somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেষ বিকেলের আলোয় ...

০৫ ই জুন, ২০০৯ রাত ৯:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


"ভাই, এক্ষুনি কলেজে আসেন, গণ্ডগোল হইছে, মারামারি লাগবো ..."

আমার জানালা দিয়ে সবে মাত্র মিষ্টি এক চিলতে এসে রোদ পড়েছে বিছানায়। আরামদায়ক আলস্যে সকালের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে কম্বলের নীচে গুটিশুটি মেরে শুয়ে ছিলাম, এই সময় রাসেদের ফোনটা এলো। চরম বিরক্তিভরা কন্ঠে "আসছি" - বলে ফোন রেখে দেই। উঠে গিয়ে শার্ট আর জ্যাকেট গায়ে দেই। এরপর বিছানার নীচ থেকে ছোট ট্রাঙ্কটা টেনে বের করি। আমার স্মিথ এন্ড ওয়েসন রিভলবারটা বিট্রে করেনি কোনদিন আমার সাথে। চার ইঞ্চি ব্যারেল আর কাঠের গ্রিপের শাসনে বন্দি ছয় মৃত্যুদুত এক এক করে প্রতিবারেই ছুটে গেছে লক্ষ্যের দিকে। এটা হাতে নিলেই নিজেকে অনেক বেশী আত্মবিশ্বাসী লাগে। সাবধানে লোড করে জিন্সের পকেটে বাড়তি কয়েকটা গুলি নেই। রিভলবার কোমড়ে গুঁজে উঠে বসি বাইকে।

সবাই বলে - আমি বাইক চালাই না, ওড়াই। গতি আমার আজন্ম সাথী। মা বলতেন খুব দ্রুত কথা বলা, উঠে দাঁড়ানো আর হাঁটা শিখেছিলাম আমি। সাইকেল চালানো শিখেছিলাম এক দিনেই। সাতবছর বয়সে একা নদীতে সাতার কাটতে গিয়ে স্রোতের টানে চলে গিয়েছিলাম কয়েকমাইল দূরে। দুরন্তপনার খ্যাতি অবশ্য তার আগে থেকেই জুটেছিল কপালে। সেই ধারায় স্কুলের গণ্ডি পার হবার আগেই ঠাণ্ডা মাথার ক্রিমিনাল খাতাবটা বাগিয়ে নিতে পেরেছিলাম। কলেজে উঠে এমপি চাচার কল্যানে দল থেকে পোস্ট আর অস্ত্র পেতে কোন সমস্যা হয়নি, তা না হলেও এই জিনিস যোগার করা একটু কঠিন হয়ে যেত।

ক্যান্টিনের পাশে পার্ক করি বাইকটা। রাসেদ, আরিফ, লিটন বসে ছিল থমথমে মুখে, আমাকে দেখে এগিয়ে আসে। "বস্‌ - অবস্থা ভাল না, কামালরা কাইল রাইতে গেছে শাহীনের রুমে, গিয়া ট্যাহা চাইছে, পরে থাপ্পড় দিছে ..." - রাসেদকে থামিয়ে দেই হাত তুলে, আমি জানি কি ঘটেছে কাল রাতে। কলেজ এলাকায় নতুন কোন পাখি বাসা বাঁধলেও আমার অজানা থাকেনা। রাসেদকে থামিয়ে দিতে দেখে কথা বলে আরিফ - "একটু আগে কথা হয়েছে রানার সাথে, ওরা শো ডাউন করবে আজকে, আমাদের কাউকে পেলে মারবে, আর ওরা এইবার রেডি ..."। আরিফ ছেলেটাকে এই জন্যেই ভাল লাগে আমার, সে জানে আমি কতটুকি শুনতে চাই।

