somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

অনুপম হাসান
শৈশব আর কৈশোর কেটেছে রংপুরে; আইএ পাসের পর কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন। পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল. ও পিএইচডি. ডিগ্রি লাভ। বর্তমানে শিক্ষকতা পেশায় নিযুক্ত আছি।

বুক রিভিউ-৫। একুশ শতকের প্রেম ও বৈরাগ্য প্রসঙ্গ যুগিভাব সঙ্গ

০৯ ই জুন, ২০০৯ সকাল ১১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রত্যেক কবিই তাঁর ব্যক্তিক ভাবনা চিন্তাচেতনা, অনুভূতি ও সামাজিক অভিজ্ঞান উপলব্ধি কবিতার ছন্দে-উপমায়-রূপকে-চিত্রকল্পে ধারণ করতে চান। কেউ সফলভাবে সেই কাজটি করতে পারেন, আর কেউ ধীরে ধীরে সাফল্যের সিঁড়ি অতিক্রমে প্রয়াসী হন। অনেকেই মাত্র একটি কবিতা বা একটিমাত্র কাব্য রচনা করেই সেই সাফল্যের সিঁড়ি উতরে যান সহজেই। আবার অনেকেই অনেক লিখেও দেখা পান না সেই সফলতার। কিন্তু কেন এমনটি হয় পাঠক হিসেবে এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া খুব একটা সহজ ব্যাপার নয়। এজন্যই পাঠক যখন সমালোচকের আসনে বসেন, তখন তাকে পাঠ করতে হয় সকলের রচনাকেই। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে আশির দশকের কবি হেলাল হাফিজ মাত্র একটি কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ রচনা করে যে কবি স্বীকৃতি ও পাঠকপ্রিয়তা লাভ করেছেন, তা বোধহয় দেশ বরেণ্য অনেক কবির ভাগ্যেই জোটে নি। কিন্তু তিনি আর লেখেন নি; লিখলে পাঠক তাঁর পরবর্তী রচনাকে কিভাবে গ্রহণ করত তা আমাদের আজ আর জানার উপায় নেই। সে যাই হোক, জনপ্রিয় কিংবা অ-জনপ্রিয় সকলের কবিতা পাঠই একজন সমালোচকের কাজ। সেই ব্রত নিয়েই আমরা কাব্যকলার নির্মাণ-শৈলী ও বিষয়-ভাবনা সম্পর্কে প্রায় অপরিচিত কবি জওয়াহের হোসন-এর কাব্যগ্রন্থ ‘যুবিভাব সঙ্গ’-এর সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। সেই পরিচয়ের সারৎসার আমাদের পাঠকের সামনে তুলে ধরাই এই রচনার প্রধান ল্য। ‘যুগিভাব সঙ্গ’ পাঠ করলে এর বিষয়-ভাবনা যে সমকালীন অন্যদের থেকে আলাদ সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ থাকে না। সমকালের অসংখ্য কবির ভীড়েও তাঁকে তাঁর রচনাশৈলীর মধ্য দিয়ে আলাদা করে চিনে নেওয়া যায়। এই কবির চিন্তাচেতনার রাজ্য জুড়ে রয়েছে সমকালীন সমাজ জীবন সম্পর্কে বিষণœতা এবং তার সাথে যুক্ত হয়েছে কবির বৈরাগ্য-চেতনা।

