somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্ষমতা ও আইন

১০ ই জুন, ২০০৯ রাত ১২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আইনের নির্মান ও প্রয়োগ প্রচলিত ক্ষমতাকাঠামোকে টিকিয়ে রাখবার স্বার্থেই, সুতরাং আমরা সভ্য সমাজের আইন বলতে যা দেখি, তা মূলত এই ক্ষমতাকাঠামোর নিজস্ব প্রতিরক্ষা কৌশল। এখানে প্রচলিত ক্ষমতাকাঠামোকে নিরাপত্তাহীন করে তুলতে পারে এমন যেকোনো কর্মকান্ডকে কঠোর ভাবে দমন করা হয়েছে, হয় এবং ভবিষ্যতেও হবে। রাষ্ট্র কাঠামো বদলাতে পারে, এবং বদলায়, রাষ্ট্রের কাঠামো বদলের সাথে সাথে বদলে যায় সংবিধান এবং এই সংবিধান কিংবা অলিখিত গণদাবিই আইনের প্রয়োগকে বদলে দেয়, কারণ তখন ক্ষমতাকাঠামোই আমূল বদলে যায়।

যাদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য আইন নির্মিত হয় তারা সব সময়ই আইনের নিরাপত্তা বলয়ে থেকে যায়, এবং কোনো রাষ্ট্রে যদি এমন বিকল্প কোনো ক্ষমতাকাঠামো তৈরি হয় যা প্রচলিত কাঠামোর তুলনায় অধিক ঘাতসহ, প্রতিঘাতসহ তবে রশি টানাটানি খেলায় নেমে যায় মিডিয়া আর জনগণ, তাদের সমর্থনের পাল্লা যেদিকে ঝুঁকে যায়, সমকক্ষ দুটি কিংবা ততোধিক ক্ষমতাকাঠামোর ভেতরে সে অংশই টিকে থাকে।

এই চিহ্নিতকরণের প্রক্রিয়াটাও ক্ষমতাকাঠামোর নির্মাণ। আইন বিষয়ে যেকোনো আলোচনা কিংবা দুঃশাসন ও আইনের শাসন বিষয়ে যেকোনো আলোচনায় আগে এটা নির্ধারণ করে রাখা জরুরী, কারা আইন- আদালত এবং বিচার ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রন করছে?

রাষ্ট্র অকার্যকর কিংবা দুর্বল কিংবা সবল এইসব নীতিনির্ধারণী বিষয়াদির ক্ষেত্রে সব সময়ই আইনি কাঠামোকে সামনে নিয়ে আসা হয় সম্ভবত এ কারণেই যে অকার্যকর রাষ্ট্র এমন একটি রাষ্ট্র যেখানে ক্ষমতা কাঠামো আদালতের উপরে ছড়ি ঘোরাতে ব্যর্থ হয় কিংবা আদালত সংবিধানকে আমলে না নিয়েই নিজস্ব বিধান প্রচলন করে কিংবা রাষ্ট্রের সীমিত অংশে ক্ষমতা কাঠামোর আইন প্রয়োগের কোনো ক্ষমতা নেই। বাংলাদেশ ব্যর্থ রাষ্ট্র এমনটা এই মুহুর্তে বলবার সময় আসে নি, কিন্তু অকার্যকর হয়ে যাওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এইসব প্রশ্নের বিশ্লেষণ করলেই এটা পরিস্কার হয়ে যায়।

বিচার বহির্ভুত হত্যাকান্ড, কোনো পক্ষকে এমন ক্ষমতা দেওয়া যে তাদের কর্মকান্ডকে আইনের ধারায় বিচার করা যাবে না, এ সবই আদতে নির্ধারণ করে দেয় ক্ষমতার ভারসাম্য আনবার জন্য একটা আপোষ রফা চলছে, কিংবা ক্ষমতাকাঠামো নিজেই সমর্থন করছে এইসব অনাচার কিংবা রাষ্ট্র নিজের নিরাপত্তাহীনতার প্রকাশ ঘটাচ্ছে এমন আচরণে।

অপারেশন ক্লিন হার্ট, র‌্যাব কিংবা পুলিশের নির্যাতনে নিহত মানুষদের বিচার না হওয়া এবং রাষ্ট্র তাদের পক্ষে সাফাই গাওয়ার ব্যগ্রতাও মনে করিয়ে দেয় রাষ্ট্র নিজের প্রয়োজনেই এইসব অনাচার করছে কিংবা ক্ষমতা কাঠামোর নেপথ্যে যারা আছে তাদের প্রচ্ছন্ন এবং প্রকাশ্য সমর্থন আছে। এই আইন লঙ্ঘনের বিষয়টাকে তারা আমলে আনছে না মোটেও কারণ তাদের ধারণা এর ফলে রাষ্ট্রের কাঠামো শক্তিশালী হয়ে উঠবে কিংবা ক্ষমতার ভিত্তি সুদৃঢ় হবে।

আসলে কি এমনটা ঘটে? দুধ কলা দিয়ে সাপ পুষলে কি সে সাপ ছোবল দেয় না? ক্ষমতা নিষ্কন্টক করতে ইসলামী মূল্যবোধ ও ধর্মীয় রাজনীতিকে পৃষ্টপোষকতা করা হয়েছিলো, যারা এইসব নিয়ন্ত্রন করে তারা মানুষকে ধর্মের আফিমে মগ্ন রাখতে চেয়েছিলো, সেটা এ শতাব্দীতেই নয় শুধু পূর্ববর্তী শতকগুলোতেও ঘটেছে- ধর্মীয় বিভেদ এবং ধর্মীয় বিভাজন সদা জাগ্রত রাখতে মানুষের মনে রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীনেরা ধর্মীয় লেবাস ধরেছে কিংবা ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে, ধর্মকে কলুষিত করেছে, মানুষকে কলুষিত করেছে। এমন নগ্ন ও অনৈতিক ধর্মের ব্যবহারকে সমর্থন করে স্বার্থসিদ্ধির ঘটনাও ঘটেছে-

