somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জেন্ডার ও নারী উন্নয়ন

২৬ শে জুন, ২০০৯ রাত ১১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কন্যা শিশু জন্মের পর থেকেই পিতৃতান্ত্রিক সমাজে বিশেষ করে মায়েরা কন্যা শিশুটিকে বোঝাস্বরূপ মানসিকতায় লালন-পালন করে থাকেন। সংসার জীবনে নারীকে নির্ভরশীল হতে হয় প্রথমত: স্বামী ও পরে পুত্রের উপর। এ কারনেই মা তাঁর সুপ্ত আকাঙ্খার বাস্তবায়ন করতে চান পুত্রের মাধ্যমে। পুত্রের মাধ্যমে সংসারের বৈষয়িক দিকটি রক্ষিত হয় বলেই মায়েরা পুত্রের উপর নির্ভর হন। মায়েরা ভালোভাবেই জানেন যে, পুত্রই স্বামীর পরবর্তিতে সংসারের হাল ধরবে এবং পরিবার রক্ষা করবে। মেয়ের বিয়ে দিলে শাশুড়ি ও শশুর মেয়ে জামাইকে স্বাভাবিক ভাবেই বেশী বেশী আদর করে থাকেন। কারন শাশুড়ীর ভাষায় মেয়ের সুখ-দুঃখ নির্ভর করে যার সংগে বিয়ে দিয়েছেন তাঁর উপর। অন্যদিকে ছেলের বৌকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার বাসনা থেকে শুরু হয় শাশুড়ির মনে বৌয়ের উপর কর্তৃত্ব করার স্বপ্ন। শাশুড়ি যখন কোন পরিবারের একজন সদস্যা ছিলেন, তখন তিনি নিজেও নির্যাতিত সমাজেরই একজন ছিলেন। পুত্রকে দিয়ে বংশ রক্ষা হয় বলে শাশুড়ি পুত্র বধুর সতীত্বের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন। পুত্র ব্যতয় কিছু করলেও তাতে আসে যায় না। কিন্তু তাঁর ছেলের ক্ষেত্রটিতে যেন আগাছা না জন্মে। যৌতুকের দাবি পূরণ না হওয়ায় বধু নির্যাতন এবং অনেক সময় বধুর মৃত্যুর ক্ষেত্রেও শাশুড়ী মূখ্য ভূমিকা পালন করে থাকেন। অথচ এগুলি যে অন্যায় ও সামাজিকভাবে গর্হিত কর কাজ তা ভুলে গিয়ে অকল্যাণমূলক কাজে নেমে পড়েন।

সমাজ ব্যবস্থার কারণে বিয়ের দুই তিন বছরের মধ্যে পুত্র বধুর সন্তান না হলে শাশুড়ি পুত্র বধুর বন্ধ্যাত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ছেলে যে সন্তান জন্মদিতে অক্ষম হতে পারে এ চিন্তা কখনই করেন না। তখন পুত্রের দ্বিতীয় বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। ছেলের চিকিৎসার বন্দোবস্ত করার ক্ষেত্রে প্রশ্নই ওঠাননা। এজন্য দেখা যায়, মেয়েরা যখন শাশুড়ি হন, তখন তিনি আর মেয়ে থাকেন না। অনেকটা স্বৈরাচারী হয়ে ওঠেন। অবশ্য ব্যতিক্রমধর্মী শাশুড়ি যে নেই তা নয়। যাঁরা বৌদের প্রতি অতি নম্র ও ভদ্র, এক কথায় মা হিসেবে বৌমাকে বুকে তুলে কাছে টেনে নেন। তবুও অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে শাশুড়ির কার্যকলাপের সাথে বৌ-এর চিন্তা-ভাবনার মিল হয় না। ফলে অনেক স্বামীই পড়েন অনেকটা বিপাকে। এ অবস্থায় স্বামী কোন কুল কিনারা রক্ষা করে উঠতে পারেন না। এমতবস্থায় স্বামী দিশেহারা হয়ে পড়েন। এক্ষেত্রে পুরুষ, স্ত্রী দ্বারা নির্যাতিত হন।