চায়ের কাপ হাতে দ্রুত চিন্তা করে নেই ... ওদের শো ডাউনের আগেই আমাদের যা করার করতে হবে। সাধারন ছাত্রছাত্রীর সামনে অন্য কোন শক্তিকে মাথা তুলে দাঁড়াতে দেবার মানে আমাদের অবস্থান সামান্য হলেও নড়িয়ে দেয়া। আমি তা কোনভাবেই হতে দেবোনা। আবার দলের ছেলেদের কাছেও নিজের অবস্থানের প্রমাণ আরেকবার দেয়ার লোভ সামলাতেও কষ্ট হচ্ছে। কাজেই ... আমি নিজেই যাব, একা একাই। এক চুমুকে শেষ করি আগুন গরম চা, বাইকে উঠে বসার আগে আলতো করে হাত বুলাই কোমরে গোঁজা রিভলবারের ঠান্ডা হাতলে, আত্মবিশ্বাসের মাত্রাটা বেড়ে যায় কয়েকগুন।

সাধারনত বাইকটা এক বারেই স্টার্ট হয়, কিন্তু এখন কেন যেন চারবার কিক করার পরে স্টার্ট নিলো আমার বাহন। অশুভ কিছু ইঙ্গিত করছে কি প্রকৃতি? করলেও কিছুই করার নেই, আমাকে যেতেই হবে, জীবনে বহুবার চূড়ান্ত বিপদে পড়েছি, বেঁচে এসেছি সম্ভবত মায়ের দোয়ায়। মা আমার প্রতিবার নামাজ পরে দোয়া করেন, সন্তানের মঙ্গল চান। চোখ বন্ধ করে এক মুহুর্ত মা'র মুখটা কল্পনা করি, অশুভ চিন্তাটা উধাও হয়ে যায় মাথা থেকে। তারপর অবাক চোখে তাকিয়ে থাকা ছেলেগুলোর মাঝ থেকে বেড়িয়ে আসি বাইক নিয়ে।

কলেজ এলাকা থেকে একটু দূরে ভুট্টোর চা দোকানে আড্ডা দেয় কামালরা। আমাদের কারনে কলেজের দিকে বেশী দুর এগুতে পারেনা ওরা, কিন্তু স্বপ্ন দেখে একদিন কলেজ ক্যান্টিনে আড্ডা জমাবার। কিন্তু এই অছাত্র গুলোকে কলেজে ঢুকতে দিয়ে কলেজের পরিবেশ খারাপ করতে দিতে নারাজ আমরা। যে কোন ভাবে ওদের রুখে দেয়ার জন্য চব্বিশ ঘণ্টা পাহারা থাকে কলেজে, মানে কলেজ এলাকায় আমাদের কেউ না কেউ থাকেই। একই ভাবে আমরাও ওদের আড্ডাস্থলের আশে পাশে যাইনা, এলাকাটা ওদের, অনেক কিছুই হতে পারে, সেই কারনে। কিন্তু আজ আমি যখন ভুট্টোর দোকানের সামনে বাইকটা পার্ক করলাম, তখন কেন যেন হঠাৎ থমকে গেল পুরো এলাকা, অথবা আমার মনের ভুল। শীতের এই সকালে এমনিতেই রাস্তায় খুব বেশী মানুষের চলাচল করার কথা না।

"ভুট্টো, কেমন আছিস? এক প্যাকেট বেনসন দে তো" - হতভম্ব ভুট্টোর দিকে বাড়িয়ে দেই একশ টাকার নোট। "ভা... ভালা আছি ভাইজান ... দেই... আম্নে আছুইন কেমন ..."। ভুট্টোর গলার অস্বাভাবিক কাঁপুনিটুকু নজর এড়ায় না আমার। আমি এমন কোন টেরর টাইপ ক্যারেক্টার না যে আমাকে দেখে তোতলাতে হবে ভুট্টোর। আর যাদের দোকানে পলিটিকাল আড্ডা হয়, সেই সব মুদী দোকানীরা খুব ভাল অভিনেতা আর শক্ত নার্ভ যুক্ত হয়, এরা এত সহজে ভয় পায়না কিছুতে। তাহলে ওর ভয় পাবার পেছনে কারন কি? ভুট্টোর বাড়িয়ে দেয়া হাত থেকে সিগ্রেট আর টাকা নিয়ে চা'এর অর্ডার দিয়ে দোকানের সামনের বেঞ্চিতে বসে পরি। যে কোন সমস্যাকে সামনে থেকেই ফেইস করার স্বভাব আমার।

ক্রমশ ... শেষ বিকেলের আলোয় ... (২)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০১০ দুপুর ১:৪৭
২৬টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×