প্রেম মানবজীবনে এক শ্বাশত ঘটনা; আর এই প্রেমের বহুমুখী প্রকাশ-প্রচার ঘটেছে সাহিত্যে। বিশেষত কবিতায় পাঠক দেখেছে বিচিত্র রূপ। প্রত্যেক কবিই তাঁর নিজস্ব ঢঙে, উপমায়, চিত্রকল্পে তুলে ধরেছেন প্রেমের রূপকে। প্রেমের সংজ্ঞায়নের চেষ্টাও করেছেন কবি-সাহিত্যিকরা; কিন্তু অদ্যাবধি সম্ভবত এর সঠিক বা সুনির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা দেওয়া সম্ভব হয় নি। জীবনানন্দ দাশ বলেছে, ‘থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন’। অন্যদিকে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘আমরা দুজন এসেছি ভেসে যুগল প্রেমের স্রোতে/ অনাদি কালের হৃদয় উৎস হতে।’ সুতরাং একথা স্পষ্ট যে প্রেমের রূপ বিচিত্র এবং বহিঃপ্রকাশের ধরনও এক এক জনের নিকট এক এক রকম। কেউ তার মাকে, কেউ প্রিয়তমাকে, কেউ শান্ত-স্নিগ্ধ নিসর্গকে ভালবেসে রচনা করেছেন কবিতায় নানামাত্রিক রূপক, উপমা, চিত্রকল্প। তবে একথা সত্য যে নর-নারীর জাগতিক সম্পর্কের মধ্যে প্রেমিক-প্রেমিকার প্রেম-ই অধিকাংশ কবিকে আবেগে উদ্ভাসিত করে তোলে; যার ফলে কোন কবি রচনা করেন, বিরহের পদ; আর কেউ রচনা করেন মধুর মিলনের পদ। বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের দিকে ফিরে তাকালে এ বিষয়টি খুব স্পষ্ট হয়ে ওঠে বিদ্যাপতি এবং চণ্ডীদাসের পদগুলোর ওপর চোখ বুলিয়ে নিলে। আমাদের ‘যুগিভাব সঙ্গ’ কাব্যের কবি জওয়াহের হোসেন-এর প্রেমে বৈরাগ্য চেতনার বহিঃপ্রকাশ সুস্পষ্ট। যেমন :
ঘুম আমার চুরি হয়ে গেছে রাধিকার ঘাটে।
এখন ব্যর্থ নিদ্রাযাপন, পরাক্রান্ত ম্লান,
তোমারে ছাড়িয়া এত ব্যথা, এত বিষাদ কেমনে সই [নিশি পদকীর্তন]
অথবা,
যুগলভ্রƒ মানুষের ভাগ্য ভালো হয় প্রথম শুনেছিলাম গ্রাম্য
এক বৃদ্ধ মহিলার মুখে। মানুষ চির একা আর কিছু এলোমেলো
দুঃখ থাকা ভালো। মাঝে-মধ্যে দুঃখবোধ আমাকে খুব বেশি
অহংকারী করে তোলে। আর আত্মঘাতি বিরহ এখন সংসার
আওতায় আমি ওর শিল্পের মর্মতা ...
বুঝিনি জেনেছি ঘর বাঁধতে বাসন কোসন, মশলাপাতি, শাড়ি গয়না
এসবই বেশি প্রয়োজন অন্য সব স্থাবর রহস্য [নিশি পদকীর্তন]
জাগতিক জীবনের এসব জঞ্জালের সঙ্গে জওয়াহের হোসেন প্রেমের যে সম্পর্ক আবিষ্কার করেছেন, তার সাথে এক ভয়ানক বিরোধ রয়েছে কবির হৃদয়ে। আর সেই জন্যই কবি উচ্চারণ করেন :
স্বপ্ন ছায়া তার গহনে বেঁধেছ সংসার
জানি, অভাগার জন্য চান্নিপসরারাতে এখনো কাঁদো;
প্রাসাদ চাওনা, এ যন্ত্রণা আমি কেমনে সই কাঁচ শরীর? [স্মৃতিকাতরতা]
