somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার সন্ত্রাসী বাহিনী

২৮ শে জুন, ২০০৯ রাত ১২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




ক্লাস সেভেন পড়ি তখন। আমি, আশিক, মুন্নু, জাহাংগীর, সাহেদ, শিবলী। ক্লাসে আমাদের প্রভাব ভালই। নেতার মত চলি। শার্টের বোতাম একটা খোলা থাকে সবসময়, শুধু শিক্ষক ক্লাসে আসলে বোতামটা লাগাই। তা আমি ঠিক করলাম একটা সন্ত্রাসী দল বানানো দরকার। কারন ঢাল তরোয়াল ছাড়া নিধিরাম সর্দার হয়ে নেতাগিরি দেখিয়ে লাভ নেই। বাকী পাচজনকে আমার ইচ্ছাটা জানালাম। শিবলী আর মুন্নু বাদে সবাই আমাকে সমর্থন দিল। সংখ্যাগরিষ্ঠতার কবলে পড়ে ওরা দুইজনো সমর্থন দিতে বাধ্য হল। তা এখন সন্ত্রাসী দলের সদস্য যোগাড় তো হল কিন্তু অস্ত্র সস্ত্র কোথা থেকে আসবে? যা করার নিজেদেরই করতে হবে। চাকু ধরে মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করার মত খারাপ ছেলে আমরা নই। তাই নিজেরাই চাদা তুলে অস্ত্র কেনার পরিকল্পনা করলাম। আসলে সন্ত্রাসী দলটা আমরা আমাদের গ্রুপের ব্যাকাপ হিসেবে রাখতে চেয়েছিলাম। মনে করুন অন্য পাড়ার কোন পোলাপান সাহেদকে হুমকি বা মার দিল। তখন আমরা সাহেদের জন্য ঝাপিয়ে পড়ব। আমাকে বাসা থেকে এক পয়সাও হাত খরচ দিত না। বাকীদের দিত। ফলে ওদের পক্ষে টাকা যোগাড় সহজ হলেও আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। চাদা ধার্য হল মিনিমাম ৫০ টাকা আর পারলে ১০০ টাকা। আমি স্কুলের এক মাসের বেতন মেরে দিলাম। বাকী সবাই ৮০, ৯০, ১০০ করে দিয়েছে। আমি দিলাম ৫০। তা দলের নেতা ঠিক করা দরকার। জাহাঙ্গীর আর আমি দুইজনই নেতা হবার জোড় দাবিদার। শেষ পর্যন্ত যৌথভাবে আমরা দুজনই নেতা হিসেবে মনোনীত হলাম। দলের নাম হল "JAASS"।



তা এবার অস্ত্রসস্ত্র কেনার পালা। প্রথম অস্ত্র হিসেবে আমরা একটা হকিষ্টিক কেনার পরিকল্পনা করলাম। একদিন "খেলাঘর" নামের এক দোকানে গিয়ে বহু দরদাম করে "Attack" নামের একটা হকিষ্টিক ১৭০ টাকা দিয়ে কিনলাম। আমাদের সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রথম অস্ত্র। বেশ ভাল ছিল হকিষ্টিকটা। এরপর সাহেদ একটা চাইনিজ কুড়াল জোগাড় করল পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে। আমাদের ছয়টা অস্ত্রের দরকার ছয়জনের জন্য। শিবলী একটা বেশ বড়সড় চাকু জোগাড় করল। আমি আর আশিক নিজেদের মারামারির দক্ষতা বাড়াবার জন্য মার্শাল আর্টে ভর্তি হয়েছিলাম। আশিক চেইন ষ্টিক নামক মারাত্বক অস্ত্র এবং অস্ত্রদক্ষতা অর্জন করল। এরপর জোগাড় হল বেস বলের ব্যাটের মত করে বানানো কাঠের তৈরী ডান্ডা। মুন্নু একটা কিরিচ নিল নিজের জন্য। আরও কিছু টাকা গেল এইসব করতে। তা আমাদের সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরী হল। কিন্তু আমরা তেমনভাবে আত্মপ্রকাশ করতে পারলাম না। কারন তখন বি এন পি সরকারের অপারেশন ক্লিনহার্ট চলছে। সাবধানে চলাফেরা করতে হয়। ধরা খাইলে খবর আছে। বড় বড় মাস্তানরাই ইদুরের মত গর্তে গিয়ে লুকিয়েছে আর আমরা তো স্কুলের এক স্বতোপ্রণোদিত সন্ত্রাসী বাহিনী। তা পরবর্তীতে আমাদের দলের সদস্যদের দেখি তেজ বহুগুনে বেড়ে গেল। ছেলেরা ভাবতে লাগল তারা আসলেই সন্ত্রাসী হয়ে গেছে। আমি জিনিসটাকে একটা ফ্যান্টাসী হিসেবেই তৈরী করতে চেয়েছিলাম এবং বিন্দুমাত্রও সন্ত্রাসী ভাব আমি ধরি নি। কিন্তু ছেলেদের মধ্যে এর গভীর প্রভাব পড়ল। তারা পুরো ডাটে বাটে চলাচল করতে লাগল। উদাস উদাস ভাব সবার মধ্যে।