কৃষক পরিবারে ছেলে শিশু ছোট বেলা থেকে বাবার সাথে মাঠে হালচাষ থেকে শুরু করে বাহিরের সব কাজ করে থাকে। লেখা-পড়া করানোর সামর্থ্য কৃষকের কম। আবার মেয়ে শিশুরা মায়ের সাথে ঘরের যাবতীয় কাজে সাহায্য করে। বাড়তি মানুষ রেখে এসব কাজ করিয়ে নেয়া দরিদ্র কৃষকের পক্ষে সম্ভব হয় না। এ কারণে দশ বছরের ছেলেই হোক আর মেয়েই হোক স্কুলে পাঠাতে পারেন না। বেশীর ভাগ শিশু সংসারের কাজেই লেগে থাকে। বিশেষ করে মা আতুর ঘরে থাকা কালীন সময়ে বা অসুখ অবস্থায় পড়ে থাকলে সংসারের পুরো দায়িত্বই মেয়ে শিশুকেই পালন করতে হয়। নারী বৈষম্য শুরূ হয় এখান থেকেই। এ বৈষম্য দূর করতে হবে।

শহরের ছেলে শিশুরা বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত হয় যেমন-মিন্তিগিরি, জুতাপালিশ, ইট ভাংগা, হোটেল রেস্তোরায় বয়গিরি, রিকশাচালক, বাস-টেম্পোর হেলপার ইত্যাদি। মেয়ে শিশুরা ঘর-সংসারের পাশাপাশি বাইরের কাজও করে। যেমন- পাতা কুড়ানি, বর্জ্য ও ময়লা আবর্জনা স্তুপে টোকাই, ফুল বিক্রয় এবং বাসা বাড়িতে কাজ করা। তবে বেশীর ভাগ মেয়েরা এখন মিল ও কলকারখানায় কাজ করে থাকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। কেননা এ সব কারখানায় মেয়েদের নিরাপত্তা নেই বললেই হয়। মাঝে মধ্যেই আগুনে পুড়ে ও বিশেষ করে যৌন হয়রানির শিকার হয় মেয়েরা।

অতীতে সমাজে নারী ও পুরুষের বৈষম্যমূলক আচরণের ফলে উদ্ভুত অসম পরিস্থিতির বিষয়টি বিশ্বব্যাপী আজ স্বীকৃতি পেয়েছে। পূর্বে রাজ সভায় প্রকাশ্যে যৌনচার, মদ্যপানসহ যাবতীয় অম্লীল কাজ সংঘটিত হতো। মেয়ে ও পুরুষের মাঝে নৈতিকতা বিরোধী কাজ চলতো অনায়াসে। নারীর প্রতি এ যেন এক সীমাহীন বৈষম্য বিরাজ করতো। পাষন্ড স্বামী লোহার রড আগুনে পুড়িয়ে স্ত্রীকে ছ্যাঁকা দিতেও তোয়াক্কা করেন না। আজও মেয়েরা বৈষম্যের শিকার।

হিন্দু ধর্মে তালাক প্রথা নেই। স্বামী হল নারীর দেবতা তুল্য। ফলে নারীর স্বাধীনতা কতটুকু আছে তা ভালোভাবেই বোঝা যায়। নারীকে মানুষ হিসেবে গণ্যই করা হতো না। অধূনাও যে নারীর অবস্থা খুব ভালো তাও নয়। যেমন নারীরা -
- শ্রমের নায্য মজুরী পায় না
- স্বাস্থ্য ও শিক্ষামান নিম্ন
- জমির উপর সমঅধিকার নাই
- অপুষ্টি ও যথেচ্ছা নির্যাতনের শিকার।

