somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্ষ্যাত বৃত্তান্ত অথবা যে মেয়েটি আমায় চোখ মেরেছিল তার গল্প ( উৎস্বর্গ: ক্ষ্যাত গ্রুপের সকল ক্ষ্যাতকে)

১১ ই জুন, ২০০৯ সকাল ১১:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্ষ্যাত গ্রুপের বিশিষ্ট ক্ষ্যাত ব্লগার ক-খ-গ আমায় বলেছেন, ক্ষ্যাত গ্রুপের সদস্য হতে হলে আমি যে একটা ক্ষ্যাত- সেটা প্রমান করতে হবে। ভাইরে প্রমান আর কী করবো! পড়ে দেখেন।
যে মেয়েটি আমায় চোখ মেরেছিল সে গল্পটার সূত্র ধরে কয়েকটা ক্ষ্যাত হবার গল্প বলি।

ঢাকায় রওয়ানা হয়ে বাসে চেপে বসলাম। গন্তব্য বন্ধুর বাসা। সুপার নাম দেখে একটা বাসে উঠলাম। বাস চলছে। রওয়ানা হয়েছিতো হয়েছিই। আর ঢাকায় পৌছানোর নাম নাই। এদিকে বন্ধু আমার প্রতীক্ষায় অস্থির। নির্ধারিত সময়ের কয়েক ঘন্টা পর ঢাকায় পৌছালাম। বন্ধু ব্যস্ত হয়ে বললো, এত দেরী করলি যে? পথে কোন সমস্য হইছিল?
বললাম, না।
কোন বাসে উঠছস?
বাসের নাম বলতেই বন্ধু নাক উচিয়ে বললো, শালা ক্ষ্যাত!!
সেই শুরু....!
অতপর: প্রতিনিয়তই এই বৈষ্ণুবী শহরে ক্ষ্যাত হয়ে চলেছি।

ক্যাম্পাসের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে উঠলাম। ইতোমধ্যে আমি আশংকার সাথে লক্ষ্য করলাম ক্লাসের এক সহপাঠিনী আমাকে নিয়মিত লক্ষ্য করছেন। থাক সে কথা। অনেকদিন চুবচুব করে মাথায় তেল দিইনা। ব্যস্ত এই নগরে চুল হাওয়ায় উড়ানোর জন্য শ্যাম্পু নামক পদার্থের দারস্থ হয়ে চুবচুব তেল দেয়া বন্ধ হয়ে গেছে। তো সেদিন মাথায় চুবচুব তেল দিয়ে কাসে প্রবেশ করলাম। দেখলাম সেই সহপাঠিনী আমাকে আপাদ-মস্তক পরখ করছেন। কাস থেকে বেরুনোর পর সহপাঠিনী পাশ দিয়ে বাতাসে ভাসিয়ে বলে গেল ‘গেয়ো ক্ষ্যাত‘। আমি মাথার চুলের তেল হাত দিয়ে চেখে নিয়ে শুষ্ক মুখে মাখলাম। নিজেকে পুরাপুরি ক্ষ্যাত বানিয়ে নিলাম।

আরেকদিনের ঘটনা। জীবনে কমলাপুর স্টেশনের নাম অনেক শুনেছি, মাগার দেখি নাই। তাই আরেক বলদকে নিয়ে চললাম কমলাপুর ইস্টিশন পরিদর্শনে। সেই বলদও জীবনে কমলাপুর ইষ্টিশন দেখেনাই। ফুরৎ করে ঢুকে গেলাম ভিতরে। আহারে কী সুন্দর! চারপাশ অনেণ ঘুরে-ফিরে দেখে বেরুবো। এমন সময় সাদা এফ্রোন পরিহিত দু’জন লোক আমাদেরকে গেইটে আটকিয়ে দিল। বললো, টিকেট!
আমরাতো সাত আকাশ থেকে পড়লাম। কিসের টিকেট! আমরাতো ট্রেন ভ্রমন করিনাই!
কোমরের বেল্টে বিশেষ কায়দায় ধরে ঐ দু’জন আমাদের দুই বলদকে একটা অন্দর মহলে নিয়ে গেল। আটকিয়ে রেখে আমাদের বিচার করলো। আমাদের অপরাধ আমরা বিনে টিকেটে ইস্টিশনে প্রবেশ করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছি। এখন আমাদের জরিমানা ১০০০টাকা। পকেটে আছে ১২০০টাকা। কাঁচুমাচু করে বের করতে দ্বিধা করছি। এমন সময় একজন খপ করে পকেটে হাত ঢুকিয়ে দিল। সবগুলো নিয়ে গেল।
অর্ধ-চন্দ্র দিয়ে বের করার আগে একজন বলে উঠলো, ক্ষ্যাত কোনাকার! যা ভাগ!!
আমরা ভেগে গেলাম!

