somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবনের লক্ষ্য-৬

০৯ ই জুন, ২০০৯ বিকাল ৪:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জীবনের লক্ষ্য-৫
জীবনের লক্ষ্য-৪
জীবনের লক্ষ্য-৩
জীবনের লক্ষ্য-২
জীবনের লক্ষ্য-১

মা'র সাথে স্কুলে ভর্তি হতে এসেছিলাম। প্রত্যেক শাখার শ্রেনী শিক্ষক নিজ নিজ শাখার ছাত্র ভর্তি তদাকর করছে। মা আমাকে নিয়ে সবুর স্যারের কাছে গেলেন। ভর্তির টাকা জমার স্লিপ দেওয়ার পর স্যার বললেন, "আপনার ছেলের নাম বলেন"। মা বললেন, "লেখেন, রাজ মো, আশরাফুল হক বারামদী"। স্যার বললেন, এত বড় নাম? মা বললেন, হ্যা, পুরোটা লেখেন। স্যার বললেন, আবার বলেন, এক এক করে। আমার এই দীর্ঘ নাম নিয়ে আমি যাত্রা শুরু করেছিলাম সেই কোনাবাড়ী এম এ কুদ্দুছ হাই স্কুলে। পরে ক্লাস সেভেনে উঠে আমি নিজেই নাম ছোট করে আশরাফুল হক বানিয়ে নেই। কিন্তু এস এস সি'র রেজিষ্ট্রেশন করার সময় আমার বাবা মা আমাকে এই দীর্ঘ নাম পুনরায় উপহার দেন। আমি আসলে বহুনামী এক ব্যাক্তি। আমাকে বাসায় এবং আমার দাদার দিকের আত্মীয়রা সবাই ডাকে বাবু বলে। আবার আমার মার দিকের আত্মীয়রা সবাই ডাকে রাজ বলে। রাজ নামটা আমার মার দিক থেকে আসা। আমি এবং আমার এক খালাত বোন প্রায় একই সময়ে মায়ের পেটে আসি। আমার মা আর খালা ঠিক করেন দুজনের মধ্যে যার আগে ছেলে হবে তার নাম রাখা হবে রাজ, আর মেয়ে হলে নন্দিনী। আমার দাদা ভাইয়ের অভিশাপে :| আমার খালার আগে মেয়ে হয় এবং সে নন্দিনী নাম ধারন করে। আর আমার দাদা ভাইয়ের আশীর্বাদে B-) আমি ছেলে হয়ে জন্ম নেই এবং নাম ধারন করি রাজ। আমার আরেকটা নাম হল আশ্রাফুইল্যা বা আশরাফ বা আশরাফুল। এইটা আমার একান্ত কাছের বন্ধুরা ব্যাবহার করে।


