somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঝুট ব্যবসা বন্ধ করেন, সুস্থ শ্রমিক ইউনিয়ন করতে দেন, ধান্দাবাজদের পথ বন্ধ করে দেন

০১ লা জুলাই, ২০০৯ দুপুর ১২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা গত কয়েক দিনে আশুলিয়ায় ও সাভারে ব্যাপক ধ্বংস যজ্ঞ চালিয়েছে। একজন সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে এই তাণ্ডব চালানো সম্ভব নয়। কিন্তু কেন এই তাণ্ডব ?

ঝুট ব্যবসা : বর্জ্য যখন রাজনৈতিক বর্জ্যদের আয়ের রাস্তা :
ঝুট হল বর্জ্য। আইন অনুযায়ী এসব বর্জ্য বিক্রির কথা না। কিন্তু এই আইনের কথা ভুলে গেছেন সবাই। বাংলাদেশে ঝুট ব্যবসা আইনের হিসেবে অবৈধ হলেও বাস্তবে রাজনৈতিক বর্জ্যদের জন্য আয়ের রাস্তা এটা। সরকারী দল করলেই ঝুট ব্যবসা তার জন্য হালাল।
যখন যেই দল ক্ষমতায় আসে, তাদের ক্যাডাররা ঝুট ব্যবসা করে। হুমকি দিয়ে ঝুট নামিয়ে নিয়ে যায়। সরকারী দলের ক্যাডারদের মূল আয়ের রাস্তা এটা। তারা এই আয় দিয়ে অস্ত্র কেনে, মাদক কেনে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক ক্যাডারদের প্রায় সবাই মাদকাসক্ত। তারা আগে মাদকাসক্ত হয়, পরে রাজনৈতিক ক্যাডার সাজে। মূলত মাদকের টাকা যোগাতে তারা রাজনৈতিক ক্যাডার হয়ে যায়। রাজনৈতিক ক্যাডার হলে টাকার অভাব হয় না এবং পুলিশী ঝামেলা থেকে বেঁচে থাকা যায়। ঝুট ব্যবসা, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি এবং এমনকি ফ্রি মাদকও পাওয়া যায়। মাদক ব্যবসায়ীরা নিজেদের ব্যবসা বাঁচাতে সরকারী দলের ক্যাডারদের উপঢৌকন হিসেবে মাদক সরবরাহ করে থাকে।
ঝুট ব্যবসা এখন পুরোপুরি ক্যাডার নির্ভর। কোন ভদ্র ব্যবসায়ীর পক্ষে গার্মেন্টস থেকে ঝুট নামানো সম্ভব না। স্থানীয় ক্যাডারদের ভাগ দিয়েই সব কিছু হচ্ছে।
কোন কোন ক্যাডারদের সাথে গার্মেন্টস মালিকদেরও সুসম্পর্ক আছে। গার্মেন্টস মালিকরা এসব ক্যাডারদের কাজে লাগায়। যে কোন গণ্ডগোলে তাদের ডেকে পাঠায়। বিশেষত কোন শ্রমিককে সাইজ করার জন্য গার্মেন্টস মালিকরা এদের ব্যবহার করে।
ঝুট ব্যবসার লাভ ভাগাভাগি হয় ক্ষমতাসীন সবার মধ্যে - এমনকি এমপি পর্যন্ত এর ভাগ পায়। সুতরাং সরকারী দল ও ঝুট ব্যবসা পাশাপাশি চলে। কোন দিন বন্ধ হবে না এই অবৈধ ব্যবসা।
বলা হচ্ছে আশুলিয়া সাভারে তাণ্ডবের পেছনে ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ। গার্মেন্টস সেক্টর বারে বারে অশান্ত হয়ে ওঠার পেছনে সব সময়ই এই ঝুট ব্যবসায়ী নামের ক্যাডাররা কলকাঠি নাড়ে। শ্রমিকদের নাম দিয়ে তারাই তাণ্ডব চালায় গার্মেন্টেসে। বুঝিয়ে দেয়, তাদের ঝুট না দিলে কী পরিণতি হতে পারে।