এবার যে মেয়েটি আমায় চোখ মেরেছিল তার গল্প বলি। ঢাকায় আমার এক দুর-সর্ম্পকের মামা রয়েছেন। জীবনে কোনদিন তাদের বাসামুখি হইনি। মামা ছাড়া তাদের পরিবারের কাউকেই চিনিনা। মায়ের অনেক পীড়াপীড়িতে একদিন সেই দুর-সর্ম্পকের মামার বাসামুখি রওয়ানা দিলাম। ঠিকঠিক বাসা খুজে কলিং বেল চাপতেই এক ষোড়শী দরজা খুলে দিয়ে আগমনের হেতু জানতে চাইলেন। পরিচয় দিতেই উল্লাস ফেটে পড়লেন যেন। বলতে লাগলেন, আপনাদের কথা অনেক শুনেছি। কিন্তু দেখি নাই। আসেন আসেন।
ষোড়শী পথ দেখিয়ে ড্রয়িং রুমে নিয়ে গেলেন। বেশ গোছানো ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসলাম। ষোড়শী জানালেন, মামা-মামী কেউ বাসায় নেই তবে খুব তাড়াতাড়িই এসে পড়বেন। আমিও আশ্বস্থ হলাম। ঠিক এমন সময়ই ঘটলো সেই ভয়ংকর ঘটনাটা। ষোড়শী কাজিন আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে খুব সুন্দর করে চোখ টিপে দিলেন। প্রথমটায় আমি বুঝতে পারিনি। ধাতস্থ হতে কিছুটা সময় লাগলো। ভাবলাম আমার দৃষ্টি বিভ্রম। আমি মাথা নিচু করে বসে রইলাম। অন্য কথা প্রসঙ্গে আবার ষোড়শীর দিকে তাকালাম। তিনি আবারো আমাকে চোখ টিপে দিলেন। আমার কানে দিয়ে ধোয়া বেরুতে লাগলো। এ আমি ভুলতো দেখছিনা। এত সুন্দর একটা মেয়ে আমাকে কিনা চোখ টিপলো। জীবনে প্রথম এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আর দেরী করলাম না। মামাতো বোন যেহেতু আমাকে চোখ টিপছে তাই আমি তার দিকে মুচকি হেসে আরো সুন্দর করে চোখ টিপে দিলাম। ঠিক তখনি একটা বজ্রপাতের মত শব্দ হলো। মেয়েটি রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে প্রচন্ড চিৎকার দিয়ে উঠলো।
আপনাকে আমি ভদ্র ভেবেছিলাম। আপনিতো দেখি একটা অভদ্র ছেলে!
অসভ্য কোথাকার! বের হয়ে যান আমাদের বাড়ী থেকে! আর কনো এই বাসায় আসবেননা।
আমি পুরা টাশকি খাইয়া কী করুম বুঝে উঠতে না পেরে মাথা নীচের দিকে রাইখা মামাদের বাসা থেকে বের হয়ে চলে আসলাম। আর কখনো ওই মুখো হইনি।
পরে শুনছি মামাতো বোনের নাকি চোখে একটা সমস্যা আছে। এমনি এমনি চোখ উঠানামা করে। কেউ প্রথমবার দেখলে মনে করে চোখ টিপছে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০০৯ দুপুর ১২:২৬
২৮টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×