somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপ্রকাশিত চিঠি (১)...................

১৫ ই জুলাই, ২০০৯ সকাল ১১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাজর্ষি

এই নামটা তোমাকে মানায়। যার ঘরের মধ্যে প্রকৃতি থেকে খুঁজে আনা নানান কিছু। বাহারী গাছপালার সমাহার।

কত রকম জংলী গাছ যে নিজের ঘরে এনে রেখেছো।
এমনকি প্রানীকূল সেরা সিংহ ,সেও নাকি তোমার ঘরে তোমার সাথে থাকে!
ভাগ্যিস ওইটা সত্যিকারের না। তবু এত বড় একটা সিংহকে ঘরে রাখতে ক'জনাই পারে?

প্রকৃতির প্রতি যে তোমার প্রবল টান সেটা বুঝেছি তোমার সাথে কথাতেই।
তোমার সাথে দেখা হওয়াটাও খুব অবাক করা ব্যাপার।
আমি অফিসের সামনের ডেস্কে কাজ করছিলাম।
তুমি এলে ।
দেখে বুঝছিলাম এই শহরে নতুন এসেছো।
সাহায্য করতে পারি কিনা জানতে চাইতেই উত্তরে প্রশ্ন করলে। আমি বাংলাদেশের কিনা।
মাত্র ৩দিনে শহর এর কি কি দেখা যায় জানতে চাইলে !
বললাম অনেক কিছু।
প্রয়োজনীয় কাগজগুলো বুঝিয়ে দেবার ফাঁকে ফাঁকে টুকটাক ব্যক্তিগত আলাপ।
আমার ফোন নং টা দিলাম তোমাকে এবং ইমেইল।
তুমিও দিলে।

সেই পাঁচটা দিন ।
আমার জীবনের অদ্ভুত স্মৃতিময় সময়।
তিনদিনকে বাড়িয়ে পাঁচদিন করেছিলে তুমি।
কত জায়গায় গেছি আমরা। এতগুলো বছর এই শহরে আছি অথচ জানতাম না এই শহরে একটা পাহাড়ী ঝর্না আছে।
শুধু পড়ালেখা চাকরী।
এইসব নিয়েই কেটে গেলো আমার জীবনের কয়টা বছর।

মাঝে দেশে গিয়ে একজনের সাথে এনগেইজইজমেন্ট হয়েছিলো কিন্তু তা টেকেনি। বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়নি আর । যদিও প্রায় তিনবছর নেটে যোগাযোগ ছিলো।
প্রথম প্রথম খুব মন খারাপ লাগতো।
শূন্য মনে হতো।
সময়ে সব সয়ে গেলো।
তিনটা বছর দিনে গড়ে অন্তত দুই ঘন্টা কথা হয়েছে তার সাথে।
মনে হতো কত চেনা।
অথচ দেখা হতে সব বদলে গেলো।

অথচ তুমি ।যার সাথে শুধু পাঁচটা দিন দেখা।
মনে হলো বছরের পর বছর ধরে তোমাকে চিনি।
তোমার সাথে যে কটাদিন ঘুরেছি ,একবার ও জানতে চাওনি আমার জীবনের এইসব কথা।

গাছ চিনিয়েছো।
বাড়িঘর দেখে বলেছো কোনটা কবে তৈরী হয়েছিলো।
রাস্তার ইটগুলো দেখে বলেছো এইসব পথে হাঁটলে তোমার খুব ইচ্ছে করে এমন একজন পাশে এসে দাঁড়াক ,যার চুলে মাতাল করা বুনো গন্ধ.....
সে এসে তোমাকে ফরাসী ভাষায় অথবা জার্মানী ভাষায় প্রশ্ন করুক নানান সব আজগুবী প্রশ্ন......তুমি অবাক তাকাতেই সে হেসে গলে গেলে পরুক।

শুনে আমি চমকে উঠি।
দ্রুত হেঁটে ভীড়ের সাথে মিশে যাই।
নিজেকে নিয়ন্ত্রন করি।
কি করে বলি এমন সব ইচ্ছে দের আমিও হৃদয়ে বয়ে বেড়াই...........
খুব ইচ্ছে করে একদিন কেউ সামনে এসে দাঁড়াক।
মাথায় লম্বা চুল।
ঝুটি বাঁধা।
আমাকে এসে বলুক পারলেভ্যু ফ্রন্সে মাদমোয়াজেল?
আমি খুব অবাক হয়ে বলি এতদিন কোথায় ছিলেন?

