somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৮ টাকার টেনিস বল আর লক্ষ টাকার কৈশরের গল্প ...

১৩ ই জুলাই, ২০০৯ রাত ১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাসায় আমার এক ভাগ্নে এসেছে। খালাতো বোনের ছেলে। খুবই সামান্য বয়স। তার জন্য অনেকগুলো খেলনা কিনে আনলাম। তালিকায় ছিলো একটা টেনিস বলও। বাসায় এনে ভাগ্নেকে দিতেই সব কিছু নিয়ে তার হুড়োহুড়ি শুরু হলেও টেনিস বলটায় তেমন আগ্রহ দেখালো না। সে ডুবে রইলো বাকী গুলোতেই ।
অবহেলায় পড়ে থাকতে দেখে টেনিস বলটা হাতে নিলাম। টেনিস বল হাতে নিলেই যে সমস্যা হয়, সেটা বেশিক্ষণ হাতে রাখা যায়না। উপরে ছুড়ে বারবার ক্যাচ নিতে ইচ্ছে হয়, না হলে ইচ্ছে হয় মাটিতে ড্রপ দিতে।
আজ সেসব করলাম না।
বলটা নিতেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো।
এই সেই টেনিস বল। কত বছর হবে?
প্রায় ১৫-১৬ বছর বা তারও আগের কথা।
এই টেনিস বলের জন্য প্রতিদিনই আমাদের বিকেলগুলোর সৌন্দর্য একজনের হাতে বন্দি ছিল। সে চাইলে বিকেলটা বর্ণাঢ্য, রঙচঙে হতো। না চাইলে বিবর্ণ। তার এই রঙদায়ক ক্ষমতার উৎস, তার একটা টেনিস বল ছিল। আমাদের ছিল না। সে প্রতিদিন বল নিয়ে এসে বসে থাকতো। ইচ্ছে হলে খেলতো না হলে না-ই।
আমরা তাকে অনুরোধের উপরে রাখতাম। আয় খেলি। আয়। তার ভালো লাগলে সে খেলতো। না লাগলে, অন্যদিকে তাকিয়ে থাকতো। মাটি থেকে তুলে ঘাস চিবাতো।
আমাদেও মেজাজ গরম হলেও কিছু বলতাম না। রাগ চেপে তার দিকে তাকিয়ে হাসতাম। আর দুরে গিয়ে গালাগালি দিতাম।
সে খেলতে নামলেও মহাবিপদ। আউট হলেও আমাদের চুপ করে থাকতে হতো। সে ব্যাট ছাড়ে কিনা?
না হলে আরেকবার ব্যাটিং দিতে হতো। তার বল সে যদি নিয়ে যায়? খেলা একেবারে বাদ হওয়ার চেয়ে একটু কষ্ট খারাপ রাগতো না। তাকে দিতাম। ভাব দেখাতাম, না ইউট হয়নি। পাটকাঠির উইকেট বাতাসে পড়ে গেছে বোধ হয়।

এইভাবেই চলতো আমাদের বিকেল। তার উপরে নির্ভর। তখন টেনিস বল ৩০-৩৫ টাকা। আমাদের পক্ষে কেনা টাফ ছিল।
অনেকদিন পর একবার বাবাকে বুঝিয়ে কিনে ফেললাম। অবাক ব্যাপার সেই সাথে আমিও রাবন হয়ে গেলাম। আমার চরিত্রেও একই প্রতিফলন। খেলতে যেতেই ভালো লাগেনা। যদি বল হারিয়ে যায়!খুব একটা দাম দেইনা তাদের। দুইবার ব্যাটিং করি।

একটা সময় টাকার সমস্যা আর রইলো না। ইচ্ছে হলেই টেনিস বল কিনে ফেলতে পারি। শুরু হলো টেনিস বলে লেখা আমাদের কৈশর সময়। প্রতিদিন বিকেলে টেনিস বল নিয়ে স্কুল মাঠে যাই। সন্ধ্যা বাড়ী ফিরি। কখনো টেনিস বল নিয়ে ফিরি। কখনো বা পারিনা। হারাই। স্কুলের ছাদে আটকে থাকে টেনিস বল। আমাদের কত বেদনা যে ধারণ করে আছে আমাদের হাইস্কুলের ছাদ, সেটা সেই জড়বস্তু ছাদ-ই বলতে পারে।

আমাদের বেড়ে ওঠাও লিখিত হয়ে রইলো টেনিস বলে। টেনিস বলের গায়ে প্যাচানো স্কচটেপ জানান দিত আমরা এখন একটু বড় হয়েছি। আমাদের যারা তখনো স্কচটেপ ছাড়া খেলে তাদের জন্য সে কি তাচ্ছিল্য আমাদের?

একদিন সময়গুলো পাল্টে যায়। প্রতিদিনের টেনিস বল সপ্তাহে একবার হাতে নেই, এরপর মাসে।
আর আজ, কতদিন পর!

কতদিন হয়ে গেলো ক্যাচ ধরার ফিলিংস পাইনা।
কতদিন হয়ে গেলো পাইনা ক্যাচ মিস করে অনুশোচনার স্বাদ, ইস! একটুর জন্য ধরতে পারলাম না।





সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০০৯ রাত ১:৪৩
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×