আমি ঘরের হইনি বাহির আমায় টানে
আমি তোমার হইনি শুধূ আকাশটা জানে
আমি পথ থেকে পথে যাই দূর থেকে দূরে
আমি তোমায় ভুলে বল যাব কোনখানে?
তাই তোমার হই নি আকাশটা জানে.......
আসার সময় মনে হল লোকাল ট্রেনে আসি। টাকাও কম লাগবে একটা অভিজ্ঞতায় হবে। হ্যা, অভিজ্ঞতা হয়েছিল। যা আসলেই বলে বোঝানো যাবে না। আমি খুব সহজে যে কোন পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে পারি অন্তত চেষ্টা করি। সে আমাকে আমি দেখছিলাম করুনার দৃষ্টিতে! একটা বগি..যার কোন বাতি নাই(আসলে আছে তবে তা শুধু ট্রেন চললেই জ্বলে আর তার পাওয়ার ষাট পাওয়ারের একটা বাতির সমানও না।) আমি বসে(?) ছিলাম ট্রেনের মেঝের এক কোণায়। তবু ভাগ্য ভাল বলতে হবে অতটুকু জায়গা পেয়েছিলাম। পা মেলার এতটুকু জায়গা নেই। একটু নড়লেই চারপাশের অভ্যস্ত কিছু দরিদ্র হতভাগ্য মানুষ চরম বিরক্তি নিয়ে তাকায়। একজন গায়ে জুতা লাগিয়ে নির্বিঘ্নে ঘুমাতে লাগল! যা হোক, স্রষ্টা আরো দেখানো বাকি ছিল। যে আমি বিলাসিতা করে জানালার পাশের টিকেট কেটে সুখ বাতাস লাগাতে লাগাতে যেতে চাইতাম সে আমি যেখানে বসেছিলাম সেখানে ছিল কপাটবিহীন একটা জানালা....হু হু করে শীতের রাতের বাতাস আসছিল। তার মধ্যে দিয়েই শরীরে কোন রকমে একটা চাদর পেচিয়ে আর সবার সাথে সিগেরট ফুকতে ফুকতে প্রচন্ড শব্দের মধ্যে দিয়ে(মেঝেতে বসেছিলাম বলে এত শব্দ ছিল) আসছিলাম। একসময় আমার এমন অবস্থা হয়েছিল যে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছিল। তার অনেক পর যখন এভাবেই যেতে হবে বলে নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছিলাম তখন দেখলাম দু একটা সিট খালি হচ্ছে..এবং তাড়াতাড়ি ভরেও যাচ্ছে। একটা সিটে দু'জন বসা(তিনজন খুব কষ্টে সে সিট এ বসা যায়...এবং সব সিটেই তিনজন) দেখে জিজ্ঞেস করলাম বসা যাবে কিনা। তারা খুব সানন্দে বলল বসেন! বসতে গেলেই বিপরীত দিকের সিটে বসে থাকা পুলিশ বলল বসা যাবে না...এরা আসামী!! বেচারা আসামীও খুব দুঃখ পেল!! এই হচ্ছে অবস্থা! তারপর শেষমেশ একটা সিট পেয়েছিলাম। এবং বাকি পথ ওটার উপর বসে দুঃস্বপ্নের মতো চলে আসলাম!! একেবারে শেষে যখন ঢাকা পৌছলাম দেখি একটা লোককে কোন একসময় কিছু খাইয়ে অজ্ঞান করে তার সব নিয়ে গেছে।(আহা হতভাগা..এতবার বলা হয় বাইরের মানুষের খাবার না খেতে!!) আমার কাছে দামি ক্যামেরা, জিনিসপত্র ছিল! দারিদ্রতা কি তার কিছূটা বুঝেছিলাম সে দিন। নিজের ভাগ্যকে ধন্যবাদ দিচ্ছিলাম আমি অন্তত এ দলের মানুষ নই, আমি পাশেই থেমে থাকা টিকেট কাটা সুন্দর ট্রেনের মানুষ!!
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০০৯ বিকাল ৩:০২