somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'নিজেকে বদলাতে আগে' প্রথম আলো কি বদলেছে?

২৪ শে জুন, ২০০৯ বিকাল ৩:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বছর ৪/৫ আগের কথা। আমি তখন ঢাকায়। সম্ভবত ঐদিন দৈনিক জনকণ্ঠে সৈয়দ শামসুল হকের একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছিল। লেখাটির শিরোনাম ছিল 'জেগে ওঠো বাংলাদেশ'। তো ঐরাতে আমি আমার দুই অগ্রজ বন্ধুর সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম। রাত দু'টার দিকে আমাদের আড্ডার বিষয় হয়ে যায় সৈয়দ হকের লেখাটি। হঠাৎ এক বন্ধু টেলিফোন সেটটি টেনে নিয়ে কয়েকজনকে ফোন করতে লাগল। সকলকে সে ফোনে একটি কথাই বলছে- "ঘুমাবেন না, সৈয়দ হক আপনাকে জেগে থাকতে বলেছেন। জেগে থাকুন।" রিসিভারের ওপাশে কোন সাড়া আসার আগেই সে লাইন কেটে দিচ্ছিল। সর্বশেষ ফোনটা ছিল খুবই মজার। বন্ধুটি রিসিভার তুলে গম্ভীর স্বরে বলল - সৈয়দ হক বলছেন?
লাউডস্পিকারে ততোধিক গম্ভীর স্বর- বলছি
- ঘুমোচ্ছেন?
বেশ রাগতস্বর- রাত দু'টো কি জেগে থাকার সময়?
- না।
বলে বন্ধুটি একটু থামল। আবার বলল
- তবে স্বাক্ষী থাকলাম জাতিকে জেগে থাকতে বলে আপনি নিজে ঘুমোচ্ছেন। বলে খট করে রিসিভার নামিয়ে রাখল।
আমরা তিনজনই এবার সশব্দে হেসে ওঠলাম। যদিও বিষয়টি নিছকই মজা করে হয়েছিল তথাপি অন্যকে জেগে থাকতে বলে নিজে ঘুমিয়ে পড়ার মতো বিষয় এই বঙ্গদেশে নেহাতই কম ঘটে না।
এই যেমন সম্প্রতি দৈনিক প্রথম আলে ঢাকঢোল পিটিয়ে সারাদেশ ঘুরে নিজেকে বদলে দিয়ে পুরো জাতিকে বদলে ফেলার মহান ইজারার কাজটি শেষ করে এসেছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে প্রথম আলো নিজে কতটুকু বদলেছে?
শপথ নেয়ার আগে এবং পরে দুইটি ঘটনার উল্লেখ করি।
ঘটনা ১.
গতবছরের এপ্রিল মাসের কথা। আমার এক পরিচিত দুররোগ্যব্যাধিতে আক্রান্ত হলে আমরা কয়েকজন তার চিকিৎসার ব্যায়ভার লাঘবের জন্য কিছু উদ্যোগ নিই। তার মাঝে একটি উদ্যোগ ছিল পত্রিকায় সাহায্যের আবেদন করে বিজ্ঞপ্তি দেয়া। ঢাকার অনেকগুলি দৈনিক এই আবেদনের বিজ্ঞপ্তি ছেপেছিল। কিন্তু প্রথম আলোর ময়মনসিংহ প্রতিনিধি আমাদের যে বক্তব্য শুনিয়েছিল তা শুনে আমরা রীতিমতো ঠাসকি খেয়েছিলাম। ময়মনিসংহ প্রতিনিধি নিয়ামুল কবির সজল বলেছিল- "দেখেন এইসমস্ত বিজ্ঞপ্তি ছাপানো খুবই কঠিন। ঢাকা অফিসে খুবই উপরের লেভেলে যদি লোকটুক থাকে তাহলে এগুলো ছাপা হয় আর নাহলে এগুলো ডেস্কেই পড়ে থাকে।" প্রথম আলোর খতরনাক চরিত্রের কথা মোটামুটি দেশের লোকজন ভালই জানে। আমিও কিছুটা জানতাম। তাই এবিষয়ে আর কথা না বাড়িয়ে চলে আসি।
ঘটনা ২.
২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে এদেশের মানুষ যতটা আওয়ামি লীগের পক্ষে রায় দিয়েছে তার চেয়ে বেশি রায় ছিল বিএনপি জামাত জোটের বিপক্ষে। ফলে এই নির্বাচনের পর জাতি আশা করেছিল বিএনপিজামাতের খপ্পর থেকে জাতি এবার মুক্তি পাবে। সারাদেশে যখন যোদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবী জোরালো হয়ে ওঠছে তখন ময়মনসিংহে স্থানীয় জামাতের এক নেতা স্থানীয় প্রশাসন এবং স্থানীয় আওয়ামি লীগের কয়েক নেতাকে টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে ট্রাস্ট পরিচালিত একটি বেসরকারি কলেজ দখল করে নিজের কব্জায় নিয়ে নেয়। কলেজের প্রকৃত ট্রাস্টিগণ এবিষয়ে মামলা দিতে গেলে থানা মামলা নিতে টালবাহানা করে। পরবর্তিতে তারা সাংবাদিকদের দ্বারস্থ হন। কারণ তারা ধারণা করেছিল যে, জামাত নেতার বিরুদ্ধে থানা মামলা নিচ্ছে না এটি অবশ্যই অন্ততপক্ষে এইসময়ে সংবাদমূল্য পাবে। যাই হোক কয়েকটি পত্রিকা এবিষয়ে নিউজ করলেও প্রথম আলোর সজল আবারো সেই পুরনো প‌্যাঁচাল শুরু করে। " এখন পত্রিকা ঘূর্ণিঝড় আইলা নিয়ে ব্যাস্ত, এখন কি আর এবিষয়ে নিউজ করা যাবে?" ইত্যাদি। অথচ পরদিন প্রথম আলোয় মুক্তাগাছায় গরুচুরির উপরেও নিউজ ছাপা হয়েছিল। পরে জানা গেল স্থানীয় আরেক সাংবাদিকের মাধ্যমে সিন্ডিকেট করে জামাতনেতা টাকা বিলিয়ে অনেক সাংবাদিককেই ম্যানেজ করে নিয়েছিল। তার মাঝে সজলও আছে। বিষয়টি প্রথম আলোর সম্পাদক জনাব মতিউর রহমানকে সরাসরি মোবাইল ফোনে জানানো হলেও এবিষয়ে কোন ক্রিয়া বা প্রতিক্রিয়া কিছুই পাওয়া যায়নি। তার মানে কী? মতিউর রহমান নিজেও কী ম্যানেজ? বড় বিচিত্র এই দেশ! বাংলাদেশ বলে কথা! কতকিছুই সম্ভব এখানে। নিজের পুরনো খতরনাক চরিত্র ধরে রেখে জাতিকে বদলে ফেলার কী হাস্যকর প্রয়াস!
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০০৯ বিকাল ৩:৩১
১৭টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×