নির্যাতনের ধরণ

ধর্ষণ, যৌন হয়রানী, নারী পাচার, অপহরণ, শারীরিকভাবে অমানসিক নির্যাতন। এটা স্পষ্টতঃ জেনে রাখা দরকার যে, একজন মানুষের পক্ষে সম্পদ লাভ ও অভিজ্ঞতা অর্জনের ক্ষেত্র নিয়ন্ত্রন করে জেন্ডার। জেন্ডার সামাজিক অবস্থা বা প্রেক্ষাপট থেকে সৃষ্ট। এ অবস্থার উন্নতি বিধানের লক্ষ্যে এবং সমতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে জোরদার ভূমিকার প্রয়োজনীয়তা বিশিষ্ট চিন্তাবিদগণ স্বীকার করেছেন। সরকার ও উন্নয়ন সহযোগী উভয়ে উন্নয়নের সুফল নারী ভোগ করুক এটা আন্তরিকভাবে চান। পুরুষ ও নারীর বিদ্যমান বৈষম্য হ্রাস করা সম্ভব নয়, যদি না নারীদেরকে অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতিতে উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেয়া হয়। সমাজে নারী ও পুরুষের স্থান তাদের লিঙ্গীয় বৈশিষ্ট্য। তবে দুঃখের বিষয় নারীর ক্ষেত্রে এটা পুরুষ দ্বারা সামাজিকভাবে সৃষ্ট। সামাজিকভাবে সৃষ্ট এ বৈষম্য অবশ্যই দূর করতে হবে। চলবে.....


সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০০৯ রাত ১১:২৩
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রম্য

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৬ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪১


জাতীয় পরিচয় পত্রে ভূল সংশোধন কক্ষে মহিলা অফিসার বললেন - কি করতে পারি?

- সুতির নাইটি টা ঠিক করতে হবে।

এই শুনে মহিলা তো রেগে আগুন। খেঁকিয়ে উঠলেন রীতিমতো।
- অসভ্যতা করছেন?... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওহাবী বাতিল মতবাদের স্বরূপ উন্মোচন

লিখেছেন মীর সাখওয়াত হোসেন, ২৬ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৭

নজদী ওহাবীদের সম্পর্কে আলােচনা করার পূর্বে নজদ দেশ সম্পর্কে আলােকপাত করতে চাই। আরবের মক্কা নগরীর সােজা পূর্ব দিকের একটি প্রদেশের নাম নজদ । এখন উক্ত নজদ দেশটি সৌদি আরবের রাজধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘূর্ণিঝড় রিমাল সর্তকতা।

লিখেছেন কাল্পনিক_ভালোবাসা, ২৬ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩

প্রিয় ব্লগারবৃন্দ,
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় রিমাল প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে এবং ইতিমধ্যে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলোর ব্লগারদের কাছে যদি স্থানীয় ঝড়ের অবস্থা এবং ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফ্রিল্যান্সার ডট কম

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৬ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৭

কাজের বুয়া ফ্রিল্যান্সার মাসে কামায় লাখ
হুমড়ি খেয়ে ডিগবাজি তায় পঙ্গপালের ঝাঁক
টিপলে বাটন মোবাইলটাতে ডলার আসবে রোজ
ডট কম কোচিং সেন্টার আমরাই দেব খোঁজ।

অমুকের বউ তমুকের ঝি হাতিয়ে নিচ্ছে সব
তোমরা মিছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীতে চিরতরে যুদ্ধ বন্ধের একটা সুযোগ এসেছিল!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৬ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৩


মনে হয় শুধু মানুষের কল্পনাতেই এমন প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন সম্ভব- যদি বাস্তবে হত তবে কেমন হত ভাবুন তো?
প্রত্যেকটি দেশের সমস্ত রকমের সৈন্যদল ভেঙে দেওয়া; সমস্ত অস্ত্র এবং সমর-সম্ভার, দুর্গ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×