somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেকুব রাজ্যের বেকুব রাজার বেকুব প্রজারা

২৫ শে জুন, ২০০৯ বিকাল ৩:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কঠোরতার নিদর্শন স্বরূপ রাজা বসে আছেন দরবারে। আজ তিন জন অপরাধীর বিচার করবেন তিনি। রাজ সভার কার্যক্রম শুরুর নির্দেশ দিলেন তিনি। প্রথম অপরাধীকে হাজির করা হল।
রাজা বললেন "এর অপরাধ কি?"
"হুজুর এই লোক রাজ্যের সব বড় বড় পাহাড়গুলো কেটেঁ ফেলছে" উজির বললেন
রাজা হুংকার দিয়ে উঠলেন "কি হে! তুমি পাহাড় কেঁটে ফেলছো কেন?"
প্রথম অপরাধী হাত কঁচলাতে কঁচলাতে বলল "হুজুর আপনার রাজ্যের প্রজারা প্রতিদিন এই উঁচু পাহাড়গুলোতে উঠে প্রাকৃতিক দৃশ্য অবলোকন করে। এই পাহাড়গুলো বেয়ে উঠতে তাদের অনেক কষ্ট হয়। শারীরীক পরিশ্রম হয় বলে তাদের ক্ষুধা লাগে। ফলে রাজ্যের খাদ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। এতে রাজ্যের উৎপাদিত ফসল অন্য রাজ্যে রপ্তানির সুযোগ কমে যায়। রাজ্যের অর্থনীতিতে এর প্রবল চাপ পরে। তাই আমি পাহাড় সব কেঁটে ছোট করে ফেলছি। এর ফলে প্রজাদের কষ্ট কম হবে খাদ্য চাহিদাও বাড়বে না"।
শুনে রাজাতো মহাখুশি "বাহ! তোমার দেখি অনেক বুদ্ধি! যাও তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। তুমি তোমার কাজ চালিয়ে যাও"।
এরপর দ্বিতীয় অপরাধীকে হাজির করা হল। রাজা বললেন "এর কি অপরাধ?"
উজির বললেন "হুজুর এই লোক নদী-নালা সব মাটি দিয়ে ভরাট করে ফেলছে"
রাজা হুঙ্কার দিলেন "কি হে! তোমার এত বড় স্পর্ধা! তুমি আমার অনুমতি ছাড়া রাজ্যের নদী-নালা ভরাট করে ফেলছো!"
দ্বিতীয় অপরাধী বলল "হুজুর আপনিতো জানেন রাজ্যের নদীগুলো সব অনেক চওড়া। আপনি নিশ্চই এটাও জানেন হুজুর আপনার রাজ্যের মাঝিরা অনেক গরীব। লোকজনকে নৌকায় তুলে এই বিশাল নদী পার করতে অনেক কষ্ট হয়। পরিশ্রমের ফলে তাদের ক্ষুধাও অনেক বেশী পায়। কিন্তু গরীব বিধায় তারা খেতে পায় না। না খেয়েই মারা যায়। আশে পাশের রাজ্যের লোকজন এই নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করে। ওরা বলে - এ কেমন রাজ্য যেখানে মানুষ না খেতে পেয়ে মারা যায়? এ আপনার রাজ্যের অপমান। তাই আমি নদী ভরাট করে ছোট করে ফেলছি যেন মাঝিদের কষ্ট কম হয়। আবার অনেক গরীব মানুষ আছে যারা পয়সার অভাবে নৌকা করে নদীর ও'পারে যেতে পারে না। তাই আমি নদীর গভীরতাও কমিয়ে ফেলেছি যেন ওরা পায়ে হেঁটে ও'পারে যেতে পারে। হুজুর আপনিতো জানেন আপনার রাজ্যে অন্যান্য রাজ্য থেকে লোকজন বেড়াতে আসে। তারা যখন নালা দেখে তখন নাক মুখ কুঁচকে বলে - এ কেমন রাজ্যরে বাবা শুধু নোংরা আবর্জনা। তাই আমি নালাগুলো ভরাট করে ফেলছি যেন তারা কোন কটুক্তি না করতে পারে"।
শুনে রাজ মহাখুশি "আরে তোমারতো হে অনেক বুদ্ধি! যাও তোমাকেও ক্ষমা করে দিলাম। যাও তুমিও কাজ চালিয়ে যাও"
উজির বললেন "হুজুর জ্ঞানী-গুণীরা বলছেন নদী-নালা ভরাট করে ফেললে নাকি আপনার রাজ্য পানির নিচে তলিয়ে যাবে"
রাজা বললেন "আরে ওরা সব হাঁদারামের দল। পানি উপরে উঠবে কি করে? পানির কি হাত পা আছে?"
