somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রাচীর

১৪ ই জুন, ২০০৯ রাত ২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রাচীর
পান্না

নৌ-যাত্রায় লঞ্চের চেয়ে স্টিমারই বেশী পছন্দ অভির। এদের প্রথম শ্রেণীর কেবিনগুলো অনেক বেশী সফিস্টিকেটেড, যথেষ্ট বড়। মাঝখানে অনেকটা স্পেস, কেবিনগুলো সেই স্পেসের চারদিকে ঘেরা। সিকিউরিটি ভাল, লঞ্চের মত ঠিক গণ নয়। এই মুহূর্তে ডিম লাইট জ্বালিয়ে একাকী নিজের মুখোমুখি। এটা ওর প্রিয় অবসর বিনোদন। কেবিনের দরজা ঠেলে মিষ্টি কোমল একটা কণ্ঠস্বর শোনা গেল, ‘এক্সকিউজ মি, আসতে পারি?’ একটু তটস্থ হয়ে জিজ্ঞেস করল অভি, ‘কেন বলেন তো, কে আপনি?’
"সেটা না হয় এসেই বলি।’
‘আপনি তো বেশ নাছোড়বান্দা, আচ্ছা আসুন।’ ছায়া ছায়া আলোয় মেয়েটাকে কেমন রহস্যময়ী মনে হচ্ছে। হাল্কা পারফিউমের মিষ্টি একটা সুবাস ছড়িয়ে পড়ল। গড়নটা ভাল, ফটোজেনিক। একটা চেয়ার টেনে বসল সে। খানিকটা ভড়কে গেল অভি। ওকে আরো একটু ভড়কে দিয়ে মেয়েটা বলল, ‘লাইটটা জ্বালবেন না?’
‘জ্বালতে চাচ্ছিনা। আপনি বরং যা বলতে চাচ্ছেন, বলে ফেলেন।’ একটা অগত্যা ধরনের ভংগী করে বলল, ‘প্রথমেই বলব, আপনি কেন আলো জ্বালতে চাচ্ছেন না, সেটা আমি জানি। সুতরাং জ্বালাতে পারেন।’ সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাল অভি, ‘ব্লাফ দিচ্ছেন?’ মাথা নাড়ল সে, ‘না। আমার হাতে এটা অটোগ্রাফের খাতা। অটোগ্রাফ চাচ্ছি।’ অবাক হলো অভি, ‘কিভাবে চিনলেন বলেন তো? ছদ্মবেশে ত্রুটি থাকলে তো ভয়ের কথা। আরো কতজন টের পেয়েছে কে জানে?’ তাচ্ছিল্যের সঙ্গে ঠোঁট বাঁকাল সে, ‘এটা কোন ছদ্মবেশ হল। পুরু একটা গোঁফ লাগিয়েছেন, আর চুলের স্টাইল চেঞ্জ, ব্যাস।’ আবারো অবাক অভি, ‘মেয়েরা এত খুঁটিয়ে দেখে জানতাম নাতো। আপনার দৃষ্টির প্রশংসা করতেই হয়।’ এবার একটু দুষ্টু হাসি হাসল, ‘কৃতিত্বটা আমার নয়, আমার কাজিনের। অটোগ্রাফটাও ওর জন্য। প্লিজ লাইটটা জ্বালান।’
‘জ্বালাবো। তার আগে প্লিজ দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে আসেন। আমি চাই না আপনার মতো আরো কেউ অটোগ্রাফের খাতা নিয়ে ভিড় করুক। কি নাম আপনার কাজিনের?’ উঠে গিয়ে দরজা বন্ধ করে আবার এসে চেয়ারে বসল মেয়েটা। টুক করে লাইট জ্বেলে দিল অভি। দেখেই ফিক করে করে হেসে ফেলল। আধো আলোয় বোঝা যায়নি, এ যে অপ্সরী। ওই হাসি দেখে ক’জন খুন হয়ে গেছে কে জানে?
‘ওর নাম মুনিয়া। ভিখারুন্নিসার ছাত্রী। আপনার দারুণ ভক্ত। ওদের স্কুলের এক প্রোগামে আপনাকে সামনাসামনি দেখেছিল।’
‘মুনিয়া, বাহ। পাখীর নামে নাম। কোথায় মুনিয়া?’
‘একটু ঘুম কাতুরে। খেয়েই শুয়ে পড়েছে। তাছাড়া লাজুকও বটে। হয়ত আসতে চাইতো না।’
