somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ফকির ইলিয়াস
আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

অস্ত্র প্রতিযোগিতা বাড়ছে, শান্তির উদ্যোগ বাড়ছে না

৩০ শে মে, ২০০৯ সকাল ৭:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অস্ত্র প্রতিযোগিতা বাড়ছে, শান্তির উদ্যোগ বাড়ছে না
ফকির ইলিয়াস
=======================================
নতুন করে পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতা কাঁপিয়ে তুলেছে বিশ্ব পরিস্থিতি। কদিন আগে ইরান দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিরীক্ষা করেছে। ত নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে পরাক্রমশালী যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ইরানের হাতে পরমাণু অস্ত্র গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে হুমকির মুখে ঠেলে দেবে। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ বলেছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেছেন, ইসরায়েলের হাতে আণবিক বোমা থাকলে, ইরানের হাতে কেন থাকবে না? থাকলে অসুবিধা কোথায়? ইরানের প্রেসিডেন্ট জোর দিয়ে বলেছেন, তারা তাদের পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাবেন। তা কেউ রুখতে পারবে না। তার মতে বিশ্বে অস্ত্র প্রতিযোগিতার সমতা রক্ষা করা দরকার।
এর মধ্যেই হঠাৎ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান সংবাদ শিরোনাম হয়েছে উত্তর কোরিয়া। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন উত্তর কোরিয়ার প্রতি। তিনি বলেছেন, উত্তর কোরিয়া যে নতুন মিসাইল টেস্ট করেছে তা বিশ্বশান্তির পরিপন্থী। ওবামা বলেছেন এর বিরুদ্ধে গোটা বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়ানো দরকার। প্রেসিডেন্ট বলেছেন, উত্তর কোরিয়া তাদের ভূগর্ভস্থ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি ও নিরীক্ষার পাশাপাশি দূরপাল্লার মিসাইল টেস্টও শুরু করেছে। তাদের এই দায়িত্ব জ্ঞানহীন প্রচেষ্টা মেনে নেয়া যায় না। এ জন্য তিনি জাতিসংঘসহ সকল বিশ্ব নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, সিকিউরিটি কাউন্সিল এর সমুচিত ব্যবস্থা নেয়া খুবই জরুরি। লক্ষণীয়, উত্তর কোরিয়া টেস্টগুলো সম্পন্ করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পর পর দুটি বিবৃতি দিয়েছেন বারাক ওবামা। তিনি বলেছেন উত্তর-পূর্ব এশিয়ার মানুষের শান্তি আমরা এভাবে বিনষ্ট হতে দিতে পারি না। এটা খুবই দুঃখজনক, উত্তর কোরিয়া সকল নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে পরমাণু অস্ত্র বানানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এদিকে উত্তর কোরিয়া বলেছে ২০০৬ সালে তারা যে অস্ত্র টেস্ট করেছিল, সে তুলনায় তারা এখন অনেক বেশি শক্তিশালী। এবং তারা ভূগর্ভে ইতিমধ্যেই সে ধরনের টেস্ট সম্পন্ন করেছে। তারা মাটি থেকে আকাশের দিকে দূরপাল্লার মিসাইল নিক্ষেপের প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছে বলে জানাচ্ছে বিভিন্ন সূত্র। স্বল্প পাল্লার মিসাইল তারা নিক্ষেপ করতে সমর্থ হয়েছে বেশ আগেই।
সম্প্রতি উত্তর কোরিয়াতে মিসাইলগুলো পর্যবেক্ষণ করেছে তা অতি শক্তিশালী বলে জানাচ্ছে বিশ্বের বেশ কয়েকটি পরমাণু পর্যবেক্ষণ সংস্থা। মিসাইল টেকনোলজির ব্যাপক আধুনিকীকরণের মাধ্যমে উত্তর কোরিয়া বেশ শীর্ষে পৌঁছে গেছে বলেও জানাচ্ছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। এর প্রেক্ষিতে ওবামা প্রশাসন, বেশ জোর দিয়েই বলছে, মিত্র শক্তিগুলোর সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে উত্তর কোরিয়াকে রুখে দেয়ার এটাই উৎকৃষ্ট সময়।
বারাক ওবামার এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে কয়েক দিনের মধ্যেই জাতিসংঘ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং অন্যান্য মিত্র শক্তিরা কি উদ্যোগ নেয় তা দেখার বিষয়। তবে উত্তর কোরিয়া এবং ইরান দুই দেশই পরমাণু শক্তি অর্জনের স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য যে মরিয়া হয়ে উঠেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। উত্তর কোরিয়া যে শক্তি অর্জন করতে চাইছে, তাতে তারা নিজেরাই নিরাপত্তা এবং সম্মান দুটোই হারাবে। বারাক ওবামার এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ম্যাসেচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) এর পরমাণু বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. হ্যারিস ব্রনসন বলেছেন, এই সময়ে প্রযুক্তির বিকাশ যখন গোটা বিশ্বকে বিকশিত করতে চাইছে তখন মারণাস্ত্র বানানোর প্রতিযোগিতা বন্ধের জন্য বৃহৎ শক্তিগুলোকে উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ গোপনে কোন দেশ কোথায় গবেষণা চালাচ্ছে সে খবর রাখা দুরূহ কাজ। তাছাড়া ‘তোমার কাছে আণবিক বোমা থাকবে আমার কাছে থাকবে’ না এমন মানসিকতাও কাজ করছে নেপথ্যে। ফলে বিশ্বে অস্ত্র প্রতিযোগিতার মহড়া যতোটা বাড়ছে, শান্তি উদ্যোগের প্রচেষ্টা ততোটা বাড়ছে না।
