somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারত ভ্রমন- কলকাতা টু গোয়া - কলকাতা পর্ব ( ভিক্টোরিয়া থেকে রবীন্দ্রনাথ ,পলাশী থেকে মহীশূর)

০১ লা জুলাই, ২০০৯ সকাল ১০:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বেনাপোল সীমান্ত গেট পার হবার পর টের পেলাম অনভূতিটা কেমন যেন বদলে যাচ্ছে। অধিকারহীন প্রবেশের অনভূতি, প্রতিটি ইঞ্চিতে থাকা অধিকার ত্যাগ করে। বর্ডারের কাজ কর্ম সেরে আসা যাওয়া করতে থাকা মোবাইল নেটওয়ার্কে বাসায় কথা বলে নিলাম।ডলার ভেঙ্গে রূপী অতঃপর কানেকটিং বাসে করে কলকাতার পথে যাত্রা।


সাইনবোর্ডে যশোর লেখা দেখে মনে পরে গেল September on Jessore Road এর কথা। ভিডিওচিত্রে দেখা সেসব দিনের কথা।

এসি বাসে যাত্রা হলেও সুস্পষ্ট পার্থক্য চোখে পড়ে আমাদের এসি বাস গুলোর সাথে।বিলাসীতায় আমাদের ধরা ওদের কম্ম নয়। :D

চলতি পথে তেমন কোন পার্থক্য না থাকলেও চোখে পড়বে ঘরবাড়ী গুলোর আয়তনে অনেক ছোট হওয়াটা। হাতের বায়ে দমদম বিমান বন্দর রেখে আমরা এগিয়ে যায় কলকাতার পথে। শুরুতেই চোখে পড়ে আধুনিক কলকাতা। নির্মান কাজ এগিয়ে চলছে। আইবিএম এর বিশাল ভবন দেখে আফসোস হল আমাদের এখানে কেন নেই।



ধীরেধীরে বাস প্রবেশ করে পুরনো দিনের কলকাতায়। ঢুকতেই যানজট। আমাদের মতই দীর্ঘ সারি। দেড়ঘন্টা বসে থেকে মধ্য দুপুরে বাস থেকে নামলাম পার্কস্ট্রীটে।ঘিঞ্জি এলাকা। হোটেলে ব্যাগ রেখে লাঞ্চের জন্য বের হওয়া। কলকাতা বাসীর কৃপনতার অনেক গল্প কৌতুক শুনেছি তাই বলে বিরানীর সাথে দেয়া দুটুকরো শষা আর একটা পেঁয়াজের জন্যও দাম দিতে হবে এমনটা ভাবিনি। /:)

অভিযানের শুরুতেই কলকাতা নিউমার্কেট। আমার অলসতার ঐতিহ্য অনেক পুরোনো।আমার দুই রূমমেট বাদে বাকি সবাই বের হয়ে গেছে। দলছাড়া হয়ে আমাদের চক্কড় শুরু। কলকাতা নিউমার্কেটের এলিভেটেড পার্কিং সিষ্টেমটা পছন্দ হল। রাত এগারটায় গোয়ার ট্রেন সো হিসেব করে ঘুরতে হবে। কলকাতা নিউমার্কেট থেকে তিনজন বের হয়ে আবার পার্কস্ট্রীটের দিকে হাঁটতে থাকি। রিক্সার থেকে আস্তে চলতে থাকা একটি ট্রাম ঘন্টা বাজিয়ে এগিয়ে আসছে।কিছু না ভেবেই আমি শাহরিয়ার আর পলক তাতে উঠে পড়ি।ট্রামে চড়ব এটাই কথা কই যাচ্ছে সেটা পরে দেখা যাবে। ভাড়া দিতে গিয়ে জানলাম গড়ের মাঠ যাবে। ট্রামের গতি দেখে কিছুতেই মাথায় আসলনা এর ধাক্কায় কি করে জীবনানন্দের জীবনাবসান হল । :-*



