somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টিপাইমুখ বাঁধ বিরোধী লড়াইয়ে সামিল হোনঃ শ্বেত-সন্ত্রাস রুখে দাড়ান...

১৪ ই জুলাই, ২০০৯ রাত ১১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পরিবেশ বিপন্নতার প্রথম শিকারঃ অসহায় নিঃস্ব মানুষ

বাংলাদেশ এবং ভারতের আন্তঃসীমানায় সর্বমোট ৫৭টি নদী আছে, যাদের পানি উভয় দেশই মিলিত ভাবে ভোগ করে। এই ৫৭টি নদীর মধ্যে অন্ততঃ ৪৮টি নদী্র পানি ইতিমধ্যেই ভারতীয় পানি ব্যাবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ব্যাপক ভাবে নিয়ন্ত্রিত। কখনও ড্যাম আবার কখনও ব্যারাজ নির্মাণ করে এই সমস্ত নদীর পানিকে আটকে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আবার কোথাও বা আস্ত নদীটারই গতিমুখ পরিবর্তন করে ভিন্ন খাতে তা প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। সব কিছুর মুলে উদ্দেশ্য একটাই, সেটা হল পানির উপর একচ্ছত্র আঞ্চলিক অধিকার কায়েম করা, এবং সেই পানি একমাত্র বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যাবহার করা।

বড় বড় বাঁধ নির্মাণ করে স্বাভাবিক পানির প্রবাহকে ব্যাহত করার এই অপচেষ্টা নিয়ে সারা পৃথিবী জুড়েই বিক্ষোভ এবং প্রতিবাদের ঝড় আমরা দেখতে পাই। দুনিয়াজুড়ে পরিবেশবাদীদের একটা বড় অংশই এই সব বড় বাঁধগুলির নির্মাণের বিপক্ষে- কারণ এতে সবচেয়ে প্রথম প্রত্যক্ষ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় গরীব মানুষ। চাষাবাদ পশুপালন সহ জীবিকার জন্য এতকাল সে পানির এই প্রাকৃতিক উৎসগুলিই ভোগ করে এসেছে। অকস্মাৎ পানির উৎস সহ ভুমি্র জবর দখল আর তা থেকে উচ্ছেদ দিয়ে শুরু হয় গরীব মানুষের এই দুর্ভোগ, তারপর দখলী সেই জমিতে নির্মিত বাঁধ, সৃষ্টি করে অকাল বন্যা, জলাবদ্ধতা, পরিবেশ দুষণ আর যাবতীয় রোগ ব্যাধি— গরীব অসহায় মানুষের দুর্ভোগের কোন শেষ থাকে না।

টিপাইমুখ বাঁধকে চিনতে বিশেষজ্ঞ হতে হয় না...

এই পরিস্থিতিতে নতুন ভাবে সিলেটের বরাক নদীর উৎস মুখে ১৬২.৫ মিটার উঁচু এক ড্যাম নির্মাণের আলোচনা আমাদের সামনে আসে। আসামের মণিপুর রাজ্যের টিপাইমুখ নামক গ্রামের কাছাকাছি প্রস্তাবিত এই বাঁধ একই সাথে ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়েছে। সচেতন মহলের কাছে স্বাভাবিক ভাবেই এই ঘটনা আর একটি মানবিক বিপর্যয় এবং মানুষের দুর্ভোগের আলামত হিসাবেই বিবেচিত হতে থাকে। বিশেষজ্ঞদের যাবতীয় জ্ঞানগর্ভ আলোচনা ব্যাতিরেকেই আমরা বুঝতে সক্ষম হই, আমাদের জন্য এই বাঁধ আসছে আর এক মরন ফাঁদ হিসাবে।

জনৈক অভদ্র রাষ্ট্রদুত

ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সাথে এই বাঁধ নিয়ে আলোচনা করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে শুরু থেকেই নানা রকম টালবাহানা লক্ষ্য করা গেছে। এই সুযোগে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সহ দূতাবাসের কর্মীরা আমাদের বিশেষজ্ঞ, আমাদের জনগ্‌ন, আমাদের দেশের উদ্দেশ্যে এমন এমন সব মন্তব্য করতে থাকেন যা সাধারন ভদ্রতাকে ছাপিয়ে যাওয়া, শিষ্টাচার বহির্ভূত, অশালীন এবং বেমানান। এই সমস্ত উক্তি মন্তব্যের অনেকগুলিই করা হয়েছে আমাদের সরকারের মন্ত্রী এবং অমাত্যদের উপস্থিতিতে... আমাদের বীর বাহাদুর মন্ত্রী এবং অমাত্যরা এই সব উক্তি মন্তব্যের কোন কার্য্যকরী প্রতিবাদ করার প্রয়োজন বোধ তো করেন নাই! বরং তাদের অনেকেই বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সে সব উক্তি মন্তব্যের এমন ভাবে প্রতিধ্বনি করেছেন, আমাদের ভাবতে হয়েছে- তারা বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের সংবিধানের অধীনে শপথবাক্য পাঠ করা জনগনের নির্বাচিত প্রতিনিধি নাকি ভিন দেশের গনপ্রতিনিধি!!!