‘তাই নাকি, মুনিয়ার কাজিনের নামটা জানতে পারি?’
‘নিশ্চয়ই। আমি ঋষিতা। অনার্স থার্ড ইয়ার ইংলিশ। ঢাকা ভার্সিটি। ইন ফ্যাক্ট আপনি অভি হাসান হওয়ায় মুনিয়ার সংগে বাজীতে হেরে গেলাম।’
ক্ষমা প্রার্থনার হাসি হাসল অভি। ‘সো সরি, আই শুড নট অ্যাডমিট।’
দ্রুত মাথা নাড়ল ঋষিতা। ‘ওহ্‌ নো, আমি আসলে হেরেই জিতে গেছি।’
‘কিভাবে?’
‘এমন জনপ্রিয় একজন লেখককে একা পেয়ে গেলাম। হাউ থ্রিলিং। আচ্ছা আপনি পপুলারিটি এনজয় করেন না?’
‘অবশ্যই, কেন করবো না? এ কি হেলাফেলার জিনিস, ক’জন পায়?’
‘তাহলে লুকিয়ে থাকতে চাচ্ছেন কেন?’
‘কেন যে চাচ্ছি, না বুঝলে সেটা ঠিক বোঝানো যাবে না। আপনি যদি জনপ্রিয়তার ফাঁদে পড়তেন, বুঝতেন।’
‘আমার আর বুঝে কাজ নেই, আমি এমনিতেই সুখী। জনপ্রিয়তার দরকার নেই।’
‘ওয়াও! আপনাকে আমার হিংসে হচ্ছে। আপনার মত যদি সুখী হতে পারতাম।’
‘আপনি বুঝি অসুখী?’ কাঁধ ঝাঁকাল অভি, ‘যখন নিজের সঙ্গে একা কাটাই। অন্য সময় তো সুখ-দুঃখ নিয়ে ভাবারই সময় হয় না।’
‘একা কাটান কেন?’
এবার হাসল ও, ‘ঐ যে গান আছে না, আমি কষ্ট পেতে ভালবাসি.....’
‘তার মানে আপনি দুঃখবিলাসী?’
‘ঠিক বোঝানো যাবে না। আসলে সুখের সন্ধানে নিজেকে সময় দেই, বুমেরাং হয়ে যায়। রবীন্দ্রসঙ্গীতের মত, এরা সুখের লাগি চাহে প্রেম, প্রেম মেলেনা। শুধু সুখ তো চলে যায়।’
‘বাহ। আপনি তো দেখছি প্রতি এগজাম্পলেই একটা করে গান টানছেন।’
‘এটাও একটা কষ্ট বুঝলেন। মনের একান্ত নিজস্ব অনুভূতিগুলো কেউ না কেউ বলে গেছেন। বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথ, মনের কোন অন্ধি-সন্ধিই স্পর্শ করতে বাকি রাখেননি।’
জলতরঙ্গের মিষ্টি অনুরণন তুলে হেসে উঠল ঋষিতা হাসতে হাসতেই বলল, ‘মনে হয় এ নিয়ে আপনি সাংঘাতিক ক্ষুব্ধ।’ অভিও হাসল, ‘কেমন একটা ঈর্ষা হয়। শুধু রবীন্দ্রনাথ নয় সব কিছুর প্রতি, সবার প্রতি। যেমন এই মুহূর্তে আপনার প্রতিও।’
আবারো তুমুল জলতরঙ্গের মিষ্টি ধ্বনিতে ভেসে গেল পরিবেশ। কি বলছেন? আমি! আমি তো খুব সাধারণ একটা মেয়ে, খু-উ-ব সাধারণ।’
‘মোটেই না, আপনি মার্জিত, রুচীশীল, ম্যাচিউরড, মানুষকে বোঝার চেষ্টা করেন। প্রাণবন্ত, আকর্ষণীয়, মিশুক, আত্মবিশ্বাসী.....’
‘থামুন, থামুন। ওরে বাবা, এত বিশেষণ। কিন্তু স্যার, সবই অপাত্রে দিলেন। এসব বরং আপনার বেলায় প্রযোজ্য। আমাকে আপনার ঈর্ষা করা হাস্যকর।’
‘একেবারে অস্বীকার করছি না। তবে এসব গুণ আপনাদের মত কাজে লাগাতে পারছি কই?’
‘কেন বলেন তো?’
‘টু বি অর নট টু বি, দ্যাট ইজ দ্যা কোশ্চেন। অনেক কিছুই ইচ্ছা করে যা করতে পারিনা।’
‘খ্যাতির বিড়ম্বনা এই তো। তা এমন কি ইচ্ছা করে যা করতে পারেন না?’
‘অনেক অনেক কিছু-

