somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতঃপর এইপার থেইকা ঐপার বা পারাপার

০৮ ই জুলাই, ২০০৯ সকাল ১১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শাহবাগের মোড়ে দাঁড়ায়া থাইকা আজগর মিয়া যখন রাস্তার ঐ পাড়ে যাওয়ার জন্য দুই কদম আগাইল ঠিক তখনই গোবদা সাইজের একটা মাইক্রোবাস তার দিকে প্রায় এরোপ্লেনের গতিতে আগায় আসতে থাকলো। ফলে ঘটনা যা হবার তাই হইল। দুর্বল হার্টের আজগর মিয়া লাফায়া দিন পা পিছায়া গেল। ফলাফল পূর্বের চেয়ে এক কদম পিছনে। দিনটা ছিল বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী বর্ষাকালের কোন একটা দিন কিন্তু দিনটাতে চান্দি গরম করার মত রোদের অভাব ছিল না। ক্লাইমেট চেঞ্জের পক্ষে বর্ষার বৃষ্টিকে শরতে নিয়া যাওয়া কঠিন কিছু না। যাই হোক, পিচ গলানো রোদের মধ্যে ফুটপাতে দাঁড়ায়া আজগর মিয়া সেকেন্ড অ্যাটেম নেয়ার জন্য প্রস্তুতি শুরু কইরা দেয়। সে যখন মোটামুটি রাস্তার উপর ঝাঁপায়া পড়ার সিন্ধান্ত প্রায় নিয়া ফেলে তখনই তার উপর ঝাঁপায়া পড়ার সিন্ধান্ত নেয় একটা এএফআর লেখা মোটর সাইকেল। আজগর মিয়া এবার আর পিছাইতে পারে না। কিন্তু মোটর সাইকেল চালনাকারী যুবক তার খোলা চুলের বান্ধাবীকে নিয়া অত্যন্ত দক্ষতার সাথে আজগর মিয়ারে পাশ কাটায়া চলে যাইতে থাকে। আজগর মিয়ার উচিৎ ছিল জানে বেঁচে যাওয়ার জন্য শোকরিয়া আদায় করা কিন্তু সে চায়া থাকে মোটর সাইকেলের পিছনে বসে থাকা তরুণীর দিকে। অল্প সময়ের মধ্যই তরুণীকে দেখতে পায় আজগর কিন্তু ভালোমত দেখতে না পাওয়ার আফসোস থেকে যায় তার। তরুণীর মাথার কালো চুল যদিও তাতে সামান্য লাল-সবুজ-বেগুনি ছিল আজগরকে মুগ্ধ করে। বাইক সামনের দিকে আগাইলেও চুলগুলা পেছনের দিকে ছুইটা যাওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাইতে থাকে। আর তরুণীর চোখে সানগ্লাস থাকায় তার নয়ন জোড়া দেখার সৌভাগ্য আজগর মিয়ার হয় না। তবে সে ধইরা নেয় বা বিশ্বাস করে নয়ন জোড়া অপূর্ব। তরুণীর সাদা ওরনাও উড়বার চেষ্টা চালাইতে থাকে কিন্তু তা শক্ত কইরা গলায় বাঁধা থাকার কারণে উইড়া যাইতে পারে না। উড়বার চেষ্টারত সাদা ওরনাখানা আজগর মিয়ার কাছে পরীর সাদা ডানা বইলা মনে হয়। আজগর মিয়া হয়তো তরুণীরে নিয়া মনে মনে আরও চাপাবাজি করত কিন্তু গাড়ির ক্যাঁচ শব্দ তারে জানান দেয় সে রাস্তার মোটামুটি মাঝখানে দাঁড়ায়া আছে। সম্বিত ফিরা পায়া সে ছুইটা সামনের আইল্যান্ডে যায়া ওঠে। তরুণীরে নিয়া আইল্যান্ডে উঠতে পারলেও পাজেরোর হেড লাইটের জ্বলা-নিভা তারে রাস্তায় প্রায় ফালায়া দিতে চায়। আজগর মিয়ার পায়ের নকল বাটা কোম্পানির জুতা জোড়ার গ্রিপ মনে হয় খুব একটা খারাপ না। খারাপ হইলে সে এতবার রাস্তার মাঝে ব্রেক কষতে পারত না।

আইল্যান্ডের আজগর মিয়া ফুটপাতের আজগর মিয়ার চেয়ে অনেকটাই আলাদা। ফুটপাতে থাকাকালীন তার যে সাহস ছিল, আইল্যান্ড পর্যন্ত পৌঁছাতে যায়া তার ৮০ ভাগ খরচ হয়া গেল। বাকি অর্ধেক রাস্তা আজগর মিয়ার কাছে প্রায় পুলসিরাতের মত মনে হয়, যদিও পুলসিরাত সে এখনও দেখেনি। যা বলতেসিলাম, আইল্যান্ডে উইঠা যে বামে তাকায়া পার হইতে হবে সে খেয়াল আজগর হারায়া ফেলে। ডানে তাকায়া সে গাড়ির পিছন দিক দেখতে পায়। বাম দিক থেকে আগত গাড়ির হর্ণ শুইনা ঘটনা তার বোধগম্য হয়। এর মধ্যে আজগর মিয়া আরেক জিনিস আবিষ্কার করে। রাস্তার ঐ পারে অ্যাপ্রন গায়ে দেয়া একাধিক তরুণী দাঁড়ায়া আছে। তাহারা ডাক্তার নাকি নার্স তা বোঝা আজগরের পক্ষে তখনও সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে আজগরের চোখে তাহারা সুন্দরী বলিয়া গণ্য হয়। যেই আজগর মিয়া রাস্তা পার হইতে গিয়া এত ফ্যাসাদে পড়ে সে-ই সুন্দরীদের টানে নির্দ্বিধায় বাকি রাস্তা পার হয়া যায়। কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটে তখনই। না, আজগর গাড়ির তলায় পড়ে না। ডাক্তার অথবা নার্সরূপী তরুণীরা ততক্ষণে রাস্তা পার হয়া অন্যপাশে চইলা যায় এবং আজগর মিয়া সেটা বিপরীত পাড়ে পৌঁছায়া ধরতে পারে।