সে বলুক জীবনানন্দ?
তুমি জীবনানন্দও জানো মেয়ে?

তুমি চলে যাবার কয়েকঘন্টা পার হয়ে গেছে।
পাঁচটা দিনের প্রায় ৬৫ ঘন্টা আমরা একসাথে ছিলাম। এমন বৃষ্টি হয় এই শহরটায় অথচ এই কটাদিন শধু রোদ আর রোদ ছিলো।

তোমার কোন গাইড দরকার ছিলো না।
অথচ তুমি এমন করে বললে।
অফিস থেকে ওরা আমাকে বললো এই কাজটা করতে।
আমি অনেক না করলাম।
অনেকবার।
তুমি বললে শুধু পাঁচটা দিনের কিছু সময়।
আমি কোন জায়গা চিনিনা।
কখনো বেড়াইনি তেমন।
শুধু ভাষাগত সুবিধার কথা বলে তুমি আমাকে সময় দিতে বললে।
অফিস ও রাজি হয়ে গেলো।
অফিস সহকারি হয়ে গেলাম গাইড।
খুব ইচ্ছে করছিলো না করে দিই।
কি জানি কেনো,
মনে হয় তোমার অদ্ভুত দুটো চোখের কথা ভেবে না করতে পারিনি।
এর আগে আমি কোন সবুজ চোখের কাউকে কাছ থেকে দেখিনি।

তুমি চলে গেছো।
অথচ কত কিছু ফেলে গেছো।
কত কথা।
আমি যে এতটা প্রগলভ হতে পারি তোমার সাথে দেখা না হলে নিজেও কি জানতাম?
মনে আছে যেদিন আমরা মন্ত ত্রম্বল্য শহরে গেলাম।
সারাদিন শুধু হেঁটেছিলাম।
পাহাড়ের ঢাল বেয়ে উঠতে উঠতে হাঁফিয়ে পড়ছিলাম।
তুমি হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল।

হাত ধরতেই বলেছিলে কি ভীষন ঠান্ডা তোমার হাত।
আমার ভিতরে তখন কি যে ঝড় বইছিলো।
নদীতে তুফান এলে যেমন হয়,
ভয়ে শীতার্ত হয়েছিলাম আমি। তুমি কি ভেবে ছেড়ে দিলে।

বললে ইউরোপের গল্প।
প্যারিসের পথঘাট।
আমি শুনলাম।
ওখানে গেলে তুমি কমপক্ষে ২ সপ্তাহ থাকো। নাহলে তোমার চলে না।
শহরে ঘুরে ঘুরে তুমি স্হাপত্য দেখে বেড়াও আর গাছ গাছালি।

তোমাকে চিঠি লিখতে বসছি সেই কখন।
ইচ্ছে ছিলো অনেক কথা লিখি। অনেক না বলা কথা।
অথচ পারছিনা।
শব্দ সাজিয়ে দারুণ কিছু লেখা আর হচ্ছেনা।
তোমাকে মুগ্ধ করবার জন্য নয় হে ছেলে।
নিজেকে খুলে ধরবার জন্য।

আমার ঘরের দেয়ালে টাঙানো সেই দারুণ ছবিটা ।
বিরাট একটা পাহাড়। যার এক দিকে একটা নদী।
নদীর উপর একটা দীর্ঘ কাঠের ব্রীজ।
যখন আমার মন খুব খারাপ লাগে আমি ওখানে গিয়ে বসি। ঝুলানো ব্রীজের উপর পা ঝুলিয়ে বসে থাকি। অনেকটুকু পা পানির নীচে থাকে।
পানিতে প্রথম পা পড়তেই সারা শরীরে কেমন রিনরিন সুর বয়ে যায়।
মানুষের মত প্রকৃতিরও ম্যাজিক আছে।
সেই যে লজ্জাবতীর মত!
লজ্জাবতীকে আমি বলি স্পর্শচূড়া।
স্পর্শে কেমন পরিবর্তিত হয় দেখো না?
নরের মত।
নারীর মত।
ছোঁয়াছুঁয়ির ব্যাপারটাই এমন তাইনা?
কেমন আচ্ছন্ন করে দেয়।

খুব ইচ্ছে করছে তোমার হাত দুটো ধরে বসে থাকি।
পার হয়ে যাক অজস্র সেকেন্ড মিনিট ঘন্টা।

ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে।
কোন সে আকাশে তুমি এখনো কে জানে।
মেঘের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে আমাকে কি মনে পড়ছে তোমার?

