somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন কৃষকের খোলা চিঠি- (২) উত্তরাঞ্চল পুড়ছে দারুণ খরায়

২২ শে জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৪:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আষাঢ় মাস। তারপরও বৃষ্টি নেই কোনখানে। আমার মত বিভিন্ন এলাকার আরও অনেক কৃষক জমিতে চাষ দিয়ে বসে আছে বৃষ্টির আশায়। জমিতে জো আসবে। ফসল বুনব আমরা। কিন্তু কিছুতেই বৃষ্টি নামছে না। ফসল বুনতেও পারছি না। খরায় পুড়ছে আমাদের উত্তরাঞ্চল।
আমরা বোরো মৌসুমের চেয়ে আমন মৌসুমেই ধান আবাদ করা লাভজনক মনে করি। কেননা, এই সময় জমিতে কোন পানি দেয়া লাগে না। আমাদের বেঁচে যায় পানি খরচ। অথচ এবার মাঠের দিকে তাকালে মাঠের মতই বুকটা খা খা করে ওঠে। মাঠ ফেটে হাঁ করে আছে। বৃষ্টি না হলে এবার আমরা আমন ধান বুনতে পারব না।
এই এলাকার অনেক কৃষক জমি চাষ করে সেচ দিয়ে আমন ধান বুনছে। কিন্তু তার সংখ্যা খুবই কম। আমরা গরিব কৃষক। আমার মত এই এলাকার অনেকেই গরিব। তারা ধনীলোকদের কাছ থেকে ধার করে পরের জমি চাষ করে (বর্গা জমি) ধান বুনে। এরপর সার, ওষুধ দিয়ে এবং নিজে খেটে-খুটে ফসল ফলায়। ফসল উঠলে তা বিক্রি করে অথবা ধার করা টাকার সমান মূল্যে ধান দিয়ে দেয়। এতে দেখা যায় বর্গাচাষিদের ভাগে অনেক সময় শূন্য থাকে। এত পরিশ্রমের পর কৃষকের ভাগে যদি শূন্য থাকে তাহলে আমরা কি করে বউ-ছেলে-মেয়ে নিয়ে সংসার চালাব?
এখন গরমের সময়। বিদ্যুৎ অধিকাংশ সময়তেই থাকে না। জমিতে পানি দিতে বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। তার উপর সেচ দিলে পানির জন্য ঘন্টায় ৪০ টাকা করে পরিশোধ করতে হয়। আমাদের ঘন্টায় ৪০ টাকা দেবার মত সামর্থ নেই। তাই আমাদের আল্লাহর দিকে তাকিয়ে বসে থাকা ছাড়া আর কোন উপায়ও নেই। আষাঢ় মাসেও আমাদের আকাশের দিকে তাকিয়ে আল্লাহর কাছে কানতে কানতে বলতে হয়,
'আল্লা মেঘ দে, পানি দে, ছায়া দেরে তুই'
আগের দিনের মত প্রকৃতি এখন আর নেই। এক এক সময় এক এক আচরণ করে। আগে বন্যার সময় বন্যা হত। এখন বন্যা হয় অসময়। আর বন্যার সময় বন্যা হয় না। মাঠ-ঘাট থাকে শুকনো। চৈত্র-বৈশাখে ঝড় হয় না, ঝড় হয় মাঘ মাসে। শীতের সময় শীত আসে না। অসময়ে শীত আসে। যেমন এখন আষাঢ় মাস। বৃষ্টিতে কুয়ো-খান্দা ভরে থাকার কথা। অথচ বৃষ্টির জন্যে আমাদের হাহাকার করতে হচ্ছে। পৃথিবীর এই ওলোট-পালোট কাণ্ড দেখে সবাই তাজ্জাব।
এ অঞ্চলের পাট চাষিরা পাট কাটার পর 'জাগ' (পাট পচানো) দিতে পারছে না পানির অভাবে। প্রচণ্ড খরার কারণে খাল-বিল, কুয়ো-খান্দার সব পানি শুকিয়ে গেছে। যারা আমন ধান রোপণ করেছে তাদের একদিন ক্ষেতে পানি না দিলে মাঠ ফেটে যাচ্ছে। প্রতিদিন পানি দিতে খরচ হচ্ছে অনেক টাকা। যার কারণে সেচ দিয়ে আমন আবাদ করলে তার দাম হবে দ্বিগুণ। এমনিতেই গত বোরো মৌসুমে আমরা ধান উৎপাদন করে বিক্রি করতে গিয়ে আসল দামও পাইনি। এবার আবার বেশি টাকা খরচ করে আমন ধান উৎপাদন করতে যাই, তাহলে আবার আমাদের বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। কৃষক তার উৎপাদিত পণ্য নিয়ে বারবার ক্ষতি সন্মুখীন হচ্ছে। এভাবে কৃষকের আর কত লোকসান গুনতে হবে!
গতবারও আমাদের দেশে আমনের ভাল ফলন হয়েছিল। ঠিক সময় বৃষ্টি পেয়ে লকলকিয়ে উঠেছিল আমনের চারাগুলো। কিছুদিনের ভেতরেই সবুজে ভরে গিয়েছিল আমাদের ক্ষেত। কৃষকের মুখে হাসি ছিল। এবার ঠিক তারা বিপরিত। পানির অভাবে এখন চাষবাস বন্ধ হয়ে আছে উত্তরাঞ্চলের মানুষের। অথচ এই সময় বৃষ্টির পানিতে ভরা থাকে চারদিক। এই সমস্যার সন্মুখীন শুধু আমরা নয়, রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, নীলফামারি, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, পঞ্চগড়ের কৃষকরা। আমাদের শুধু একটাই চিন্তা বৃষ্টি না হলে, পানি না পেলে আমরা ধান বুনব কেমন করে? আমরা বাঁচব কি খেয়ে?
যে কৃষকের ৭ বিঘা জমি আছে সে কেবল ১ বিঘা জমিতে সেচ দিয়ে ধান লাগিয়েছে। ৬ বিঘা জমি ফেলে রেখেছে চাষ দিয়ে। কৃষকের মুখে হাঁড়ির মত কালো। কী হবে তাদের! কি আছে তাদের কপালে!