আমারও ইচ্ছে করে
ফুলে বসি- মধুকর হই
তুমুল বেড়াই ঘুরে-
পার্ক, লেক, পাহাড়ের চূড়ো
নীলাম্বু নীলিমা ছুঁয়ে, একান্ত নিবিড়
কারো হাতে রাখি তৃষাতুর হাত
উষ্ণ হৃদয় দিয়ে উষ্ণতাকে অনুভব করি

শাপভ্রষ্ট মগ্ন দেবতা এক-

আমারও ইচ্ছে করে ছুঁড়ে ফেলি
অহেতুক- মানবিক পোশাক-আশাক
ছুঁয়ে দেখি নিটোল সুন্দর
ছুঁয়ে ফেলি নিবিড় কমল
আমারও ইচ্ছে করে
ভেঙে ফেলি কাঁচের প্রাচীর
নগ্ন হৃদয় নিয়ে মিশে যাই নগ্ন হৃদয়ে’

‘চমৎকার! কার কবিতা বলেন তো?’
‘উমম্‌, ধরে নিন বেওয়ারিশ।’
‘আপনার নিজের নয়ত? তাহলে বলব গল্প ছেড়ে এবার কবিতা লেখা শুরু করেন।’
‘এ তো ঠিক কবিতা নয়। এ হচ্ছি আমি, আমার অন্তরাত্মার নিমগ্ন চিৎকার।’
‘অন্তরের পাথর ভেঙে যখন অনুভূতির ঝর্ণা বেরিয়ে আসে, তাইতো কবিতা। একি আমি আপনাকে শেখাবো?’
‘আপনিও কিন্তু কবিতার মত করে বললেন, আর বাড়িয়ে দিলেন কষ্ট।’
‘কষ্ট! কিসের কষ্ট বলেন তো?’
‘অনেক কষ্ট, ইচ্ছা পূরণ না হওয়ার কষ্ট।’
‘আরো একবার সেই হৃদয়ে ঝড় তোলা হাসিটি হাসল ঋষিতা, আপনার তো অনেক ইচ্ছা শুনি তো নতুন ইচ্ছাটা কি?’
‘বলছি বলছি, তার আগে প্লিজ হাসিটা একটু সামলান।’ একটু অবাক হল মেয়েটা, ‘কেন কেন? হাসি’র অপরাধ কোথায়?’ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল অভি, ‘আছে, অপরাধ আছে। ভেঙে যায়।’ নিজের বুকের উপর হাত রেখে আবার বলল, ‘এই খানটা ভেঙে যায়।’ এবার হাসতে হাসতে একেবারে ভেঙে পড়ল, ‘আপনি তো ডেঞ্জারাস মানুষ। ক’জনকে পাগল করেছেন বলেন তো?’ চিন্তিত হবার ভান করল অভি, ‘সে তো গুণে বলতে পারব না। আপনি তো জানেনই আমার ব্যাপার, কত ভক্ত অনুরাগী। কিন্তু আপনি ক’জনকে..? গুণতে পারবেন তো?’ হাসলেও খানিকটা সিরিয়াস মনে হল মেয়েটাকে, ‘এসব নিয়ে ঠিক মাথা ঘামাই না, বোঝেনই তো। বললেন না, আপনার ইচ্ছাটা কি?’ অভিও একটু সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল, ‘আসলে আপনার মত এত চমৎকার চ্যাটিং পার্টনার অনেক দিন পাই নি। ভাগ্যিস আপনি জোর করে ঢুকে পড়েছিলেন। খুব ইচ্ছে হয় এরকম চমৎকার অনুভূতিপ্রবণ একটা মেয়েকে নিয়ে ইচ্ছেমত ঘুরে বেড়াতে, মন খুলে গল্প করতে, পরস্পরকে অনুভব করতে...’
‘এ তো কোন সমস্যা নয়। ঠিক এরকম দেখে একজনকে জীবনসংগী করে নেন।’ হাসল অভি, ‘তবে আর রোমান্টিসিজম থাকলো কোথায়? বিয়ে মানেই তো ডায়ালেক্টিক। সংসারের প্যানপ্যানানি, সামাজিকতার যন্ত্রণা। রোমান্স কখন হাওয়ায় উড়ে যায়।’
‘হোয়াট এ ভিউ! ভেবে দেখিনি তো। আচ্ছা একটা কাজ করলে কেমন হয়?’ প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকাল অভি, ‘কি কাজ?’ ঋষিতা বেশ খানিকটা দ্বিধান্বিত স্বরে বলল, ‘ইয়ে মানে আজ না হয় আরো কিছুক্ষণ... মানে... একটু বেশী সময়...’
‘গল্প করে কাটাই, তাই তো?’
‘এগ্‌জ্যাক্টলি, কেমন হয় বলেন তো?’
‘মন্দ নয়, তবে আপনার কেবিনে বোধ হয় সাড়া পড়ে যাবে। সঙ্গে কে কে আছে?’
‘আরে সেটাই তো সুবিধা। শুধু আমি আর মুনিয়া।’
‘মুনিয়া একা একা ভয় পাবে না?’
‘ঘুমুলে ওর হুঁশ থাকে না। কেবিন বন্ধ করে এসেছি।’
‘আপনারা যাচ্ছেন কোথায়?’
‘বরিশাল শহরেই। মুনিয়াদের বাড়ি। আমি ওকে পৌঁছে দিতে এসেছি, আপনি?’
‘বই মেলা চলছে জানেনই তো, কয়েকজন বন্ধুর আমন্ত্রণে আসা। দিন তিনেক আছি। কোথায় থাকবো এখনো জানিনা।’

এর পর। ক্রমেই গভীর হয় রাত। তীব্র আকর্ষণে মুখোমুখি বসে থাকে দু’জন। গল্প করে, হেসে কুটি কুটি হয়। কাঁপা কাঁপা ভীরু হাত ছুঁয়ে দেয় পরস্পরকে। এলোমেলো কথার ঝাঁপি, কবিতার পত্র-পুষ্প। অনুভূতির মায়াবী পরশে পরশে পরস্পরকে উন্মোচন। স্মৃতির অলিগলি হাতড়ে ছোট ছোট দীর্ঘশ্বাস। সম্বোধনের আলগা সুতো খুলে যায় মনের অজান্তেই। দ্রুত বয়ে যায় নিষ্ঠুর সময়। যেন নিমেষে কেটে যায় প্রহরের পর প্রহর। মনে হয় বলা হয়নি কিছুই। আরো একটু সময় পেলে বড় ভালো হত। উপায় নেই, প্রশ্রয়ের আঁচল বিছানো অন্ধকারের পর্দা তুলে নিচ্ছে পরিশ্রান্ত রাত। মাঝখানে আলোর প্রাচীর তুলে ভূমিষ্ঠ হচ্ছে আরো একটি দিন।
‘তুমি এখন যাও ঋষিতা স্ক্যান্ডাল হয়ে যাবে।’
‘স্ক্যান্ডালকে খুব ভয় তোমার?’
‘খুব খারাপ জিনিস। কাউকে বিশ্বাস করাতে পারবে কিভাবে কাটিয়েছি একটা রাত? অতৃপ্তি বুকে নিয়েই তো অহর্নিশ পথ চলা। রাতের পর রাত সময় পেলেও এ কি মিটবে?’
‘কবে দেখা হবে?’
‘যদি টান থাকে যে কোন সময়। ছেড়ে দাও না প্রকৃতির হাতে।

যদি কোন নষ্ট ক্ষণে, স্মৃতিময় কষ্টের দহন
ধিকি ধিকি পোড়ে মন, ফিরে যেও হৃদয়ের ঘরে
নিভৃতে দিও ডাক, শুনে নেব নিশ্চিত
আদিগন্ত লুকোনো ইথারে
দেখা হবে যে কোন সময়
যে কোন বিবাগী রাত, অচেনা দুপুর
একাকী নিজের মাঝে- নিমগ্ন যেকোন প্রহরে’

