somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

**** অভিমানের মেঘ পেরুনো এক পরীর গল্প ****

০৯ ই জুন, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ঘাড়ে বাধানো ব্যাগটার একটা হালকা ঝাকুনি দিয়ে অনুভব করলাম জিনিসটা আছে .... কলিং বেলে হাতটা রেখে কয়েক সেকেন্ড কিছু একটা চিন্তা করে এর পরে ডোর বেল বাজালাম --

ডিং ডং .... ডিং ডং
(ভিতর থেকে আন্টির গলা শোনা গেল) -- কে ?
একটু অপেক্ষা করে উত্তর দিলাম -- আন্টি আমি অনন্ত ,

এবার দরজা খুলে আমাকে ভিতরে ঢুকতে দিয়ে বললেন, তোমাদের নিয়ে আর পারা গেল না , মনের মধ্যে কি যে খচখচ করতে থাকে তোমাদের বুঝিনা বাপু ... ঢুকতে না ঢুকতেই এমন কথা শুনে থতমত খেয়ে উঠলাম। বললাম -- ক্যান আন্টি কি হইসে ?

এর পরে যা শুনলাম তার সংক্ষেপ হলো -- আমার দোস্ত কয়দিন আগে আন্টির একটা খুব শখের শাড়ি পরে বাইরে গিয়েছিলো এর পরে যখন বাসায় ফিরেছে তখন শাড়ীটার কয়েক জায়গায় ময়লা আর এক জায়গাতে ছেড়া ছিলো ... আজকে সে চায় আরেকটা শাড়ি পরে মেলায় যাবে ... তাই আন্টি তাকে সাফ সাফ মানা করে দিয়েছেন যে তিনি কোন শাড়ি দিবেন না আজকে ... আর নাকি বলেছেন -- শাড়ি চুড়ি তোর জন্য না , তুই শার্ট আর জিন্স পরে বাইরে যেমন যাস এমনেই যাবি সবসময়, আর ভুলেও আমার কোন শাড়ি ধরবি না ... এ জন্য তার অভিমানী কন্যা সকাল খায়নি আর কান্না করতে করতে চোখ ফুলায়ে ফেলেছে ... আন্টিকে একটা জিনিস জানানোর দরকার মনে করে বলতে গিয়েও কেন জানি চুপ করে গেলাম ... বললাম -- ও কৈ আন্টি ?
আন্টি >> ওর ঘরে আছে, যাও ওখানে ....

ঘরে ঢুকেও দেখলাম ঠিক তাই , এলোমেলো চুলে দোস্ত আমার ফোলা ফোলা গোলাপী চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে ... ঘরে অনেক জিনিস ই এলোমেলো পড়ে আছে ... সামনে রাখা ল্যাপটপে দেখলাম ম্যাসেন্জারে লগ ইন করা অথচ স্ট্যাটাস - অফলাইন ... সকাল থেকে আমার দেয়া শ দুই তিন বাজ এখনো তার সামনে খুলে রাখা ... অথচ একটারও উত্তর দেয়নি ... সেল ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলাম আটান্নটা মিসকল ... এর মাঝে শুধু আমার ই চৌত্রিশ টা ... দেশ বিদেশের অনেক ফ্রেন্ডের কলের মাঝে একটাও সে রিসিভ করেনি । বেডের পাশের টি টেবিলে এখনো সকালের নাশতা পড়ে আছে ... পানিতেও একটা চুমুক ও দেয়নি ... এ সব দেখে মনে মনে খুব কষ্ট লাগলো ... এত সবকিছুর মূল দোষটা তো আমার , ঐদিন খোলা মাঠে দৌড় প্রতিযোগীতাটা না করলেই হতো ... তাহলে আজকের এই অবস্হা দেখতে হতো না আমাকে ... বললাম -- স্যরি দোস্ত, আমার জন্যই .... কথার মাঝেই আমাকে থামিয়ে দিয়ে ও বললো -- আমিই তো তোকে চ্যালেন্জ করেছিলাম, তুই না না করলি এর পরেও আমি শুনিনি ... দোষ সবটা আমার... এক কাজ কর, তুই যা মেলায় আমি যাব না আজকে ...

