অনেক খোঁজাখোঁজির পর বাসাটি পাওয়া গেল। তিনতলা বাড়ি। ঝামরানো দেয়াল তার। হয়তো বহুদিন ধরে রংয়ের প্রলেপ পড়েনি। আমি শেষবারের মত ঠিকানাটি মিলিয়ে নিলাম। ঠিকই আছে। সিঁড়ি বেয়ে উঠলাম দোতলায়। কলিং-বেল চাপলাম। কোন সাড়া না পেয়ে বিরতি দিয়ে আবারো চাপলাম। দরজার সামনে একনাগাড়ে দাড়িয়ে থাকতে হচ্ছে বলে বেশ অস্বস্তি বোধ করছিলাম। ক্ষণিক পর বুঝে নিলাম কলিং-বেল নষ্ট কিংবা আদৌ লাগানো হয়নি। হাতে নক করলাম দরজায়। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর দরজার ওপার হতে কর্কশ নারী কন্ঠে প্রশ্ন এল, ‘কে?’। গলা শুনে ধারণা করলাম এ আমার চাচাত বোনদের কেউ হবে হয়তো। আমি আমার নামটি উচ্চারণ করলাম। জবাবে আমার নামটা কিছুটা জিজ্ঞাসার সুরে উচ্চারণ করা হল। যেন এ নামের আরো কয়েকজন নিয়মিত আসে এ ঘরে। সকাল সাতটা এখন। ঘুম ঘুম চোখে আমার গলাটা বেশ ভারি মনে হয়। হয়তো সে কারণে আমার গলা চিনতে পারছেনা দরজার ওপাশের মানুষটি নতুবা ইচ্ছে করেই নাচেনার ভান করছে। কিঞ্চিৎ শ্লেষ করা। অসময়ে এসেছি বলে। না এসে উপায় ছিলনা। চাচাকে এসময়ে ছাড়া আর কোন সময়ে পাওয়া যাবেনা। জবাবে আমি ভদ্রগলায় বললাম, ‘হামিদের ছেলে’। কট কট দুটো আওয়াজ করে দরজা খুলে গেল। ভেতরে চোখ পড়া মাত্র থ্রীপীস পড়া আমার চাচাত বোনকে চাক্ষুষ করলাম। মৃদু গলায় জিজ্ঞেস করলাম, ‘কেমন আছ?’ জবাব এল, ‘ভাল আছি’। আমি বললাম, চাচাকে ডেকে দাও। আমি বাসার বসার রূমে গিয়ে বসলাম। তার চারপাশটায় নজর বুলিয়ে নিলাম। সাদামাটা ঘর। বেশ চেনা চেনা লাগছে এ রূমটা। আগেও এসেছি হয়তো। চাচারা এ বাসায় এসেছে বেশীদিন হয়নি। এখানে আসার পর আমি এবারই প্রথম এলাম। চেনা চেনা লাগছে তবুও। আমি আবারো চোখ বুলালাম চারিদিকে। জানলার বাইরে চোখ পড়তে আবিস্কার করলাম, এটাইতো হাবিবদের বাসা ছিল। হাবিব আমার বন্ধু। এখন ওরা ঢাকায়। শেষ দুবছর আগে এখানে এসেছি আমি। বেশ কয়েকবার এসেছি। হাবিবের সাথে এসেছিলাম। তাই ঠিকানা জানার প্রয়োজন হয়নি কখনো। বাইরে থেকে লক্ষ করিনি হয়তো মাথায় খোঁজাখোঁজির চিন্তা ছিল বলে। সামান্য সময়ের ব্যবধানে আমি এই বাসায় এলাম দুই প্রকার পরিচিতির খাতিরে। বিষয়টি বোঝার পর বেশ উত্তেজনা অনুভব করছি। চাচারা শহরে এসেছেন বেশ আগে। গ্রামে খুব একটা যান না। শহরে আমাদের বাসাও বেশী দূরে নয় চাচাদের বাসা থেকে। কিন্তু চাচাদের সাথে খুব একটা আসা-যাওয়া নেই আমাদের। যোগাযোগও হয়না বেশী। চাচারা তেমন মিশুক নন। ওরা ওদের মতই। এখানে এসেছি অর্থসংক্রান্ত ব্যাপারে। বাবা চাচার কাছে কিছু টাকা পাবেন। সেগুলো নিতে। চাচা এলেন। ঘুম থেকে উঠেছেন বোধহয় বেশীক্ষণ হয়নি। চাচার কাছ থেকে টাকাটা নিয়ে বেরিয়ে এলাম। চাচা চা খাওয়ার জন্য বললেন শুকনো গলায়। আমি সৌজন্যতার সাথে না বলে বেরিয়ে এলাম। বেরিয়েই লক্ষ করছি ভাল করে জায়গাটাকে। জায়গাটা আমার বেশ ভাল লাগত। শহরের মধ্যে হলেও জায়গাটার মধ্যে একটা গ্রাম গ্রাম ভাব আছে। মূল সড়ক থেকে বেশীদূরে নয়। তবে রাস্তাটা সলিন আর বর্ষাকালে পানি উঠে এদিকে। যার কারণে খুব একটা শহুরে ভাব জেগে উঠেনি। সারি সারি ভবনও উঠেনি তাই। সলিন পথটি ধরে সামান্য