ধীরে ধীরে ফিরে আসে ঋষিতা, চুপচাপ শুয়ে থাকে মুনিয়ার পাশে। ঘুম আসে না, সব রাত ঘুমোবার জন্য নয়ও। সুবুদ্ধির সব কথা হৃদয়কে বোঝানো যায় না। একটা অদ্ভুত রাতের স্মৃতি থেকে থেকে ছলকে ওঠে মনে। ভেতরে তুমুল আততায়ী নিঃশব্দ ক্ষরণ। ঘাটে পৌঁছে গেছে ওরা। তীব্র সোরগোলে ঘুম ভেঙে যায় মুনিয়ার। দরজা খুলে বাইরে তাকায় দু’জনই। সোরগোলটা অভির কেবিনের সামনে, মুনিয়া অবাক হয়ে তাকায়। এক অতি উৎসাহী সহযাত্রী ঋষিতাকে বলল, ‘শুনেছেন ম্যাডাম আমাদের সঙ্গে অভি হাসান এসেছেন। কি আশ্চর্য টেরই পাইনি।’ মুনিয়া উজ্জ্বল চোখে তাকায়, ‘বলিনি তোমাকে?’ মুখ ফিরিয়ে কেবিনে ঢুকে যায় ঋষিতা, লোকটার বকবকানি শোনার ইচ্ছে নেই। একটা অচেনা কষ্টে জ্বালা ধরে যায় বুকে, চোখ ভরে জল আসে। একটি রাতের মূল্যে যে মগ্ন ঋষিকে সে চিনেছে, সে গোলাপ হৃদয়ের চারপাশে অসংখ্য কাঁটার বেষ্টনী। বুকের মধ্যে খচমচ করে রক্ত ঝরে।

বই মেলার একটা স্টলে আড্ডা দিচ্ছিল অভি। আজ দ্বিতীয় দিন, কালই চলে যাবে। নানা শ্রেণীর ভক্তরা আসছে। অটোগ্রাফ দিতে দিতে হাফিয়ে উঠেছে। চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে ধীরে ধীরে। মিষ্টি একটা কিশোরী মুখ হঠাৎ করে ভিতরে ঢুকে গেল। কোন কথা না বলে অভির পা ছুঁয়ে ধুলো নিল। ব্যগ্র দু’হাতে তুলে ধরল মেয়েটাকে, ‘কি নাম তোমার?’ ভীরু ভীরু চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘মুনিয়া।’
মুনিয়া! শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে শিহরন বয়ে গেল অভির। ব্যাকুল দু’টো চোখ দ্রুত স্টলের বাইরে খুঁজল কাউকে। মানুষের ফাঁকে ওই, ঐ তো সেই প্রিয় মুখ। পরস্পর মিলিত হল দু'জোড়া তৃষিত নয়ন। যেন বিদ্যুৎ তরঙ্গ বয়ে গেল এপাড়ে ওপাড়ে। বুকের মধ্যে সযত্নে লুকিয়ে রাখা যন্ত্রণাগুলো আশ্চর্য যাদুমন্ত্রে প্রশমিত হতে থাকলো, দু’জোড়া ব্যাকুল চোখে জলের রেখা এঁকে এঁকে। অদ্ভুত আনন্দ আর শিহরনে তুলোর মত হাল্কা হয়ে গেছে মনটা। হাতের খাতাটা উঁচু করল মুনিয়া, এটা আমার দিদির, অটোগ্রাফ দেবেন না? সেই চোখ দু’টোর দিকে আরো একবার হৃদয় ভরে তাকাল অভি। অটোগ্রাফের খাতা নিয়ে খুলল, নতুন কেনা। প্রথম পাতায় গোটা গোটা করে লিখল,

আমারও ইচ্ছে করে ভেঙে ফেলি কাঁচের প্রাচীর
নগ্ন হৃদয় নিয়ে মিশে যাই নগ্ন হৃদয়ে
- এক স্বপ্নীল রাতের মিষ্টি সহচরী, ঋষিতা রায়-কে

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার মায়ের চৌহদ্দি

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১২ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫



আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×