somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাইজারের বাঁক থেকে-১

৩১ শে মে, ২০০৯ রাত ৯:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কাল রাতে খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো ঘরের চাল উড়িয়ে নিয়ে যাবে। এখানে প্রতিটা বাড়িই দোতালা বা তিন তলা। হাই রাইজ কিছু আছে। কিন্তু বাকিটা ওই এক, দু বা তিনতলা। দেশেও এখন বর্ষাকাল। হয়তো দিনের শেষে অফিস ফেরত মানুষ যখন ঘরে ফেরে তখন আকাশ কালো হয়ে আসে। তারপর ঘরে ফেরার পর লোড সেডিং। হয়তো অফিস থেকে ঘরে ফিরতে দশ মিনিটের পথ রাস্তার জ্যামে এক ঘন্টা লেগে যায়। ঢাকার পথঘাট অল্প বর্ষায় কাদা মাখামাখি অবস্থা। আমি ভাবি, তবুও ভালো। পথের পাশে তো মামার চায়ের দোকান পাওয়া যায়। পথের ভিখারীটা তো বাংলায় ভিক্ষা চায়। অল্প কয়েদিনের জন্য হলেও অফিসের কাজে দেশের বাইরে এসে এটাই আমার অনুভূতি। আমি এখন আফ্রিকায়। কালো মানুষের দেশে। জুলে ভার্নের নাইজারের বাঁকে। নাইজেরিয়া। যে দেশটাকে আগে কেবল চিনতাম ফুটবলের দেশ বলে। বিশ্বকাপে নাইজেরিয়ার খেলা কে না দেখেছে। সেই নাইজেরিয়ার প্রাচীন রাজধানী লাগোস। সেখানে এসেছি অফিসের কাজে।

সবসময় ভাবতাম দেশের বাইরে যারা আছে তারা কতো ভালো আছে। দেশটা নাইজেরিয়া হলেও এখানে আমি অনেক সুযোগ সুবিধা পাচ্ছি। চারতারা হোটেল, গাড়ি, সুইমিং পুল, এসি রুম আর অনেকগুলো ডলার। কিন্ত কিছুই ভালো লাগে না। মনে হয় কি যেন নেই। যেটা নেই, সেটা হলো, বাংলাদেশ। নিজের দেশ ব্যাপারটা অনেক বড়। অনেক। আমার সাথে অনেক দেশের মানুষ কাজ করে। একই হোটেলে আছি পাকিস্তানের নাদিম ভাই, উগান্ডার সেমপা, কিছুদূরে ভারতের আনিশ, আনসাল, ইন্ডিয়া ক্রিকেট টিমের মুরালী কার্তিকের বাবা কেকে। সবার মাঝেই একটা জিনিস দেখি, সবাই ভাবে কবে দেশে যাবো। আর সবারই দেখলাম ল্যাপটপের টাইম যার যার দেশের টাইম সেট করা। ঠিক আমার মতো। সবাইই তার দেশকে এতো ভালোবাসে। তাই দীর্ঘ দিন এদেশে সেদেশে করে অনেক ডলার কামানোর পরও নাদিম ভাই ভাবে সে একদিন নেজের দেশে গিয়ে স্থির হবে। সত্যি কথা, নিজের দেশের বাইরে কিছু নেই। যারা দেশের বাইরে থাকেন, কিছুটা হলেও তাদের মনের কষ্টটা এখন বুঝি। সবই আছে। কিন্তু নেই পরিচিত ভাষা, খাবার, প্রিয় মানুষ গুলো। তাই ডলারের উপর ঘুমিয়েও মানুষগুলো শান্তি পায় না।

এদেশে এসেছি বেশ কিছু দিন হলো। কালো মানুষের দেশ। তবে দেখলাম এ শহরের সবাই ইংরেজীটা খুব ভালো বুঝে। এখানে আসলে অনেক ভাষা প্রচলিত। তাই সবাই ইংরেজীটাকেই কমন ভাষা হিসেবে ব্যাবহার করে। দেশটা পৃথিবীর বৃহত্তম অপরিশোধিত তেলের যোগানদানকারী দেশগুলোর অন্যতম। কিন্ত উন্নতি বলতে তেমন কিছু হয় নি। কারন তেল সম্পদের সবই নিয়ে যায় অন্যদেশ। আর দুর্নিতী পরায়ন দুর্বল সরকার সেটাকে মদদ দেয়। ভয় হয় আমাদের দেশের গ্যাসেরও না এই অবস্থা হয়। দেশটা স্বাধীন হয়েছে অনেক আগে। কিন্ত গনতন্ত্রে পদার্পন করেছে মাত্র দশ বছর। তাও খুব দুর্বল গনতন্ত্র। জনসংখ্যায় আমাদের কাছাকাছি, কিন্তু আয়তনে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বড়।

এখানে এসে সবচেয়ে বড় সমস্যায় পরেছি খাবার নিয়ে। এরা সব খাবারে শুটকি দেয়। আর তেলটা ঠিক আমাদের দেশের তেলের মতো না। একটু গন্ধ। প্রচুর তেল আর ঝাল দিয়ে যা রান্না করে বেশীর ভাগই খেতে পারি না। এক প্লেট সাদা ভাত আর একটু আলু ভর্তার জন্য তাই মন কাঁদে। এখানে প্রচুর বৃষ্টি হয়। প্রচুর। এই যেমন কাল রাতে হলো। দেশেও এখন বৃষ্টি হচ্ছে কি? আকাশ কাঁপিয়ে বৃষ্টি। কৃষ্ঞচূড়ার গাছ কাঁপিয়ে বৃষ্টি। রমনা, টি এস সি কাঁপিয়ে বৃষ্টি। অফিস শেষে বাসের ভীড়ে অতিষ্ট মানুষকে আরো অতিষ্ট করে আসা বৃষ্টি। নিজের দেশের চেয়ে ভালো আসলেও কি কিছু আছে। এখানে কালো মানুষের মুখ, অফিসের কাজ, হোটেলের আরাম সব কিছু ছাপিয়ে তাই চোখে ভাসে ঢাকার পথ ঘাট। যেখানে রেখে এসেছি প্রিয় মানুষ গুলো। মা,বাবা,বোন, পরিচিত জন আর একটা প্রিয় মুখ।

আর, আমার বাংলাদেশ।




বি.দ্র. অনেকদিন কিছু লিখতে পারছি না। নতুন জায়গা, নতুন পরিবেশ। তাই মাথায় কিছুই আসছে না। একটু গুছিয়ে নিয়েই আবার লেখা শুরু করবো।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০০৯ রাত ৯:৫১
২৮টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭



অনেক দিন পর আমি আজ এই হোটেলে নাস্তা করেছি। খুব তৃপ্তি করে নাস্তা করেছি। এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা। ঠিকনা: ভবেরচর বাসস্ট্যান্ডম ভবেরচর, গজারিয়া, মন্সীগঞ্জ। দুইটি তুন্দুল রুটি আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×