এই পাড়ে আইস্যা আজগর মিয়া এরপরে যে জিনিসটা ধরতে পারে সেটা হইল সে যেখানে যাওয়ার জন্য রাস্তা পার হয় সেইটা আসলে সে আগে যেখানে ছিল তার পেছনে। এইপাড়ে আইস্যা ঘটনাটা ঠাওর কইরা আজগর মিয়া এবার জোরে কইরা নিঃশ্বাস নিয়া পুনরায় রথের সাথে যুদ্ধ করতে পথে নাইমা যায়। কিছুক্ষণ রাস্তার মাঝখানে আইস্যা সে খেয়াল করে মোটর সাইকেলআলা যুবক ও তাকে জড়িয়ে ধরে থাকা তরুণী আবারও ছুটে আসছে। সম্ভবত এক চক্কর শেষ। সাইকেলওয়ালা যুবক-যুবতী খুব কাছে আসতে এবার আজগর মিয়া আর ভুল করে না।

মাগরিবের আজানের পর পর শাহবাগ এলাকায় বেশ জোরে-সোরে মাইকিং হয়। মাইকিংয়ের বিষয়বস্তু হচ্ছে এক যুবক হারিয়ে গিয়েছে। সে মানসিকভাবে কিছুটা ভারসাম্যহীন। বেশ ক'দিন যাবত আত্মহত্যার চেষ্টা করে সে ব্যর্থ হয়েছে। মাইকিং শুনলে সবারই কান কিছুটা খাড়া হয়ে যায়। আর আজগর মিয়ার তো মাইকিং শুনতে খুবই ভালো লাগে। আজগর মিয়াদের তাতো ভাল লাগবেই। তাদের আরও ভালো লাগে দিনের মধ্যে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ বার ব্যস্ত রাস্তা এপার ওপার করতে এবং রাস্তায় ছুটে আসা মোটর সাইকেলের সামনে ঝাঁপিয়ে পড়তে। মোটর সাইকেল ওয়ালারা প্রায়ই ফুটপাতে উইঠ্যা আইস্যা হিরোর মত হর্ন বাজাইতে বাজাইতে ছুইটা যায় আর পথচারীদের ত্খন চাপা পড়ার ভয়ে হার্ট বিট বাইড়া যায়। সেই হিসেবে গতির আনন্দে উল্লাসিত মোটর সাইকেলওয়ালাদের পিলে চমকে দেয়ার জন্য রাস্তার মাঝখানে তাদের সামনে ঝাঁপ দিয়ে পড়াটা পথচারীদের অধিকারের মধ্যেই পড়ে। আজগর মিয়ার মত পাগলা কিসিমের লোকজন সেই অধিকারটারেই কাজে লাগায়।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নজরুলের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আমার গাওয়া ৩টি নজরুল গীতি শেয়ার করলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৫ শে মে, ২০২৪ রাত ২:১৩

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রাণপুরুষ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে এক গরিব পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন স্বাধীনতা ও সাম্যের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেট্রোরেল পেয়েছি অথচ হলি আর্টিজানে নিহত জাপানিজদের ভুলে গেছি

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৫ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:১১

জাপানে লেখাপড়া করেছেন এমন একজনের কাছে গল্পটা শোনা৷ তিনি জাপানে মাস্টার্স করেছিলেন৷ এ কারণে তার অনেক জাপানিজ বন্ধু-বান্ধব জুটে যায়৷ জাপান থেকে চলে আসার পরেও জাপানি বন্ধুদের সাথে তার যোগাযোগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুদ্ধে নিহত মনোজ দা’র বাবা

লিখেছেন প্রামানিক, ২৫ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৭১ সালের এপ্রিলের ছব্বিশ তারিখ। দেশে তখন ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়েছে। উচ্চ শিক্ষিত এবং কলেজ পড়ুয়া ছাত্রদের নিয়েই বেশি সমস্যা। তাদেরকে খুঁজে খুঁজে ধরে নিয়ে হত্যা করছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিয়ে থেতে ভাল্লাগে।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৫ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৯

আমার বিয়ে বাড়ির খাবার খেতে ভালো লাগে। আমাকে কেউ বিয়ের দাওয়াত দিলে আমার খুসি লাগে। বিয়ের দিন আমি সেজে গুজে বিয়ে বাড়িতে আয়োজন করা খাবার থেতে যাই। আমাদের এলাকায় বর্তমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

উসমানীয় সাম্রাজ্যের উসমান এখন বাংলাদেশে

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৫ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২০



জনপ্রিয় ''কুরুলুস উসমান'' সিরিজের নায়ক Burak Ozcivit এখন বাংলাদেশে। বিগত কয়েক বছর ধরে তার্কির অটোমান সাম্রাজ্যের বিভিন্ন সুলতানদের নিয়ে নির্মিত সিরিজগুলো বিশ্বব্যপী বেশ সারা ফেলেছে। মুসলিমদের মাঝেতো বটেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×