somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অন্যরকম ... :||

২৯ শে মে, ২০০৯ রাত ১০:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কী লিখব ? আমি যে লিখতে পারি না । তারপরেও তো লিখতে ইচ্ছা করে। তবে তাই হোক । আজকে আমি লিখব । লিখব আমার কথা .........

ছোটবেলায় আব্বু গল্পের বই কিনে দিত অনেএএএএএএক । গোগ্রাসে গিলতাম । বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে গল্পের বই পড়তাম । বাইরে অন্ধকার হয়ে গেলে জানালায় হেলান দিয়ে পড়তাম । চোখে যখন সব ঝাপসা দেখতাম তখন রুমের লাইট জ্বেলে আবার পড়তে শুরু করতাম । থামতাম তখন যখন আম্মু বার বার ওয়ারনিং (ওয়ারনিং বেল নামে তিন গোয়েন্দা'র একটা বই ছিল না :) ) দিয়ে শেষে বিরক্ত হয়ে মারতে আসতো । পড়ালেখার পর খাওয়া । ওইটাও বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে সামনে বই রেখে । কত যে বকা দিত আম্মু । খাওয়া শেষ করে তারপরে চিত হয়ে শুয়ে আবার পড়া শুরু । সকালে ঘুম থেকে উঠে আবার একটু পড়তাম । বইএর গল্প শেষ করতে না পারলে যে শান্তি নাই :) । স্কুলের ক্লাসে বসে বসেও গল্পের কাহিনী মাথায় ঘুরতে থাকতো । বাসায় এসেই আবার বই নিয়ে বিছানার উপরে ধুপ্পুস । কখনো কখনো অপেক্ষা সহ্য হবে না দেখে ব্যাগে ভরে বইটা নিয়ে যেতাম স্কুলে । ফাকে ফুকে পরে নিতাম একটু আধটু । সব বই পড়া শেষ হয়ে গেলে কেমন জানি ফাকা ফাকা লাগত সব কিছু । আবার অপেক্ষা এক গাদা নতুন বইয়ের ।

