

উদ্ধৃতি, জনমত জরিপ, দৈনিক কার্টুন আগে চালু ছিলো না কোনো পত্রিকায়। অত অভিনব ভাবনা কারও মাথায় আসে নি। প্রথম আসে প্রথম আলোর মাথায়।

এগুলোই প্রথম আলোকে জনপ্রিয় করেছে, যেমন নতুন রকমের সুর যে কোন গানকে জনপ্রিয় করে।

কিন্তু প্রথম আলো দিনদিন পাগলা গারদে পরিণত হচ্ছে।

আরিফুর রহমান নামে এক আহাম্মকের আহাম্মক একবার একটা কার্টুন এঁকেছিলো আলপিনে। সুমন্ত আসলাম অত্যন্ত বুদ্ধিমান একজন মানুষ। মুহম্মদ জাফর ইকবালের অনুরক্ত, এবং একই ধাঁচে কিশোর উপন্যাস লেখেন। কি কারণে যেন তিনি কার্টুনটা ছাপিয়ে দিলেন। মনে হয় তিনি নিজে সম্পাদনা করেননি সেবারের সংখ্যা, না হয় করার সময় তিনি মদ্যপান করছিলেন।

আমি অনেকবার ফোন করেছি প্রথম আলোতে, বিভিন্ন বিভাগে। ৯৯.৯৯% সময়েই অনেকক্ষণ কন্ঠবদল হতে হতে শেষমেষ একটা শেষ কন্ঠ জানিয়ে দিয়েছে – বি.স. ছুটিতে, অফিসে আসেননি। এরা যে কর্তব্যে কত বড় গাফিলতি করে, তা এগুলোই প্রমাণ করে।

সেই কার্টুনটার শেষ ডায়লগ ছিলো – মহম্মদ বিড়াল। দেশের তাবৎ মুসলিম ক্ষেপে গিয়েছিলো সেই ডায়লগ পড়ে। অথচ ট্রেনে বাসে লঞ্চে জাহাজে যখন সস্তা কৌতুকের বইতে মোহাম্মদ টাকি মাছ পড়েছে, তখন তারা ক্ষেপেনি। মফস্বলের প্রাইমারি স্কুলের বাচ্চাদের কাছে এই মোহাম্মদ টাকি মাছের কৌতুক খুবই জনপ্রিয়।
তাদের কৌতুক শোনাতে বললেই তারা এই কৌতুকটি হরহামেশাই শুনিয়ে থাকে।

কৌতুকটি এরকম-
জিহাদ বসে মাছ শিকার করছে। মাওলানা নিযামী তখন পুকুরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন।
জিহাদকে তিনি শুধোলেন- খোকা, তোমার নাম কি?
উত্তরে জিহাদ বলল- জিহাদ।
মাওলানা নিযামী পিলে চমকে উঠে বললেন, ছিঃ। শুধু জিহাদ বলতে নেই। বলতে হয় মোহাম্মদ জিহাদ।
তা যাই হোক, কি মাছ ধরলে?
উত্তরে মোহাম্মদ জিহাদ বলল- মোহাম্মদ টাকি মাছ।

মেধাশূন্য আরিফুর রহমান এই সস্তা কৌতুকটিকে নিজের মত করে টাকি মাছেকে বিড়াল বানিয়ে কার্টুন এঁকে পাঠিয়ে দিল আলপিনে।
আর মদ্যপ সুমন্ত আসলাম তা ছাপিয়েও দিলেন। ফলাফল –
মুরতাদ মতিউর রহমানের ফাঁসি চাই
প্রথম আলো নিষিদ্ধ করো
ইত্যাদি ইতরামো সারাদেশে ইতর মোল্লা ও মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক সমেত সমস্ত ইতর নিয়ে মঞ্চায়িত।


আলপিনের মত জনপ্রিয় রম্য সাপ্তাহিক, লক্ষ লক্ষ মানুষ যা পড়তে সারা সপ্তাহ অপেক্ষা করত, বন্ধ হয়ে গেলো। সুমন্ত আসলাম চাকরি খোয়ালেন। আরিফুর রহমান জেলে গেলো।


