somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কালজয়ী প্রতিভা : সৈয়দ মুজতবা আলী

২০ শে জুলাই, ২০০৯ দুপুর ১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অসাধারন প্রতিভাধর রম্য রচয়িতা এবং পন্ডিত সৈয়দ মুজতবা আলী ( ১৯০৪- ১৯৭৪) ।

রম্যলেখক ভালো কথা কিন্তু “পন্ডিত” ?


১৮টি ভাষা যার দখলে , যে ভাষায় উনি কথা থেকে শুরু করে লিখতে পর্যন্ত পারেন, রাশিয়ান ভাষায় “প্রেম” উপন্যাস এর বাংলা অনুবাদ, জার্মান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট , বিশ্বভারতী থেকে স্নাকত,আল- আজহারে পড়াশুনা , তুলনাত্নক ধর্মচর্চা যার নখদর্পনে , গীতা যার সম্পুর্ন মুখস্ত আর রবীন্দ্রনাথের গীতিবিতান টপ টু বটম ঠোঠস্ত তাকে যদি পন্ডিত বলা হয় তাহলে আপত্তির কি থাকতে পারে ?

তবে “সব কিছু যে পন্ড করে সে পন্ডিত” এটা অবশ্য সৈয়দদার ভাষ্য ।

বিশ্বভারতীতে পড়াশুনা করার সময় একবার রবীন্দ্রনাথের হাতের লেখা নকল করে ভুয়া নোটিশ দিলেন , ” আজ ক্লাশ ছুটি” .. বাস যায় কোথায় সবাই মনে করল রবীন্দ্রনাথ ছুটি দিয়ে দিয়েছে

রম্য রচয়িতা মুজতবা

আর রম্য রচনা ? সেতো বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রবন্ধকে রম্য রচনার আংগিকে লেখা আর কোনো লেখক আছি কি ? ব্যাপারটা একটু বুঝিয়ে বলি । যেমন ধরুন “মুনির চৌধুরী” অসাধারন রম্য লেখক কিন্তু “নাটক” , হুমায়ুন আহমেদ “উপন্যাস” , শিব্রাম ” উপন্যাস” বা “গল্প” , বার্নাড শ “নাটক” , জেরোম কে জেরোম “ুউপন্যাস” … কারন কি ? প্রবন্ধে “রম্য রচয়িতা” নেই কেনো ?

উত্তর অতি সোজা “প্রবন্ধ কে রম্য flavor দেয়া অতিব কঠিক কাজ । সেই কাজটাই পানির মতো করে দেখিয়েছেন সৈয়দ দা । কি নাই তার লেখায় , “হিটলারে প্রেম থেকে শুরু করে ওমর খৈয়াম এর কবিতা কোনটাই বাদ যায়নি ”

যে বার দেশ পত্রিকায় তার লেখা “দেশে বিদেশে” বের হতো না সে বার পত্রিকার কাটতি একলাফে কমে যেত।

মাস্টার পিস

পাঠকের মনে হয়ত প্রশ্ন থাকতে পারে ২৫-৩০ টা লেখার মধ্যে কোনটা মাস্টারপিস ?

নিসন্দেহে “দেশে বিদেশে” , তার প্রথম কীর্তি এবং সর্বশেষ্ঠ । আবদুর রহমানের বর্ননায় চমতকৃত হন নাই এমন পাঠক হয়ত পাওয়া যাবে না । সহজ সরল আফগানদের জীবন প্রনালী অসধারন মুজতবা লেখনীতে মূর্ছনা ছড়িয়েছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না ।

বাংলাদেশে স্টুডেন্ট ওয়েজ সমগ্র রচনাবলী প্রকাশ করেছে । ৭ খন্ড ।

সাংসারিক মুজতবা আলী

মুজতবা আলী একবার ছেলের নাম রাখলেন “ভজুরাম” , সবাই জিগগেশ করল এমন বিদঘুটে নাম কেনো রাখলেন ? তিনি বললেন “সন্তানের নাম রাখা এক বিশাল ঝামেলার ব্যাপার, নেপালে দারোয়ানকে বলে “ভজুরাম” , তাই গিন্নিকে এই নাম বললাম যাতে কখনও আমাকে এ ব্যাপারে জিগগেশ না করে

জার্মানে মুজতবা আলী

জার্মানে যে সময় বিশ্ব বিদ্যালয়ে পি এইচ ডি করছেন সে সময়ে ” আইনস্টাইন” সেই বিশ্ব বিদ্যালয়ে অধ্যাপক।

একবার জার্মানে জোকস প্রতিযোগিতা । লোকাল জার্মান ভাষায় । চিন্তা করা যায় বাংলাদেশের এক সিলটি সন্তান লোকাল জার্মান ভাষায় জোকস বলে সেকেন্ড প্রাইজ জিতে নিলো ?