জওয়াহের হোসেন-এর প্রেমের এই বিষাদ-বিষণœ রূপের মধ্য দিয়ে সাংসারিক জীবনে কবির বৈরাগ্য চেতনার সঞ্চার হয়েছে। এ কারণে কবির মধ্যে অধ্যাত্মবাদে সমর্পণের বিষয়টিও বেরিয়ে আসে, যখন তিনি প্রেমের সাতকাহন রচনা করতে গিযে টেনে নিয়ে আসেন বৃন্দাবনের রাধাকে। অথবা অবলীলায় একুশ শতকের মানুষ হয়েও লালনের বাউল চিন্তায় নিমগ্ন হন। কিন্তু কেন এমনটি হয়? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে আমরা দেখতে পাই কবি জীবনানন্দ দাশ রচনা করেছেন :
ভালোবেসে দেখিয়াছি মেয়ে মানুষেরে,
অবহেলা করে দেখিয়াছি মেয়ে মানুষেরে,
ঘৃণা করে দেখিয়াছি মেয়ে মানুষেরে;
আমারে যে ভালোবাসিয়াছে,
আসিয়াছে কাছে,
উপো সে করেছে আমারে,
ঘৃণা করে চলে গেছে যখন ডেকেছি বারে বারে
ভালোবেসে তারে [ধূসর পাণ্ডুলিপি, ‘বোধ’]
কবি জীবনানন্দ দাশের এই বহিঃপ্রকাশে প্রেমের প্রতি প্রেমিকার প্রতি প্রচণ্ড ঘৃণা ঝরে পড়েছে। কোন ছলনায় ভুলে নয়, কবি জীবনকে সংসারের সকল নোঙরে স্থাপন করেই যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এখানে। কিন্তু কবি জওয়াহের হোসেন জীবনানন্দের মতো ঘৃণা করেন নি তার প্রিয়তাকে; বরং তিনি এখনো এক বাউল মন নিযে খুঁজে চলেন প্রিয়তমার ঘর-সংসার, জীবন। যথা :
তোমাদের বাড়ি চিনি না, অথচ খুঁজিতেছি গৃহসংসার,
... ... ... ... ...
আমি তো কলঙ্কিনী, খুব নৈকট্যে গিয়ে
তোমার নিজগৃহ পড়শির মতো লাগে;
... ... ... ... ...
যাদুকরী তোমাকে নিয়ে এলাম শোভিত যাত্রায়,
আমি যে কাঠুরে ছেলে মায়াবী চিত্রকামে ভাসিতেছি। [গৃহসন্ধান]
কবি জওয়াহের হোসেন আরো এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে নিজেকে প্রেমিকার প্রতি পূর্ণরূপে আত্ম-সমর্পণ করেছেন। এজন্য তাঁকে কি বিবাগী বলতে পারি, নাকি পাগল-প্রায় এক প্রেমিকের আত্মদহনের বহিঃপ্রকাশ বলবো। কেননা কবি যখন বলেন :
আমি তো জন্মাবধি তোমার দাস
তোমার দুঃখগুলো শস্যময়, তাই সযতনে রেখেছি
চাষাবাদের যন্ত্র; [কৃষ্ণ ডুবিলা বিবিধ অহংকারে]
আমাদের আর্থ-সামাজিক জীবনে নারী এক অসহায় মানুষ। তার ব্যক্তি হৃদয়ের আবেগ-অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘটাতে ব্যর্থ হয়। কেননা আমাদের সমাজব্যবস্থা পুরুষতান্ত্রিক। ফলে পুরুষরাই শাসন করে তাদের। এর ফলে সেই পুরুষের প্রেমে নিজেকে উৎসর্গ করেও সে হতে পারে না তার প্রিয়তমের। এজন্য কি আমরা দায়ী করতে পারি সেই প্রেমিকাকে! অতএব আমরা বলব যে পুরুষ তাকে ভালবাসে, সেই পুরুষই আবার তাকে পোড়ায়। আবার নিজেও পোড়ে। অর্থাৎ বিষয়টিকে আমরা ব্যাখ্যা করতে পারি শাখের করাত হিসেবে। নারী যদি সমাজে নিজেকে মানুষের (পুরুষের সমান) মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে পারত, তাহলে বোধ হয় আমরা আর কোন নারীকে ছলনাময়ী, কুহকী, মায়াবী, প্রতারক প্রভৃতি বিশেষণে বিশায়িত করতে পারতাম না। আর কবি জওয়াহের হোসেন-এর মধ্যেও আমরা সেই আত্মশ্লাঘা দেখতে পাই :
