somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাটির পেয়ালায় চা, মজা আলাদাই...যেনো ভেজা মাটির গন্ধ পাই

১৯ শে জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৫:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গত সপ্তাহে একটা মাটির মগ বানালাম...তাতে চা আর খাওয়া হয়ে উঠছিলো না। হঠাৎ করেই ঠান্ডা গরমে সর্দি, কাশি বাধিয়ে বসেছি। নাক দিয়ে অনবরত পানি ঝরছে, গলাটাও ব্যাথা, একটু জ্বরও আছে। মুখে রুচি নেই, কিছুই খেতে ভালো লাগছে না। এখন চা টাই একমাত্র ভরসা। চা বানিয়ে মাটির মগ ভর্তি করে বসলাম সামুতে সবার লেখা পড়তে। চা খেতে খেতে হঠাৎ মনে হলো যেনো ভেজা মাটির গন্ধ পাচ্ছি...নাহ আজতো বাইরে ঝলমলে রোদ, বৃস্টির ছিটেফোটাও নেই। মাটির মগটা থেকেই মনে হয় গন্ধটা আসছে...দারুন ভালো লাগছে। নিজের বানানো মগে চা খাচ্ছি...এটা ভাবতেই মনে হয় গন্ধটা লাগছে, অথবা এমনও হতে পারে সম্পূর্ণ আমার মনের ভুল, সর্দি-জ্বরে হয়তো এমনটা মনে হচ্ছে। জ্বর হলেতো মানুষ কতোই না উল্টাপাল্টা ভাবে।

এই লেখা পড়ছি সেই লেখা পড়ছি...দিন দুই না আসাতে দেখি কত লেখা জমে গেছে। কখন যে চা শেষ হয়েছে টেরও পাইনি...কাপের তলানিটুকুও খেয়ে ফেলেছি। তবুও চায়ের তৃষ্না মিটেনি...

যাকগে, অনেক তো বকবক করলাম....এবার আসুন দেখি কিভাবে মগটা বানানো যায়...

প্রথমে বেশ আঠালো মাটি সংগ্রহ করতে হবে..যে মাটি সাধারনত বাসনপত্র তৈরীতে ব্যাবহার করা হয়। তারপর পানি দিয়ে ভালোভাবে মেখে মন্ড তৈরী করতে হবে। মন্ডটাকে আয়তাকার আকৃতি বানিয়ে তারপাশে ৫মিলিমিটারের কাঠের টুকরো রাখতে হবে। এরপরে সুতো দিয়ে মাটির একপ্রান্ত থেকে কাঠের টুকরোটার উপর থেকে ঘুরিয়ে আরেক প্রান্তে নিয়ে আসতে হবে। সুতো দিয়ে কাটলে, মসৃনভাবে কাটা যাবে মাটি। এতে মাটির ৫ মিলিমিটারের পুরুত্বের আয়তাকার একটা প্লেট পেয়ে যাবো। নীচে দেখুন মাটির মন্ড থেকে কেটে নেওয়া মাটির আয়তাকার প্লেট টি।


এরপরে দৈর্ঘ্য ২৬ সেঃমিঃ এবং প্রস্থ্ ৯ সেঃমিঃ, এই মাপের কিছুটা শক্ত কাগজ কেটে নিতে হবে। সেই কাগজটা মাটির প্লেট টার উপরে রেখে চারপাশে কেটে ফেলতে হবে, নীচের ছবির মতো করে।

কাটার পরে

একই রকম ভাবে মগের নীচের মাপদিয়ে বৃত্তাকার করে শক্ত কাগজ কেটে সেটা বৃত্তাকার মাটির প্লেটটার উপরে বসিয়ে চারপাশ থেকে কেটে নিতে হবে। নীচে ছবিতে দেখুন কিভাবে কেটে নেয়া হয়েছে। কাটার কাজে ব্যাবহার করা হয়েছে, একটুকরো কাঠের মাথায় আটকানো সুচালো কাটার দিয়ে। আপনি এটা নিজেই বানিয়ে নিতে পারবেন। লেপ, তোষক সেলাই করার যে মোটা, বড় সুইগুলো আছে, সেখান থেকে একটা বাছাই করে একটুকরো কাঠের মাথায় বসিয়ে আপনি বানিয়ে ফেলতে পারেন এই সয়েল কাটার।এটা দিয়ে খুব সুন্দর করে মাটি কেটে ফেলা যায়।