ক্ষমতাকাঠামোকে না বদলে ক্ষমতার কেন্দ্র বদলাতে সামরিক বাহিনী ব্যবহৃত হয়েছে, সেটা নিজস্ব ক্ষমতার প্রলোভন কিংবা অন্য কোনো প্রলোভনে ঘটেছে হয়তো, বিপ্লব হয়েছে, বিদ্রোহ হয়েছে, কোনো বিদ্রোহ সফল পরিণতি পেয়েছে, কোনোটা ব্যর্থ হয়েছে, এসব অনেক ঘটনাই ঘটেছে ইতিহাসে।

বাংলাদেশ এই ইতিহাসের বাইরের কোনো দেশ নয়, এখানেও ধর্ম, আইন, বিচারালয়, প্রলোভন, প্ররোচনা, ঘুষ এবং প্রণোদনা, সামরিক বাহিনী এবং আমলাতন্ত্র, সব কিছুই ব্যবহৃত হয়েছে ক্ষমতা কাঠামোর সমর্থনে।

সেটা জন্মলগ্ন থেকেই ঘটছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত খন্দকার মোশতাক আহমেদের নিজস্ব উদ্যোগে সমঝোতা এবং ফেডারেশন গঠনের প্রচেষ্টা, সাংসদ ক্রয় বিক্রয়, বিদ্রোহ এবং অসহযোগ যুদ্ধের সময় থেকেই চলছে বাংলাদেশে, এসবের টানাপোড়েন ক্ষমতা কেন্দ্রে সব সময়ই ছিলো।

সাংসদদের নিজস্ব আইন চলেছে তার নিজস্ব সাংসদীয় আসনে, বদি এখন যা করছে, কিংবা লতিফ যা করছে, সেটা অনেক আগে থেকেই চর্চিত একটি বিষয়, সেটা রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকারক কিন্তু এরপরও সেটা চলেছে, সময় এসেছে এসব থামানোর। এই মুহূর্তে বেসামরিক একদল মানুষ, যাদের সম্মিলিত ভাবে সুশীল সমাজ বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে, তারা ক্ষমতাসীনদের অংশই, তবে তাদের উর্দি কিংবা ভোটের সমর্থন নেই। তারা বিভিন্ন মানবিক ইস্যুকে সামনে নিয়ে এসে নিজেদের গ্রহনযোগ্যতা বাড়িয়ে ক্ষমতার স্থায়িত্ব বাড়াতে সচেষ্ট।

এই সব সামাজিক ইস্যুর জন্যই এখন বাংলাদেশ সরকার পরিবেশ সচেতন, বাংলাদেশ সরকার নদী দুষণ নিয়ে সোচ্চার, আদালত সরকারকে নির্দেশনা দিচ্ছে, সরকারকে চাপে ফেলছে, এবং এই কাজে নিয়োজিত আমলা এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তারা আইনী নিশ্চয়তা চাইছেন, যদি তারা এই কাজ করতে গিয়ে ক্ষমতাসীনদের বিরাগভাজন হয়ে যান তবে যেনো তাদের নিরাপত্তা প্রদান করা হয়, তারা স্পষ্ট ঘোষণা চেয়েছে, যেনো আদালত ঘোষণা করে দেয়, এই সম্পূর্ণ কর্মসূচি চলাকালীন সময়ে তাদের বদলি কিংবা ওএসডি না করা হয়।

আদালত এই যে পরিবেশ বিষয়ক কঠোর অবস্থানে এসেছে সেটাও রাষ্ট্রের দীর্ঘস্থায়ী নিরাপত্তা চিন্তা করেই, তবে সংক্ষিপ্ত সময়ের বিবেচনা হলো লেঠেল কর্মীদেরও ক্ষমতা দিতে হবে যেনো তারা বিরোধীদের দমন করতে পারে, পুলিশ এবং আদালতের দারস্থ হওয়ার আগেই যেনো কিছুটা প্রতিরোধ দমন করা যায়, তাই হাজি সেলিম, জয়নাল হাজারীর জামিন হয়। জয়নাল হাজারী, যার কারণে ৩ বছর নির্ধারিত আদালত ভবনে বিচার কার্য শুরু করা সম্ভব হয় নি, সেই হাজারীকেই জামিন দেওয়া হচ্ছে। জয়নাল হাজারী নিজের এলাকায় নিজস্ব প্রশাসন তৈরি করেছে, ক্ষমতার বিকল্প একটি কেন্দ্র তৈরি করে সে নিজে রাষ্ট্রবিরোধী আচরণ করলেও সেটা ক্ষমাযোগ্য আচরণ বিবেচিত হওয়া আসলে রাষ্ট্রের দীনতাই প্রকাশ করে।

আমাদের বিচারকগন, সম্মানিত সুশীলগণ এসবের বিরোধিতা না করে নদী, সড়ক নিয়ে এতটাই মগ্ন যে এই মত্ততায় অনেক অপরাধই অপ্রকাশিত থেকে যাচ্ছে , অপরাধ ও অপরাধীসৃজন হচ্ছে।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×