নদী প্রবাহে আমি পুড়েছি রূপ মৌন
খোঁপার ঘ্রাণে
পাতা পদ্ম দেখি না তন্দ্রামীত চূর্ণতমা
আমি পারি না কখনো লোকলজ্জা
হয়ত বা শুনেছ দগ্ধতায় সে ভ্রমণচারী; [লজ্জান্ধবরণ]
জওয়াহের হোসেন-এর কবিত্ব তাঁর দেহ ও আত্মায় মিশে আছে। তিনি সমকালীন সমাজ-জীবনে ও সংসারে যেসব দুঃখ-যন্ত্রণা সহ্য করেছেন তা নরক যাপনের মতোই বেদনাদায়ক। সমাজক, সংসার ও জগজ্জীবনের এই অসহায়ত্ব এবং যন্ত্রণাদগ্ধ কবি মননের বেদনার্ত অনুবাদ নিম্নরূপ :
সব আরো সত্য চোখে অথবা চিবুকে কাঁদে রাত
মাঝে মাঝে ভুলে যাই অন্ধ যোজন,
তোমার স্থিতি কেবলি সত্য আরো বেদনাময়
আমার দহনে কত যে দহন ফোটে
আজ্ঞাত সেই মুক্ত ধারা
আমি যেন স্মৃতিগত তারও সমাপ্তিতে [গতসঙ্গ, পূর্বভাব প্রবণতা]
জীবনানন্দ দাশের ‘আমি যদি হতাম’ কবিতার মতো কবি জওয়ার হোসেনের কবিতায়ও আমরা পাই জীবন থেকে পালিয়ে যাওয়ার এক অভিজ্ঞান। যেমন :
একা ভেসে এসেছি জলতল শ্যাওলা
ঢেউ খেলে খেলে তোমার খুব কাছাকাছি
পিপাসা ঘোর উঠে এলে
ভোজনে থাকে না কিছু ...
যদি ফিরে আসতো স্নেহার্য কেউ ...
আমি ক্রমে ধাবিত হব মায়ায় [শ্যাওলা গমন]
কবির বিরহী মন নারীকে নানাভাবে অবজ্ঞা করলেও তিনি নারীকে অমর্যাদার চোখে দেখেন না। তিনি এখনও খুঁজে ফেরেন তার হারিয়ে যাওয়ার প্রিয়তমার ঘর-সংসার ‘গৃহসন্ধান’ কবিতায়। তবে নারী-বিরহী কবির প্রতীক প্রতিনিয়ত হয়ে উঠেছে বিমূর্ত। অর্থাৎ বাহ্য কায়ায় আর তিনি খোঁজেন না প্রেমকে। এই বিমূর্তায়ন কবিতার এক ধরনের অলংকার। কবি সেই অলংকারের ব্যবহারও করেছেন সফলভাবে। যেমন :
এই অসহ্য দ্বিপ্রহ
প্রথম মে মাসের মতো শয্যায় আমি যে
নতুন গুপ্তচর;
কেন গ্রীষ্মমাসে এতো ঘোর? [দায়বদ্ধতা]
অথবা,
অনুর্বরতার বাতাস খেলে চুমুর গহনে
এরও পরে চারু নৃত্যে ভাসিয়েছি কথার রোদ
[ভাঙনের কাল]]
কবি জওয়ার হোসন-এর দেখবার দৃষ্টি কতটা নিখুঁত তা নিচের উদারহণ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় :
বেদনা গাঁথা হলো কিশোরীর চুলে, এইসব আজ প্রস্থরিত
চুলের ফাঁকে ফঁ^াকে আঁধার বীথির ঝোপ, আমি বুঝি নিশি মায়া ও
রূপালি রাত-খোয়া ঘনবর্ষা,
[ধুলি নির্মিত জপ]
কবি জওয়াহের হোসেন-এর মন-মনন এক বাউল চিন্তায় নিমগ্ন থাকলেও তিনি সমাজ বাস্তবাকে যেমন অস্বীকার করেন না তেমনি একুশ শতকের জীবনের বহুমুখী জটিলতার মুখোমুখি হতেও দ্বিধা করেন না। তিনি বাস্তবাকে মেনে নিয়ে সংসার জীবনের সাথে নিজে সম্পর্কিত করেছেন। যেমন,
জীবন পাঠক্রম গোপন ঝড়ে কেঁদেছিল