এরপরে আসি মগের উপরে আপনি যদি কোনো নকশা করতে চান, তখন কি করবেন। মাটির মন্ডে আপনার ইচ্ছামতো কয়েক প্রকারের রঙ মিশিয়ে রঙিন মন্ড বানিয়ে ফেলুন। যেকোন রঙের মন্ড নিয়ে, হাত দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চিকন করে, সেটা মাটির আয়তাকার প্লেট টার উপরের দিকে আপনার পছন্দ মতো কোনো নকশায় সাজিয়ে নিন। নীচে দেখুন কিভাবে মাটিকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নকশা বানানোর উপযোগি করা হচ্ছে।


আরেকটা গুরুত্বপূর্ন কথা, মাটি আর পানি মিশিয়ে মিশ্রন তৈরি করে নিতে হবে এবং সেটা তুলি দিয়ে যেখানটায় নকশাটা বসাবেন সেখানে বুলিয়ে নিতে হবে। এতে নকশাটা ভালোভাবে আটকে থাকবে।


এরপরে নকশা করা শেষ হলে, মাটির প্লেট থেকে একটু বড় মাপের কাঠের ত্ক্তা দিয়ে চাপ দিয়ে নকশাটাকে মাটির প্লেটটার মধ্যে বসিয়ে দিতে হবে। নীচে দেখুন নকশাটা বসিয়ে দেবার পরে এমন হবে।


মাটি কেটেছি যে কাটার দিয়ে সেটা দিয়েই গোল প্লেট টার চারপাশ একটু দাগদিয়ে খাঁজ কেটে নিবো এবং একই ভাবে আয়তাকার প্লেট টার নীচের অংশে, দুইপ্রান্তে খাঁজ কেটে নিবো। এতে করে জোড়ার অংশটা খুলে যাবে না। গোল প্লাস্টিকের কাঠামোটা, আয়তাকার মাটির প্লেটটার উপরে রেখে প্লেটটার একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্ত ঘুড়িয়ে আটকিয়ে দিতে হবে, সেইসাথে গোল প্লেটটার উপরে বসিয়ে দিতে হবে। হাত দিয়ে চেপে চেপে প্রান্তগুলো শক্ত করে আটকাতে হবে, নইলে দেখা যাবে বানানোর পরে মগের নীচ থেকে খুলে পরে গেছে। নীচে ছবিতে দেখুন প্লাস্টিকের গোল কাঠামোটা।


এরপরে শুধু হাতল বানানো। প্লেট টার চারপাশ থেকে কেটে ফেলা মাটিটুকু দিয়েই আপনি বানিয়ে ফেলতে পারবেন মগের হাতল।


এবার লাগিয়ে দিলাম হাতলটা মগের সাথে, ব্যাস হয়ে গেল মাটির মগ।


এবার শুধু পোড়াবার পালা, প্রথমে কম তাপে পুড়িয়ে তারপর বেশি তাপমাত্রায় পোড়াতে হবে বিশেষ ভাবে তৈরি চুল্লীতে। পোড়ানোর কাজটা করেছেন এক জাপানিজ মৃৎ শিল্পী, নামটা ঠিক এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। উনার কাছে আমি বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞ। হঠাৎ করেই এই মগ বানানোর সুযোগটা পেয়ে গেলাম, একেবারে বিনামূল্যেই। উনি মাটিটা সরবরাহ আর পোড়ানোর কাজটুকু করেছেন, বাকিটুকু আমি নিজেই করেছি।


তো এবার ঝটপট বানিয়ে ফেলুন মাটির মগ আর নিজের বানানো মগে চা খান।

চীনামাটির বাসনের উপরে কিছু চিত্রকর্মের ছবি









সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:০৬
৩৬টি মন্তব্য ৩৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অপরূপের সাথে হলো দেখা

লিখেছেন রোকসানা লেইস, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৫



আট এপ্রিলের পর দশ মে আরো একটা প্রাকৃতিক আইকন বিষয় ঘটে গেলো আমার জীবনে এবছর। এমন দারুণ একটা বিষয়ের সাক্ষী হয়ে যাবো ঘরে বসে থেকে ভেবেছি অনেকবার। কিন্তু স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×