আমি জিজ্ঞেস করলাম -- এক কাজ কর, তোর নিজের একটা শাড়ি পর আর এর পরে চল যাই মেলায়
ও বললো -- নাহ ! আম্মা বকা দেবে আজকে আমি কোন শাড়িতে হাত দিলে ... আজকে প্ল্যান করেছিলাম শাড়ি পরে যাব, এখন যখন শাড়ি পরতে পারব না তখন যাবই না , তুই যা তো ... বিরক্ত করিস না ।
আমি বললাম -- দেখ , তুই যদি না যাস তাহলে ....
ও ক্ষেপে গিয়ে বলে উঠলো --- চুপ ! আর একটা কথাও বলবি না , ভাগ আমার সামনে থেকে ....
আমি সমানে রাগ দেখিয়ে উঠে দরজার দিকে যেতে যেতে ঘাড়ের ব্যাগটা ছুড়ে দিলাম ওর উপরে ... বললাম -- আচ্ছা যাচ্ছি যাচ্ছি ... আমার রাগটা এই ব্যাগের উপরে দেখা, ছিড়ে ফেলতো দেখি এইটা .... সেও সমান রাগে কাপতে কাপতে দু হাতে কাপড়ের ব্যাগটা ছিড়তে চেষ্টা করলো, শেষে না পেরে ব্যাগের চেইন খুলে ভিতরে দেখলো একটা একটা চারকোনা প্যাকেট , ওটা বের করে ছিড়ে ফেলতেই এলোমেলো হয়ে বেরিয়ে এল মিষ্টি সবুজ রং এর একটা শাড়ি আর ছড়িয়ে পড়লো তার ভিতরে রাখা কাচের চুড়িগুলো .... কয়েক মূহুর্তে সে সবের দিকে তাকিয়ে এর পরে বলে উঠলো --- তুই অসম্ভব একটা ....
আমি বললাম -- কি ?
ও বলে -- নাহ ! কিছু না
আমি বললাম -- নে এইবার শাড়ি পরে নে চল যাই .... বলেই ওর ঘর থেকে বের হয়ে আসলাম ...

আন্টিকে দেখলাম পিয়াজু বানাচ্ছেন রান্নাঘরে , উনার সাথে খানিক্ষন হালকা গল্প করতে করতে পিয়াজু খেয়ে সময় কাটানোর পরেও যখন দেখি ওর খবর নেই তখন ওর ঘরের দরজান নক করলাম ---- কিরে হলো ?
ভিতরে থেকে জবাব এলো -- একটু আয় তো ...
ভিতরে ঢুকে যা দেখলাম ... তা দেখে আমি হাসতে হাসতে গড়াগড়ি ... দেখি জনাবা ঐ ১২ হাতের শাড়িকে তার শরীরে কমপক্ষে সাড়ে তের বার পেঁচিয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে আছেন .... আমার হাসি দেখে যেন ওর পিত্তি জ্বলে গেল , চিৎকার করে বলে উঠলো --- এতে হাসির কি আছে , তুই নিজে কি আমার চেয়ে ভাল পরতে পারিস নাকি যে এমন করে হাসছিস ?
এর পরেও আমার হাসি আর কমে না দেখে রান্নাঘর থেকে আন্টি চলে আসলেন .... উনি ও ওর এই অবস্হা দেখে হেসে দিলেন ... বললান -- নে , অনেক অভিমান হইসে এবার আয় তোকে শাড়ি পরায়ে দিচ্ছি ...

আন্টি ওকে শাড়ি পরায়ে দিচ্ছে আর আমি বের হয়ে ড্রইংরুমে রাখা পিয়াজু আর চা খাচ্ছি ... কিছুক্ষন পরে দেখতে পেলাম ওর ঘরের ভিতর থেকে এক অদ্ভুত সুন্দর মানুষ বের হলো ... মিষ্টি সবুজ রং এর শাড়িটার সাথে ম্যাচিং করে পরা চুড়ি, সেই সাথে তার খুব পছন্দের হাই হিল ... দুষ্টু হাসিতে মুখরিত, পরিপাটি বাধা চুলের সাথে বড় বড় চোখে দেয়া কাজলে সেই খুব পরিচিত মানুষটাকে দেখে মনে প্রশ্ন জাগলো -- এ কি আফ্রোদিতি, ভেনাস নাকি ফ্রেয়া ? ..... অতঃপর, অপরূপ সেই পরীর বাচ্চাটাকে নিয়ে মুক্ত বিহঙ্গের মতো ডানা মেলে দিলাম অনন্ত দিগন্তে ...







সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৫১
৬৬টি মন্তব্য ৬৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কথাটা খুব দরকারী

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ৩১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৪

কথাটা খুব দরকারী
কিনতে গিয়ে তরকারি
লোকটা ছিল সরকারি
বলল থাক দর ভারী।

টাকায় কিনে ডলার
ধরলে চেপে কলার
থাকে কিছু বলার?
স্বর থাকেনা গলার।

ধলা কালা দু'ভাই
ছিল তারা দুবাই
বলল চল ঘানা যাই
চাইলে মন, মানা নাই।

যে কথাটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×