somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেমন আছি সৌদি আরবে - পঞ্চম পর্ব

০১ লা জুন, ২০০৯ রাত ২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সিলবার টাউয়ার পয়েন্ট,আল-খুবারে আমি
লাইসেন্স পাওয়ারপর আমি একটি গাড়ী পেলাম।অনেকদিন পর গাড়ী পেয়ে নিজেকে এদেশে স্বাধীন মনে হলো।তবে তিনটে ঘটনা ঘটলো,যাহা না লিখলেই নয়।প্রথম সপ্তাহেই একটি গাড়ীকে রংসাইড দিয়ে ওভারটেক করতে গিয়ে ১৫০রিয়ালের একটা জরিমানা খেলাম।মনে হলো পুলিশ যেন বসেই ছিল আমাকে ধরতে!X(

তার মাস খানেক পর ঘটলো এক্সিডেন্ট। এক ইনডিয়ান ড্রাইবারের গাড়ীকে ক্রশ রোডে মেরে দিলাম। তার গাড়ীর ঠিক মাঝ বরাবর আমার গাড়ীর সামনের অংশ লেগে গেল।তবে আমরা অক্ষত রইলাম।নিয়ম অনুযায়ী যথাস্থানে গাড়ী রেখে ৯৯৯তে ডায়াল করে ট্রাফিক পুলিশ(মুড়ূর) ডাকলাম।অন্যান্য ড্রাইবার বা পথচারীরা অবস্থা দেখে বলতে লাগলো ১০০%আমারই দোষ।অর্থাৎ তার গাড়ীর পুরো রিপিয়ার আমাকেই করে দিতে হবে,নিজেরটাতো রয়েছেই।যাক বেশকিছু পর মুড়ূর এসেই আমাদের ড্রাইবিং লাইসেন্স ও আকামা চেয়ে নিলো তারপর কিভাবে ঘটলো জিজ্ঞেস করে নিজেই একটা খাতা বের করে রাস্তা ও গাড়ী দুটোর পজিশন তার খাতায় একে নিয়ে আমাদেরকে ট্রাফিক অফিসে অনুসরন করতে বললেন।আমরা দুজনই অফিসে গিয়ে দেখলাম আমাদের মতো আরো অনেক লোক সারি সারি বসে আছে।আমাদের ডাক আসার আগেই আমার অফিসের রিপ্রেজেন্টাটিভ এসে আমাকে শান্তনা দিচ্ছিলেন।তারপর আমরা ভেতরে গেলাম।অফিসার আমাদের দুজনকেই ফিফটি ফিফটি দোষী করলেন। অর্থাৎ আমরা দুজন নিজেদের গাড়ী মেরামত খরচ কত লাগবে তার কোটেশন প্রাইস এখানে নিয়ে আসবো।অতপর তারা ভাগ করে আমাদের হাতে টাকা গুনে দেবে।আমার অফিসের লোকটি আমার টাকার গ্যারান্টি দিয়ে আমাকে নিয়ে অফিসে চলে এলো।
এরপরের ঘটনা প্রায় একবছর পর।সাইট থেকে দুপুরে বাসায় ফিরছিলাম।সিগনালে লালবাতি এসে গেলেও জোরে টান দিলাম।একটু আগানোর পরই লক্ষ্য করলাম সাইরেন বাজিয়ে ট্রাফিক পুলিশ আমাকে গাড়ী থামানোর ইশারা দিচ্ছে।ওরা প্রথমেই আমার আকামা-লাইসেন্স নিয়ে নিল।তারপর আমার গাড়ীর ভেতর তল্লাশি সেরে ওদের গাড়ীতে উঠার নির্দেশ দিল।আমার গাড়ী লক করে আমি তাদের গাড়ীতে গিয়ে বসলাম।আমার শত অনুরোধ তারা আমলেই নিলনা!আমাকে দাম্মাম ট্রাফিক অফিসে নিয়ে কেস ফাইল করে একদম চৌদ্দ শিকের ভেতর পুরে দিল!জীবনের প্রথম হাজতবাস সেটা আবার বিদেশে!ভেতরে ঢুকতেই অনেকেই এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করতে লাগলো,আমি কি অপরাধ করেছি।আমি কিন্তু অবাক হয়ে হাজত দেখতে লাগলাম,আমার সিনেমা-নাটকে দেখা সেই হাজতের সম্পুর্ন উল্টো দৃশ্য।এয়ারকন্ডিশন যুক্ত রুম তারপর এটাচড দুটো বাথরুম আছে,আরো রয়েছে টিভি।আমার দুপুরে ঘুমাবার অভ্যাস ছিল তাই আমি এক কোনায় গিয়ে পুরানো একটি কম্বলের উপড় শুয়ে ঘুমিয়ে গেলাম।ঘুম ভাংলো লোকজনের আমার নাম ধরে ডাকাডাকিতে।উঠে দেখি আমার বস নিজেই চলে এসেছেন।তিনি আমাকে কিছু টাকা দিয়ে বললেন কিছু আনিয়ে খেয়ে নিও,কাল সকালের আগে নাকি ছারা পাবোনা!তখন মাত্র বাজে বিকেল পাচটা।আমার পাশে এক ইন্দোনেসিয়ান বসে বসে কাধছিল,জিজ্ঞেস করতেই বললো সেও সিগনাল কেটেছে।সে এক সৌদির বাসায় হাউস ড্রাইবার আর তার স্ত্রী হাউসমেডের(খাদ্দামা)কাজ করে।সে নিজের জন্য নয় কাধছে তার বৌ একাকী ঐ বাড়ীতে থাকবে কি করে সেই চিন্তায়।কিছুক্ষন পরই দেখলাম তার স্ত্রী বেশ কিছু খাবার,কম্বল,চাদর,বালিশ ইত্যাদি নিয়ে এসে হাজির।তারা শিকের ফাক দিয়ে হাত ধরে অনেকক্ষন কান্নাকাটি করলো আর তাদের ভাষায় কিছু বলাবলি করলো।তারপর চলে যেতেই লোকটি খাবারগুলো আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল খাও।আমি তার সঙ্গে বসে খেলাম তারপর আমাকে একটা ধোয়া বালিশ আর চাদর দিল আমি খুশিতে তা বিছিয়ে নিয়ে শুয়ে পরলাম।রুমের এক কোণায় টিভিতে আরবী অনুষ্ঠান চলছিল অনেকেই তা আনন্দ করে উপভোগ করছিল আর আমি সময় পেয়ে আমার অতীত নিয়ে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম।রাত বারটার দিকে হৈচৈ শুনে আবারো ঘুম ভাংলো।দেখি টিভিতে ফুটবল খেলা চলছে আর কয়েদীরা গোল গোল বলে চিৎকার করে রাতের বাতাস কাপাচ্ছে।সেই সময় সেখানে একজন বাংলাদেশী পেলাম সে ছিল লিমজিন ড্রাইভার।সে একটু আগেই এক্সিডেন্ট করে মানুষ মেরেছে,তাই কাদতে ছিল।সে বলতেছিল কমকরেও নাকি তার শাস্তি হবে যাবত জীবন জেল। অবশ্য যদি মৃতব্যক্তির আত্মীয় তাকে ক্ষমা করেন তবে অন্য কথা।তার কি হয়েছিল তা আমার আর জানা হয়নি তবে পরদিন সকাল সারে সাতটায় আমা্কে রিলিজ দিল।অর্থাৎ সিগনাল না মেনে একদিন হাজত ও ৯০০রিয়াল জরিমানা দিলাম।:D

