somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেশের বাইরে দেশ

১৪ ই জুন, ২০০৯ বিকাল ৩:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশের বাইরে গেলে কি হয়। মানুষজনকে দেখতাম দেশের বাইরে যাচ্ছে, থাকছে, ফেসবুকে সুন্দর সুন্দর জায়গার ছবি দিচ্ছে। আমি দেখতাম, আর মনে মনে ভাবতাম, আহারে কতই না সুখে আছে। আর জায়গাটা যদি হয় ইওরোপ আমেরিকা, তাহলে তো কথাই নেই। কত রকম সুবিধা সেখানে। বন্ধু বান্ধবদের দেখতাম সর্টস্কার্ট পড়া সহপাঠিনীর সাথে ধরাধরি করে ছবি তুলে পাঠাচ্ছে। আহারে কতই না আনন্দের জায়গা সেসব। সেসব জায়গায় যাওয়ার সৌভাগ্য হয় নি। তবে খুব অল্পসময়ের জন্য ছিলাম দিল্লীতে, আর এখন প্রায় মাস চারেক বা তার কিছু বেশী সময়ের জন্য আছি কালো মানুষের দেশে। নাইজেরিয়াতে।

এই দেশটাতে আসার আগে কতরকম ভয় কাজ করেছে। প্রথমেই আমাদের ধারনা দেয়া হয়েছে এখানে অসুখ বিসুখের ছড়াছড়ি। এমন কি ভিসা নেয়ার জন্যও ইয়োলো ফিভার নামে একটা অসুখের জন্য ভ্যাকসিনেশনের সার্টিকেট দেখাতে হয়েছে। এখানে অসুখ বিসুখ আছে। ভালোই আছে। আজই আমার এক সহকর্মীর সাথে দেখা হলো যে বেচারা ম্যালেরিয়ায় ভুগছে।এখানে এই রোগটা ভালো মতোই আছে। সাবধানে থাকতে হচ্ছে তাই। দ্বিতীয় যে ভয়টা দেখানো হয়েছে, সেটা হলো এখানে নিরাপত্তা নেই। সবসময় নাকি সাথে একজন গার্ড নিয়ে চলতে হয়। যার হাতে একে ফর্টি সেভেন থাকে। আগে নাকি এমনই অবস্থা ছিলো। এখন একটু ভালো। তাই এখন পর্যন্ত এমন কোন গার্ড নিয়ে চলতে হচ্ছে না। যেখানে যাচ্ছি অফিসের গাড়ি নিয়ে যাচ্ছি, এটুকুই সিকিউরিটি।


আমি আছি লাগোস সিটিতে। এটা আগে নাইজেরিয়ার রাজধানী ছিলো। এখন কেবল স্টেট ক্যাপিটাল। মূল লাগোস সিটিতে যাওয়া হয় নি এখনো। তবে লাগোসের কোল ঘেষে আটলান্টিকের বুকে মাটি ভরাট করে কিছু দ্বীপ বানানো হয়েছে। তার একটা হলো ভিক্টোরিয়া আইল্যান্ড। আমি আছি সেখানেই। পাশেই আছে বানানা আইল্যান্ড। এখানকার লোক জন এই দ্বীপগুলোকে বলে আইল্যান্ড, আর মূল শহরকে বলে মেইনল্যান্ড।

এখানকার মানুষজন সবই দেখি ইংরেজীতে কথা বলে। কারন এখানে অনেক ভাষা। তাই ইংরেজীটাকেই তারা হয়তো কমন ল্যাঙ্গুয়েজ হিসেবে নিয়েছে। কাল মসজিদে জুমআর নামাজের খুৎবা শুনলাম ইংরেজীতে। তবে এখানকার ইংরেজী উচ্চারণ বোঝাটা একটু কঠিনই। আমার বেশ কষ্ট হয়।

এখানকার মানুষজন সব দৈত্তাকৃতি। ইয়া লম্বা আর কালো, এক একজন মাসলম্যান। সবাই ওয়েষ্টার্ন কালচারে চলে।এদেরে নিজস্ব একটা পোষাক হলো আমাদের পাঞ্জাবী পাজামার মতো দেখতে রঙচঙ মার্কা একটা পোষাক। সেটাতে যে যত রঙ চাপাতে পারে তাই চাপায়। মেয়েরা বেশীর ভাগই সার্ট,প্যান্ট,স্কার্ট পরে।


আমারা আমাদের কোম্পানীর মোট এগারোজন আছি এখানে। তিনজন বাংলাদেশ থেকে, দুজন ইন্ডিয়া, একজন পাকিস্তানী, একজন সুদান, এক কুয়েত,একজন উগান্ডা আর দু'জন লেবানন। আরো অনেকে আছে, তবে তারা অন্য অফিসে কাজ করে। আমি বাংলাদেশী, এটা বলতে সত্যিকারের গর্ব বোধ করি। বাংলাদেশ সম্পর্কে বলতে পছন্দ করি। এগারো জনের মধ্যে অনেকেই অফিসের কাজে বাংলাদেশে গিয়েছিলো কোন না কোন সময়। বিশেষ করে বাংলালিংক বা ওয়ারিদের কাজে। তারা যখন তাদের বাংলাদেশ সফরের কথা বলে, তখন খুব ভালো লাগে। কারন তার বেশীর ভাগই থাকে প্রসংশা। বাংলাদেশে সহজেই তারা মার্কেটে যেতে পারে, খাবারের কোন সমস্যা হয় না, যেটা এখানকার প্রধান সমস্যা। দেশের প্রশংসা শুনলে খুব ভালো লাগে। তবে মুখটা চুন হয়ে যায় যখন তাদের সামনে খেলা দেখি আর বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম আয়ারল্যান্ডের কাছে হেরে যায়।

অফিস থেকে যখন হোটেলে ফিরি, দেশে তখন মাঝরাত। এরপর একলা রুমে বসে ভাবি একদিন আমি আবার দেশে ফিরবো। ঢাকার ট্রাফিক জ্যামে বসে ত্যাক্ত বিরক্ত হয়ে বলবো, 'এই দেশে মানুষ থাকে?'। লোডসেডিং এ রাত পার করে বলবো,'নাহ, এ দেশে আর থাকা যাবে না;। তারপরও আমি বলবো আমি বাংলাদেশে থাকতেই পারলেই খুশি। দেশের বাইরে যেয়ে মানুষ কি করে। যত সুখেই থাকুক না কেন, আমার মনে হয় তার মনের সবটুকু জুড়ে থাকে তার দেশ। একা বসে থাকি, প্রিয় মুখটা ভেসে উঠে চোখে, ভেসে উঠে ঢাকা শহর আর সবকিছু ছাপিয়ে আমার বাংলাদেশ।
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

সততা হলে প্রতারণার ফাঁদ হতে পারে

লিখেছেন মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম নাদিম, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৯

বিষয়টি আমার ভালো লেগেছে। ক্রেতাদের মনে যে প্রশ্নগুলো থাকা উচিত:

(১) ওজন মাপার যন্ত্র কী ঠিক আছে?
(২) মিষ্টির মান কেমন?
(৩) মিষ্টি পূর্বের দামের সাথে এখনের দামের পার্থক্য কত?
(৪) এই দোকানে এতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×