আমি ভাবি এ কি মুসিবতে পড়লাম। একটু ভাব লেবার জন্য আর নিজেদের অবস্থানকে শক্তিশালী করার জন্য সন্ত্রাসী বাহিনী বানালাম আর এখন দেখি পোলাপান সব আক্রমণাত্মক হয়ে গেছে। তা সবাইকে বুঝালাম এই রকম করিস না। বোঝাতে গিয়ে উলটা ফ্যাসাদে পড়লাম। সব দেখি ম্যাদা মেরে যায়। আমি আসলে বাহিনীটাকে একটা মধ্যমপন্থী বাহীনি হিসেবে (যা আমাদের আত্মরক্ষার কাজে ব্যাবহৃত হবে )তৈরী করতে চেয়েছিলাম কিন্তু সবাই হয় আক্রমণাত্মক নয় ঠান্ডা হয়ে যায়। তা পোলাপান সব আবার আক্রমণাত্মক হয়ে গেল। আমি ভাবলাম যাই হোক সন্ত্রাসী বাহিনীর দরকার আছে। কারণ এটা ছাড়া প্রভাব বিস্তার ও মর্যাদা সহকারে চলা সম্ভব নয়। একদিন রাতে শোডাউন দিলাম পাশের এলাকায়। হাতে গ্লাভস, বুট জুতা, জিন্স, কোমড়ে মোটা বেল্ট, গায়ে জ্যাকেট। আমার কাছে ছিল হকিষ্টিক। পুরাই সিনেমার হিরো লাগতে ছিল নিজেরে B-) আমাদের এরপর থেকে অনেকেই সম্মান করে চলতে লাগল। ভয়ে ভয়ে থাকতাম যে বাসায় না আবার খবর চলে যায়। তাহলে আমার সন্ত্রাসীগিরি আমার বাবা চেলা লাকড়ী দিয়ে পিটিয়ে ছাড়াবে। তা কপাল ভাল ছিল, কোনদিন বাসায় খবর যায় নাই। একসময় আমি বিষয়টার ভয়াবহতা বুঝতে পারলাম। কিন্তু আমার দলের সদস্যরা দেখি মজা পেয়ে গেছে। একেই হয়তো বলে ক্ষমতার মজা যা আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো বার বার পেতে চায়। তারা কেউ দল ভাঙ্গতে রাজী না। আবার আমাকে আর আশিকেও ছাড়তে রাজী না। আমি ডাইরেক্ট বলে দিলাম দল শেষ আর যদি তোরা দল না ভাঙ্গিস তাহলে তোদের সাথে আমার আর আশিকের কোন সম্পর্ক নাই। ওরা একগুয়ে। আমি আর আশিক দল ছেড়ে এলাম। ওদের সাথে কথা বলাও বন্ধ করে দিলাম। কিন্তু আমরা খুব ভাল বন্ধু ছিলাম। সাহেদ দেখি স্কুলের বারান্দায় মুখ কালো করে বসে থাকে। কারন ও কোন কথা বললে আমি জবাব দেই না। আমার কাছেও বিষয়টা খুব খারাপ লাগছিল। কিন্তু আমার কিছু করার ছিল না। কারন আমি সমাজের বুকে একটা সত্যিকারের সন্ত্রাসী দল জন্ম দিতে পারি না। আমি যদি এদেরকে নিয়ে এভাবে দল চালিয়ে যেতাম তাহলে আজকে আমি একটা শীর্ষ সন্ত্রাসী দলের মালিক হতে পারতাম। তাই আমি যত কঠোর ভাবেই হোক এই দল ভাঙ্গার ব্যাপারে দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেই। কারন আমি জানতাম আমাকে আর আশিককে ছাড়া দল টিকবে না। আসলেই দল টিকে নি। সবাই উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। আমার পরিকল্পনা সফল হয়। কিন্তু অন্যদের সাথে সম্পর্কটা খারাপ হয়ে যায়। দল ভাঙ্গার পর অস্ত্রের ভাগাভাগি নিয়ে একটা মনোমালিন্য হয়। যাই হোক সমাজ একটা সত্যিকারের সন্ত্রাসী দলের হাত থেকে রক্ষা পায়। এই বা কম কিসে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১১:২৮
৩৬টি মন্তব্য ৩৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। শেষ মুহূর্তে রাইসির হেলিকপ্টারে কী ঘটেছিল

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৩২

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হওয়ার আগে কী ঘটেছিল, সে সম্পর্কে এখন পর্যন্ত খুব কমই জানা গেছে। এবার এ ঘটনার আরও কিছু তথ্য সামনে এনেছেন ইরানের প্রেসিডেন্টের চিফ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনারই মেরেছে এমপি আনারকে।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন!

এই হত্যার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের কিছু উল্টা পালটা চিন্তা !

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১০

১।
কলকাতা গিয়ে টুকরা টুকরা হল আমাদের এক সন্ত্রাসী এমপি, কলকাতা বলা চলে তার ২য় বাড়ি, জীবনে কতবার গিয়েছেন তার হিসাব কেহ বের করতে পারবে বলে মনে করি না, কলকাতার অলিগলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাটির কাছে যেতেই..

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

মাটির কাছে
যেতেই..


ছবি কৃতজ্ঞতাঃ https://pixabay.com/

ঠিক যেন
খা খা রোদ্দুর চারদিকে
চৈত্রের দাবদাহ দাবানলে
জ্বলে জ্বলে অঙ্গার ছাই ভস্ম
গোটা প্রান্তর
বন্ধ স্তব্ধ
পাখিদের আনাগোনাও

স্বপ্নবোনা মন আজ
উদাস মরুভূমি
মরা নদীর মত
স্রোতহীন নিস্তেজ-
আজ আর স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

পর্ণআসক্ত সেকুলার ঢাবি অধ্যাপকের কি আর হিজাব পছন্দ হবে!

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৩ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:২৭



ইন্দোনেশিয়ায় জাকার্তায় অনুষ্ঠিত একটা প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশি নারীদের একটা রোবোটিক্স টিম। এই খবর শেয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা। সেখানে কমেন্ট করে বসেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×