somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বন্দী কলম (ধারাবাহিক)

০১ লা জুলাই, ২০০৯ সকাল ৯:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মাঝ রাতে কেউ দরজায় নক করলে সাধারনত সবাই বিরক্ত হয়।আর মাঝ রাতও কি এমন মাঝ রাত যখন নিশাচর শেষ প্রানীটি ও ঘুমিয়ে যায়।
শুধু দুইধরনের জীবেরা সজাগ থাকে। ১।প্রভুকে স্মরন কারী ২।চোর
ঠক’’ঠক’'
কে?
আমরা
আমরা কারা?
থানার লোক।
ও আচ্ছা
বলেই আমি দরজা খুলে দেই। ওরা আমাকে জিজ্ঞেস করছে মান্নান নামের কাউকে চিনি কিনা।এই এলাকায় বাসা।প্রচন্ড ঘুমে আমার সাড়া মাথা এলোমেলো। ভিতরে চিন্তা গুলো কোথাও বসার যায়গা খুজে পাচ্ছেনা। তাই এক যোগে নাচানাচি শুরু করে দিয়েছে।এলোমেলো ভাবে চিন্তা করে কোথাও মান্নান নামে কাউকে খুজে পেলাম না।

আমার বাসায় ঢুকার আগে ওরা আমার পাশের বাসায় খোঁজ নিয়েছিলো।সেই লোক আবার ইসলামী ব্যাংকে ভাল চাকুরী করেন। অনেক ভাল একটা মানুষ।আমি আনিস কাকা বলে ডাকতাম।উনি ভাবলেন আমি হয়তো মান্নান কে আবিষ্কার করতে পারবো তাই তিনি আমাদের বাসা দেখিয়ে বললেন এই বাসায় একটা ছেলে আছে ও হয়তো বলতে পারবে।তারা আর কি করবে এই মাঝরাতে ই তাদের মান্নান কে চাইই।দিনের বেলায় নিশ্চিত সে একজন ভয়ংকর জীবে পরিনত হয়।আর মাঝরাতে সে আর সবার মত সাড়ে তিন হাতের একটা সাধারন মানুষ।যাকে মন চাইলে ই চিমটি দেয়া যাবে।আবার দড়ি দিয়ে বেধে নিয়ে আসা যাবে।

আমাকে মান্নানের খোঁজ জিজ্ঞেস করার পর হ্যন্ডসাম দেখতে একজন এস,আই আমার নাম জানতে চাইলো।আমি নাম বল্লাম।আমার নামটা অনেক আনকমন একটা নাম যার কারনে ওরা নামটা ঠিক ভাবে পরতে পারে নি।আসলে আমি ই ছিলাম ওদের কাগজে।লম্বা দাড়িওয়ালা একজন পুলিশ আমাকে বললেন আপনাকে আমাদের সাথে যেতে হবে।কিন্তু ততক্ষনে সর্বনাশ যা হওয়ার তা হয়ে গেছে।আম্মু সজাগ হয়ে গেছেন।

পৃথিবির এই একটা মানুষ যার হৃদয়ের ভেতরে অবিরাম স্নেহের নদীটা বইতে ই থাকে তার চোখ ফাকি দেয়া এতো সহজ না।আম্মু বললেন তুমি কথায় যাচ্ছ?তাছাড়া মাঝরাতে এতো পুলিশ কেনো?
আম্মু কোনো চিন্তা করবেন্না। আমি কাল ভোরে ই ফিরে আসবো।ইনশাআল্লাহ।
আম্মুর গলাটা ভিজে যাচ্ছে।কান্না মেশানো কন্ঠে তিনি পুলিশদের কাছে জানতে চাইলেনঃ আমার ছেলেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?চিকনা চাকনা একটা পুলিশ অস্পষ্ট ভাষয় আম্মু কে কিছু বললো।তিনি বুঝলেন কিনা জানিনা।আমি শুধু একটা গেঞ্জি পড়ে ছিলাম।যা গরম পড়েছে।মাথার চিন্তা গুলো এখনো নিজ নিজ যায়গায় সেট হয়নি।বুড়ো চাচাকে বললাম আমি পাঞ্জাবি পড়ে আসি।ভয় পাবেননা আমি পালিয়ে যাবনা।আঙ্কেল তার অস্বচ্ছ চোখে তাকিয়ে কি যানো একটা ভাবলেন। হয়তো ভাবছেন ভয় আসলে কার পাওয়া উচিত? যাই হোক আমি অন্দর মহলে গেলাম জামা চেঞ্জ করতে। আমার সাথে দুজন পুলিশ যেতে লাগলো।