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৪:৪৪
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামীলীগে শুধুমাত্র একটি পদ আছে, উহা সভাপতি পদ!

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৪ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪১


বাঙ্গালীদের সবচেয়ে বড়, পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এই দলটির প্রতি মানুষের ভালোবাসা আছে। মানুষ এই দলের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন করেছে। ৭০ এর নির্বাচনে এই দলটিকে নিরঙ্কুশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমপি আনারের মৃত্যু এবং মানুষের উষ্মা

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:২৯


সম্প্রতি ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার পর আনোয়ারুল আজীম আনার নামে একজন বাংলাদেশি এমপি নিখোঁজ এবং পরবর্তীতে তাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর তার মরদেহের হাড়-মাংস আলাদা করে হাপিত্যেশ করে দেওয়া হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

দোয়া ও ক্রিকেট

লিখেছেন শাহাবুিদ্দন শুভ, ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৪


দোয়া যদি আমরাই করি
তোমরা তাইলে করবা কি?
বোর্ডের চেয়ারম্যান, নির্বাচকের
দুইপায়েতে মাখাও ঘি।

খেলা হচ্ছে খেলার জায়গা
দোয়ায় যদি হইত কাম।
সৌদিআরব সব খেলাতে
জিতে দেখাইত তাদের নাম।

শাহাবুদ্দিন শুভ ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে “বাঘ” বলা বন্ধ করুন!!

লিখেছেন অন্তর্জাল পরিব্রাজক, ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:২১



দয়া করে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে “বাঘ” বলা বন্ধ করুন!! X( এরা ছাগলের দলই ছিল, তাই আছে, তাই থাকবে :-B !! এরা যেমন ধারার খেলা খেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তোমার বকুল ফুল

লিখেছেন নীল মনি, ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৪

বকুল ফুলের মিষ্টি গন্ধে ভরে থাকে আমার এই ঘর। আমি মাটির ঘরে থাকি। এই ঘরের পেছন দিকটায় মা'য়ের হাতে লাগানো বকুল ফুলের গাছ৷ কী অদ্ভুত স্নিগ্ধতা এই ফুলকে ঘিরে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×