এ বিষয়টি খুবই ওপেন সিক্রেট যে বিশ্বে শান্তিকামী মানুষের সংখ্যা বেশি থাকার পরও কতিপয় অস্ত্র ব্যবসায়ী, স্বার্থান্বেষী মহলের কাছে বিশ্ব সভ্যতা এখন জিম্মি দশার ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। মুখে শান্তি প্রতিষ্ঠার সিঁড়ি নির্মাণের কথা বললেও ক্ষমতাবান শীর্ষরা, তা নানা কারণে পেরে উঠছেন না। বারাক ওবামা ক্ষমতায় আসার পর পর জোর দিয়েই বলেছিলেন, তার সরকার গুয়ান্তানামো বে বন্দী শিবির বন্ধ করে দেবেন। সেখানের বন্দী নির্যাতনের চির অবসান হবে। কিন্তু ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও তা তিনি পারছেন না। মার্কিন সিনেট তা নিয়ে কয়েক দফাই বাধা দিয়েছে ওবামা প্রশাসনকে। মার্কিন সিনেটররা বলছেন, এই বন্দী শিবির বন্ধ করে দিলে যুক্তরাষ্ট্র তার দাপটের প্রত্যয় থেকে সরে আসবে। যা এক ধরনের নৈতিক পরাজয়ের শামিল। এই বন্দী শিবিরে মোহাম্মদ জাওয়াদ নামের বারো বছরের একটি আফগান শিশু বন্দী রয়েছে। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, সে দুজন মার্কিন সৈন্যকে কাবুলে গ্রেনেড আক্রমণ করে মারাত্মক আহত করেছিল। এই শিশুটির মামলা বিষয়ে কাবুল ও ওয়াশিংটনের বিচার ব্যবস্থা আবারো দাঁড়াচ্ছে মুখোমুখি। কাবুলের আইনজীবীরা বলছেন, শিশুটির প্রতি নির্মম আচরণ করা হয়েছে। তাকে কাবুলের হাতে ছেড়ে দেয়া দরকার। এভাবে বেশ কয়েকটি দেশের বন্দী নিয়ে বেশ সমালোচনার মুখোমুখি নিত্যই হতে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রকে। ক্ষুন্ন হচ্ছে মানবাধিকার।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের স্পিকার অব দ্য হাউস ন্যান্সি পেলোসি সম্প্রতি চীন সফর করেছেন। এ সময়ে তিনি চীনে মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে বেশি কিছুই বলেননি। অনেকেই মনে করেছিলেন ন্যান্সি পেলোসি মানবাধিকার বিষয়ে চীনে জোরালো বক্তব্য দেবেন। কারণ বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থার মতে চীনে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। ন্যান্সি পেলোসি এমন এক সময় চীন সফরে যান যখন সেখানে ১৯৮৯ সালে তিয়ানানমেন স্কোয়ারের গণতন্ত্র চাওয়ার অপরাধে ঐতিহাসিক ক্র্যাকডাউনের বিশতম পূর্তি পালনের প্রস্তুতি চলছিল।
অবশ্য ‘আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন সাংহাই’-এর দেয়া এক সংবর্ধনা সভায় মার্কিন স্পিকার অব দ্য হাউস বেশ জোর দিয়েই বলেছিলেন, আমি চীনসহ বিশ্বের সকল দেশে মানবাধিকার ও শান্তির সপক্ষে আমার জোরালো বক্তব্য অব্যাহত রাখবো। কিন্তু চীনা শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনায় তিনি এমন কোনো দাবি তোলেননি।
বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা নেয়ার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রতি আবারো আহ্বান জানিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ। তিনি বারাক ওবামার সঙ্গে ডিবেট করার ইচ্ছেও প্রকাশ করেছেন। ‘আগামী মাসের অনুষ্ঠিতব্য ইরানের নির্বাচনে যদি নির্বাচিত হই তবে আসছে জাতিসংঘ অধিবেশনেই আমি ওবামার সঙ্গে ডিবেটে বসতে চাই’। এমন ইচ্ছাই জানিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট। তিনি আরো বলেছেন, ধমকের মুখে ইরান ইউরোনিয়াম প্লান্ট বন্ধ করবে না।
সব মিলিয়ে বিশ্বে অস্ত্র প্রতিযোগিতা এবং হুমকির রাজনীতি বেড়েই চলেছে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। সেই তুলনায় শান্তির উদ্যোগ বাড়ছে না মোটেও। ক্ষমতাবানরা তাদের পেশিশক্তি দিয়ে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। যা নানা রকম ক্ষোভের জন্ম দিচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। শুধুমাত্র পারস্পরিক আলোচনাই নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে পারে।
-----------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ।ঢাকা। ৩০ মে ২০০৯ শনিবার প্রকাশিত













৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমার ড্রোন ছবি।

লিখেছেন হাশেম, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩

বৃহত্তর প্যারিস তুষারপাত।

ফ্রান্সের তুলুজ শহরে বাংলাদেশের প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার।

হ্যাসল্ট, বেলজিয়াম।

ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ফ্রান্সের ফ্রিওল আইল্যান্ড।


রোডেসিয়াম এম রেইন, জার্মানি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×