somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অস্থিরতার রকমফের

১০ ই জুন, ২০০৯ রাত ১০:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তির তির করে বয়ে চলা নদীটার জানা আছে অনেক গল্প। কলকল করে কি সে সেই গল্পগুলোই বলার চেষ্টা করে??
তুহিন বসে ভাবছিলো এমন অনেক কথা, হয়তো।
তার ভাবনা গুলো শেষ হলে আমরা কোন থিসিস যদি না পেতাম, নিদেন পক্ষে একটা ভাব সমৃদ্ধ কবিতা হয়তো পেয়েই যেতাম।
কিন্তু হলো না আর।
মোবাইল জিনিসটা আসলেই মানুষের একান্ত সময়গুলোর বারোটা বাজাচ্ছে।

: তুই কই?
: হুম।
: বাসায়?
: হুম।
: কার?
: মানে?
: আমি তোর বাসায়।
: আমি বাইরে।
: নদীর ধারে?
: না।
: অ।

খুট করে ফোন কেটে যায়। তুহিন অপেক্ষা করতে থাকে।
মোবাইল জিনিসটা আসলেই মানুষের একান্ত সময়গুলোর বারোটা বাজাচ্ছে, কথাটা মনে হয় ঠিক হলে না, আসলে তেরটা বাজাচ্ছে।

: মন খারাপ করে বসে আছিস কেন?
: ভালো লাগছে না তাই।
: কি করতে চাস?
: আপাতত একা বসে থাকতে।
: অ।
: তুই কি করবি?
: নদীটারে ঢিলাবো।
: কেন?
: এমনি, আমার মন ভালো তো তাই।
: মন ভালো হলেই নদীটারে ঢিলাতে হবে?
: হু, তুই জানিস না?

তার পরে এমন অদ্ভুত প্রাণবন্ত একটা হাসি দেবে,তার পরে পৃথিবীর কোন মানুষের পক্ষে মন খারাপ করে থাকা সম্ভব না।
তুহিন মনে মনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

আর যদি মন খারাপ থাকে তারও,সে কিছুই বলবে না। চুপ করে এসে পাশে বসে থাকবে।
তুহিন জানে, এরপরে তার পক্ষে আর নিজের মন খারাপ নিয়ে বসে থাকা হবে না। সে শত চেষ্টা করেও পারবে না। যতক্ষণ না দিয়ার মন ভালো হয়, তুহিনের মাথা খারাপ হয়ে থাকে।

তুহিন ঘড়ি দেখে। পাঁচ মিনিটের মধ্যে দিয়া এসে পরবে।
মনে মনে কেন যেন তার ইচ্ছে হয়, এই পাঁচ মিনিট যদি আরও বেশি হত। সে যদি আরও খানিক একা থাকতে পারতো।
হবে না। তার মন খারাপ সে জানে, এখন তাকে কোন ভাবেই আটকে রাখা যাবে না। সে আসবেই।
আর এসেই এই নদীটার সাথে পাল্লা দিয়ে কলকল করতে থাকবে।
কথাটা মনে হতেই তুহিনের মন যেন একটু ভালো হয়ে যায়।

দশ মিনিট পার হয়ে গেলো।
তুহিন অবাক হয়ওর মন খারাপটা কেটে যেতে থাকে, তার শূন্যস্থান পূরণ করে নেয় অপেক্ষা।

পনের মিনিট পার হয়ে যায় আরও।
বিশ, পঁচিশ, তিরিশ।
এখন অপেক্ষা জায়গা ছেড়ে দেয় উৎকণ্ঠার কাছে।


আরও তিরিশ মিনিট যখন পার হয়, তুহিন নিজেই ফোন দিয়ে বসে দিয়াকে।
নো রিপ্লাই।
হয়তো দিয়া ড্রাইভ করছে।

সময় পার হতে থাকে।
তুহিন অপেক্ষা করতে থাকে।
একটু একটু করে বাড়তে থাকে অস্থিরতা।

নদীটা তখনও কলকল করেই যাচ্ছে।

তুহিন অবাক হতে থাকে নিজেই। কি এক অস্থিরতা ওর ভিতরে কাজ করছিলো সকাল থেকে, তাই সব ছেড়ে খানিক একা হবার জন্য এখানে বসে ছিলো।
এখন কাউকে পাশে পাবার জন্য অস্থির হয়ে উঠছে সে।
উঁহু, ভুল হলো।

দিয়াকে পাশে পাবার জন্য অস্থির হয়ে আছে সে।
নদীর দিক থেকে চোখ সরিয়ে রাস্তার দিকেই চোখ আটকে আছে যেন আঠা দিয়ে।
অস্থিরতায় দম বন্ধ হয়ে আসে যেন তুহিনের।

নদী থেকে পানির ঝাপটা এসে লাগে তুহিনের চোখে মুখে।
বিরক্ত হয় সে রাস্তার দিক থেকে চোখ সরাতে হচ্ছে বলে। কেউ নেমেছে নদীতে নৌকা নিয়ে। এখন পানি ছোঁড়াছুড়ি করছে।
চোখ ভরা বিরক্তি নিয়ে বকা দিতে যাবে, তখনই থেমে যায়।
এক অতি পরিচিত, অতি আকাংক্ষিত হাসির শব্দে তুহিনের সমস্ত স্বত্ত্বা কেঁপে ওঠে আনন্দে, ভালোবাসায়।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:০৪
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

**অপূরণীয় যোগাযোগ*

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ২৮ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:১৯

তাদের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল ৬ বছর আগে, হঠাৎ করেই। প্রথমে ছিল শুধু বন্ধুত্ব, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা গভীর হয়ে উঠেছিল। সে ডিভোর্সি ছিল, এবং তার জীবনের অনেক কষ্ট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি অজ্ঞ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৫২


ভাবতে পারো
৮০ টুকরো হতে হয়;
ভাবতে পারো
জ্বলে পুড়ে মরতে হয়!
ভাবতে পারো
কতটুকু লোভ লালসা
থাকলে পরে
এমন হবে বলো দেখি;
ভাবতে পারো
কেমন জন্ম মৃত্যুর খেলা;
জানি আমি
তুমি কিছু ভাবতে পারবে না
কারণ তুমি অজ্ঞ
মৃত্যুর পরে একা... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×