তুমিই তো বলেছিলে আসাটা সহজ।
যাওয়াটা কঠিন।
তুমি কি যাচ্ছো?
নাকি আমি যাচ্ছি?
আমরা দুজনেই কি চলে যাচ্ছি?

শুনতে পাচ্ছি নদীর ধেউ এর মত শব্দ।
তুমি কে আমাকে ডাকছো।
তুমি বলেছো আমার নাম তটিনী........
আমি শুনতে পাচ্ছি সেই ডাক।
_________________________________________
তটিনী

কতগুলো ঘন্টা পার হলো তোমাকে দেখিনি।
তোমার সাথে যে ক'ঘন্টা দেখা হয়েছে তার এক হিসাব হতে পারে।
পৃথিবীতে যতগুলো বছর পথ হাঁটা সব কিছু যেনো তুচ্ছ মনে হচ্ছে।
কত দেশ ,কত মহাদেশ ঘুরেছি।
তোমার সাথে দেখা না হলে কি করে জানতাম শুধু নদী নয়।
তটিনীও যার নাম।
তোমার কথা মনে হলে আর একটা নাম ও মনে হয় ।
সেই যে লজ্জাবতীর কথা বলেছিলে।
বলেছিলে যার নাম স্পর্শ চূড়া।
তোমাকে ডাকতে ইচ্ছা করে স্পর্শ।
এ এক অন্য রকম অমল ধবল অনুভূতি।
এর আর একটা নাম আছে। ছোঁয়া।
নির্মল এক সুন্দর এর অপেক্ষায় অপার্থিব এই ছোঁয়া।
যার জন্য বুকের মধ্যেকার নক্ষত্ররাশি এলোমেলো হয়ে যায়। মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্রে রিনরিন করে শব্দ করে যায় জলতরঙ্গের মত কিছু।
আমি নিঃশ্বাস বন্ধ করে উষ্ণতার অপেক্ষায় থাকি।
শুধু কি নিঃশ্বাসে এমন উষ্ণতা থাকতে পারে?

সবুজ এর বুক ধরে হেঁটে যাই অনেক পথ।
নদীটার বুকে ভোরের কুয়াশার চাদর।
নদীর নাম জানো ?
কাঞ্চন।
তুমি চমকে উঠলে?
সত্যিই কাঞ্চনই।
নদীটার উপর ভোরের কুয়াশার চাদর।
আমরা সেই চাদর ভেদ করে হাঁটতে থাকি।
আগুনের উষ্ণতা হাতের মুঠোয়।
নিঃশ্বাসে বারুদের তাপ।
যে কোন মুহূর্তে জ্বলে উঠতে পারে আগুন।
প্রাচীন সময়ের মত।
পাথর এর স্পর্শে যেভাবে আগুন জ্বালানো হতো।
আগুনের অভিলাষ বুকে।
জ্বলে পুড়ে খাঁক হবার জন্য সকালটা ধরে এগুতে থাকি। কোথাও কোন প্রাচীন বট এর নীচে।
একেবার নিবিড় মুখোমুখি দাঁড়ানো সময়।
তোমার ভিতরের অস্হিরতা আমাকেও ছোঁয়।
তোমার দুটো হাত প্রার্থনার মত ধরে বসে থাকি।
দুচোখের সমুদ্রে ভিজিয়ে দিতে চাই আগুনকে।
অথচ কি আশ্চর্য্য চোখের সমুদ্রেও আজ আগুন জ্বলে।
এও কি সম্ভব?
কতকাল এই অপেক্ষা তোমার?
আমার আগুনকে নিভাবে বলে সমুদের বিশালতা নিয়ে যেই তুমি হাত বাড়াও সেই তোমাতেই আগুন খেলা করে!
আমি জ্বলতে থাকি।
ভিতরের আগুন।
বাইরের আগুন!
সমুদ্রের এক শিখা অনির্বাণ আমাকে জ্বালাতে থাকে।

সেই আগুনে আমার চোখ পুড়ে যায়!
আমার কপাল,আমার ঠোঁট,
আমার কানের নীচের তিলটাও।

এমন বাঁধভাঙা আগুন কত কাল ধরে জ্বলছিলো?
তুমি কি কোন আগ্নেয়গিরী?
বিসুভিয়াস কিংবা
কি নাম তোমার?

আমি ঋষি হয়ে তোমার জন্য অপেক্ষা করি।


চলবে................

অপ্রকাশিত চিঠি ২
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ১১:০৭
৬৭টি মন্তব্য ৬৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×