স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর ক্লাস করা শুরু করলাম। আমার কিন্ডার গার্ডেনের এক বন্ধু ফয়সালও আমাদের সাথে যোগ দিল। আমার রোল ২২০ আর ওর ২২২। প্রথমদিন ক্লাসে বিরাট গ্যাঞ্জাম, হই চই। সবুর স্যার রোল কল করলেন। গলা ফাটিয়ে সবাই ইয়েস স্যার, উপস্থিত, প্রেজেন স্যার ইত্যাদি বলতে লাগল। আমি গলা যথাসম্ভব চড়িয়ে ইয়েস স্যার বললাম। স্যার একটু আমার দিকে তাকালেন। প্রেজেন্ট শেষে স্যার গাল গল্প করলেন। বিভিন্ন উপদেশ দিলেন যা আমরা উনার থেকে আরো ভালভাবে দিতে পারি। সবশেষে প্রথম গল্পটা রিডিং পড়া দিয়ে চলে গেলেন। শহরের স্কুলগুলোর অবস্থা কি জানি না কিন্তু আমাদের কুদ্দুছ নগরের ক্লাস সেভেনের পোলাপানো ঠিক মত রিডিং পড়তে পারত না। আমরা আসলে খুবই পিছিয়ে ছিলাম। আমার অবশ্য রিডিং পড়া দিলে ভালোই লাগত। কারন বাসায় তাহলে পড়ার মত কিছু থাকত না। রিডিং তো এমনিতেই পারি। পুরা ফাকিবাজীর এক দিন। সমস্যা হত শব্দার্থ পড়া দিলে। নিজের মত করে উত্তর দিলে সবুর স্যার দুই হাতে তার শক্তিশালী বেতটা দিয়ে গায়ের জোরে চারটা বাড়ী দিতেন। আচ্ছা এইভাবে মারের ভয় দেখিয়ে পড়া শেখানোটা কি আপনাদের কাছে একটা অপরাধ বলে মনে হয় না? একটা বাচ্চাকে আপনি এক্ষেত্রে বাংলা শিখাচ্ছেন নাকি নির্যাতন শিখাচ্ছেন? ছেলে বাচ্চাটা হয়তো বড় হয়ে তার বউয়ের উপর এই শিক্ষাটা প্রয়োগ করবে। তা প্রথম দিন সব স্যারেরা গল্প করলেন। অংক ক্লাস নিতে এলেন হাবীব স্যার যদিও উনি উপরের ক্লাসে বাংলার শিক্ষক। উনি বেশ তেল মাখানো হাসি হেসে আমাদের সাথে গল্প করলেন। বেশ ভালো লাগছিল দেখতে। তা কিছুদিন পরিচিত হলাম ক্লাসের পোলাপানের সাথে। এর মধ্যে এসে গেল নির্বাচনী জোয়ার। মানে ক্লাস ক্যাপ্টেন নির্বাচন আর কি। আমি চুপ করে বসে আছি, কারন ইতিমধ্যে পোলাপান জেনে গেছে কাকে ভোট দিলে তাদের লাভ হবে। বিপুল ভোটে আমি ফার্ষ্ট ক্যাপ্টেন নির্বাচিত হলাম। পরে মা'র কাছ থেকে একশ টাকা নিয়ে চার কেজি জিলাপি কিনে পোলাপানকে খাওয়াইতে হইছিল। অবশ্য সব ক্লাসেই নির্বাচিত ক্যাপ্টেনরাই খাওয়াইছে। ক-শাখার এক পোলা, আমার সাথে প্রাইমারীতে পড়ছে, আমি জিজ্ঞাসা করলাম তোদের ক্যাপ্টেন কে হইছে? বেটা ভাব দেখাইয়া বলে জানি না। অথচ আমি নিজ চোখে দেখেছি ও জিলাপী কিনে আনছে। পরে গোপন সূত্রে খবর পেয়েছিলাম ওই হারামী ক্যাপ্টেন হয় নাই, আরেকজন হয়েছে। আমার আমলে ক্লাস ছিল সম্পূর্ণ শনির আখড়া। যেখানে ক্যাপ্টেন নিজেই সারা ক্লাস ফাতরামী করে বেড়ায়, ক্লাসের বাকী পোলাপান কি করবে তা বলাই বাহুল্য। ক্যাপ্টেনের কাজ ছিল দুই ক্লাসের মধ্যবর্তী সময়ে শিক্ষক আসলে দেরী করলে খাতায় নাম লিখে রাখা এবং পরবর্তীতে তা শিক্ষকের কাছে জমা দিয়ে শাস্তির ব্যাবস্থা করা। কেউ টিফিন পলাইলে তার নাম লিখে রাখা এবং পরেরদিন সবুর স্যারের কাছে তা জমা দিয়ে বিশাল শাস্তির ব্যবস্থা করা। আমার কল্যানে ছাত্ররা রাম রাজত্বে বাস করেছে। টিফিন পলানোর শাস্তি তাদের পেতে হয় নাই। এত কিছুর পরেও কতিপয় ক্ষমতালোভী পোলাপান আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করলে আমি কঠোর হস্তে তা দমন করেছিলাম।


এই ক্লাস সিক্সেই আমি একদিন শব্দার্থ পড়া না পারার কারনে ৫০০ বার কান ধরে উঠবস করেছিলাম। মার খেতে আমার কোন লজ্জা ছিল না। অনেকে বলবেন আমি ক্যাপ্টেন হয়ে কিভাবে কান ধরি সবার সামনে। আরে আমি ক্যাপ্টেন হলেও পুরো ক্লাস ছিল আমার ইয়ার দোস্ত। আমরা সবাই ছিলাম সমান। আমি আলাদা একজন হয়ে ক্যাপ্টেন ছিলাম না। আমি ওদেরই একজন ছিলাম। মহান সাম্যবাদী মনোভাব বিদ্যমান ছিল আমার মধ্যে। তা জীবন চলতে থাকে ক্লাস সিক্সের। আমি চলতে থাকি সেই সাথে। বিধান স্যার ইংরেজী ক্লাস নিতেন। উনি ক্লাসে এসেই প্রথমে জিজ্ঞেস করতেন কে কে পড়া শিখে আসিস নি দাড়া। যারা যারা আসেনি তারা দাড়াত। স্যারের শাস্তি ছিল দুই রকম। কানে ধরে বেঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে থাকা আর বেতের বাড়ি খাওয়া। স্যার একেক দিন একেক শাস্তি দিতেন। সত্যি কথা বলতে কি আমি কানে ধরে বেঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে থাকতে খুব পছন্দ করতাম। স্যার কখনো নিজের সাথে বেত আনতেন না। সবার সাথে আমিও পড়া না পারার দলে দাড়াতাম। স্যার যদি কানে ধরে বেঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে থাকার শাস্তি দিতেন তাহলে সবার সাথে আমিও কানে ধরে বেঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে যেতাম। আর যদি বেতের বাড়ি দিতে চাইতেন তাহলে বলতেন, যা একটা বেত নিয়া আয় অফিস থিকা। ক্যাপ্টেন হিসেবে এই দায়িত্বটা আমার উপরই পড়ত। আমি সুন্দর বেতটা এনে স্যারের হাতে দিয়ে বসে পড়তাম। আমি এখন পড়া পারি।



চলবে................................
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১২:৩১
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×