দয়া করে ভেতরে আসবেননা।এখানে মহিলারা আছে।ওরা পরস্পরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে ওখানে ই দাড়িয়ে পড়লো।আমি পাঞ্জাবী গায়ে ওদের সাথে যাচ্ছি।এমন সময় পৃথিবীর সব উতকন্ঠা ভীড়করে মায়ের ফের প্রশ্নঃ বাবা তুই কোথায় যাচ্ছিস?আম্মুর গলা কাঁপছে।প্রচন্ড ভয় আর বিষ্ময়ে তার বুকের ভেতরে তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে।বুকের ধন কে চোখের সামনে থেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশের পোষাক পড়া কিছু লোক।হয়তো ওরা পুলিশ নয়।তার ছেলে কে নিয়ে মেরে ফেলবে।মায়ের অস্থির বুকে কতো আশংকার আনাগোনা।এমনি সংশয় ভরা উদ্বিগ্ন একটি কোমোল হৃদয়ের স্নেহ থেকে খুব শিঘ্রই আমাকে আলাদা করা হয়। পুলিশ ভ্যানটা আমাদের বাড়ীর সামনে ই দাড় করানো ছিলো।আধো অন্ধকারে ওটাকে অনেকটা ভৌতিক দেখাচ্ছে।কিন্তু আমার ভয় গুলো কোথায় উবে গেছে কি জানি!!হয়তো চিন্তাদের লম্ফযম্ফ শেষ হলে কিছুটা ভয় পাওয়া যেতে পারে।লুঙ্গিটা বেশ শক্ত করে ই পরতে হয়েছে।কারন হাতকড়া কখন খুলে তার কোনো ঠিক নেই তো।গাড়ীর ভিতরে একজন অফিসার বসা ছিলেন তার মুখটায় লাইটপোস্টের আলোয় একপাশের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছিলো।অনেকটা চেনাচেনা।কোথায় দেখেছি...।নাহ কিছুই মনে পড়ছেনা।আমাকে দেখে তিনি মনে হ্য় একটু চমকে উঠেছেন।চমকে উঠার যদিও কোনো কারন ছিলোনা তবুও হয়তো তার কাছে কোনো কারন জমা ছিলো।

গাড়ী চলতে শুরু করেছে।একই সাথে ১০জন মানুষ বসে যদি কেউ কথা না বলে শুধু মুখ চাওয়া চাওয়ি করে তাহলে সবার ই অস্বস্তিটা চরমে উঠে যায়।আমি খুব শান্ত মানুষের মতো অদের সাথে বসে আছি।আমার অবশ্য কোনো অস্বস্তি ছিলোনা।কারন আমার এটাই ভাল লাগছিলো।হয়তো সব আসামী কে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময়ই এমন হয়।অথবা বিষয়টা শুধু আমার বেলায়ই হচ্ছে।তবুও রাতটাকে অনেক সুন্দর মনে হচ্ছিলো।কারন রাত কে এত গভীর ভাবে এর আগে কাছে পাওয়া হয়ে উঠেনি।(চলবে)
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রান্ত নিথর দেহে প্রশান্তির আখ্যান..... (উৎসর্গঃ বয়োজ্যেষ্ঠ ব্লগারদের)

লিখেছেন স্বপ্নবাজ সৌরভ, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৪২



কদিন আমিও হাঁপাতে হাঁপাতে
কুকুরের মত জিহবা বের করে বসবো
শুকনো পুকুর ধারের পাতাঝরা জামগাছের নিচে
সুশীতলতা আর পানির আশায়।

একদিন অদ্ভুত নিয়মের ফাঁদে নেতিয়ে পড়বে
আমার শ্রান্ত শরীর , ধীরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×