somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অন্ধের দেশে কানাই রাজা হয় - ০৪ এবং শেষ পর্ব

২০ শে জুন, ২০০৯ বিকাল ৪:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
তৃতীয় পর্ব
কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে আমরা কী দেখছি ? স্থানীয় সরকারকে পঙ্গু করে সর্বত্র এমপিদের রাজত্ব চালু করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কেবল উপজেলা নয়, পৌরসভাও এমপিদের আন্ডারে দেয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। দুর্নীতিকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে কুক্ষিগত রাখার জন্যই এটা করা হচ্ছে।
দুদককে বেকার করে রাখা হয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে দুদক কোন প্রকাশ্য কার্যক্রমে আসছে না। তারা একটি স্থবির ও অথর্ব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে চলেছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধনের শর্তানুযায়ী তাদের চূড়ান্ত গঠনতন্ত্র নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়ার কথা। সেটা এখন পালন করেনি কোন রাজনৈতিক দল।
বেকারদের চাকুরি দেয়ার কথা তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে থাকলেও সরকার বেকারদের চাকুরি না দিয়ে তাদের দলীয় ক্যাডারদের চাকুরি দিচ্ছে প্রকাশ্যে ঘোষণা করে। মনে হয়, এই দেশে সরকারী দল করা ছাড়া আর কোন যোগ্যতা দরকার নাই চাকুরি পাওয়ার জন্য।
রাজনৈতিক বিবেচনায় মামলা প্রত্যাহারের নাম করে একে একে দুর্নীতি মামলা থেকে অব্যহতির পাকাপোক্ত ব্যবস্থা করে ফেলেছে রাজনীতিবিদরা। যেন তারা কখনও কোন দুর্নীতি করেনি, অনর্থক বাংলাদেশ দীর্ঘ ৫ বছর দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ছিল।
বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে অগ্রাধিকারের ৫টি বিয়য়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছিল। দুদকের কার্যক্রম বন্ধ ও কালো টাকা সাদা করার নামে অবৈধ টাকা সাদা করার অবাধ সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে তারা সেই ওয়াদা থেকে বহু আগেই সরে এসেছে।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল, একজন জেনারেলের পকেট থেকে অবৈধভাবে জন্ম নেয়া একটি রাজনৈতিক দল বিএনপি এখন আরেকজন জেনারেলের বিচারের জন্য মাঠে নেমেছে। তাদের অভিযোগ জেনারেল মউন উ আহম্মেদ তাদের উপর অন্যায় আচরণ করেছে - তারা ধোঁয়া তুলসি পাতা।
ক্ষমতার সিঁড়ি পাওয়ার জন্য একটি রাজনৈতিক দল এখনও যুদ্ধাপরাধীদের তাদের জোটে টেনে রেখেছে এবং স্বাধীনতার সপক্ষের দল বলে দাবিকারী দলটি আরেক জেনারেল পতিত স্বৈরাচারকে জোটে ধরে রেখেছে। এদের নীতি নৈতিকতার কোন বোধ নাই। রাজনীতিতে শেষ কথা নাই বলে এরা যে কোন অনাচার করতে অভ্যস্থ। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দলীয়করণ, চামচাতন্ত্র ইত্যাদি করে এরা গণতন্ত্রের জয়গান গায়। ক্ষমতার জন্য যাকে দরকার তাকে কাছে টানছে, প্রয়োজন ফুরালে তাকে ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে।
এক সময় এই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার কুটচালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা করার দাবিতে দীর্ঘদিন হরতাল জ্বালাও পোড়াও করে আমাদের জ্বালিয়ে মেরেছে, সেই আওয়ামী লীগই এখন তত্ত্ববধায়ক সরকার ব্যবস্থার অবসান চায়। যথারীতি তাদের বিরোধী দল বিএনপি সেই সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার কঠোর বিরোধী হলেও এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একনিষ্ঠ সমর্থক। ক্ষমতা কুক্ষিগত করার স্বার্থে তারা বার বার ফর্মুলা বদলায়, বার বার রং বদলায়।
জরুরি অবস্থা জারি ও গত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা এদের পারস্পরিক অবিশ্বাস, মারামারি, অরাজকতা, দায়িত্বহীনতা ও ক্ষমতার লোভের ফল। নিজের দলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না করে তারা গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে চিৎকার করে আমাদের বোকা বানিয়ে রাখে। গণতান্ত্রিক এসব দলে দুর্নীতিবাজ, মাদক ব্যবসায়ী, কালো বাজারি, টেন্ডারবাজ, চাঁদাবাজ, দখলবাজ, চামচা ও সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্যে কোন সৎ ও ভালো মানুষ টিকতে পারে না। কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে খারাপ মানুষদের নেতা বানানোর অদৃশ্য খেলা সবসময় চলতে থাকে। ফলে রাজনৈতিক দলে ভালো মানুষের সংখ্যা নগণ্য এবং যারা আছে তারা কোণঠাসা।
আমাদের ভাগ্য ভালো একজন জেনারেল মইন উ আহমেদ আগের জেনারেলদের মতো ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য প্রকাশ্য রাজনীতিতে আসেননি। হ্যা, না ভোটের নাটক করেননি। সেনাপ্রধান থেকে রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে যাননি। জেনারেল জিয়া বা পতিত এরশাদের মতো রাজনৈতিক দল গঠন করে গণতন্ত্রী সাজেন নি। বরং তাদের ক্ষমতালিপ্সার আগুন থেকে দেশকে উদ্ধার করার চেষ্টা করেছেন। দুঃখজনকভাবে তার সেই চেষ্টা সফল হয় নি।
কেননা, যে দেশে সবাই অন্ধ, সেই দেশে কানাই রাজা হয়। আমাদের দেশের বার বার এ কথা প্রমাণিত হয়েছে। এই দেশে যতদিন পর্যন্ত জনগণ অন্ধ থাকবে, তত দিন পর্যন্ত এই কানাদের রাজত্বই চলবে।


সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০০৯ বিকাল ৫:১০
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভুল শুধু ভুল নয়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৬

এক
লেখাটা একটি কৌতুক দিয়ে শুরু করি। ১৯৯৫ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে শফিপুর আনসার একাডেমিতে বিদ্রোহ হয়। ৪ ডিসেম্বর পুলিশ একাডেমিতে অভিযান চালায়। এতে চারজন আনসার সদস্য নিহত হয়েছিল। এটি ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। VF 3 Mini: মাত্র 60 মিনিটে 27 হাজার বুকিং!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:০৪



আমার ব্যাক্তিগত গাড়ি নেই কিন্তু কর্মসূত্রে বেঞ্জ , ক্যাডিলাক ইত্যাদি ব্যাবহার করার সুযোগ পেয়েছি । তাতেই আমার সুখ । আজ এই গাড়িটির ছবি দেখেই ভাল লাগলো তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ময়লাপোতার কমলালেবুর কেচ্ছা!! (রম্য)

লিখেছেন শেরজা তপন, ২১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৩


বাংলাদেশের বিশেষ এক বিভাগীয় শহরে ময়লাপোতা, গোবরচাকা, লবনচোরা, মাথাভাঙ্গা, সোনাডাঙ্গার মত চমৎকার সব নামের এলাকায় দারুণ সব সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাস।
আমার এক বন্ধুর আদিনিবাস এমনই এক সম্ভ্রান্ত এলাকায় যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাময়িক পোস্ট: বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন

লিখেছেন করুণাধারা, ২১ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন! view this link

সামহোয়্যারইনব্লগ থেকে কয়েকজন ব্লগার আলাদা হয়ে শুরু করেছিলেন সচলায়তন বা সংক্ষেপে সচল ব্লগ। এটি বন্ধ হবার মূল কারণ উল্লেখ করা হয়েছে দুটি:

১)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×