আশ্চর্য হয়ে দেখেছিলাম কোনো বুদ্ধিজীবি আরিফুর রহমানের ওপর এই অমানবিক আচরণের প্রতিবাদ করলেন না। ইন্টারনেটে কিছু লেখালেখি হল আরিফুর রহমানের পক্ষে-বিপক্ষে। ব্যাস, জল অতটুকুই গড়ালো, জলের কলের জল এরপর ফুরিয়ে গেল। বিনা অপরাধে শুধু নিজের নির্বুদ্ধিতার কারণে একটা আস্ত মানুষ সকল প্রগতিশীল, সুশীল ও যুক্তিবাদীদের চোখের সামনে জেলে পচে মরতে লাগল। কেউ টু শব্দটি করল না। নির্বোধ আরিফুর রহমানকে স্বীকার করারও সুযোগ দেয়া হলো না, সে একটা বহুলপ্রচলিত কৌতুকের নকল করেছে মাত্র, নিজের কার্টুন আলপিনের মত বহুলপ্রচলিত স্যাটায়ার ম্যাগাজিনে দেখার লোভে। যেন এ দেশের নাম বাংলাদেশ নয়, আফগানিস্তান।

যখন আন্তর্জাতিক উন্মাদ বুশ ইরাক আক্রমণ করল, জামাতীরা রাস্তায় মিছিল করলো “আমরা হবো তালেবান, বাংলা হবে আফগানিস্তান” শ্লোগান দিয়ে। তাদের এসব শ্লোগান দেবার কোনো দরকার ছিলো না, বাংলা অনেক আগেই আফগানিস্তান হয়ে গেছে। পার্থক্য শুধু এই, আমেরিকা বাংলা আক্রমন করেনি, দেশের অভ্যন্তরে কিন্তু জঙ্গী হামলা ঠিকই হয়েছে।

আমার মাঝে মাঝে কয়েকটা প্রশ্ন করতে সাধ জাগে মোল্লাদের।

- আচ্ছা, আপনারা কি মনে করেন ওই কার্টুনিস্ট নাস্তিক?
- আসলেই সে সত্যিই ইহুদী-নাসারাদের টাকা খায় বলে আপনারা বিশ্বাস করেন?
- সে কখনো নামায পড়েনি কি?
- কখনো শুক্রবারের দুপুরে জুম্মা পড়তে যায়নি কি?

আমি জানি, ঐ বোকা ছেলেটি ঠিকই গিয়েছে।

সে না হয় বোকা হল, কিন্তু সুমন্ত আসলাম তো নন, হতে পারেনই না। উনি কেনো এমন একটা কাজ করলেন?

সেই ঘটনাটিকে বাংলাদেশের ড্যনিশ কার্টুন কনট্রোভারসি বলা যেতে পারে, এবং বলা হয়ও। ড্যানিশ কার্টুনিস্টের কি হয়েছিলো জানি না, কিন্তু মকবুল ফিদা হোসেইনকে ভারতমাতার নগ্ন ছবি অন্কনের কারণে ভারত মাতাকে বিদায় জানাতে হয়নি, ভারতমাতাই তাঁকে বিদায় করেছিলো।


প্রথম আলো একই আচরণ করেছিলো সুমন্ত আসলামের সাথে। আসলেই পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যাওয়া উচিত ছিলো। তাহলে শুধু এক সুমন্ত আসলামের সাথে না, সবার সাথেই অবিচার হত।

এখন প্রথম আলো আবার পাগলামো আরম্ভ করেছে। মনে হয় তাদের মনে হয়েছে শপথ নিলে তা কেউই ভঙ্গ করবে না। যেহেতু এটি বঙ্গদেশ, এর রঙ্গরসও সেহেতু এমনই।

এই পাগলামোর চূড়ান্ত দেখলাম গতকাল ২০ জুন। পাগলামোটা নিয়ে শিরোনাম করল প্রথম আলো। কক্সবাজারে বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছে তারা, সারা দেশেই ঘটাচ্ছে। আনিসুল হকের মত আধাপাগলরা স্বাভাবিকভাবেই এসব অস্বাভাবিক শিশুখেলায় থাকবেন, কিন্তু মুহম্মদ জাফর ইকবালও অবধি এই খেলায় মেতে উঠেছেন।

এই শপথগ্রহণ একদিন শেষ হবে, প্রথম আলোর ঘটে তারপর যদি বাস্তব বুদ্ধির আগমণ ঘটে, তাহলে সেদিন তারা শপথবর্জনের সংবাদ ছাপাবে ফলাও করে, দেখাবে বাঙ্গালী আসলে কি ও কেনো।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০১৩ সকাল ৯:৩৮
৯টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অপরাধের সেকাল ও একাল

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:১০

সেকাল
--------------------------------------------------------
স্কটল্যান্ডের বাসিন্দা হেনরি বেভারিজ ছিলেন বৃটিশ-ভারতীয় সিভিল সার্ভিসের একজন সদস্য৷বেভারিজ ১৮৭০ সালের মার্চ হতে ১৮৭১ সালের মার্চ এবং ১৮৭১ সালের জুন থেকে ১৮৭৫ সাল পর্যন্ত বৃহত্তর বরিশালের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×