দূরে বেজেছিল বাঁশি, এ বয়সে বাঁশির সুর ভালো লাগে
বিষাদ বাক্যে ট্রেনের হুইসেল; ... ... আমরা একদিন বৃদ্ধ হব;
[নিশি পদকীর্তন]
মানুষ প্রতিদিন মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। সে জানে না, মৃত্যু তাকে প্রতি মুহূর্তে গ্রাস করছে। মৃত্যুর করাল কালো ছায়ার নিচেই তার বসবাস। মৃত্যু জীব-জগতের এক স্বাভাবিক পরিণতি অথবা অন্যভাবে বলা যায়, পৃথিবীর সকল জীবকেই একদিন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হবে। তারপরও মানুষ ভালবাসে জীবনকে, সংসারকে এবং সন্তানকে। এটাই নিয়ম। ‘ট্রেনের হুইসেল’-এর মতো মৃত্যুর ডাক শোনার পরও মানুষ নিজেকে প্রতিদিন নানান শোভায় শোভিত করে তোলে। বসবাসযোগ্য পৃথিবীকে আরো সুন্দরতর করে তুলতে চায়; ‘যুগিভাব সঙ্গ’ কাব্যগ্রন্থের কবিতাবলিতে তা স্পষ্টরূপে তুলে ধরেছেন কবি।

জওয়াহের হোসন-এর কবিতার মূল বিষয় প্রেম; তবে তাঁর এই প্রেমচেতনায় বৈরাগ্যবাদের সুস্পষ্ট ছাপ রয়েছে। ‘ট্রেনের হুইসেল’ মূলত সময় প্রবাহের দিকে। অর্থাৎ সময় বা কাল নিরবধি বয়ে যায় এবং মানুষ তথা সকল জীব-ই ধীরে ধীরে পরম গন্তব্য মৃত্যুর মুখোমুখি হতে থাকে। মৃত্যুটাই জীবের পরম নিয়তি। মানুষও জীব, ফলে সেও এই নিয়তি-নির্দিষ্ট গণ্ডিকে অতিক্রম করতে পারে না। তবে মানব মননে এই মৃত্যু কখনো পরম প্রশান্তি রূপে আবার কখন তা চরম ভয়াবহতায় রূপ নেয়। আধুনিক কালে মানবসমাজে মৃত্যু ভয়াবহতা নিয়ে হাজির হয়েছে। সা¤প্রতিক সময়ে ল্য করা গেছে ‘সাইবার ওয়ার্ল্ডে’-এর মাধ্যমে দল বেঁধে আত্মহত্যার প্রবণতা; এই আত্মহননকে আমরা অন্যভাবে বলতে পারি যে, এই আত্মহননকারীরা মৃত্যুকে ভালবাসে জাগতিক জীবনের চেয়েও। অর্থাৎ জীবনের চেয়ে যখন মৃত্যুর টান বেশি হয়, তখনই মৃত্যুকে সাদরে সম্ভাষণ জানাতে পারে মানুষ। যারা দল বেঁধে আত্মহত্যা করছে, তারা জীবনকে ভালবাসে না কিংবা মৃত্যুকে ভয় পাওয়ার পরিবর্তে পরম প্রশান্তি হিসেবে গ্রহণ করে। তবে সাধারণ কথা হচ্ছে মৃত্যুভাবনা মানুষকে বিষাদগ্রস্ত করে; কিন্তু মৃত্যুচিন্তারও অধিক জীবন-ভাবনা মানুষকে বিষাদগ্রস্ত করতে পারে। কবি জওয়াহের হোসেনের মৃত্যু চিন্তার উৎসও সম্ভবত এই জীবন-ভাবনারই অন্যপিঠ। আর এজন্যই তাঁর ‘যুগিভাব সঙ্গ’-এর কবিতাবলিতে জাগতিক জীবনের প্রতি উদাসীনতা এবং বৈরাগ্য চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

শব্দসংখ্যা = ১৫২৪
গ্রন্থ পরিচিতি :
জওয়াহের হোসেন, ‘যুগিভাব সঙ্গ’, ১ম-প্র, সিলেট : শতাব্দী প্রকাশ, ২০০৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×