আমার এই ঘটনাগুলো ১৯৮৯সালের।তখন এদেশে বাংলাদেশী এখনকার মতো এতো বেশি ছিলনা।বেশিরভাগ বাংলাদেশী বলতে মিউনিসিটিপ্যালের(বোলাদিয়া)ক্লিনার ছিল।সাপ্লায়ার কোম্পানীর নাম ছিল আল-খোদারী।তাদের বেতন কাঠামো ছিল খুবই খারাপ।তাই বেশির ভাগ বাংলাদেশী ক্লিনাররা বাইরে গাড়ী ধোয়া,পুরানো জিনিষ টুকিয়ে বিক্রি করা,বিভিন্ন বাসা বাড়ীতে কাজ করে টুপাইস কামাতো।এদেশের আইনে এসব কাজ করা নিষেধ হলেও স্থানীয় পুলিশও এদেরকে ধরে ছেরে দিত,যা এখনো চলে আসছে।তাই অন্যান্য দেশের লোকজন আমাদেরকে প্রায়ই টিজ করতো।তখন কোথাও গিয়ে বাংলাদেশী পরিচয় দিলেই আর চোখে দেখতো।ভাল কথা এই যে প্রায় বছর পাচেক আগে আল-খোদারী তাদের কন্ট্রাক্ট হারিয়েছে।তারপর হাজার হাজার কর্মচারী দেশে ফিরে গিয়েছে।তার একমাসের মধ্যেই আল-খোদারী বিল্ডিং আগুন লেগে পুড়ে যায়।প্রায় পাচদিন যাবত এই আগুন জ্বলতে থাকে কিন্তু ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভাতে পারেননি।(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৪:৪৩
৯টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×