সুস্থ ট্রেড ইউনিয়ন : সোনার পাথর বাটি :
শ্রমিক আছে অথচ শ্রমিকদের দাবি দাওয়া তুলে ধরার কোন স্বাভাবিক সংগঠন নাই, এটা একমাত্র বাংলাদেশেই সম্ভব । গার্মেন্টস সেক্টরে কোন সুস্থ ট্রেড ইউনিয়ন নাই। যেগুলো আছে, সেগুলো গার্মেন্টেসের ভেতরে কোন কার্যক্রম চালাতে পারে না। কেননা, গার্মেন্টস মালিকরা তাদের ফ্যাক্টরিতে কোন ট্রেড ইউনিয়ন মানতে পারেন না।
ফলে গার্মেন্টস সেক্টরে লক্ষ লক্ষ শ্রমিকদের পক্ষে কথা বলার মতো কোন ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে উঠে নি, গড়ে উঠেছে ট্রেড ইউনিয়নের নামে কিছু ধান্দাবাজের সংগঠন। এসব সংগঠনের নেতারা কোনকালেও শ্রমিক ছিলেন না, শ্রমিকদের প্রতি তাদের কোন দরদও নাই। তাদের মুল ধান্দা হল, শ্রমিক অসন্তোষ উস্কে দিয়ে পয়সা কামানো।
যে কোন গার্মেন্টেসে সামান্য গোলযোগ হলেই তারা শ্রমিকের বন্ধু সেজে সেখানে হাজির হয়। এক দিকে শ্রমিকদের উস্কে দিতে থাকে অন্য দিকে মোবাইল ফোনে মালিককে টাকা দেয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। মালিকপক্ষ দাবিকৃত টাকা দিয়ে দিলে শ্রমিকদের ঠাণ্ডা করে দেয়া হয়, নতুবা শ্রমিক অসন্তোষ উস্কে দিয়ে গার্মেন্টেসে ভাংচুর করানো হয়।
অন্য দিকে আওয়ামী লীগে আছে শ্রমিক লীগ এবং বিএনপিতে আছে শ্রমিক দল। এই দুটি সংগঠনের কোন নেতাই শ্রমিক নয়, কোনদিন শ্রমিক ছিলেনও না। রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তির ধান্দাবাজ এই দুটি সংগঠন কোনদিনও গার্মেন্টস শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ায় নি।
দরকার হল, প্রতিটি গার্মেন্টসে রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তিমুক্ত শ্রমিকদের দ্বারা সৃষ্ট, শ্রমিকদের দ্বারা পরিচালিত ও শ্রমিকদের দ্বারা নির্বাচিত ট্রেড ইউনিয়ন। এই ট্রেড ইউনিয়নে কোন রাজনৈতিক নেতা বা শ্রমিক নয় এমন কোন ব্যক্তি যুক্ত থাকতে পারবেন না। কোন রাজনৈতিক দলের সাথে এই ট্রেড ইউনিয়ন যুক্ত হবে না। কেবল সংশ্লিষ্ট গার্মেন্টেসের শ্রমিকরাই এই ট্রেড ইউনিয়নে থাকবে। এই ট্রেড ইউনিয়ন শ্রমিকদের স্বার্থ দেখার পাশাপাশি গার্মেন্টেসের উন্নয়নে মালিকপক্ষকেও সহায়তা করবে।
গার্মেন্টস সেক্টরে ট্রেড ইউনিয়ন না থাকাতে কতগুলো ধান্দাবাজ বার বার শ্রমিকদের ব্যবহার করে ফায়দা লুটছে। নৈরাজ্য সৃষ্টি করে মালিকদের ভয় দেখাচ্ছে, আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে।