এরপর তৃতীয় এবং শেষ অপরাধীকে হাজির করা হল। তৃতীয় অপরাধীর অপরাধ হল সে নির্বিচারে গাছ-পালা কেঁটে ফেলছে।
"কি হে! রাজ্যের গাছ-পালা কি তোমার বাবার সম্পত্তি পেয়েছো?" রাজা রেগে গিয়ে বললেন
তৃতীয় অপরাধী বলল "হুজুর আমাদের পাশের রাজ্যে কত্ত বড় বড় দালান কি সুন্দর নকশা করা। কিন্তু আপনার রাজ্যে এমন কোন দালান নেই। যাও দু'একটা আছে তাও শেওলা পরা সাধাসিধে। তাই আমি গাছ কেঁটে বিশাল বিশাল নকশাদার সব দালান বানাবো যাতে আমরাও গর্ব করে বলতে পারি। আর গাছ বিক্রির টাকা আপনার রাজ তহবিলে জমা রাখব রাজ্যের উন্নয়নে যেন ব্যয় করা যায়"।
রাজা এবারও মহাখুশি। তখন রাজ্য সেনার একটি দল এক লোককে ধরে নিয়ে আসলো। রাজা বললেন "একে ধরে এনেছো কেন?"
একজন সেনা বলল "হুজুর এই লোক কি এক উদ্ভট গাড়ি বানিয়েছে। বলে মটর গাড়ি। এই গাড়ি থেকে কালো ধোঁয়া বের হয়। রাজ্যের প্রজাদের এতে অনেক অসুবিধা হচ্ছে"।
রাজা রেগে গিয়ে বললেন "কি তোমার এত্ত বড় সাহস! তুমি রাজ্যের প্রজাদের ক্ষতি করছো!"
লোকটি বলল "হুজুর আপনিতো জানেন রাজ্যে অনেক লোক ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া এসব রোগে মারা যাচ্ছে। এইসব রোগ হয় মশার কামড় থেকে। পাশের রাজ্যের লোকজন সবাই হাসাহাসি করে। বলে - আপনার রাজ্য নাকি মশাদের রাজ্য। মশারা পরিবেশ অস্বস্থ্যকর করে ফেলছে। তাই আমি এই মটর গাড়ি বানিয়েছি। এর কালো ধোঁয়ায় মশা মারা যায়"
শুনে রাজা আরো খুশি "রাজ তহবিল থেকে টাকা দিয়ে এমন আরো পঞ্চাশটি মটরগাড়ি বানানো হোক। আমার রাজ্যের পরিবেশ রক্ষা বলে কথা!"।
তখনই কয়েকজন প্রজা এসে হাজির। তাদের মধ্য থেকে একজন বলল "হুজুর পাশের রাজ্যের রাজা নদীতে বাঁধ দিচ্ছে। আমাদের এলাকায় পানি আসা কমিয়ে দেবে। আমরা চাষ করব কি করে? এর একটা বিহিত করেন হুজুর"
রাজা ভাবলেন দ্বিতীয় অপরাধী লোকটাতো নদী ভরাট করছে। ওদিকে পাশের রাজ্যে যদি বাঁধ দেয় তাহলে এখানে এমনিতেই পানির গভীরতা কমে যাবে। নদী ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাবে। মনেমনে রাজা মহাখুশি। রাজা তক্ষুনি নির্দেশ দিলেন "ওই বাঁধ দিলেতো আমাদের লাভই হবে। শিঘ্রই ওই রাজ্যের রাজাকে সাহায্য করার জন্য এক হাজার শ্রমিক উপহার স্বরূপ পাঠানো হোক। যত তাড়াতাড়ি হবে ততই আমার রাজ্যের লাভ। নদী শুকিয়ে গেলে সবাই পায়ে হেঁটে নদী পার হতে পারবে"।
শুনে প্রজারা সবাই ক্ষেপে গেল। না ওই বাঁধ বন্ধ করতেই হবে। কিন্তু রাজা তাদের কথা পাত্তাই দিলেন না। মনে মনে ভাবলেন কয়দিন আর চিৎকার চেঁচামেচি করবে? নিজেরাই থেমে যাবে।
ওদিকে উজির মাশাই মনেমনে হাসে আর ভাবে "হায়রে নিজেদের রাজ্যে বোমার উপর বসে আছে প্রজাদের সেই খেয়াল নেই আর অন্যরাজ্য থেকে কে বন্দুক তাক করেছে তাই নিয়ে যত মাথা ব্যথা। হায়রে! বেকুব রাজ্যের বেকুব রাজার বেকুব প্রজারা!"
৯টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×