ল্যাম্পপোষ্ট এর সাহসী পদক্ষেপ

টিপাইমুখ বাঁধ বিরোধী যাবতীয় প্রতিবাদ আন্দোলন যখন শুধুমাত্র পত্র-পত্রিকার পৃষ্ঠা এবং সেমিনার এর আলোচনায় সীমিত — সে সময়ই এক ঝলক বিশুদ্ধ বাতাসের মতো ল্যাম্পপোষ্ট নামক প্রায় অখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রীক এক সংগঠনের সাহসী কিছু তৎপরতা আমাদের নজরে পড়ে। ৫ই জুলাই গুলশানের ভারতীয় দুতাবাসের সামনে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ বন্ধ এবং রাষ্ট্রদুত পিনাক রঞ্জনের প্রত্যাহারের দাবীতে এক প্রতিবাদ বিক্ষোভে সামিল হয়। আমরা স্তম্ভিত হয়ে যাই গুটিকয়েক ছেলেমেয়ের সেই আন্দোলন দমনে পুলিশি বর্বরতার মাত্রা দেখে, আর তারপর শিউরে উঠি সামরিক সুশীলদের মুখপত্র হিসাবে প্রথম আলোর অপতৎপরতা দেখে। আঞ্চলিক পরাশক্তির তাবেদারী করার রাজনীতির ধারক প্রথম আলোর কাছে এটা ছিল কোন সাহসী প্রতিবাদ বিক্ষোভ নয়, বরং বিচার বহির্ভুত ব্যাবস্থার মাধ্যমে অগনতান্ত্রিক পন্থায় বিরোধী কন্ঠকে নিঃশেষ করে দেবার যে রেওয়াজ দেশে চালু রয়েছে — প্রথম আলোর অবস্থান ছিল সেই রেওয়াজকে উস্কে দেওয়ার পক্ষে দাঁড়ানোর মধ্য দিয়ে।

আমরা সাধারন ব্লগাররা যারা সেদিন ল্যাম্পপোষ্ট এর পক্ষে আমাদের সমবেদনা এবং সহমর্মিতা জানিয়েছিলাম — সেদিন আমরা আতঙ্কিত হয়েছিলাম টিপাইমুখ নিয়ে সরকারের নখ দাঁত বের করা বিভৎস প্রতিক্রিয়া আর তার যোগ্য সহচর হিসাবে প্রথম আলোর সন্ত্রাসীমুলক অবস্থান দেখে।

সাধারন ব্লগাররা যারা অকুন্ঠভাবে ল্যাম্পপোষ্ট এর পক্ষে তাদের সমবেদনা এবং সহমর্মিতা জানিয়েছিলেন, পুলিশি নির্যাতন এবং রিমান্ডের ভয়াবহতায় তারা শিউরে উঠেছিলেন — একই সাথে তাদের ঘৃণা প্রকাশ করেছিলেন প্রথম আলোর মিডিয়া সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। কিন্ত তার অর্থ এই নয়, ল্যাম্পপোষ্ট এর যা রাজনীতি, তা সংখ্যাগরিষ্ঠ ব্লগারদের রাজনীতি, অথবা তারা এই সংগঠনের সদস্যপদ গ্রহন করেছে।

এবং শ্বেত-সন্ত্রাস

ল্যাম্পপোষ্ট এর রাজনীতির অনেক অনুসঙ্গের সাথেই আমাদের মত পার্থক্য থাকতে পারে, হয়তো আছেও। আমি হয়তো ল্যাম্পপোষ্ট এর রাজনীতি ধারনও করি না — কিন্ত ইস্যু যখন টিপাইমুখ এবং প্রতিবাদের মাত্রা যখন ভারতীয় দূতাবাসের সামনের রাজপথ, প্রতিক্রিয়ার কালো হাত যখন প্রথম আলোর পক্ষ থেকে — আমরা তাদের পাশে না দাঁড়িয়ে পারি না।

আমরা জানি আগামী দিনগুলোতেও পরিবেশ বিরোধী এবং গনবিরোধী এই বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে সাধারন ব্লগাররা তাদের একাত্মতা দেখাবেন। আঞ্চলিক পরাশক্তির পক্ষে যাদের অবস্থান সেই সন্ত্রাসী শক্তি এবং সফেদ পোশাকের আড়ালে ঘাপটি মেরে থাকা তাদের দালালদের যাবতীয় বিরোধিতা সত্ত্বেও।

আমাদের কয়েকজন ব্লগবন্ধুর সফেদ পাঞ্জাবীর আড়ালে রক্তমাখা ছুরি নিয়েও আমরা আদৌ চিন্তিত নই... হত্যা সন্ত্রাসের চিরাচরিত রঙ পালটে শ্বেত-সন্ত্রাসও মাঝে মাঝে আমাদের আঙিনায় হানা দেয়, আমরা নিশ্চিত ভাবেই তা জানি।



সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০০৯ রাত ১২:৩১
৪০টি মন্তব্য ৩৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×