ঠাসসস!!
- কি হল এটা?? তুমি ওরে মারলা কেন?
: বেশ করেছি, মেরেছি। এমন করে ক্যান?
- কি করেছে?
: কি করেছে দেখো না? এতক্ষণ টেম্পু ছাড়েনাই। এতক্ষণ কোন কথা নাই। এখন ছাড়তেছে, এখন ডেকে ডেকে এত কথা ক্যান?
= থাক দিদি। ঠিকই করছে বাবন। আপনি ওরে বইকেন না।
- না বকবো না। এত বড় একটা মেয়ের গায়ে এখন হাত তুলবে?
(আমার দিকে ফিরে..)
- বেশি বড় হয়ে গেছো? ৭ দিনের ছোট হওয়ার পরও তোমারে দাদা দাদা বলে, তাই বেশি বড় হয়ে গেছো?
: তো?? আরেকটা মারা উচিত ছিল।
- দেব তোমাকে একটা চড়!!
: এ্যাহ!!
(মার খেয়ে বোনটি আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে। তার মাঝে চলতে থাকে আমাদের বাকবিতন্ডা। আমি- মা- বোনের মা)
- শোন। এখন তুমি ওরে মারলা না?? একদিন তুমিই সবচেয়ে বেশি কাঁদবা ওর জন্য।
: উহু!! জীবনেও না।
- হ্যাঁ। ওর যেদিন বিয়ে হবে, সেদিন আর সবার চেয়ে তুমিই বেশি কাঁদবা।
(আমি চুপ হয়ে যাই। সারা রাস্তা আর একটা কথাও মুখ থেকে বের হয়না।)
পাঁচ বছর পরের কথা।
শীতকাল।
আমার ক্লাস শেষ। ২ সপ্তাহের মাথায় পরীক্ষা। পরীক্ষার রুটিন দিয়ে দিয়েছে। আমার সেই বোনটির বিয়ে। যাওয়া অবশ্য কর্তব্য্।
গায়ে হলুদের রাতে আর সবার মত আমিও মজা করলাম। সারারাত জেগে গান হল। একজনের গায়ে আরেকজনের হলুদ মাখামাখি।
পরদিন গিয়ে বোনের বরের বাড়ি গিয়ে বরকে নিয়ে আসলাম। এরপর, গেইট ধরা, বরের সাথে ফাইজলামি। সবই হল।
রাত প্রায় ১টার দিকে বর পক্ষের কয়েকজন শহরে চলে আসবে। আমিও তাদের সাথে চলে যাব, আমার আর থাকা সম্ভব না। রওয়ানা হব। হঠাৎ বিয়ের আসরে চোখ পরল।
বোনটি অপলক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কাছে গিয়ে বল্লাম, "যাই।"
বলতে বলতে বেকুবের মত কেঁদে ফেল্লাম। বোনকে জড়িয়ে ধরে ভাই-বোন মিলে ভেউ-ভেউ কান্না।
হুট করে উঠে এক দৌড়ে গাড়িতে। এরপর, মা এসে ব্যাগ তুলে দিল। আমি বরপক্ষদের সাথে চলে এলাম। সারাপথ একটা কথাও না। পরদিন সকালে বাস। ঢাকায় আসব। সারারাত জেগে থাকলাম। ঘুমই আসল না। কত চিন্তা, কত স্মৃতি। পিঠাপিঠি ভাইবোন। আমি গ্রামে গেলেই আমাদের কতদিন মারামারি। আমাদের বোন নেই। তবু, কেউ জানতে চাইলেই বলি, দুই ভাই, তিন বোন।
মায়ের কথাটাই বারবার ঘুরে-ফিরে আসছিল.. "তুমিই ওর জন্য সবচেয়ে বেশি কাঁদবা।'
পরিশিষ্ট:
১. সেই বোনটি এখন মা। আমার ভাগিনা অর্ঘ্য।
২.নীল দর্পনের সাথে একটা বেশ ভাল সম্পর্ক আছে ব্লগে। সে তার একটা পোস্টে লিখেছিল, আমাদের মিস করে। তখন বলেছিলাম, তোমার তো ভাই আছে। তাই, ভাই-বোন নিয়ে একটা গল্প-কথন লিখে দেব। আমার অন্যান্য গল্পকথনের মত সত্য ঘটনার সাথে একটু এদিক-ওদিক করে লিখতে গিয়ে মনে হল, হচ্ছে না। তারচেয়ে চরিত্রগুলোর নাম বদল না করে নিজের কথাই বলি।
তাই এই লেখা। এই লেখাটা নীল-দর্পনকে উৎসর্গ।
নিজের হাতে নিজেই বাঁধা, ঘরে আঁধার বাইরে আঁধার - [কথোপকথন- ৪]
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৩৯টি মন্তব্য ৩৭টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
আমার মায়ের চৌহদ্দি
আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন
ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু
খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!
নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?
শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন
জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি
পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি
বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন