পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সংগ্রহশালার ঐতিহাসিক এবং আধিকারিকরা পুলিশ ও গোয়েন্দা রিপোর্ট ঘেঁটে যে তথ্য পেয়েছেন, তাতে স্পষ্ট বাংলায় 'স্বাধীনতার প্রথম যুদ্ধ' ( সিপাহি বিদ্রোহকে এই আখ্যাই দিয়েছিলেন দামোদর সাভারকার ) অনেক ব্যাপক আকার নিয়েছিল । সংগ্রহশালায় প্রাপ্ত এই চাঞ্চল্যকর তথ্য বলছে, ১৮৫৭ সালের এপ্রিলে ব্যারাকপুর সেনা ছাউনিতে মঙ্গল ও ঈশ্বরী পাণ্ডের ফাঁসির পরপরই ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আগুন দাবানলের মতো মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা বঙ্গদেশে । ঐ বছরের সেপ্টেম্বরেই সিপাহি বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল অধুনা বাংলাদেশের চট্টগ্রামে । সিপাহিদের বিদ্রোহে মারা যান বেশ কয়েকজন ব্রিটিশ সামরিক কর্তা । চট্টগ্রামে সিপাহিরা পরিকল্পনা করেছিল ট্রেজারি দখল নেওয়ার । অকস্মাৎ এই সেনা অভ্যুত্থানে হতভম্ব হয়ে পড়েন ব্রিটিশ আধিকারিকরা । এরপর বেশ কিছুদিন ট্রেজারি সেনা দখলে থাকার পর সংঘটিত সেনাবাহিনী দিয়ে বিদ্রোহে ইতি টানে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি । জলপাইগুড়িতেও ঠিক এর দুই মাস পরেই সেনা বিদ্রোহ হয় । এক্ষেত্রে সিপাহীদের লক্ষ্য ছিল চলতি বিশ্বাসকে কার্যত ভ্রান্ত প্রমাণ করা ।
বিহার এবং উত্তরপ্রদেশের সিপাহীরাই যে শুধু এই বিদ্রোহে নেই, তা প্রমাণ করার তাগিদ থেকেই ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন তারা । জলপাইগুড়ির সেনা ছাউনি কার্যত ধ্বংস করে এই বিদ্রোহে সাধারণ মানুষকেও জড়ো করেছিলেন সেনারা । এক্ষেত্রেও সেনা বিদ্রোহকে পরাস্ত করতে কলকাতা থেকে বিশাল বাহিনী উত্তরবঙ্গে পাঠিয়েছিল কোম্পানি । ১৮৫৮ সালের জানুয়ারিতে সেনা বিদ্রোহ শুরু হয় ত্রিপুরায় । এখানে সিপাহিদের সংঙ্গে সমর্থন ছিল রাজ পরিবারেরও ।
উল্লেখযোগ্য হল গবেষকরা হাতে পেয়েছেন সে সব শহিদ সেনাদের নাম যাদের জনসমক্ষে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল । পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সংগ্রহশালার নির্দেশক অতীশ দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, 'অনেকেই মনে করেন মঙ্গল পাণ্ডের ফাঁসির সঙ্গে সঙ্গে বাংলায় সিপাহি বিদ্রোহে ইতি পড়েছিল । কিন্তু এই নথি থেকে পরিষ্কার কোম্পানির সর্বশক্তিকে উপেক্ষা করে প্রতিটি সেনা বিদ্রোহ নিখুঁত পরিকল্পনায় সংঘটিত হয়েছিল এবং অন্য রেজিমেন্টের সেনারাও বিদ্রোহে অংশগ্রহণে অনুপ্রাণিত হয়েছিল । আমাদের হাতে যা প্রমাণ্য তথ্য আছে তাতে স্পষ্ট চারটি সেনা বিদ্রহই ।'