ধান্দাবাজ : দেশীয় নয় কেবল, বাইরেরও আছে :
আমাদের দেশে শ্রম আইন মানা হয় না ব্যাপকভাবে। ছোট ছোট গার্মেন্টসগুলো শিশু শ্রমিক নিয়োগ দেয়, বেতন কম দেয় এবং কথায় কথায় শ্রমিক ছাটাই করে। কোন কোন ক্ষেত্রে শ্রমিকের বেতন ও ওভারটাইমের টাকা বাকি রেখেই চাকুরি থেকে বের করে দেয়া হয়।
শ্রম ঘণ্টার কোন নিয়মনীতির বালাই নাই কোন গার্মেন্টসে। স্বাভাবিক নিয়মে ৮ ঘণ্টা কাজ এবং ৪ ঘণ্টা ওভারটাইমের কথা থাকলেও বাস্তবে ১৪ থেকে ১৬ ঘণ্টা কাজ করানো হয় শ্রমিকদের দিয়ে। বেতন ও ওভারটাইম নিয়ম মতো দেয়া হয় না। ওভার টাইমের টাকা প্রায় সময়ই কেটে রাখা হয়। নানা অজুহাতে বেতন দেয়া হয় পরবর্তী মাসের শেষে অথবা বকেয়া বেতন থেকে যায়। কর্তৃপক্ষ যে কোন অজুহাতে শ্রমিকদের সাথে দুর্ব্যবহার করে। অনেক ফ্যাক্টরিতে সাপ্তাহিক ছুটি দেয়া হয় না। দীর্ঘসময় ধরে একঘেয়েমিপূর্ণ কাজ করতে হয় তাদের। দিনের পর দিন কোন রকম ছুটি ছাড়া কাজ করতে করতে তারা হাপিয়ে ওঠে। এই অরিরিক্ত পরিশ্রম তাদের মন মেজাজ নষ্ট করে ফেলে। ফলে সামান্য উস্কানিতে তারা ফেটে পড়ে বোমার মতো।
অন্য দিকে এক শ্রেণীর এনজিও গার্মেন্টস শ্রমিকদের নাম করে ফান্ড আনছে। অল্প কিছু এনজিও ছাড়া বাস্তবে তারা কথার কথা বলে ফান্ড মেরে দিচ্ছে। এসব এনজিওর পিছনে যারা টাকা ঢালছে তাদের উদ্দেশ্য যে শ্রমিকদের উস্কানি দেয়া নয়, সেটা বলা সম্ভব না। তারা শ্রমিকদের নানা রকম উস্কানিমূলক কথা বলছে।
কেবল দেশীয় নয়, বিদেশী কিছু চক্র আমাদের গার্মেন্টস খাতকে ধ্বংস করার জন্য লেগে থাকতে পারে। তাই তারা শ্রমিক অসন্তোষকে উস্কে দিয়ে ফায়দা লুটবে সেটাই স্বাভাবিক।

যা করা দরকার :
০১) ঝুট সন্ত্রাস বন্ধ করতে হবে। ঝুট সন্ত্রাসীদের সরকারী দল থেকে বের করে দিতে হবে। যারা ঝুট সন্ত্রাসের সাথে জড়িত হবে তাদের গ্রেফতার করে শাস্তি দিতে হবে।
০২) শ্রমিকনামধারী অশ্রমিক ওই সব ধান্দাবাজ নেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
০৩) শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করতে দিতে হবে। কিন্তু ট্রেড ইউনিয়নের নামে রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি বন্ধ করতে হবে।
০৪) শ্রমিকদের উপর সকল প্রকার জুলুম ও অত্যাচার বন্ধ করতে হবে। লেবার অফিসের লোকবল বৃদ্ধি করে গার্মেন্টসগুলিতে আরও নজরদারি বাড়াতে হবে।
০৫) গার্মেন্টস সেক্টরে যে সব এনজিও কাজ করছে তাদের উপর নজরদারি বাড়াতে হবে। তারা আসলেই কাজ করছে নাকি ধান্দাবাজি করছে সেটা দেখতে হবে। তাদের ধান্দাবাজি বন্ধ করতে হবে।
০৬) বার বার একে অন্যের কাঁধে দোষ না চাপিয়ে শ্রমিক, মালিক ও সরকার পক্ষ আলাপ আলোচনা করে একটি সার্বজনীন নীতিমালা তৈরি ও তা মেনে চলার নিশ্চয়তা দিতে হবে।

Click This Link
Click This Link
http://www.manabzamin.net/lead-04.htm
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০০৯ দুপুর ১২:৫৬
১১টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×