আড্ডাবাজ মুজতবা আলী

যেকোনো আড্ডায় ঘন্টার পর ঘন্টা পৃথিবীর তাবত বিষয় নিয়ে অনর্গল বলে যাওয়া তার কাছে নস্যি । একবার এক রাষ্ট্রদুত তার সাথে সাক্ষাত করে আলাপ করলেন । পরে সেই রাষ্ট্রদুত বলেছিলেন , ” আমি জীবনে এত অল্প সময়ের মধ্যে পৃথিবীর এত বিষয়ে আলাপ শুনি নাই , যেটা সৈয়দ মুজতবা আলী আমাকে শুনিয়েছিলেন অল্প কয়েক ঘন্টার মধ্যে ।

তুলনাত্নক ধর্মচর্চা

একবার এক অনুষ্ঠানে এক হিন্দু পুরোহিত গীতা সম্বন্ধে বক্তব্য রাখছিলেন । সেই সভায় সৈয়দ মুজতবা আলী উপস্হিত ছিলেন । দুর্ভাগ্যক্রমে সেই পুরোহিত যে সব রেফারেন্স গীতার থেকে সংসকৃত ভাষায় দিচ্ছিলেন তাতে কিছু ভুল ছিল
সৈয়দ মুজতবা আলী অবশেষে দাড়িয়ে উনার সমস্ত রেফারেন্ষ মুল সংসকৃত ভাষায় কি হবে তা সম্পুর্ণ মুখস্হ বলে গেলেন । সমস্ত সভার দর্শক বিষ্নয়ে হতবাক।

মুজতবা ও বাংলা ভাষা

“বংগিয় শব্দকোষ” নামে একটি অভিধান বের হয়েছে কোলকাতা থেকে লেখক হরিচরন গংগোপাধ্যায় । বাংলায় বৃহত অভিধান গুলোর মধ্যে একটি । সেই হরিচরন গংগোপাধ্যায় মারা যাবার পূর্বে বলেছিল , ” আমার অভিধান যদি কোনো সময় সংশোধন করার প্রয়োজন হয় তাহলে যেন সৈয়দ মুজতবা আলী সেটা করে”

তাহলে বুঝুন মুজতবার বাংলা ভাষায় কত গভীর দখল ছিল ।

কিছু মুজতবা ডায়লগ

“বই কিনে কেউ কখনও দেউলিয়া হয় না”
” আমার চাকরের নাম কাট্টু , কেননা সে পকেট কাটে , মাছের মাথা কাটে, আর প্রয়োজন হলে মনিবের মাথা কাটে”

“যে ডাক্তার যত বড় তার হাতের লেখা তত খারাপ”

মুজতবার একটি জোকস

এক লোকের গাড়ি খুবই পুরান , মরমর অবস্হা । লোকটিকে জিগগেশ করা হলো ভাই আপনার গাড়ীর কি অবস্হা ?

লোকটি বলল “আমার গাড়ীর এতই খারাপ অবস্হা যে হর্ন ছাড়া আর সব অংশই শব্দ করে ”

উপসংহার:

এই প্রতিভাবান লেখককে কি আমরা তার উপযুক্ত মর্যাদা দিতে পেরেছি ?

[[ যদি লেখায় কোনো রেফারেন্স ভুল থাকে , সহ্রদয় পাঠক উল্লেখ করে দিলে কৃতগ্য থাকব ]]


০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কথাটা খুব দরকারী

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ৩১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৪

কথাটা খুব দরকারী
কিনতে গিয়ে তরকারি
লোকটা ছিল সরকারি
বলল থাক দর ভারী।

টাকায় কিনে ডলার
ধরলে চেপে কলার
থাকে কিছু বলার?
স্বর থাকেনা গলার।

ধলা কালা দু'ভাই
ছিল তারা দুবাই
বলল চল ঘানা যাই
চাইলে মন, মানা নাই।

যে কথাটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×