খুব ছোটবেলায়, যখন স্কুলে ভর্তি হইনি, তখন বড় মামা নিয়ে আসত কমিক বুক লরেল হার্ডি , সুপারম্যান , ব্যাটম্যান, র‌্যাম্বো, নন্টে-ফন্টে , হাদা-ভোদা । আরেকটু বড় হয়ে বড় চাচার বাসায় গিয়ে পড়েছি চাচা চৌধুরী , সাবু , বিল্লু , পিংকি । ছোট বোন স্কুলের বান্ধবীদের কাছ থেকে নিয়ে আসত রূপকথার গল্পের বই । ক্লাস সিক্স থেকে পড়তে শুরু করলাম তিন গোয়েন্দা । ক্লাস শেষ করে আমি আর আবীর চলে যেতাম শীলা বই বিতানে । ও ওখানকার সদস্য ছিল । তিন চারটা বই তুলতো একসাথে । আমি দুইটা আর ও দুইটা বই নিয়ে চলে যেতাম বাসায় । দুই এক দিন পর আবার পালটাপালটি করে পড়ে ফেলতাম বাকী দুইটা । এক সপ্তাহ পর বই জমা দিয়ে আবার নতুন বই তুলতো ও । (আমি কি কিপটা , তাই না :P ) । ক্লাস এইটে উঠে ধরলাম মাসুদ রানা । এর মধ্যে একদিন চাচার বাসায় পড়লাম জাফর ইকবালের কপোট্রনিক সুখ দুঃখ । এমন মজা পেলাম যে এখনো জাফর ইকবালের সাইন্স ফিকশন পেলে শেষ না করে ছাড়িনা । মনে হয় কোনোটা পড়া বাকী নাই আর । মাঝে মধ্যে হুমায়ুন আহমেদের বই পড়তাম, ইমদাদুল হকের বইও পড়েছি কিছু । কোলকাতার লেখকদের বইও পড়েছি , কিন্তু ফেলুদা , প্রফেসর শংকু আর কিরীটি রায় ছাড়া আর কিছু ভাল লাগেনি । হিমু পড়েছি প্রায় সবগুলো, মিসির আলীও । ওহহো , ওয়েস্টার্নের কথা তো বলাই হয়নি । ধুমসে পড়েছি :D
কলেজে উঠে বই কিনে পড়তে শুরু করলাম । কিন্তু বেশী কিনতে পারতাম না। আব্বু রাগ করতো । ভার্সিটি লাইফেও প্রচুর বই পড়েছি । আব্বু ধমক দেয়ার চান্স পায় নাই :D
তখন ভাবতাম, যেদিন চাকরী করে বেতন পাবো সেদিনই সেগুনবাগিচায় গিয়ে সেবা প্রকাশনীর সব বই কিনে নিয়ে আসবো । তারপরে বিছানায় শুয়ে পা দুলাবো আর বই পড়বো । ভাবতে খুবই এক্সাইটিং লাগতো । কিন্তু হায় এখন বেতন পাই ঠিকই, সেগুনবাগিচার পাশ দিয়ে যাই প্রতিদিনই, প্রেসক্লাবের এটিএম থেকে টাকাও তুলি, কিন্তু একটু হেঁটে সেবা প্রকাশনীতে যাওয়ার ইচ্ছে এখন আর জাগেইনা মনে ।
আজকে দুপুরে বাসে করে বাসায় আসার পথে ধুমসে নামলো বৃষ্টি । বাস থেকে নেমে বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্যে এক দৌড়ে উঠে গেলাম কেয়ারী প্লাজার দোতলায় । ওখানে দেখি শীলা বই বিতান । পরে বুঝলাম, শীলা বই বিতান না , ওই দোকানের একজন এখানে নিজেই একটা দোকান খুলে বসেছে । বৃষ্টি তো আর থামে না । আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বই দেখতে লাগলাম । যেটা যেটা কিনতে ইচ্ছা করলো সেগুলো বের করে রাখলাম সামনে । পৃষ্ঠা উল্টে দেখি বইএর দাম আগের তুলনায় দ্বিগুন । ভাবলাম, সবকিছুর দাম বাড়লে বইয়ের দাম বাড়বে না কেন ? পকেটে তো এখন অনেক টাকা । মাসও শেষ । খরচ করা উচিত :) । আটশো টাকার বই কিনে ফেললাম ।
দোকানদারকে বললাম, বইয়ের দাম তো অনেক বেড়ে গেছে । দোকানদার বলে, হ্যা বইয়ের বিক্রী কমে গেছে , ওরাও দাম বাড়ায় দিছে । আমি অবাক হয়ে বললাম, সেবার বই কেউ কিনে না এখন ? উনি বললো, নাহ , খুব কম কিনে। ভাবলাম , আমরা কি তাহলে এখন বুড়া হয়ে গেছি , ব্যাকডেটেড হয়ে গেছি নাকি ?
নেক্সট জেনারেশন এখন আর সেবার বই কিনে না , তারা এখন নেট আর মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত । আমিও কি তাই নিয়েই ব্যস্ত না ? বৃষ্টিতে আটকে না পড়লে কি আমার এই বইগুলা কেনা হতো ?
যাই হোক , প্যাকেটটা বগলদাবা করে নিচে নেমে আসলাম । বৃষ্টি থেমে গ্যাছে । রিকশায় উঠলাম বাসার উদ্দেশ্যে । কিন্তু সবচেয়ে বড় কথাটা কি জানেন , আমি কিন্তু প্যাকেটটা এখনো ছিড়ি নাই, টেবিলের উপরে পড়ে আছে । আমি কিন্তু সেই নেট নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েছি , হাহ হা হা হা হাহ হা হা .........

আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম , আমরা , আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম ......
আজকে রাত্রেও সুন্দর রাত কাটাব আমি, চিত হয়ে শুয়ে পা দুলাতে দুলাতে বই পড়বো ,
হুমায়ুন আহমেদের সাইন্স ফিকশন সমগ্র ... B-)

নাহ থাক, আজকে না, পরে কোন একদিন পড়বো , খুব ঘুম আসছে, কালকে আবার সকালে উঠে দৌড়াতে হবে , ডিজিটাল লাইফ তো , সবকিছু মেপে টেপে হিসাব করে চলতে হয় ......... ;)

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০০৯ ভোর ৫:৫০
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ড্রেনেই পাওয়া যাচ্ছে সংসারের তাবৎ জিনিস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫০



ঢাকার ড্রেইনে বা খালে কী পাওয়া যায়? এবার ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (উত্তর) একটি অভুতপূর্ব প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। তাতে ঢাকাবাসীদের রুচিবোধ অথবা পরিচ্ছন্নতাবোধ বড় বিষয় ছিল না। বড় বিষয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×