কালবেলা-কালপুরুষ , মাধবীলতা-অনিমেষ ভর করে আছে মাথায়। সাইনবোর্ডের লেখা পড়ছি আর সেই সাথে মাধবীলতা-অনিমেষ কে যেন দেখতে পাচ্ছি।সেখানে কিছুক্ষন ঘুরে ঢুকলাম বিখ্যাত মিষ্টির দোকান হলদিয়াতে। তাদের টিনজাত মিষ্টির কালেকশন দেখে মুজতবা আলীর রসগোল্লার কথা মনে পড়ে গেল। বের হয়ে কফিহাউজ যেতে চাইলেও পথিমধ্যে কেউ সঠিক নির্দেশনা দিতে পারছনা দেখে অবাক হলাম , হায়রে আমাদের সুখ দুখের প্রিয় গানটির ঠিকানা কেউ দিতে পারছেনা। :-* ফিরে এলাম হাতে বেশী সময় নেই দেখে। ইডেনকে পাশ কাটিয়ে হাওড়া স্টেশন যাত্রা। গোয়া থেকে কলকাতায় ফিরেও আসলাম রাতের অন্ধকারে।

হাতে একদিন সময়।কতটুকু ঘুরতে পারব জানিনা।হালকা শপিং ও করা দরকার। পুরা দল রওনা হল গড়িয়া হাটের দিকে। গিয়ে ঢুকলাম আদি ঢাকেশ্বরী বস্ত্রালয়ে। দেখেশুনে আম্মুর জন্য চমৎকার একটি শাড়ি কিনলাম। সবাই কিনছে আর আমি হেঁটে হেঁটে দোকানের মধ্যে ঘুরছি, দোকানির দেয়া সেভেন আপ খাচ্ছি। শাড়ি আমার খুব পছন্দের।দেখছি ভাল লাগছে। কি হল জানিনা একেএকে আরও চারটি শাড়ি কিনে ফেললাম। কার জন্য , তাকে কেমনইবা লাগবে জানিনা , শুধু মনে হল অজানা সেই মাধবীলতার জন্য নিয়ে নিই , প্রথমবার দেশের বাইরে আসলাম আর তার জন্য কিছু কিনবনা এটাত হতে পারেনা :P
বাসার সবার জন্যই কিনলাম। মামা মামী ,খালা, চাচী। টেনশনের কিছু নাই, ক্রেডিটকার্ড আছেনা। বিল দিতে গিয়ে বুঝলাম ওয়ারেন বাফেট কেন ক্রেডিট কার্ড অপছন্দ করতেন। একটা ডায়মন্ডের রিং ও পছন্দ হইছিল। দোটানায় পড়ে কেনা হলনা।
দুপুরের পর শুরু হল কলকাতা দর্শন।এরমধ্যে খবর এল আমরা যেদিন ফিরব তার পরদিন সরকারী ছুটি।কোন চিন্তা না করেই বাসের বুকিং চেঞ্জ করে নিলাম, যত সম্ভব ঘুরে দেখার মানসে।



ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের উদ্দেশ্যে যাত্রা। আমাদের জন্য টিকেট 150 রূপী আর ওদের জন্য 10 , কি অবিচাররে বাবা। আমি আর মোশাররফ ভাবছি কি করা যায়।পকেটে বাংলাদেশী পাসপোর্ট রেখে মিথ্যা বলতে ইচ্ছা করছেনা , আবার টাকার অংকও কমনা। উদ্ধার করল এক ভারতীয়।কাউন্টারের সামনে যেতেই আমাকে বলল দাদা আমি দুটা টিকেট বেশী কেটে ফলেছি।B-) বাঁচা গেল।
ব্রিটিশদের নিপূন কারুকাজ দেখে যে কেউ মুগ্ধ হবে। বিশাল লন পার্ক। ভিতরে প্রবেশ করলাম। পলাশী যুদ্ধক্ষেত্রের বিশাল একটা প্রেজেন্টেশন বোর্ড থেকে শুরু করে নবাবের তলোয়ার সহ আরও অনেক সংগ্রহ। মোঘলদের সংগ্রহের কিছু চিত্র কর্ম দেখে অনেকক্ষন ঠাঁয় দাঁড়িয়েছিলাম।একটা জলপ্রপাতের ছবি দেখে ছবি তোলার এত তীব্র ইচ্ছা জেগেছিল বলার বাইরে। মিউজিয়ামে ছবি তুলতে না দেয়া আমার মোটেই পছন্দনা। দোতালায় শের ই মহীশূর টিপু সুলতানের বিভিন্ন জিনিসের বিশাল কালেকশনের সাথে সাথে সম সাময়িক অনেক সংগ্রহ। সংলগ্ন পার্কটিও খুবই সুন্দর। মেমোরিয়াল থেকে বের হলেই সামনে রেসকোর্স ময়দান।