ভেতরে গেলে সেখানে দিব্যি গ্রামের মত ধানক্ষেত দেখা যায়। পথে খুব একটা মানুষজন নেই পথে এখনো। পথের ধারে যে জায়গায় ডোবামত একটা পুকুর ছিল। তার অবস্থা দেখে হাপিত্যেশ করে উঠলাম মুখে শব্দ করে। অর্ধেকটা জুড়ে ময়লা আবর্জনা স্তুপ হয়ে আছে। তার কিছু দূরে ঋজু হয়ে দাড়িয়ে আছে একটি বাদাম গাছ। একটি পাখির বাসা তার অলিন্দে। নতুন নতুন কয়েকটি ভবন উঠেছে। এদিকে বেশ কাঁঠাল গাছ ছিল তখন। এখন তাদের সংখ্যা কমে গেছে। এ জায়গাটায় এত বেশী কাঁঠাল গাছ দেখে আমি খুব অবাক হতাম। থোকায় থোকায় কাঁঠাল ধরত সেগুলোতে। গলি থেকে বেরিয়ে নামছিলাম পথে। একটি দৃশ্য দেখে থমকে গেলাম। ব্যাগ হাতে একলোক আর তার সামনে মুখোমুখি দাড়িয়ে চার যুবক। চার যুবকের একজনের হাতে চুরি। আমি হাতটি চোখে কচলিয়ে নিই। যেন চোখের পিচুটি পরিস্কার করছি। না, সত্যিই দেখছি। বুঝতে কষ্ট হলনা ছিনতাই হচ্ছে। কথা হচ্ছে তাদের মধ্যে। অনেক সময় লাগছে। এত সময় লাগার কথা নয়। আমি এগিয়ে যাচ্ছি না। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কেউ এগিয়ে যায়না। আমিও তথৈবচ। কিংবা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগলেও আর এগিয়ে যাওয়া হয়না। বরং কিছুটা পিছিয়ে এসে ফের গলির ভেতর ঢুকে গেলাম এই ভেবে আমার পকেটে চাচার দেয়া টাকা। মূঢ় হয়ে চেয়ে রই। ছিনতাইর নিরাপদ সময় রাত। সকালে ছিনতাই হচ্ছে দেখে বেশ অবাক হলাম। একসময় নাটকের অবসান হল। লোকটি তার টাকা-পয়সা বের করতে চাইছেনা। ছুরি হাতে যুবকটি লোকটির ঊরুতে এক পোঁচ বসিয়ে দিল ছুরি দিয়ে হালকা ভাবে। নিয়ে গেল মোবাইল আর টাকা। উধাও হয়ে গেল। অবস্থা সুবিধাজনক দেখে আমি লোকটাকে সাহায্য করতে এগিয়ে গেলাম। আহত লোকটা অহমিকার সাথে আমাকে অগ্রাহ্য করল। আমি আর লোকটাকে ঘাঁটালাম না। লোকটির বাড়ি বোধহয় কাছেই। নাকি আমার মুখে কয়েকদিনের শেভ না করা দাড়ি দেখে আমাকেও ছিনতাইকারীর মত মনে হচ্ছে তার। আমি আবারো হাঁটা শুরু করলাম আমার গন্তব্যের দিকে। একটু ভয় ভয় লাগে। কখন ছিনতাইকারী এসে পড়ে ঘাড়ে। অবাক লাগে জায়গাটির পরিবর্তন দেখে। পরের বার হয়ত অন্যরকম দেখব। সময়ের পরিবর্তনে সব কিছু কি বদলে যায়? কিংবা এটাই জগতের রীতি। যে চাচাত বোনদের সাথে রাতদিন পুতুল আর হাঁড়ি-পাতিল খেলেছি তারা এখন বাঁকা চোখে তাকিয়ে এড়িয়ে যায়। যে চাচা বাবা শাসন করলে সবসময় বাঁচিয়ে নিতেন, দোকানে নিয়ে চকলেট আচার খাওয়াতেন সবার অলক্ষে, সে চাচা শুকনো মুখে কথা বলেন। সময় বুঝি এভাবেই সবকিছু বদলে দেয়!
আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন
মসজিদ না কী মার্কেট!
চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷
আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন
আকুতি
দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন
ক- এর নুডুলস
অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।
ক
একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন
স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু
২-১ : আলিফ-লাম-মীম
আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন