somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন পতিতা ও একটি টোকাইয়ের গল্প-২

০১ লা জুলাই, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সোবহান মিয়ার আগমন যতটা না আড়ষ্ঠ করে তুলল সাবিনাকে তার চেয়েও বেশি বিরক্ত করল টুনুকে। সাধারণত পান খাওয়া মানুষগুলো একটু আমুদে স্বভাবের হয়; হয়ত ছিলও, কিন্তু ঠিক এখন সে একজন দায়িত্বপ্রবণ দালাল ছাড়া আর কিছুই নয়।

সোবহান: কি হইছে? ঘুমাও কেন? তোমার কোন আক্কেল আছে?
সাবিনা: আসলে শরীরটা একটু গরম...
টুনু: বু আইজকা যাইতে পারব না। তুমি যাওগা।
সোবহান: ওই ফকিরনীর পো্লায় এত কথা কয় কে? শো্নো সাবিনা, কাস্টমার রাইখ্যা এইহানে তো্মার কাছে আইছি পিরিত করনের লাইগা না। তাড়াতাড়ি আস। ব্যবসা একদিনের না...
রেগেমেগে বেরিয়ে গেল সোবহান। স্বার্থপর কাঁটাতারে যেন টুনুর সব আনন্দের বেলুনগুলো ঠুস ঠাস ফুটতে লাগল। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। সাথে ঠান্ডা হাওয়া। কবিরা হয়ত কবিতা লিখবে এই রাতে, কোন সুখী দম্পতি সুখ সুখ ভাব নিয়ে বিছানায় যাবে কিংবা ব্যালকনিতে বসে গরম চা খাবে আর বৃষ্টির শব্দে উহ আহ করে উঠবে।এ সব কিছুর মধ্যেও সাবিনা বের হবে। অপরিচিত নাগরের জন্য রুগ্ন শরীরটাকে ঘষে-মেজে উত্তেজক মাংসপেশীতে পরিণত করবে।
সাবিনা বেরিয়ে পড়ল সো্নিয়া হয়ে। টুনু কোন শব্দ করল না।সাবিনা বের হওয়ার সাথে সাথেই বৃষ্টির গতি যেন বাড়তে শুরু করল। এইটুকুন টুনুও জানে ঝড় এলে কি করতে হয়! চালের ফুটো দিয়ে অনায়াসে পানি পড়ছে অনর্গল ধারায়। ঘরে অত বড়ো কিছুও নেই যে পানি ধরবে। বাসন কো্সন, বালতি বদনা সব জড়ো করল টুনু।সব ভর্তি হওয়ার পর শেষমেষ হাল ছেড়ে দিয়ে বিছনায় বসে পড়ল পানিতে পা ভিজিয়ে। ওদের শৈশব যেন অবাঞ্ছিত পানিতে ভাসানো পা!
গভীর রাতে তিনজন কাস্টমারকে বিপুল আনন্দ দিয়ে সাবিনা যখন ঘরে ফিরছিল তখন তার দেখা রঞ্জু হাওলাদারের সাথে। বাংলা মদ খেয়ে সে এখন তিন আসমানের উপরে অবস্থান করছে। তারপরও একলা রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে সে ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। সাবিনাকে দেখে যেন তার নেশাটা আবার চরে উঠল।
রঞ্জু: আয় সাবিনা, বৃষ্টি কি থামছে?
সাবিনা: চোখের কি ডিস্টাব আছে নি মিয়া? দেহ না...(বৃষ্টি আসলে থেমে গেছে)।
রঞ্জু: সোনিয়া, তুই মালা মতির প্রেম সিনেমাডা দেখছত? রাজ্জাক যহন মাল খাইয়া মালার বাড়ির সামনে আইছে...আহা, কি প্রেম তার অন্তরে? তুই তো জানস আমি তোরে তার চাইয়াও...(শেষ করতে পারল না ভীষম খেয়ে)।
সাবিনা: যে জিনিস খাইয়া হজম করতে পারনা, হেইডা খাও কে? তোমার তো আসলেই দম নাই।
কথা শেষ করতে না করতেই লো্কটা হু হু করে কেঁদে উঠল। বলল, আমার বউ আমারে ফালাইয়া গেছে গা।
সাবিনার ভীষণ খারাপ লেগে উঠল। প্রিয়তা কোন মানবশিশু নয়, যার জন্মাতে দশ মাস দশ দিন সময় লাগবে, নির্দিষ্ট কোন গর্ভ লাগবে। যে কোন সময় যে কারোর জন্য এর জন্ম হতে পারে। হয়ত সেরকমই কোন কারণে সারা জীবনের জন্য না হোক, কিছু মূহুর্তের জন্য হলেও রঞ্জুর ভীষণ আপন হতে ইচ্ছে হল তার।

সাবিনা রঞ্জুকে ঘরে পৌঁছে দিয়ে যখন বাসায় ফিরল, তখন পাখি ডাকছে। এসে দেখল পুরো ঘরে পানি। টুনু ঘুমিয়ে আছে। ওর পা পানিতে ডোবানো। টুনুর ঘুম ভেঙ্গে গেল। ভীষণ বিরক্তি লাগছে সাবিনার। অথচ হঠাৎ তার সেই পুরোনো খেলাটা খেলতে ইচ্ছে করল। সাথে সাথে নিউজপেপারের পাতা দিয়ে নৌকা বানানো শুরু করল। টুনু কিছুক্ষণ বোকার মত তাকিয়ে রইল। তারপর বলল, "বু কি কর?"
সাবিনা: নৌকা বানাই। তুই ভাসাইবি?
টুনুর মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল।
সাবিনা: একলগে নৌকা ভাসামু, যারটা আগে ডুববো হেয় হারব, আর তুই জিতলে তোরে একটা উপহার দিমু।
টুনু : আর তুমি জিতলে তোমারে আমি দিমু।
খেলা শুরু হল...
(চলবে)
১২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×