কফি হাউজে আমি যাবই, মান্নাদে কখনোই না গেলেও আমার কিছু আসে যাইনা। ক্যাব নিয়ে সোজা কলেজ স্ট্রীট , আমাদের নীলক্ষেতের মতই।আনন্দ বাজার প্রকাশনীতে গেলাম। তারপর প্রিয় গানটির উৎপত্তিস্হল বাস্তবের কফি হাউজ। কফিহাউজে কফি খাওয়ার শখ পূরন করে বের হলাম। কলকতার তরনদের এখানে না দেখলেও বয়স্ক সব লোকজনের জমাট আড্ডার জায়গা এটা। রাস্তার ওপারেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আর হাজারো গুনীজনের স্মৃতিধন্য বিদ্যাপীট কলকাতা প্রেসিডেন্সী কলেজ।


মেট্রো সার্ভিস আসলেই মুগ্ধ হবার মত।আফসোস আমাদের ও যদি থাকত। সোডা ওয়াটার পান শেষে মেট্রোতে চড়ে হোটেলে প্রত্যাবর্তন।স্টেশনে ছবি তুলতে গিয়ে আমাদের একজন ব্যাপক পুলিশী ঝামেলায় পড়ে গেল।অবশেষে ভুল স্বীকার করে বিদেশী পরিচয় দিয়ে পার পাওয়া।

ডিনার শেষে ঠিক হল মুভি দেখব।একগ্রুপ গেলো হিন্দি মুভীতে ,আমরা আরেক দল গেলাম নিউমার্কেটে National Treasure (part 2) দেখতে।ফিরে এসে ঠিক হল যেহতু একদিন বেশী থাকছি সো রবি বাবুর সাথে ও দেখা করে যাব।
সকালে একদল দেশের উদ্দেশ্যে রওনা দিল আর আমরা গেলাম সায়েন্স সিটিতে । স্কুলের এসো নিজে করি টাইপ পরীক্ষা এখানে করে দেখানো হয়েছে। স্কুল জীবনে গেলে হয়ত আরও বেশী ভাল লাগত। মেরিটাইম , ডাইনোসর সহ ভারতের মহাকাশ গবেষনার কিছু প্রদর্শনীর আয়োজন পুরো সিটিতে।এক পর্যায়ে গিয়ে দেখলাম আমরা কিছু বুড়ো খোকা বাদে বাকী সব স্কুলের বাচ্চা কাচ্চাদের পিকনিক পার্টি।


সেখান থেকে বের হয়ে সোজা জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ী রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। এখানেও ভিতরে ছবি তুলতে দেয়না। রবি বাবুর ঘর, চটি জুতা, চৌকি, তার গিন্নির ঘর , নানা তৈজশ পত্র সহ আরও বেশ কিছু সংগ্রহ।বাড়ীর দুটি অংশের দুটি নাম।মনে করতে পারছিনা এখন।রবীন্দ্র সংগীত শিক্ষা চলছে দেখলাম এক রূম এ। ব্যবহার করা গাড়ীটিও আছে এখনও।


ফেরার পথে দেখা মিলল মালাকে নিয়ে অঞ্জনদত্তের ডেটিং স্পট সেই মৌলালীর মোড়।

ফেরার আগের রাতটা আমার জন্য আরও স্মরনীয় হয়ে রইল। ১৯ শে জানুয়ারি, আমার জন্মদিন। রাতে দেশের বাইরে প্রথম বারের মত জন্মদিনের কেক কাটলাম সবাই মিলে। তারপর আবার রাতের কলকাতা দর্শন।



সকালে তিন ঘন্টার যাত্রা শেষে প্রবেশ করলাম প্রিয় স্বদেশে-যার পড়তে পড়তে আমার অধিকার আর অনুভব।
৬৩টি মন্তব্য ৫৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৪



আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



©কাজী ফাতেমা ছবি

বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×