শীতের কোন এক দুপুর বেলা, কলেজের পিছনের দেয়াল ঘেষে কয়েকটি বড় বড় সিমেন্টের ব্লক দিয়ে সিড়ি বানিয়ে আমরা কয়জন দেয়ালের উপরে পা ঝুলিয়ে বসে ধোঁয়া উৎসব করছি ... সচরাচর এ সাইডে কেউ আসেনা বলেই আমরা বেশ নিশ্চিন্তে বসে রেগুলার এ উৎসব করতাম ... সেদিন ২ - ৩ টা পিরিয়ড গ্যাপ থাকার কারনে বেশ লম্বা সময় পাওয়া গিয়েছিল .... কি করি , কি করি করতে করতে আমরা কয়জন ওখানেই চলে গিয়েছিলাম আড্ডা দিতে ... আড্ডার মাঝেই হঠাৎ একজন বললো - চল ক্যান্টিনে যাই, আজকে কলিজা সিংগাড়া আর চা খাব, যেমন কথা তেমন কাজ ... হৈ হৈ করতে করতে চলে গেলাম ক্যান্টিনে ... মামুর কাছ থেকে তার অবশিষ্ট সব সিংগাড়া নিয়ে টাকা দিচ্ছি ... এমন সময় দেখি ক্যান্টিনে এক স্বল্প বসনা সুন্দরীর আগমন হয়েছে ... ডানে বায়ের পোলাপাইন গুলো দেখি তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকায়ে আছে ...
এমন ভাবে দেখছে যেন এমন ড্রেসে কোন মেয়েকেই ওরা কোনোদিন দেখেনি, অবশ্য সেই সময়ের জন্য ওটা ছিল একটু বেশী খোলামেলা তাই হয়তো অমন করে দেখছিল ...তবুও ওদের এমন আচরনে বিরক্ত হয়ে ওদেরকে বললাম তোরা কি সিংগাড়া খাবি নাকি অন্য কিছু , যদি সিংগাড়া খেতে চাস তো চল ... নাইলে একটাও পাবি না বলে দিলাম ... এমন সময় সুন্দরী এসে ক্যান্টিন মামু কে বললো -- সিংগাড়া আছে কি না ... মামু আমাকে দেখায়ে বললো -- কেবল মাত্র অনন্ত মামা যা ছিল সব নিয়ে গেল, আর নেই যে ... ক্যান্টিন মামুর পাংশু মুখে উত্তর শুনে মেজাজটা আরো গেল খিচড়ে, আরে সুন্দরী হলেই কি তারে এমনে আদরে গদগদ উত্তর দিতে হবে নাকি ? ... আমার সাথের একজন বলে উঠলো -- আপনি মনে হয় নতুন এসেছেন, অসুবিধা নাই আপনি আমাদের সাথে খেতে পারেন , আসেন .... আমার হাতে সিংগাড়া দেখে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকাতেই আমি বললাম -- একসাথে খেতে সমস্যা নেই, কিন্তু আমরা সবাই চেইন স্মোকার ... পরে আবার ধোঁয়ায় সমস্যা হলে আমাদের দোষ দিতে পারবেন না ... কথাটা বলার সময় ভেবেছিলাম সে পিছিয়ে যাবে, আসবে না আমাদের সাথে ... কিন্তু আমার সে আশার গুড়ে বালি ছিটিয়ে হাসি মুখে পোংটা মাইয়া তার দন্ত উন্মুক্ত করে বললো -- আমার কোন সমস্যা হয় না, চলেন।
কি আর করা, তাকে নিয়ে চলে গেলাম কলেজের চিপার আমাদের সেই আড্ডাখানায় ... আমাদের দেখাদেখি সেও দেয়ালে পা ঝুলায়ে বসলো, একসাথে আড্ডা দিয়ে সিংগাড়া খেল ... ফাঁকে দিয়ে সে আমার অর্ধেকটা বেনসনেও ভাগ বসালো .... তাই দেখে আমি মনে মনে বলি, লে হালুয়া ... ওরে আমি না আরো ধোঁয়ার কথা বলে ভাগাতে চাইছিলাম এখন সে তো দেখি আমার স্টিক ধুমসে টানতেছে
যাই হোক এমন করতে করতে ব্রেক শেষ হলে পরে আমরা সবাই যার যার ক্লাসে ঢুকছি এমন সময় দেখি সুন্দরী গেট দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে আর গেটের মামু তারে সালাম দিচ্ছে ... অনেক ভেবেও বুঝলাম না সে আসলো ই বা কেন ... আর গেল ই বা কেন ... গেটের মামু তারে সালাম দিলো ই বা কেন ... এরাম নয় ছয় চিন্তা করতে করতে শেষ হলো আমাদের ক্লাস ... বিকেলে আপুনির বাসায় গিয়ে খাওয়ার পরে ও বললো ভাইয়া আজকে একটু পার্লারে যাব (হাবি জাবি কি না কি করবে সে), ঐ পর্যন্ত চলো একসাথে যাই ... এর পরে আমি আপুনি আর আমার ভাগ্নী একসাথে বের হতেই দেখি ও যাবে আমাদের কলেজের পাশের এক পার্লারে ... যাই হোক, আমরা সবাই একসাথে গেলাম সেখানে ... এবার আপুনিকে বিদায় দিয়ে বাসার দিকে রওনা হবো ভাবছি, এমন সময় হঠাৎ কোনখান থেকে শুনতে পালাম -- আরে অনন্ত তুমি এখানে ?
ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি দুপুরের সেই সল্প বসনা সুন্দরী দাড়ায়ে হাসতেছে ... তার দিকে তাকিয়ে কোন উত্তর দেয়ার আগেই আরেকবার রাম ধাক্কা খেলাম ওর পিছনে দাড়ানো দু জন কে দেখে ... তারা আর কেউ না, আমাদের কলেজের খোদ প্রিন্সিপ্যাল আর তার বউ .... অতঃপর জানতে পারলাম - এটি তাদের একমাত্র মেয়ে, লন্ডনে পড়ালেখা করে ... কয়েকদিনের ছুটিতে বেড়াতে এসেছে বাংলাদেশে .....
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০০৯ রাত ১১:৪২