বছর দেড়েক আগের কথা,তখন আমি একা একা বাহিরে বের হতে শুরু করেছি।আমি এমন একটা মেয়ে যে সবাইকে প্রচন্ড বিশ্বাস করি।আমার সবসময় কেন জানি মনে হয় এই পৃথিবীতে সবাই ভাল কিন্তু আমরা মানুষগুলোকে বুঝতে ভুল করি।যেমন কেউ যদি একটা খারাপ কথা বলে,আমার মনে হয় সে আসলে খারাপ কোন উদ্দেশ্যে কথাটি বলেনি,সে আসলে আমাদের ভালই চায়।আমরা এ মানুষকে বুঝতে ভুল করি।অনেক কিছু বলে ফেললাম, যা বলতে চাচ্ছিলাম।সেদিনটির ঘঠনা
সেদিন আমি বাসে করে কলেজে যাচ্ছিলাম।হঠাৎ একজন ভিক্ষুক বাসে উঠল মহাখালি ওভারব্রীজ এর নীচ থেকে।সে বলছিল তার মেয়ে বোবা।তার মেয়ের বিয়ে দিবে কাল তার ভাইয়ের ছেলের সাথে।তার মেয়ে বোবা বলে তার ভায়ের ছেলেকে ৫০,০০০/- টাকা দিতে হবে।তা না হলে তার বোবা মেয়ের বিয়ে হবে না।তার সংসারে সে ছাড়া আর কেউ রোজগার করার মতো কেউ নাই।সে বলল সে ভিক্ষা চায়না,সাহায্য চায়।লোকটিকে দেখতে খুব ভদ্র আর নামাজী বলে মনে হল।বয়স ৬০-৬৫ এর মত হবে।লোকটির কথা শুনে খুব মায়া লাগল।আমি আমার ব্যাগে হাত দিয়ে দেখলাম টাকা তেমন নেই।তাকে ৫ টাকার বেশী দিলে আমি কলেজ থেকে ফিরে আসতে পারবনা।তাই ৫ টাকাই দিলাম।কিন্তু খুব খারাপ লাগছিল যে লোকটিকে বেশী টাকা দিতে পারলাম না।দেখলাম অন্য কেউ তেমন টাকা দিল না।এটা দেখে খুব বেশি খারাপ লাগছিল।সেদিনের ঘটনার এভাবেই শেষ হল।মাস ৩-৪ এর পরের কথা,আমি একদিন টুইন টাওয়ার এর সামনে রিক্সা থেকে নামছি,দেখি সেই বৃদ্ধলোকটি একই কথা বলে সাহায্য চাচ্ছে।আমি তাকে দেখেই চিনতে পারলাম।সে তাকে কিছু বলার আগে সে কোথায় জানি উধাও হয়ে গেল মাস খানেক পরে আমি আমার ছোট বোন টুইন টাওয়ার এর মোড়ে ট্রাফিক সিগনালে পরলাম।আমি আমের ভর্তা কিনে রিক্সায় বসে খাচ্ছিলাম।সেদিনও সেই লোকটা ঐ একই কথা বলে সাহায্য চাচ্ছে।আমি আমের ভর্তা খাওয়ায় এতো ব্যস্ত ছিলাম যে লোকটাকে খেয়াল করিনি।আমার বোন টাকা চাইলে ওকে বললাম দিয়ে দিতে।আমার বোনের ও বোধহয় লোকটার কথা শুনে মায়া হল।আমাদের কাছে কোন ভাঙ্গতি ছিল না,ছিল ৫০ টাকার নোট।আমার বোন লোকটাকে বলল আপনি ১০ টাকা নিয়ে ৪০ টাকা ফেরত দিন।সে তখন চেচামেচি শুরু করে দিল।বলল আমি কি ভিক্ষা চাইছি?আমি সাহায্য চাই।তার চেচামেচি শুনে চোখ পরল তার চেহারার দিকে।লোকটা খুব রাগারাগি করছিল।সে টাকাটা নিয়ে কোন মতে টাকাটা ফেরত দেবে না।তাকে চিনতে আমার একটুও দেড়ি হল না।তখন আমি তার ঐ কথাটার ব্যাখ্যা বুঝতে পারলাম,যে আমি ভিক্ষা চাই না সাহায্য চাই।ভিক্ষা হলেতো আমরা একজনকে যত ইচ্ছা অত দিতে পারি।কিন্তু সাহায্য হলেতো ১০-২০ কম দেওয়া যায়না।এই পদ্ধতিটা বেশী টাকা রোজগারের একটা সহজ পদ্ধতি।এজন্য টাকার উনি ভিক্ষা চান না সাহায্য চায়।তখন আমার লোকটার উপর প্রচন্ড রাগ হল।আমি তাকে জিঙ্গেস করলাম যে,আপনার মেয়েকে কয়বার বিয়ে দেন?লোকটা কিছু না বলে কই যাবে কি করবে বুঝতে পারছিল না।সে কোনমতে আমার বোনের কাছে টাকাটা দিয়ে ভিড়ের মাঝে হারিয়ে গেল।আমাদের রিক্সাওলা বুঝতে পারলো সব সে তাকে গালাগালি করতে লাগল।আমি এতই অবাক হলাম যে,কি বলবো ভাষা খুজে পাচ্ছিলাম না।মানুষ যে,এতো ঠকবাজ হতে পারে সেদিন আমার ধারনা হলো।মানুষ মানুষকে কিভাবে ঠকিয়ে খায় সে আমি অনুধাবন করতে পারলাম।